01/10/2025
পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার আগে মনে রেখো!!
একবার একটি মেয়ে বাড়ি থেকে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। আর তাই সেই সিদ্ধান্ত তার প্রেমিককে ফোন করে জানিয়ে দিলো। প্রেমিক এটি জানতে পেরে খুশিতে চিৎকার করে বলে উঠলো, "এরই নাম ভালোবাসা।"
মেয়েটি বাড়ি থেকে পালানোর জন্য একটি রাত ঠিক করেছিলো। তাই সে গোপনে তার কিছু প্রয়োজনীয় পোশাক এবং কিছু জিনিসপত্র একটি ব্যাগে ভরে নিয়ে অত্যন্ত আবেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। ইতিমধ্যে, তার প্রেমিক তাকে ফোন করে বললো "মা নিশ্চয়ই কিছু গয়না বা অন্য কিছু তোমার জন্য বানিয়ে রেখেছে। ওটাও তোমার হাতে রাখো। কারণ কঠিন সময়ে ঐসব জিনিস আমাদের কাজে আসবে।"
সে জানতো যে, তার মা তার বিয়ের জন্য সোনার অলংকার তৈরি করে রেখেছেন। তাই সে তার মায়ের ঘর থেকে অলংকারগুলো বের করার উপায় খুঁজতে শুরু করলো। সময় খুব কম ছিলো। সে মায়ের রুমের দিকে যেতেই তার মা দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। মাকে হঠাৎ সামনে পেয়ে সে হতবাক হয়ে গেল।
মা জিজ্ঞেস করলেন! রাজকন্যা, তুমি এত রাতে জেগে আছো আর এমন প্রস্তুতি নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? মেয়েটি বললো, মা! সে-ই কথা আপনাকে বলতে এসেছি। গভীর রাতে ফোন আসলো। বিশ্ববিদ্যালয় হতে জরুরিভাবে আমাকে ডেকেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় যেতে হবে। আমাকে কোনো কাজে ডাকা হয়েছে, আমার কিছু বন্ধুও যাচ্ছে। তুমি ঘুমাচ্ছিলে, তাই আমি তোমাকে বিরক্ত করতে চাইনি। সে নিজেকে সামলে নিয়ে একটা মিথ্যা কথা মাকে বলে দিলো।
মা বললেন, ঠিক আছে, তুমি আমার রুমে বসো, আমি তোমার জন্য কিছু খাবার বানিয়ে নিয়ে আসছি। মা রান্নাঘরে গেলেন আর সে গিয়ে মায়ের ঘরে ঢুকলো এবং দ্রুত আলমারির দরজা খুললো। আলমিরার দরজা খুলতেই সেই সুন্দর লাল লেহেঙ্গাটি তার চোখে পড়লো। সেটি তার মা তার বিয়ের দিনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করে রেখেছেন।
তার মা প্রায়ই বলতেন যে, আমার মেয়ে যখন এটা পরবে, এবং সে কনে হয়ে সাজবে তখন তাকে রাজকুমারীর মতো দেখাবে। এছাড়াও তার সামনে তখন একটা ভালো স্যুট, একটা ভালো বিছানার চাদর, একটা ডিনার সেট, একটা চায়ের সেট, আরও কত কী দামী দামী ও আকর্ষণীয় জিনিস-পত্র চোখের সামনে পড়লো। মা আরো অনেক মূল্যবান আরো সুন্দর জিনিস গোপনে তার বিয়ের জন্য তার মা বানিয়ে রেখেছিলেন, যেগুলো সে কেবল আজ দেখতে পেয়েছে।
সবকিছু উল্টেপাল্টে দেখার পর, অবশেষে সে গয়নাগুলো খুঁজে পেল, কিন্তু তার ভয় করছিলো, তাই গয়নাগুলো নেয়ার তার সাহস হচ্ছিলো না। সে ঘরের চারপাশে তাকিয়ে একটি নতুন ফ্রিজ দেখতে পেলো। তার জন্য আরো থালা-বাসন, সবকিছু রাখা ছিলো। একজন মা নিজের মেয়েকে বিয়ের কনে কল্পনা করে তার জন্য সম্পূর্ণ জিনিসপত্র তৈরী করে রেখেছিলেন।
এসব দেখার পর তার বিবেক তাকে দংশন করছিলো। সে চিন্তায় ডুবে ছিলো। আমি যখন মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছি তখন থেকে এখন পর্যন্ত, আমার বাবা-মা আমার জন্য কী কী করেছেন ভাবতে লাগলো। খাবার, পোশাক, শিক্ষাসহ আমার ছোট-বড় সব ইচ্ছা, সবই তাদের রক্ত ও ঘামে পূর্ণ হয়েছে। তারা আমার পরবর্তী বাড়ির আসবাবপত্রও তৈরি করে রেখেছেন? এখন আমি কী করবো, আমি আমার মা-বাবার অবিশ্বস্ত ও বিশ্বাসঘাতক হবো? আমি আমার বাবা-মাকে হত্যা করে নিজেই মরে যাবো? আমার ভালোবাসার সাগর আমার ঘরেই আছে আর আমি ভালোবাসার এই নদী কীভাবে পার হবো? এসব ভাবতে ভাবতে তার চোখ ভিজে উঠলো, তার এমন উচ্চশিক্ষা এবং বোকামির জন্য কাঁদতে ইচ্ছে করলো।
ইতিমধ্যে তার মা এসে হাজির হলেন। বললেন এই নাও, মা! তোর পছন্দের পরোটা খা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য এত লম্বা সফর হবে, আমার রাজকন্যা হয়তো ক্ষুধার্ত থাকবে এটি আমি সহ্য করতে পারবো না। তুই স্কুল থেকে কলেজ পার হয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছিস, কিন্তু এই দীর্ঘ পথ পর্যন্ত তোর মা তোকে কখনও নাস্তা ছাড়া পাঠাননি। আজ যদি তুই নাস্তা ছাড়া চলে যাস তাহলে তোর মা তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আফসোস করতে থাকবে।
মায়ের কথা শুনে সে অসহায়ভাবে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলো। মা তার কপালে চুমু খেয়ে চোখের অশ্রু মুছে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে কাঁদছোস কেন?" সে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো, "মা, তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো তোমার ভালোবাসার নদীর গভীরতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিলো না।" এবার মা বলে উঠলেন, এটা কোনো ঘটনা? কেউ কি মায়ের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারে?
ইতিমধ্যে তার মোবাইল বারবার বেজে উঠলো। সে কল কেটে দিয়ে একটি ম্যাসেজ লিখলো,"দুঃখিত, আমি আসতে পারবো না এবং আমি কখনই তোমার কাছে আসতে পারবো না। কারণ আমি যে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তোমার কাছে পালিয়ে আসতে চেয়েছিলাম তার চেয়েও বেশি ভালোবাসা আমার মা-বাবার কাছে পেয়ে গেছি, আমার মা শুধু ভালোবাসা নয়, তিনি ভালোবাসার জন্মদাতাও বটে। আমার মা ভালোবাসার এমন এক গভীর সাগর, যে সাগর পাড়ি দেয়া আমার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়, এটা কোনো গল্প নয় এটা বাস্তব জীবনের গল্প,