18/07/2025
মানুষ হয়ে মানুষ বাঁচানোর আনন্দ!
রবীন্দ্রনাথ দাস।
বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায়। পেশায় একজন জেলে। ৬ বছর আগে তিনি ও তার আরও ১৫ জন সঙ্গী হলদিয়া অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার থেকে মাছ ধরছিলেন। হঠাৎ এক প্রবল ঝড় শুরু হয়। এক সময় ট্রলারটি উল্টে যায়। প্রত্যেকে বিশাল ঢেউয়ের মাঝে ভেসে যান। রবীন্দ্রনাথও ভেসে গিয়েছিলেন। পেশায় জেলে হওয়ার কারণে তার মধ্যে জলের ভয় ছিল খুবই কম এবং সাহসও ছিল প্রচুর। তাই গভীর সমুদ্রে ভেসে যাওয়ার পরেও তিনি বেঁচে থাকার আশা হারাননি। তিনি সাঁতার কাটতে থাকেন, সাঁতার কাটতেই থাকেন—উপরে আকাশ আর নিচে বিশাল জলরাশি, রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কেটেই চলেন।
এক ঘন্টা দুই ঘন্টায় রূপান্তরিত হয়, এক দিন দুই দিনে রূপ নেয়—রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু বেঁচে থাকার কোনও উপায় পাচ্ছিলেন না। যখন বৃষ্টি হতো, তখন বৃষ্টির পানিই ছিল তার খাবার। কারণ সমুদ্রের নোনাজল তো পানযোগ্য নয়। তবুও রবীন্দ্রনাথ হার মানেননি। তিনি সাঁতার কেটেই চলেন, চলতেই থাকেন।
৫ দিন কেটে যায়। ৫ দিন পর প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া পৌঁছে যান তিনি। সেই সময় বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি জাওয়াদ’–এর ক্যাপ্টেন দূর থেকে তাকে সাঁতার কাটতে দেখে ফেলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে একটি লাইফ জ্যাকেট ছুঁড়ে দেন তার দিকে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তখন তা ধরতে পারেন না। তিনি নিচে চলে যাচ্ছিলেন। তবুও জাহাজের ক্যাপ্টেন জাত, ধর্ম, সীমান্তের কাঁটাতারের পার্থক্য ভুলে তাকে উদ্ধারের জন্য ছুটে যান।
কিছুক্ষণ পর রবীন্দ্রনাথ আবার কিছুটা দূরে চোখে পড়েন। তখন ক্যাপ্টেন তৎক্ষণাৎ জাহাজ ঘুরিয়ে আবার একটি লাইফ জ্যাকেট ছুঁড়ে দেন। এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ সেটি ধরতে সক্ষম হন। এবং ধীরে ধীরে জাহাজের দিকে এগিয়ে আসেন। সমুদ্রের মাঝে একটি ক্রেন ফেলে তাকে উপরে তুলে আনা হয়।
তাকে জাহাজে তোলার দৃশ্যটি জাহাজের এক নাবিক ভিডিও করে নেন। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, যখন রবীন্দ্রনাথকে সফলভাবে জাহাজে তোলা হয়, তখন জাহাজের সকল নাবিক আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন। একজন মানুষকে বাঁচানোর আনন্দে তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলেন।
একজন মরতে থাকা মানুষের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার যে রোমাঞ্চ তা আপনি ভিডিও দেখলে অনুভব করতে পারবেন।
ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদ-এর ক্যাপ্টেনকে, ধন্যবাদ এমভি জাওয়াদ জাহাজে উপস্থিত সকল নাবিককে। একজন মানুষকে নতুন করে জীবন দিয়ে তারা মানবতার এক দীপ্ত উদাহরণ স্থাপন করেছেন, যা বিশ্বের মানুষকে আরও মানবিক করে তুলবে।
মানুষ পারস্পরিক বিভেদ ভুলে যেতে শিখবে।
মানুষ হওয়া শিখবে।