07/01/2021
নিষিদ্ধ তাবিজ হলো যা তা'মিমা। কিন্তু সব তাবিজ তামিমা না। বিস্তারিত জানতে হলে মনযোগ সহকারে পোস্টি পড়েন।
তাবিজ এবং তা'মিমা কী একই বস্তু❓❓
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে লিখেন-
والتمائم جمع تميمة وهي خرز أو قلادة تعلق في الرأس كانوا في الجاهلية يعتقدون أن ذلك يدفع الآفات والتولة بكسر المثناة وفتح الواو واللام مخففا شيء كانت المرأة تجلب به محبة زوجها وهو ضرب من السحر وإنما كان ذلك من الشرك لأنهم أرادوا دفع المضار وجلب المنافع من عند غير الله ولا يدخل في ذلك ما كان بأسماء الله وكلامه
তামায়েম শব্দটি তামীমা শব্দের বহুবচন। যা পুঁতি বা মালা সাদৃশ্য। মাথায় লটকানো হয়। জাহেলী যুগে বিশ্বাস করা হতো যে, এর দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়া যায়, মহিলারা এসব ব্যবহার করতো স্বামীর মোহাব্বত অর্জন করতে। এটি জাদুরই একটি প্রকার। এটি শিরকের অন্তুর্ভূক্ত। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের থেকে বিপদমুক্ত হওয়া ও উপকার অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এ শিরকের অন্তুর্ভূক্ত হবে না যেসব তাবীজ কবচে আল্লাহর নাম বা কালাম থাকে।
[ফাতহুল বারী-১/১৬৬, ঝাড়ফুক অধ্যায়]
🌻🍀🌻প্রথম কথা হলো:-
তাবীযের অর্থ আশ্রয় প্রার্থনা(আমরা যেই আউযুবিল্লাহ বলি এটাও এক প্রকার তাবীয)।
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ—
আর আমি কুরআনে এমন কিছু আয়াত নাযিল করেছি যা মু’মিনদের জন্য শেফা এবং রহমত স্বরূপ।’
(সুরা বনী ইস্রাঈল: ৮২)
🌻🍀🌻দ্বিতীয় কথা হলো:—
আহলে সুন্নত ওয়া জামাতের ইজমা ভিত্তিক আক্বীদাহ হচ্ছেঃ
''যদি তাবীজে কুফরী বা নাজায়েজ কোন কিছু না থাকে, কোন অস্পষ্ট বা সাংকেতিক কালিমা না থাকে, এই তাবিযের উপর কেউ ভরসা না করে এবং এই তাবীয টি কুরআন-সুন্নাহর কোন আয়াত কিংবা দুয়া সম্বলিত হয় তাহলে তা সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয।''
এই আক্বীদার সাথে একমত হয়েছেন সালফে সালেগীনগন। এমনকি যারা সকল প্রকার তাবীয কে ব্যাপক শিরক বলে তাদেরও মান্যবর,
☞ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ তার⇨মাজমূউল ফাতাওয়ায়,
☞ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম তার ⇨আত ত্বীব্বে,
☞আল্লামা শাওক্বানী তার ⇨নাইলুল আওত্বারে,
☞নবাব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী তার⇨আত তাবীযাত কিতাবে সহ অন্যান্য আরো অনেক সালাফীই ওহীর শব্দ/বাক্য দ্বারা লিখিত তাবিজ কে জায়েজ বলেছেন।
🌺🌻🌺তাবিজের অনুমোদন রাসুলুল্লাহ সঃ থেকে কীভাবে এসেছে? ?
খেয়াল করুন—তামীমা শিরক এই হাদীসে ঝাাঁড়ফুক কেও শিরক বলা হয়েছেঃ—
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ الرُّقَى، وَالتَّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
রাসুলুল্লাহ সঃ বলেন:— নিশ্চয়ই ঝাড়ফুঁক, তামীমা এবং যাদুটোনা শিরক ৷৷৷
قُلْتُ: لِمَ تَقُولُ هَذَا؟ وَاللَّهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِي تَقْذِفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلَانٍ الْيَهُودِيِّ يَرْقِينِي فَإِذَا رَقَانِي
سَكَنَتْ،
যাইনাব বলেন, আমি বললাম, আপনি এসব কি বলেন? আল্লাহর কসম! আমার চোখ থেকে পানি পড়তো, আমি অমুক ইয়াহুদী কর্তৃক «ঝাড়ফুঁক» করাতাম।
সে আমাকে «ঝাড়ফুঁক» করলে (চোখের) পানি পড়া বন্ধ হয়ে যেতো।
فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: إِنَّمَا ذَاكَ عَمَلُ الشَّيْطَانِ
আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, এগুলো শয়তানের কাজ।
(সুনানে আবু দাউদ, হা/ ৩৮৮৩)
এরপরে, পরবর্তীতে ঝাড়ফুক সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সঃ বললেনঃ—
فَقَالَ: اعْرِضُوا عَلَيَّ رُقَاكُمْ لَا بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ تَكُنْ شِرْكًا
তোমাদের ঝাড়ফুকের ব্যবস্থাগুলো আমার সামনে পেশ করো; তবে যেসব ঝাড়ফুঁক শির্কের পর্যায়ে পড়ে না, তাতে কোনো দোষ নেই।[আবু দাউদঃ ৩৮৮৬]
এটাই হচ্ছে তাবিজের ক্ষেত্রেও রাসুলুল্লাহর সঃ অনুমোদন যে—কুফরী কালামের ঝাড়ফুক যেমনভাবে শিরক এবং ওহীর কালামের ঝাড়ফুঁক যেমনভাবে জায়েজ, ঠিক তেমন ই কুফরী কালামের তামীমা শিরক এবং ওহীর কালামের যেসকল তাবীজের মধ্যে শিরকী কালাম নেই ,তাতে কোনো সমস্যাও নেই৷৷
↓
🌺🍃🌺সাহাবী—তাবেঈদের দৃষ্টিতে তাবিজঃ—
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُعَلِّمُهُمْ مِنَ الْفَزَعِ كَلِمَاتٍ " أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ " . وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو يُعَلِّمُهُنَّ مَنْ عَقَلَ مِنْ بَنِيهِ وَمَنْ لَمْ يَعْقِلْ كَتَبَهُ فَأَعْلَقَهُ عَلَيْهِ .
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ভীতিকর পরিস্থিতিতে এ বাক্যগুলোর মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করার শিক্ষা দিতেনঃ
“أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ ”
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) এ বাক্যগুলো তার বালেগ সন্তানদের শিখাতেন এবং নাবালেগদের জন্য লিখে তা তার গলায় ঝুলিয়ে দিতেন।
[আবু দাউদঃ ৩৮৯৩, তিরমিযীঃ৩৫২৮, ইবনে আবি শাইবাহঃ২৩৫৪৭, সহীহ আল জামেঃ৭০১, মিশকাতঃ২৪৭৭]
হাদীসটির স্তরঃ হাসান ৷
মুহাম্মদ বিন ইসহাক(৮০-১৫০হি) এবং আমর বিন শুয়াইব (মৃঃ ১১৮হি) সমসাময়িক ছিলেন ৷৷ এবং তারা উভয়েই সিকাহ/হাসানুল হাদীস ৷৷৷
↓
19612 - أَخْبَرَنَا أَبُو زَكَرِيَّا بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ الْحَسَنِ قَالَا: ثنا أَبُو الْعَبَّاسِ الْأَصَمُّ، ثنا بَحْرُ بْنُ نَصْرٍ، ثنا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي نَافِعُ بْنُ يَزِيدَ، أَنَّهُ سَأَلَ يَحْيَى بْنَ سَعِيدٍ عَنِ الرُّقَى وَتَعْلِيقِ الْكُتُبِ، فَقَالَ: كَانَ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيِّبِ يَأْمُرُ بِتَعْلِيقِ الْقُرْآنِ وَقَالَ: لَا بَأْسَ بِهِ
নাফে’ বলেন: আমি ইয়াইয়া বিন সাইদ রহঃ কে ঝাড়ফুঁক এবং তাবিজ লটকানো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব রাঃ কুরআন লিখে লটকানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন:এতে কোন সমস্যা নেই।
[আস সুনানুল কুবরাـ১৯৬১২]
এই সনদটা সম্পূর্ণ সহীহ ৷৷৷ কোনো রাবীর উপরেই প্রখ্যাত মুহাদ্দিসদের কোনোই জরাহ নাই ৷৷
↓
23549 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عَفَّانُ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، «أَنَّهُ رَأَى فِي عَضُدِ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ خَيْطًا»
আইয়ূব রহঃ বলেন:—আমি উবাইদুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ এর গলায় লটকানো সুতা দেখেছি ৷ (ইবনে আবি শাইবাঃ ২৩৫৪৯ সনদ সহীহ)
↓
23508 - حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: إِذَا عَسِرَ عَلَى الْمَرْأَةِ وَلَدُهَا، فَيَكْتُبُ هَاتَيْنِ الْآيَتَيْنِ وَالْكَلِمَاتِ فِي صَحْفَةٍ ثُمَّ تُغْسَلُ فَتُسْقَى مِنْهَا: «بِسْمِ اللَّهِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ، سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَرَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ» {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا} [النازعات: 46] {كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ، بَلَاغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ} [الأحقاف: 35]
ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন:— একজন মহিলা সন্তান প্রসব করলো ৷ সন্তানকে গোসল দেওয়ানোর পরে সে যখন সিক্ত হলো-আমি একটি কাগজে আয়াতদ্বয়ের শব্দগুলো লিখলামঃ........
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাঃ ২৩৫০৮)
হাদীসটির স্তরঃ হাসান লি গাইরিহী ৷ হাদীসটির সকলেই সিকাহ ৷ শুধুমাত্র ইবনে আবি লাইলা সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে ৷ যেমনঃ-
قال أبو زرعة الرازي: «هو صالح، ليس بأقوى ما يكون»
وقال أبو حاتم: «محله الصدق، وكان سيئ الحفظ، شغل بالقضاء، فساء حفظه، لا يُتَهْم، إنما يُنكر عليه كثرة الخطأ، يُكتب حديثه»
وقال يحيى بن معين عنه: «ليس بذاك ، وقد روى له النسائي وابن ماجه وأبو داود والترمذي في سننهم »
(সিয়ারঃ ৬/৩১১,মিজানুল ই'তিদালঃ১০৮৩৪)
ইবনে তাইমিয়্যা রহঃ ইবনে আব্বাসের রাঃ তাবিজ লটকানোর আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহন করেছেন ৷
(দেখুনঃ -মাজমুঊল ফাতওয়াঃ ১৯/৬৪)
↓
23546 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ حَسَنٍ، عَنْ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ «أَنَّهُ كَانَ لَا يَرَى بَأْسًا أَنْ يَكْتُبَ الْقُرْآنَ فِي أَدِيمٍ ثُمَّ يُعَلِّقُهُ»
জাফর রহঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন: তার পিতা পাকা চামড়াতে কোরআনের লিখে শরীলে লটকানোতে কোন দোষনীয় মনে করতেন না ৷
[মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা.হাদীস নং.২৩৫৪৬]
এটা সহীহ হাদীস! !!!
23551 - حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ أَبَانَ بْنِ ثَعْلَبٍ، عَنْ يُونُسَ بْنِ خَبَّابٍ، قَالَ: سَأَلْتُ أَبَا جَعْفَرٍ عَنِ ”التَّعْوِيذِ“ يُعَلَّقُ عَلَى الصِّبْيَانِ، «فَرَخَّصَ فِيهِ»
ইউসুফ বিন খাব্বাব আবু জা'ফর রহঃ কে শিশুদের গলায় তা'বিজ লটকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন৷ তিনি অনুমতি দিলেন ৷৷
(ইবনে আবি শাইবাঃ২৩৫৫১)
হাদীসটির স্তরঃ সহীহ লি-গাইরিহী ৷
ইউনুস বিন খাব্বার এর বর্ননাকে সিয়া সিত্তাহের ইমামগণেরা গ্রহন করেছেন এবং সহীহ
বলেছেন ৷ দেখুনঃ- বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৩১,,৭০৩ ৷ তিরমিজী, হা/২৩২৫,,ইবনে মাজাহ, হা/৩৩৩,,১৪৪৮ ইত্যাদি ৷৷
তার সম্পর্কে জরাহ আছে যে, তিনি উসমান রাঃ কে রাসুলুল্লাহর সঃ কন্যা হত্যাকারী ধারণা করে অভিশাপ করতেন ৷৷
সেই যুগের ফেৎনার কারণে হযরত উসমান রাঃ এবং আলী রাঃ কে গালি দেওয়ার দোষটা অনেক সাহাবীদের সম্পর্কেও পাওয়া যায় ৷৷ তাই বলে গালিদাতা ঐসকল সাহাবীরা সনদের মধ্যে থাকার কারণে হাদীসকেই জাল/বাতিল বলা যায় না ৷৷
উসমান রাঃ কে অভিশাপ করতেন জানার পরেও ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহঃসহ অনেক ইমাম ই তাকে সিকাহ/স্বদুক বলেছেন:—
وقال بن معين كان ثقة وكان يشتم عثمان
وقال بن شاهين في الثقات
قال عثمان بن أبي شيبة يونس بن خباب ثقة صدوق
[তাহযিবুত তাহযিব, রাবী নং ৮৪৮]
🌹🌺🌹সলফে সালেহীনদের দৃষ্টিতে তাবিজঃ—
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ-
وَيَجُوزُ أَنْ يَكْتُبَ لِلْمُصَابِ وَغَيْرِهِ مِنْ الْمَرْضَى شَيْئًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ وَذِكْرُهُ بِالْمِدَادِ الْمُبَاحِ وَيُغْسَلُ وَيُسْقَى كَمَا نَصَّ عَلَى ذَلِكَ أَحْمَد وَغَيْرُهُ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَد: قَرَأْت عَلَى أَبِي ثَنَا يَعْلَى بْنُ عُبَيْدٍ؛ ثَنَا سُفْيَانُ؛ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ أَبِي لَيْلَى عَنْ الْحَكَمِ؛ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ؛ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: إذَا عَسِرَ عَلَى الْمَرْأَةِ وِلَادَتُهَا فَلْيَكْتُبْ: بِسْمِ اللَّهِ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ....
বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর যিক্বর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জায়েজ। তারপর এ আলোচনার শেষদিকে তিনি তাবিজাত বৈধ হওয়ার পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর একটি আছার পেশ করেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) কাগজের টুকরায় তাবিজ লিখে দিতেন,তা সন্তানসম্ভবা নারীদের বাহুতে বেঁধে দেয়া হতো। {মাজমাঊল ফাতওয়া -১৯/৬৪}
তবে,প্রধান শর্ত হচ্ছেঃ কোনো প্রকারের শির্কী-কুফরী কোনোকিছু তাবিজের মধ্যে থাকা যাবেনা ৷৷
কেউ কেউ সুরা বাকারাঃ ৪১ কে দলীল বানিয়ে শর্তারোপ করেছেন—তাবিজের বিনিময়ে টাকা পয়সার লেনদেন করা তথা ব্যবসা করা হারাম ৷৷কেননা,আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনের আয়াতের বিনিময়ে মূল্য গ্রহন করতে নিষেধ করেছেন ৷৷৷৷
তবে অনেকেই আবার বলেছেন যে, আবু দাউদঃ ৩৮৯৬ মোতাবেক যেহেতু আল্লাহর কালাম দিয়ে ঝাড়ফুক করে বিনিময় নেওয়া জায়েজ, সেহেতু আল্লাহর কালাম দিয়ে তৈরীকৃত তাবীজের বিনিময় নেওয়াও জায়েজ হবে ৷৷৷
☎যে ব্যক্তি "তামিমা" লটকালো,সে শির্ক করলো(মুসনাদে আহমদ)—এই সমস্ত সকল হাদীসগুলো সম্পর্কে
🌺আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে লিখেন-
ﻭﺍﻟﺘﻤﺎﺋﻢ ﺟﻤﻊ ﺗﻤﻴﻤﺔ ﻭﻫﻲ ﺧﺮﺯ ﺃﻭ ﻗﻼﺩﺓ ﺗﻌﻠﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﺃﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻳﻌﺘﻘﺪﻭﻥ ﺃﻥ ﺫﻟﻚ ﻳﺪﻓﻊ ﺍﻵﻓﺎﺕ ﻭﺍﻟﺘﻮﻟﺔ ﺑﻜﺴﺮ ﺍﻟﻤﺜﻨﺎﺓ ﻭﻓﺘﺢ ﺍﻟﻮﺍﻭ ﻭﺍﻟﻼﻡ ﻣﺨﻔﻔﺎ ﺷﻲﺀ ﻛﺎﻧﺖ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺗﺠﻠﺐ ﺑﻪ ﻣﺤﺒﺔ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﻭﻫﻮ ﺿﺮﺏ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﺮﻙ ﻷﻧﻬﻢ ﺃﺭﺍﺩﻭﺍ ﺩﻓﻊ ﺍﻟﻤﻀﺎﺭ ﻭﺟﻠﺐ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻊ ﻣﻦ ﻋﻨﺪ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺑﺄﺳﻤﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻛﻼﻣﻪ
তামায়েম শব্দটি তামীমা শব্দের বহুবচন। যা পুঁতি বা মালা সাদৃশ্য। মাথায় লটকানো হয়। জাহেলী যুগে বিশ্বাস করা হতো যে, এর দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়া যায়, মহিলারা এসব ব্যবহার করতো স্বামীর মোহাব্বত অর্জন করতে। এটি জাদুরই একটি প্রকার। এটি শিরকের অন্তুর্ভূক্ত। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্যের থেকে বিপদমুক্ত হওয়া ও উপকার অর্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এ শিরকের অন্তুর্ভূক্ত হবে না যেসব তাবীজ কবচে আল্লাহর নাম বা কালাম থাকে। {ফাতহুল বারী-১/১৬৬, ঝারফুক অধ্যায়}
🌻আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ উল্লেখ করেন- ﺇﻧﻤﺎ ﺗﻜﺮﻩ ﺍﻟﻌﻮﺫﺓ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﺑﻐﻴﺮ ﻟﺴﺎﻥ ﺍﻟﻌﺮﺏ
، ﻭﻻ ﻳﺪﺭﻯ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻭﻟﻌﻠﻪ ﻳﺪﺧﻠﻪ ﺳﺤﺮ ﺃﻭ ﻛﻔﺮ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ، ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ
ﺃﻭ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ
নিশ্চয় নিষিদ্ধ তাবীজ হল যা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় লিখা হয়, বুঝা যায় না তাতে কি আছে? অথবা যাতে জাদু, কুফরী ইত্যাদি কথা থাকে। আর যেসব তাবীজে কুরআন বা দুআ সম্বলিত হয় তা ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই। {ফাতওয়ায়ে শামী-৬/৩৬৩}
🌺মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন-
ﺇﺫﺍ ﻛﺘﺐ ﻟﻪ ﺍﻟﻨﺸﺮﺓ ﻭﻫﻲ ﻛﺎﻟﺘﻌﻮﻳﺬ ﻭﺍﻟﺮﻗﻴﺔ ﻭﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺎﻟﻀﻤﻴﺮ ﺍﻟﺒﺎﺭﺯ ﻓﻲ ﻗﻮﻟﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻱ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻫﻮ ﻣﻦ ﻋﻤﻞ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺍﻟﻨﻮﻉ ﺍﻟﺬﻱ ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﺎﻫﻠﻴﺔ ﻳﻌﺎﻟﺠﻮﻥ ﺑﻪ ﻭﻳﻌﺘﻘﺪﻭﻥ ﻓﻴﻪ ﻭﺃﻣﺎ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻵﻳﺎﺕ ﺍﻟﻘﺮﺁﻧﻴﺔ ﻭﺍﻷﺳﻤﺎﺀ ﻭﺍﻟﺼﻔﺎﺕ ﺍﻟﺮﺑﺎﻧﻴﺔ ﻭﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﺍﻟﻤﺄﺛﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺒﻮﻳﺔ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ ﺑﻞ ﻳﺴﺘﺤﺐ ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﺗﻌﻮﻳﺬﺍ ﺃﻭ ﺭﻗﻴﺔ ﺃﻭ ﻧﺸﺮﺓ ﻭﺃﻣﺎ ﻋﻠﻰ ﻟﻐﺔ ﺍﻟﻌﺒﺮﺍﻧﻴﺔ ﻭﻧﺤﻮﻫﺎ ﻓﻴﻤﺘﻨﻊ ﻻﺣﺘﻤﺎﻝ ﺍﻟﺸﺮﻙ ﻓﻴﻬﺎ
যদি তাবীজের মত কাগজ লিখা হয়। রাসূল সাঃ এর বানী “এটি শয়তানী কর্ম” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল জাহেলী যুগে যদ্বারা চিকিৎসা করা হতো ও যার উপর নির্ভর করা হতো। আর যা কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, আল্লাহর সিফাত সম্বলিত, দুআয়ে মাসুরা হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। বরং এটি মুস্তাহাব। চাই সেটি তাবীজ হোক, বা ঝাঁড়ফুক হোক বা কাগজে লিখা হোক। আর যেসব ইবরানী ও অন্যান্য ভাষায় লিখা হয় তা নিষিদ্ধ। কারণ তাতে শিরকের সম্ভাবনা আছে। {মিরকাতুল মাফাতীহ-৮/৩২১}
সুতরাং সকল প্রকার তাবীযকে শিরিক বললে এসকল সাহাবী, তাবেয়ী ও উলামাদের ও মুশরিক বলতে হয়।(নাউযুবিল্লাহ)
তবে আমরা তাবিযের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করবোনা ৷ কেননা এতে ভালোর চেয়ে খারাপের সম্ভাবনাই বেশী। শরয়ী ঝাঁড়ফুক করব। কেননা এটিই স্পষ্ট ।
কিন্তু, ওহী দ্বারা লিখিত তাবিজ কে ঢালাওভাবে শিরক বললে—সাহাবী তাবেঈদের কে মুশরিক বলতে হবে, সলফে সালেহীনদের কে মুশরিক বলতে হবে ৷৷
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুক। আমিন