
16/07/2025
Mercy 👽😈
সাজিম হোসেন
মাথা নেই।
শুধু দেহখান পড়ে আছে মাটিতে — নিথর, ঠাণ্ডা, রক্তমাখা।
গলার জায়গাটা এমনভাবে কাটা, যেন কেউ নিখুঁত ভাবে শিরা, ধমনি—সব কিছু চিনে চিনে ছিঁড়ে নিয়েছে।
কোনো চিৎকার ছিল না।
কোনো প্রতিরোধের চিহ্ন নেই।
শুধু মুখের আশপাশে শুকনো রক্ত, আর মৃত চোখের পাতা… অদ্ভুতভাবে খোলা।
আর মাথাটা?
মাথা নেই।
কেউ সেটা সঙ্গে নিয়ে গেছে — হয়তো উপভোগ করার মতো ট্রফি বানিয়ে।
চারপাশটা ঘিরে ধোঁয়া।
কে যেন আগুন জ্বালিয়েছিল, কিন্তু শুধু আগুন না — ধোঁয়ার ঘ্রাণে বার্নিশ করা কাঠের গন্ধ।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙার পর কেউ মাঠে এসেছিল প্রথম।
সে আর কথাই বলতে পারেনি।
এরপর?
খবর ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো।
না শুধু গাঁয়ে না, ইউনিয়ন ছাড়িয়ে জেলা পর্যন্ত।
গ্রামের সব চায়ের দোকান, হাটের কোণ, পুকুরপাড় — সবখানে একটাই নাম: “মাথাহীন লাশ”।
কেউ বলে ভূত, কেউ বলে কসাই…
রুদ্র সেন লাশের কাছে যেতেই, মোটা গলায় গম্ভীর শব্দ কানে ভেসে এলো—
> “কেউ লাশের কাছে যাবেন না! আপনারা সরুন, আমাদের কাজ করতে দিন।”
কথাগুলো বললো এক উঁচু গড়নের পুলিশ কর্মকর্তা —
এসআই রায়ান মাহমুদ।
চোখে ছিল জেগে থাকা নিঃশব্দ ঘুমহীনতা,
আর মুখে এমন এক কঠিনতা, যেন সবকিছু তার চোখে লেখা।
সহকারী পুলিশ রাফি বললেন,
> "স্যার, এভাবে মানুষ খুন আগে কখনো দেখি নাই।
মানুষ মানুষের প্রতি একটু মায়াও নেই।"
মুটামুটি পর্যবেক্ষণ শেষ,
রাফি বলল,
> "লাশটা পোস্টমর্টেমে পাঠিয়ে দাও।"
> "জি স্যার।"
হঠাৎ এসএপি রায়ানের ফোনে কল এসেছে।
> "এখনই অফিস আসো, আর ওখানে কি অবস্থা?"
---
রায়ান ধীরে ধীরে রিপোর্টটা নিল।
সাদা কাগজে টাইপ করা শব্দগুলো পড়তে পড়তে তার মুখ কঠিন হয়ে উঠল।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাফি গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> — “কোন ক্লু পেলে?”
— “না স্যার, তেমন কিছু বুঝতে পারছি না। খুনি সাধারণ কেউ না।
কোন মায়া দয়া নেই… একদম ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে গেছেন।”
— “এই নেন স্যার, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট।”
রায়ান কাগজের দিকে তাকায়।
শুরুতেই লেখা—
> "গলা সম্পূর্ণ কাটা হয়েছে ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে।
কাটা গভীরতায় অসমান — যা নির্দেশ করে হত্যাকারী এক হাতে কাজ করেছে,
কিন্তু নিখুঁতভাবে, একবারেই।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—
মৃত্যুর পূর্বে কোনো ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই।
মৃতদেহে আতঙ্ক নেই, প্রতিরোধ নেই।
অর্থাৎ ভিকটিম খুনিকে চিনতো বা বিশ্বাস করতো।"
রায়ান চোখ নামায়, ঠোঁট কামড়ায়।
> — “চিনতো...”
— “মানে স্যার?”
— “মানে, খুনি ভিকটিমের খুব কাছের কেউ।
অথবা, এমন একজন যাকে দেখে ভয় পায় না।
তাই সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই খুন হয়ে গেছে।”
রাফি বলল,
> — “তাহলে স্যার, খুনি কি এই গ্রামেই থাকতে পারে?”
রায়ান চারপাশে তাকিয়ে বলল,
> — “খুনি শুধু এখানে না, সে এখনও আমাদের পাশেই আছে।
আর হয়তো আমাদের কথাও শুনছে।
সময় মতো ধরা দেবে না… বরং আরেকটা খুন করবে।
কারণ তার ভিতরে কোনো তাড়াহুড়া নেই।
সে জানে—তাকে কেউ ধরতে পারবে না।”
---
রায়ান হাঁটছিল ধীরে ধীরে। হাতে ছিল পোস্টমর্টেম রিপোর্ট।
চোখ তার এক জায়গায় আটকে ছিল না — সে ভাবছিল।
হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
> — “ভিকটিমের ঠিকানা কি, রাফি?”
রাফি সঙ্গে সঙ্গে খাতার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বলল,
> — “স্যার, নাম রতন।
ট্রাকে মাল বহন করে।
দিনে বের হয়, রাত ৬টার মধ্যে ফিরে আসে বাসায়।
বাড়িতে শুধু বাবা-মা থাকে।
স্ত্রী বা সন্তান নেই।”
রায়ান থেমে গেল।
---
ইতিমধ্যে কনিকা হাজির হয়ে বলল,
> — “স্যার, ভিকটিমের বাড়িতে একটা বাক্স রেখে গেছেন খুনি।
সেটা এখন আমাদের আন্ডারে আছে।”
লোডিং......... নেক্সট পার্ট