07/05/2025
চমৎকার একটি ঘটনা শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ অনুরোধ থাকলো।
👉একদিন মদীনার দুই ব্যক্তি একজন যুবককে টেনে হিছরে অর্ধ পৃথিবীর শাসক খলীফা হযরত উমর (রাঃ) এর দরবারে হাজির করলেন। এবং বিচার দাখিল করলেন যে,, এই যুবক আমাদের পিতাকে হত্যা করেছে। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই...??
তখন খলীফা হযরত উমর (রাঃ) সেই যুবককে প্রশ্ন করলেন, তার বিপক্ষে করা দাবী সম্পর্কে..!! তখন সেই যুবক বলেন,, তাদের দাবী সম্পুর্ণ সত্যি...??
সেই যুবক বললেন, আমি ক্লান্তির কারনে বিশ্রামের জন্য এক খেঁজুর গাছের ছায়ায় বসলাম। ক্লান্ত শরীরে অল্পতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার একমাত্র পছন্দের বাহন আমার উট টি পাশে নেই। খুঁজতে খুঁজতে কিছু দূর গিয়ে পেলাম তবে তা ছিলো মৃত্য..!!
পাশেই ওদের বাবা ছিলো, যে আমার সেই উট কে তাদের বাগানে প্রবেশের অপরাধে পাথর মেরে হত্যা করেছেন।
আমি ও রাগান্বিত হয়ে তাদের বাবার সাথে তর্কাতর্কি করতে করতে এক পর্যায়ে তাদের বাবার মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে ফেলি,, ফলে সে সেখানেই মারা যায়। যা সম্পুর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়ে গেছে। যার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
বাদী'রা বলেন:- আমরা এর মৃত্যুদণ্ড চাই...??
হযরত উমর (রাঃ) সব শুনে বললেন উট হত্যার বদলে একটা উট নিলেই হতো,, কিন্তু তুমি বৃদ্ধকে হত্যা করেছো হত্যার বদলে হত্যা। এখন তোমাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। তোমার কোন শেষ ইচ্ছা থাকলে বলতে পারো।
যুবক বললো,, আমার কাছে কিছু ঋন ও অন্যের কিছু আমানত আছে। আমাকে যদি কিছুদিন সময় দিতেন তবে আমি বাড়ি গিয়ে আমানত ও ঋন গুলি পরিশোধ করে আসতাম...??
খলিফা হযরত উমর (রাঃ) বললেন,, তোমাকে একা ছেড়ে দিতে পারি না। যদি তোমার পক্ষ থেকে কাউকে জিম্মাদার রেখে যেতে পারো তবে তোমায় সাময়িক মুক্তি দিতে পারি।
নিরাশ হয়ে যুবক বললো,, এখানে আমার কেউ নেই। যে আমার জিম্মাদার হবে...??
এ কথা শুনে হঠাৎ মজলিসে উপস্থিত আল্লাহর নবীর এক সাহাবী হযরত আবু জ্বর গিফারী (রাঃ) দাড়িয়ে বললেন,, আমি হবো ওর জামিনদার। সাহাবী হযরত আবু জ্বর গিফারী (রাঃ) এই উত্তরের কারণে সবাই হতবাক।
একে তো অপরিচিত ব্যক্তি,, তার উপর হত্যার দন্ড প্রাপ্ত আসামীর জামিনদার।
খলিফা বললেন আগামি শুক্রবার জুম্মা পর্যন্ত যুবক কে মুক্তি দেওয়া হলো। জুম্মার আগে যুবক মদিনায় না আসলে যুবকের বদলে আবু জ্বর গিফারী কে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে।
মুক্তি পেয়ে যুবক ছুটলো মাইলের পর মাইল,, দূরে তার বাড়ির দিকে।
আবু জ্বর গিফারী (রাঃ) চলে গেলেন তাঁর বাড়িতে। এদিকে দেখতে দেখতে জুম্মা বার এসে গেছে,, যুবকের কোন খবর নেই...??
হযরত উমর (রাঃ) রাষ্ট্রীয় পত্র বাহক পাঠিয়ে দিলেন,, আবু জ্বর গিফার (রাঃ) এর কাছে। পত্রে লেখা আজ শুক্রবার বাদ জুমা সেই যুবক যদি না আসে আইন মোতাবেক আবু জ্বর গিফারী তোমার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে।
খবর শোনায় সারা মদীনায় থমথমে অবস্থা। একজন নিষ্পাপ সাহাবী আবু জ্বর গিফারী আজ বিনা দোষে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে।
জুম্মার পর মদিনার সবাই মসজিদে নবাবীর সামনে হাজির,, সবার চোখেই পানি।
জল্লাদ প্রস্তুত। জীবনে কতজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছে তার হিসাব নেই। কিন্তু আজ কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না।
আবু জ্বরের মত একজন সাহাবী সম্পূর্ন বিনা দোষে আজ মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হবে,, এটা মদীনার কেউ মেনে নিতে পারছেন না। এমনকি মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদানকারী খলিফা উমর (রাঃ) ও অনবরত কাঁদছেন।
তবুও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কারো পরিবর্তনের হাত নেই। আবু জ্বর (রাঃ) তখন ও নিশ্চিন্তে মনে হাসি মুখে দাড়িয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত।
জল্লাদ ধীর পায়ে আবু জ্বর (রাঃ) এর দিকে এগাচ্ছেন আর কাঁদছেন। আজ যেন জল্লাদের পা চলে না,, পায়ে যেন কেউ পাথর বেঁধে রেখেছে।
এমন সময় এক সাহাবী জল্লাদকে বললো,, হে জল্লাদ একটু থামো...??
মরুভুমির ধুলার ঝড় উঠিয়ে ঐ দেখ কে যেন আসতেছে। হতে পারে ঐটা সেই যুবকের ঘোড়ার ধুলি।একটু দেখে নাও,, তারপর না হয় আবু জ্বরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করিও...??
ঘোড়াটি কাছে আসলে দেখা যায় সত্যিই এটা ঐ যুবক। যুবক দ্রুত খলিফার সামনে এসে বললো,, হুযুর বেয়াদবি মাফ করবেন। রাস্তায় যদি ঘোড়ার পা'য়ে ব্যথ্যা না পেত তবে সঠিক সময়েই আসতে পারতাম।
বাড়িতে আমি একটুও দেরী করি নেই। বাড়ি পৌছে গচ্ছিত আমানত ও ঋন পরিশোধ করি এবং তারপর বাড়ি এসে বাবা-মা এবং নববধুর কাছে সব খুলে বলে চির বিদায় নিয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।
এখন আবু জ্বর (রাঃ) ভাইকে ছেরে দেন,, আমাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে পবিত্র করুন। কেয়ামতে খুনি হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চাই না।
আশেপাশে সব নিরব থমথমে অবস্থা। সবাই হতবাগ,, কি হতে চলেছে। যুবকের পুনরায় ফিরে আসাটা অবাক করে দিলো সবাইকে।
খলিফা হযরত উমর (রাঃ) বললেন,, তুমি জানো তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে তারপরে ও কেন ফিরে এলে...??
উত্তরে সেই যুবক বলে:- আমি ফিরে এসেছি,, কেউ যাতে বলতে না পারেন এক মুসলমানের বিপদে আরেক মুসলামান সাহায্য করতে এগিয়ে এসে নিজেই বিপদে পড়ে গিয়েছিলো।
এবার হযরত উমর (রাঃ) হযরত আবু জ্বর গিফারী (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন আপনি কেন,, না চেনা সত্যেও এমন জামিনদার হলেন...??
উত্তরে হযরত আবু জ্বর গিফারী (রাঃ) বললেন,, পরবর্তি তে কেউ যেন বলতে না পারেন, এক মুসলমান বিপদে পড়েছিলো অতচ কেউ তাকে সাহায্য করতে আসেনি।
এমন কথা শুনে,, হঠাৎ বৃদ্বার দুই সন্তানের মাঝে একজন বলে উঠলেন,, হে খলীফা আপনি তাকে মুক্ত করে দিন। আমরা তার উপর করা দাবী তুলে নিলাম।
হযরত উমর (রাঃ) বললেন,, কেন...??
তাদের মাঝে একজন বলে উঠলো,, কেউ যেন বলতে না পারেন,, এক মুসলমান অনাকাঙ্ক্ষিত ভূল করে নিজেই শিকার করে ক্ষমা চাওয়ার পরেও অন্য মুসলমান তাকে ক্ষমা করেনি।
সুবাহানাল্লাহ আমিও তো একজন মুসলমান
আলী হামজা..............✍️