27/12/2022
১. ধূমপান খুবই নিকৃষ্ট কাজ এবং বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি অত্যন্ত নিকৃষ্ট বস্তু। আর সকল নিকৃষ্ট বস্তুই তো শরী‘আতের দৃষ্টিতে হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
“আরো তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য পবিত্র ও উত্তম বস্তুসমূহ হালাল করে দেন এবং হারাম করেন নিকৃষ্ট ও অপবিত্র বস্তুসমূহ”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭]
২. ধূমপানে সম্পদের বিশেষ অপচয় হয়। আর সম্পদের অপচয় তো হারাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا ٢٧﴾ [الاسراء: ٢٧]
“কিছুতেই সম্পদের অপব্যয় করো না। কারণ, অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ”। [সূরা আল-ইসরা, আযাত: ২৬-২৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ﴾ [الاعراف: ٣١]
“তবে তোমরা (পোশাক-পরিচ্ছদ ও পানাহারে) অপচয় ও অপব্যয় করো না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩১]
একজন বিবেকশূন্যের হাতে নিজ সম্পদ উঠিয়ে দেওয়া যদি না জায়েয ও হারাম হতে পারে এ জন্য যে, সে উক্ত সম্পদগুলো অপচয় ও অপব্যয় করবে তা হলে আপনি নিজকে বিবেকবান মনে করে নিজেই নিজ টাকাগুলো কিভাবে ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে পারেন এবং তা কিভাবে জায়েয হতে পারে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تُؤۡتُواْ ٱلسُّفَهَآءَ أَمۡوَٰلَكُمُ ٱلَّتِي جَعَلَ ٱللَّهُ لَكُمۡ قِيَٰمٗا﴾ [النساء: ٥]
“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জীবন নির্বাহের জন্য তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা তোমরা বেউকুফদের হাতে উঠিয়ে দিও না”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫]
৩. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আর আত্মহত্যা ও নিজ জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া মারাত্মক হারাম ও একান্ত কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا ٢٩ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا ٣٠﴾ [النساء: ٢٩، ٣٠]
“তোমরা নিজেদেরকে যে কোনো পন্থায় হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল। যে ব্যক্তি সীমাতিক্রম ও অত্যাচার বশত এমন কান্ড করে বসবে তাহলে অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর এ কাজটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে একেবারেই সহজ”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَلَا تُلۡقُواْ بِأَيۡدِيكُمۡ إِلَى ٱلتَّهۡلُكَةِ﴾ [البقرة: ١٩٥]
“তোমরা কখনো ধ্বংসের দিকে নিজ হস্ত সম্প্রসারিত করো না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫]
৪. বিশ্বের সকল স্বাস্থ্যবিদদের ধারণামতে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য একান্তই ক্ষতিকর। সুতরাং আপনি এরই মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য বিনাশ করতে পারেন না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস ও উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ»
“না তুমি নিজ বা অন্যের ক্ষতি করতে পারো। আর না তোমরা পরস্পর (প্রতিশোধের ভিত্তিতে) একে অপরের ক্ষতি করতে পারো”।[1]
৫. ধূমপানের মাধ্যমে মুমিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। কারণ, ধূমপায়ী যখন ধূমপান করে তখন তার আশপাশের অধূমপায়ীরা বিড়ি ও সিগারেটের ধোঁয়ায় কষ্ট পান। এমনকি নিয়মিত ধূমপায়ীরা কথা বলার সময়ও তার আশপাশের অধূমপায়ীরা কষ্ট পেয়ে থাকেন। সালাত পড়ার সময় ধূমপায়ী ব্যক্তি যিকির ও দো’আ উচ্চারণ করতে গেলে অধূমপায়ীরা তার মুখের নিকৃষ্ট দুর্গন্ধে ভীষণ কষ্ট পেয়ে থাকেন। কখনো কখনো তার জামা-কাপড় থেকেও দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। আর তাদেরকে কষ্ট দেওয়া তো অত্যন্ত পাপের কাজ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨﴾ [الاحزاب: ٥٨]
“যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেয় অথচ তারা কোনো অপরাধ করেনি এ জাতীয় মানুষরা নিশ্চয় অপবাদ ও স্পষ্ট গুনাহের বোঝা বহন করবে”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৭]
৬. পিয়াজ ও রসুনের মতো হালাল জিনিস খেয়ে যখন সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ অথচ শরী‘আতে জামা‘আতে সালাত পড়ার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। কারণ, ফিরিশতারা তাতে খুব কষ্ট পেয়ে থাকেন তখন ধূমপান করে কেউ মসজিদে কিভাবে যেতে পারে? অথচ তা একই সঙ্গে দুর্গন্ধ ও হারাম। তাতে কি ফিরিশতারা কষ্ট পান না? তাতে কি মুসল্লিরা কষ্ট পায় না?
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّوْمَ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْـمَلَآئِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُوْ آدَمَ»
“যে ব্যক্তি পিয়াজ ও রসুন খেলো সে যেন আমার মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কারণ, ফিরিশতারা এমন জিনিসে কষ্ট পায় যাতে কষ্ট পায় আদম সন্তান”।[2]
৭. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ ছেলে-সন্তানকে অঙ্গহানি ও ত্রুটিপূর্ণ বৃদ্ধির প্রতি ঠেলে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণানুযায়ী নিকুটিন পুরুষের বীর্যকে বিষাক্ত করে দেয়। যদ্দরুন সন্তান প্রজন্মে বিশেষ ব্যাঘাত ঘটে। এমনকি কখনো কখনো প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
৮. ধূমপানের মাধ্যমে নিজ ছেলে-সন্তানকে চারিত্রিক অধঃপতনের দিকে বিশেষভাবে ঠেলে দেওয়া হয়। কারণ, তারা ভাগ্যক্রমে জন্মগত অঙ্গহানি থেকে বাঁচলেও পিতার ধূমপান দেখে তারা নিজেরাও ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।