03/04/2025
আসসালামু আলাইকুম।
সংশয় কারীগণ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে থাকে। তবে কখনো টিকটিকির বিষয়ে সংশয় হবে এটা কল্পনাও করিনি।
প্রশ্ন: এই হাদিসের প্রেক্ষাপটে কারোও পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেহ যদি কোন মারাত্বক কোন পাপ করেন তাহলে তার সেই পাপের দায়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শাস্তি দেয়া কি ঠিক হবে?
উম্মে শারিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) টিকটিকি হত্যার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইবরাহিম (আ.)-কে যে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তাতে এই প্রাণী ফুঁ মেরেছিল। (বুখারি, মুসলিম ও ইবনে মাজাহ)?
উত্তর: ইসলামী শরীয়তে শাস্তির বিধান শুধু মানুষ এবং জিন জাতির জন্য রয়েছে অন্য কোন প্রাণীর জন্য নয়।
পূর্বপুরুষের গুনাহের কারণে পরবর্তীদের আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শাস্তি দিবেন না ।এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল(সা) ইরশাদ করেন:
প্রত্যেকের আমলের জন্য নিজেই দায়ী।
হাদীসটি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন
(বুখারী ও তিরমিজি)
সুতরাং প্রশ্নের উল্লেখিত হাদিস থেকে প্রাণীকুল এবং মানুষ ও জিন উভয়কে এক পাল্লায় মাপা বৈধ হবে না।
এবার আসা যাক টিকটিকি নিয়ে আলোচনা,
আমরা অত্র বিষয়কে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ
১ হাদিসের দৃষ্টিকোণ
২ফিকহের দৃষ্টিকোণ
৩ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
হাদিসের দৃষ্টিকোণ:
টিকটিকি একটি অনিষ্টকারী দূষিত প্রাণী।টিকটিকি হত্যার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সা) বিভিন্ন হাদিসের মধ্যে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন ।এর মধ্যে প্রশ্ন উল্লেখিত হাদিস একটি, অন্য হাদিসে আল্লাহ রাসুল (সা) বলেন:
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ عُفَيْرٍ، عَنِ ابْنِ وَهْبٍ، قَالَ حَدَّثَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ، يُحَدِّثُ عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِلْوَزَغِ الْفُوَيْسِقُ. وَلَمْ أَسْمَعْهُ أَمَرَ بِقَتْلِهِ. وَزَعَمَ سَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِقَتْلِهِ.
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গিরগিটি বা রক্তচোষা টিকটিকি কে নিকৃষ্টতম ফাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে একে হত্যা করার আদেশ দিতে শুনেছি। আর সা‘দ ইব্নু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একে হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন।
বুঝার সুবিধার্থে হাদিসের সনদসহ উল্লেখ করা হলো
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ الْمُقْرِئُ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أُمِّ شَرِيكٍ، قَالَتْ: «أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بِقَتْلِ الْأَوْزَاغِ»
উম্মু শরীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে টিকটিকি হত্যা করতে আদেশ করেছেন।
টিকটিকি হত্যার ব্যাপারে প্রায় আট থেকে দশটি হাদিস রয়েছে আমরা লিখার সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নেউল্লেখিত হাদিসসহ দুইটি হাদিস উল্লেখ করেছি।
সমস্ত হাদিস এনালাইসিস করে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে,আল্লাহর রাসূল (সা) আমাদেরকে টিকটিকি হত্যার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন আর প্রশ্নের উল্লেখিত হাদিসটি আল্লাহর রাসূল (সা) ইব্রাহিম (আ) এর অগ্নিকুণ্ডে থাকার সময় বিভিন্ন প্রাণীর অবস্থা বুঝিয়েছেন ।যেমন আল্লাহর রাসূল (সা) অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন ইব্রাহিম (আ) এর অগ্নিকুণ্ডে বড় ব্যাঙ আগুন নিভানোর জন্য প্রস্রাব করেছিল।
আরো বিস্তারিত জানতে فتح الباري شرح صحيح البخاري দেখা যেতে পরে ।
ফিকহের দৃষ্টিকোণ:
ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে টিকটিকি হত্যা করা মুস্তাহাব এবং সাওয়াবের কাজ। أصول الفقه এর নিয়ম অনুযায়ী أمر সব সময় واجب এর অর্থ প্রদান করে না। কখনো কখনো ندب তথা استحباب এর অর্থ প্রদান করে।
বিস্তারিত জানতে সবচেয়ে সহজ ও হাতের নাগালে থাকা কিতাব। نور الانوار দেখা যেতে পারে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ:
টিকটিকি সালমোনেলার মতো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বহন করে। এটি তাদের মল এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে ছড়ায় এবং গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। লক্ষণগুলি হল তীব্র ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, জ্বর এবং বমি। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের জন্য এই রোগ মারাত্মক হতে পারে।
প্রতিবছর আমাদের দেশসহ পৃথিবীর মধ্যে তীব্র ডায়রিয়া ও তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই রোগ গুলোর পরিসংখ্যান এবং মৃত্যুর হার আমরা সকলেই জানি।
والله
সারসংক্ষেপ:
টিকটিকি একটি ক্ষতিকারক প্রাণী। হাদিসে টিকটিকিকে (فاسق)বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যার অর্থ অনিষ্টকারী । ফাসিক শব্দের সংজ্ঞা ও অর্থের জন্য। لسان العرب দেখা যেতে পারে।
ইসলাম একটি সুন্দর ও সংশয় মুক্ত ধর্ম এবং মানবজাতির জীবন ব্যবস্থা।
والله أعلم بالصواب