
21/05/2022
ফেসবুক মার্কেটিং এর সবচেয়ে কার্যকরী কৌশলসমূহ:
১. লক্ষ্য নির্ধারণ (Set your Goals)
২. লক্ষিত ক্রেতা নির্দিষ্ট করা (Define your Target Audience)
৩. বিষয়বস্তুর বিন্যাস এবং নিয়মিত পোস্ট করা (Choose Content formats and Schedule posts)
৪. বিজ্ঞাপন দিয়ে পোস্ট বুস্ট করা (Boost your post with Facebook Ads)
৫. ফেসবুক টুল ব্যবহার করা (Make use of Facebook Tools)
৬. কার্যকারিতা পরিমাপ করা (Measure your effectiveness)
নিচে এগুলোর বিষয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:
১. লক্ষ্য নির্ধারণ (Set your Goals)
এটি হচ্ছে সব ধরনের লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার শুরু। সাধারনত প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রেই একটি লক্ষ্য নিয়ে শুরু করতে হয়। অর্থাৎ, প্রতিটি কোম্পানির জন্য সাধারণ লক্ষ্য একই। Facebook আমাদেরকে নিম্নলিখিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়:
ক. লিড জেনারেট করা বা কাষ্টমার সম্পর্কে তথ্য পেতে সাহায্য করে;
খ. কোন্ কোন্ লিড কাজে লাগবে বা কোন্ কোন্ লিড আমাদের ব্যবসাকে বাড়াবে সেটি বুঝতে সাহায্য করে;
গ. একটি ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বাড়াতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, কাষ্টমারকে আমার সংশ্লিষ্ট ব্যবসার ওয়েবসাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে;
ঘ. কাস্টমারকে আমার বিজনেস ওয়েবসাইটে পৌঁছাতে, তাকে মোটিভেট করতে এবং বিক্রয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (Increase Conversion and Sales);
ঙ. কাস্টমার সাপোর্টকে উন্নত করতে সাহায্য করে;
চ. ব্র্যান্ড বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করে;
ছ. আমাদের ব্যবসার সাথে গ্রাহকদের অংশগ্রহন বাড়িয়ে তোলে;
জ. কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ বা Job Recruitment এ সাহায্য করে।
২. লক্ষিত ক্রেতা নির্দিষ্ট করা (Define your Target Audience)
আমাদের টার্গেট কাস্টমারই হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সুতরাং, তাদেরকে খূঁজে বের করে নির্বাচনের জন্যই মূলত আমরা আমাদের এড ফরম্যাট তৈরী করবো ও প্রয়োজনীয় কৌশল প্রয়োগ করবো। এক্ষেত্রে, প্রথমত, নিম্নলিখিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ:
ক. আমার পণ্য‘টি পুরুষ, না-কি মহিলাদের জন্য?
খ. আমার গ্রাহকদের বয়স কত?
গ. তাদের বেশীর ভাগের পেশা বা কাজ কি?
ঘ. তাদের বেশীর ভাগের সমস্যাগুলোর মধ্যে কোনো মিল আছে কি-না? তাদের কোনো নির্দিষ্ট চাহিদা বা প্রয়োজন বা কোনো কিছূ নিয়ে ভোগান্তি আছে কি-না?
ঙ. কেন তারা আপনার পণ্য ব্যবহার করবে?
চ. তারা আমার পন্যটি পেয়ে কতটুকু উপকার পাবেন?
উপরোক্ত এ‘সকাল প্রশ্নের উত্তর বিবেচনা করে আমাদের কে আমাদের কাস্টমারদের প্রোফাইল তৈরী করে এড দিতে হবে।
৩. বিষয়বস্তুর বিন্যাস এবং নিয়মিত পোস্ট করা (Choose Content formats and Schedule posts)
এটি মনে রাখা খুব জরুরী যে, যত বেশি সংখ্যক কন্টেন্ট, তত বেশী কাস্টমার বা ক্রেতা। তবে, কন্টেন্ট প্রদানে ফরম্যাটের বৈচিত্র্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে, ধারাবাহিক প্রকাশনা, এবং গ্রাহকদের সাথে সার্বক্ষনিক সংযুক্ত থাকা কাস্টমারকে আরো বেশী এনগেজ্ড হতে সাহায্য করে।
‘’Correct content mix’’ আরেকটি প্রক্রিয়া যেটির ব্যপারে সাবধান থাকা জরূরী। ঘন ঘন প্রোডাক্ট বিক্রয়ের প্রচারমূলক পোস্ট সচরাচর কাস্টমারের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে সাহায্য করে না। এছাড়াও, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিক্রয়মূলক প্রচারের জন্য অতি-পীড়িত (overly-pushy marketers) বিপণনকারীদের (ঘন ঘন প্রোডাক্ট বিক্রয়ের প্রচারমূলক পোস্ট) নিরুৎসাহী করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তি দিতে পারে। সুতরাং, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শিক্ষামূলক, তথ্যপূর্ণ, বিনোদনমূলক এবং প্রচারমূলক মিশ্র কন্টেন্ট প্রদান করতে হবে। পোস্টে উচ্চ-মানের এবং প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট দিলে গ্রাহকরা পণ্য সম্পর্কে আরও জানতে পেরে খুশি হয় ও পরবর্তী কন্টেন্ট এর জন্য অপেক্ষা করে।
আকর্ষণীয় ও কার্যকর কন্টেন্ট তৈরি করতে প্রয়োজনে দক্ষ কন্টেন্ট রাইটার (Content Writer) এর সাহায্য নিতে হবে। এটি একটি সৃজনশীল কাজ এবং এ‘ধরনের বিশেষজ্ঞরা জানেন কোন্ ধরনের কন্টেন্ট একটি নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের সেল বাড়াবে এবং লক্ষ্য অর্জনে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য করবে। পোস্টে ছবি, টেক্সট পোস্ট, ভিডিও, গল্প এবং লিঙ্কগুলি ব্যবহার করা এবং ছবিগুলি ব্যবহার করার সময় পেশাদার এবং উচ্চ রেজুলুশন সম্পন্ন হওয়া উচিত। স্টক ছবি ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে। কোনো টপিক বা প্রোডাক্ট প্রমোশনের ক্ষেত্রে ভিডিও পোস্ট কাস্টমারদেরকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে এবং এনগেজ করে। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী সাউন্ড বন্ধ করে ভিডিও দেখতে পছন্দ করে, তাই নিশ্চিত করা দরকার যে, এটি অডিও ছাড়াই আমার ধারণাকে প্রকাশ করে। টেক্সট পোস্ট হলে তিন বাক্যে শেষ করা বেশী কার্যকরী। আমাদের কাজ হল সেগুলিকে আমাদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা: আকর্ষণ করা, ভ্যালু এড করা এবং কাজে লাগোনো। ওয়েবসাইটে একটি লিঙ্ক যোগ করার সময় ছবির দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পোস্ট প্রকাশের ধারাবাহিকতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি। সপ্তাহে ৫টি পোস্ট তৈরি করে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে সিডিউল পোস্ট প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। এর সাহায্যে, আমাদের প্রোডাক্টের বিপণন কৌশলের একটি পরিষ্কার ফিডব্যাক পাওয়া যায়। আমরা যে সমস্ত বিপণন চ্যানেলগুলি ব্যবহার করবো যেমন, ফেইসবুক পেইজের সাথে ইনস্টাগ্রাম, টুইটার,লিংকড ইন, ইউটিউব ইত্যাদি সেগুলোর প্রতিটির লক্ষ্য অনুযায়ী একটি কন্টেন্টের ফরম্যাট সাজিয়ে সুবিন্যস্ত উপায়ে সেগুলি সমস্ত চ্যানেলে বিতরণ পাবলিশ করবো।
অতএব, একটি কার্যকর প্রোডাক্ট বিপণন ক্যালেন্ডার (Product Marketing Calender) তৈরি করতে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি মাথায় রেখে কাজ করবো:
ক. আমরা ব্যবহার করি এরকম সমস্ত চ্যানেলের উপযোগী পোস্ট তৈরী করেছি কি-না;
খ. আমি যে যে ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করি সেগুলোর সব ক‘টিকেই উপস্থাপন করছি কি-না;
গ. প্রকাশের তারিখ এবং সময় ঠিক করেছি কি-না;
ঘ. আমার পোস্টের বিষয় নির্ধারণ করেছি কি-না ;
ঙ. কোনো লিংকের URL ব্যবহার করে থাকলে তার সঠিক লিংকটি‘কি বের করে রেখেছি কি-না;
চ. যে ছবি বা ছবিগুলো পোস্ট করবো সেগুলোর লিঙ্ক ঠিক আছে কি-না;
ছ. যে পোস্টটি করবো সেটি গোছানো বা তৈরী করা আছে কি-না ইত্যাদি।
সৌভাগ্যবশত, Facebook এ কোনো পোস্টের সময়সূচী এবং স্বয়ংক্রিয় প্রকাশনা সেট আপ করার (Auto-publishing) একটি সুযোগ রয়েছে। সুতরাং, এ‘ নিয়ে ভুল হবার কোনো সুযোগ নেই। একটি পোস্ট শিডিউল করতে, পাবলিশিং টুলে যেতে হয়। ফেইসবুকের পাবলিশিং টুল (Publishing Tool) এর মাধ্যমে আমরা এটি করতে পারবো।
৪. বিজ্ঞাপন দিয়ে পোস্ট বুস্ট করা (Boost your post with Facebook Ads)
ফেসবুক একটি চমৎকার বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম। এটি ব্র্যান্ডগুলিকে সব ধরনের অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়, বিভিন্ন ধরনের টার্গেট অডিয়েন্স খূঁজে বের করার সুযোগ করে দেয়, অডিয়েন্সের কাছে সফলভাবে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয় এবং তুলনামূলকভাবে সস্তা বা কম মূল্যে এই সেবাগুলো প্রদান করে। তবে, এটি একটি বিডিং কৌশল প্রক্রিয়ায় কাজ করে। আমাদেরকে বিজ্ঞাপনের সময়, কোথায় কোথায় বিজ্ঞাপনটি দিতে চাই (Ad Placement) এবং লক্ষিত কাস্টমারকে (target Audience) নির্বাচন করে দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন তৈরি করা শুরু করতে Ad Center (বিজ্ঞাপন কেন্দ্র) এ গিয়ে Create Ad (বিজ্ঞাপন তৈরি করুন) এ ক্লিক করে কাজ শুরু করতে হবে।
৫. ফেসবুক টুল ব্যবহার করা (Make use of Facebook Tools)
ফেইসবুক চ্যানেলের সাথে আমাদের কাজকে আরও কার্যকর এবং লাভজনক করে তুলতে পারে এমন অনেক দরকারী টুল রয়েছে। নীচের বেশ কয়েকটি টুলের একটি তালিকা উল্লেখ করা হলো:
ক. ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জার (Messenger)
খ. ক্লিক-টু-ম্যাসেঞ্জার এডস (Click-to-Messenger)
গ. পেইজেস টু ওয়াচ (Pages to watch)
ঘ. পোস্টে আংশগ্রহন করা ব্যবহারকারী (Invite engaged users)
ফেইইসবুকে ব্যবহার উপযোগী উপরোক্ত টুলগুলো খুবই প্রয়োজনীয় ও কার্যকর।
৬. কার্যকারিতা পরিমাপ করা (Measure your effectiveness)
মার্কেটিংয়ের কৌশলগুলো নিজে নিজেই কাজ করবে না। এর কার্যকারিতা মূলত নির্ভর করে আমাদের অডিয়েন্স আমাদের ব্র্যান্ডের সাথে কতটা ভালোভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করে তার উপর। তাদের এনগেইজমেন্ট মনিটর করার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রয়োগকৃত কৌশলগুলো কতটা কার্যকরভাবে কাজ করলো সেসবের একটি পরিষ্কার চিত্র পাবো। এভাবে আমরা বুঝতে পারবো কেন এবং কোন্ পদ্ধতিটি আমাদের জন্য সর্বাধিক উপযোগী এবং কো্ কোনগুলি আমাদের অডিয়েন্সেদের আকর্ষণ করার মতো এবং কোন্ কোন্ বিষয়গুলো আমাদের অডিয়েন্সের জন্য অপছন্দের যেগুলো থেকে আমরা দুরে থাকবো।
সৌভাগ্যবশত, আমাদের বিজনেসে মার্কেটিংয়ের উপযোগীতা ও কার্যকারিতা ট্র্যাক করার জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের সেবা বা সহযোগীতা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, Facebook এর ‘’Insight Tool’’ এর মাধ্যমে এই কাজগুলো করা যায়। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কোন ফরম্যাটগুলি সবচেয়ে ভাল কাজ করছে এবং ‘’Content Mix’’ সঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে কিনা। আমরা পেইজ ভিউ, পোস্ট এনগেজমেন্ট, স্টোরি রিচ, পেইজ অ্যাকশন, ফলোয়ার এনালাইসিস এবং আরও অনেক মূল্যবান ডেটা দেখতে পারি।
মিজান খান
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও ডিজিটাল অন্ট্রাপ্রনাড়