আসোবা আতোভা

আসোবা আতোভা লাভ কি যদি জান্নাতই না পাই!?

ধোলাইখাল ও লোহারপুলের ইতিহাস ও নামকরণ ||নামকরণ ও সূচনাঢাকার মুঘল রাজধানী জাহাঙ্গীরনগর প্রতিষ্ঠার সময় সুবাদার ইসলাম খানের...
24/10/2025

ধোলাইখাল ও লোহারপুলের ইতিহাস ও নামকরণ ||
নামকরণ ও সূচনা
ঢাকার মুঘল রাজধানী জাহাঙ্গীরনগর প্রতিষ্ঠার সময় সুবাদার ইসলাম খানের নির্দেশে ১৬০৮–১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে যে খালটি খনন করা হয়, তার নাম থেকেই আশপাশের এলাকা “ধোলাইখাল” নামে পরিচিত হয়। এই খালটি শহরের প্রতিরক্ষা ও নৌ-যাতায়াত—দুই উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হতো। প্রাচীন নথিতে ধোলাইখালের আলাদা কোনো “পূর্বনাম” পাওয়া যায় না; মুঘল আমল থেকেই ‘ধোলাই খাল’ নামেই পরিচিত। খালটি ডেমরার দিকে বালু নদী থেকে বের হয়ে দক্ষিণ–পশ্চিমে শহর কেটে বুড়িগঙ্গায় মিলব্যারাকের কাছে গিয়ে মিশেছিল।

বিস্তারিত ধোলাইখালের ইতিহাস:----

ধোলাইখাল – হারিয়ে যাওয়া এক জলপথের ইতিহাস

পুরান ঢাকার বুকে একসময় প্রবাহিত হতো ঐতিহাসিক ধোলাইখাল। এটি মূলত বুড়িগঙ্গা নদী থেকে শুরু হয়ে শাখা খাল হিসেবে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর–পূর্ব দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল।

📌 মোগল আমল:
মোগল সুবাদার ইসলাম খান ঢাকাকে রাজধানী করার পর শহরের ভেতরে যোগাযোগ ও নৌপথ সহজ করার জন্য খাল খননের উদ্যোগ নেন। সেই সময় ধোলাইখাল খনন করা হয়। এ খাল দিয়ে নৌকায় করে পণ্য আনা–নেওয়া হতো, ফলে ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এটি।

অনেকের মতে---
“ধোলাইখাল” নামটি এসেছে এখানকার কাপড় ধোয়ার কাজ থেকে। পুরান ঢাকার কারিগররা এই খালের পানি ব্যবহার করতেন কাপড় ধোয়া, রং করা ও নানা শিল্পকর্মে। এজন্য একে বলা হতো “ধোলাইখাল”।

📌 ব্রিটিশ আমল:
ব্রিটিশ শাসনামলে ধোলাইখাল আরও গুরুত্ব পায়। তখন এটিকে ঘিরে গড়ে ওঠে গুদামঘর, বাজার এবং নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ঢাকার লোহারপুল বা সূত্রাপুর এলাকায় প্রবেশের অন্যতম নৌপথ ছিল এই খাল।

📌 পতন ও বিলুপ্তি:
কালের আবর্তে ধীরে ধীরে ধোলাইখাল ভরাট হতে শুরু করে। ১৯৭০-এর দশকে খালটির বড় অংশ ভরাট হতে শুরু করে,এবং ১৯৮০ এর দশকে খালটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়,এরপর ১৯৯৭ সালে এর উপর নির্মিত হয় বক্স-কালভার্ট। আজ ধোলাইখাল নেই, তবে স্থাননাম হিসেবে এখনও ঢাকার মানচিত্রে বেঁচে আছে।

ধোলাইখাল শুধু একটি খাল ছিল না—এটি ছিল পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু এবং ঢাকার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

সূত্রাপুর ব্রিজ (লোহারপুল) – হারানো এক ইতিহাস

পুরান ঢাকার সুত্রাপুর এলাকায় ধোলাইখালের উপর একসময় দাঁড়িয়ে ছিল এক ঐতিহাসিক সেতু—লোহারপুল। কিন্তু স্থানীয় মানুষজন এই সেতুটিকে ডাকত “সূত্রাপুর ব্রিজ” নামে।

১৮৩২ সালে ঢাকার কালেক্টর মি. ওয়াল্টারের উদ্যোগে সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ধোলাইখাল পেরিয়ে সহজে নারায়ণগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় যাতায়াত নিশ্চিত করা। সেতুটি ছিল লোহার তৈরি ঝুলন্ত কাঠামো—তখনকার ঢাকায় একেবারেই ব্যতিক্রমী।

সূত্রাপুরের গুরুত্ব
সূত্রাপুর পুরান ঢাকার এক প্রাচীন জনপদ। মোগল আমলে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আবাসন গড়ে ওঠে। ধোলাইখালের তীরবর্তী এই এলাকা যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই সেতুটি স্থাপনের পর থেকেই স্থানীয়রা একে বলত “সূত্রাপুর ব্রিজ”।

পুনর্নির্মাণ ও প্রতিস্থাপন:---

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লোহার পুলটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর
লোহার পুলটি ভেঙে ফেলা হয় এবং এর স্থানে নতুন করে আরেকটি লোহার পুল তৈরি করা হয়।

১৯৯০–এর দশকে ধোলাইখাল ভরাট করে বক্স-কালভার্টে রূপান্তরিত করা হলে এই সেতুর অস্তিত্বও হারিয়ে যায়। আজ আর সেই সেতু নেই, তবে ইতিহাসে রয়ে গেছে “লোহারপুল” নামের পাশাপাশি তার আরেক নাম—সূত্রাপুর ব্রিজ।

ধোলাইখালের পথরেখা ও সেতু

খালের এক শাখা শহরের কেন্দ্র দিয়ে গিয়ে শাহবাগ–কাওরান বাজারের কাছে আম্বর ব্রিজ পার হতো (খাজা আম্বরের নামে)।

পুরান ঢাকার দিকে ফরাশগঞ্জ–গান্ডারিয়া অংশে খালের ওপর নির্মিত হয় ঢাকার একমাত্র ঝুলন্ত লোহার সেতু—লোহারপুল/ধোলাই ব্রিজ। এটি ছিল নারায়ণগঞ্জ–ঢাকা যাতায়াত সহজ করার এক বড় পদক্ষেপ।

পূর্বাংশে নারিন্দা সেতু (হায়াত ব্যাপারীর সেতু)—শহরের পূর্বভাগকে মূল শহরের সঙ্গে যুক্ত করা এক প্রাচীন সেতু—ধোলাইখালের ধারেই ছিল।

লোহারপুল সেতুর সম্পূর্ণ ইতিহাস (সংক্ষেপে টাইমলাইন)

নির্মাণ শুরু: ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দ (ইংল্যান্ড থেকে লোহার সামগ্রী এনে কাজ শুরু) ।

সমাপ্তি/উদ্বোধন: ১৮৩২—ঢাকার কালেক্টর মিস্টার ওয়াল্টার একটি এক-স্প্যানের ঝুলন্ত (hanging) লোহার সেতু নির্মাণ করেন। উদ্বোধনের দিন হাতি চালিয়ে সেতুর শক্তি পরীক্ষা করার কাহিনি প্রচলিত।

টোল আরোপ: ১৮৬৭–১৮৭২ সময়ে খালপথে প্রবেশকারী বড় নৌযানসহ চলাচলে টোল ধার্য হয়; পরে ১৮৭২ সালে টোল আদায়ের দায়িত্ব পৌরসভার হাতে যায়।

পরিণতি (ভাঙা/নতুনভাবে রূপান্তর): ১৯৯০ দশকে খালের বড় অংশ বক্স-কালভার্টে রূপ নিলে লোহারপুলও উঠে গিয়ে জায়গাটি পাকা সড়ক ও কালভার্টে রূপান্তরিত হয়—আজ সেখানে আর ঝুলন্ত সেতু নেই।

ধর্ম–সংস্কৃতি ও জনজীবন

ধোলাইখাল ছিল নৌকাবাইচ, সাঁতার ও উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। রোকনপুরের পাঁচ ভাই ঘাটসহ নানা ঘাটে মেলা বসত, আর হিন্দু সম্প্রদায় পূজা শেষে দেবমূর্তির বিসর্জন দিত এই খালেই।

আশেপাশের উল্লেখযোগ্য প্রাচীন স্থাপনা (ধোলাইখাল ঘিরে পুরান ঢাকায়)

বড় কাটরা (১৬৪৪–১৬৪৬)—শাহ সুজার সময়কার কারভাঁসারাই; চৌক বাজার–বুড়িগঙ্গার ধারে।

ছোট কাটরা (১৬৬৩–১৬৭১)—শায়েস্তা খাঁর আমলের কারভাঁসারাই; বড় কাটরা থেকে পূর্বে।

আহসান মঞ্জিল (নির্মাণ ১৮৫৯–১৮৭২; নবাবদের প্রাসাদ)—বুড়িগঙ্গার তীরে কুমারটুলিতে; আজ জাদুঘর।

লালবাগ কেল্লা (শুরু ১৬৭৮)—মুঘল দূর্গনির্মাণের অপূর্ণ নিদর্শন।

হোসেনি দালান (১৭শ শতক)—শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া কেন্দ্র।

আর্মেনিয়ান চার্চ (১৭৮১)—আরমানিটোলা; ইউরোপীয় আর্মেনীয় বণিকদের স্মারক।

বিনত বিবির মসজিদ (১৪৫৬–৫৭)—ঢাকার প্রাচীনতম টিকে থাকা মুসলিম স্থাপনা; নারিন্দায় হায়াত ব্যাপারীর সেতুর পাশে।

বাহাদুর শাহ পার্ক (সাবেক ভিক্টোরিয়া পার্ক, ১৯শ শতক)—স্বাধীনতা–বিপ্লবের স্মৃতি-বহনকারী উন্মুক্ত চত্বর।

ধোলাইখালের বর্তমান চেহারা

আজকের ধোলাইখাল এলাকায় (উত্তরে টিপু সুলতান রোড, দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া পার্ক, পূর্বে নারিন্দা, পশ্চিমে ইংলিশ রোড—খুব ছোট্ট এক ব্লক) পাঁচ হাজারেরও বেশি দোকান ও অসংখ্য কারখানা–ওয়ার্কশপ। প্রধান বাণিজ্য এখন গাড়ির যন্ত্রাংশ, স্যানিটারি ফিটিংস, ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি—অর্থাৎ জলপথ থেমে গেলেও বাণিজ্যের স্পন্দন থামেনি।
ছবিতে দেখা ‘লোহারপুল’ আজ নেই; কিন্তু ধোলাইখাল আমাদের নগর স্মৃতির অমলিন জলরেখা—ঢাকার জন্ম, বিকাশ আর হারিয়ে যাওয়া জলপথের গল্প একসঙ্গে ধরে রেখেছে।

কপি পেস্ট
লেখা-মোঃনাঈম ভুইয়া
এডমিন-ঢাকার গণপরিবহন
#ধোলাইখাল #লোহারপুল #সূত্রাপুর #পুরানঢাকা
#ঢাকারইতিহাস #ঢাকারঐতিহ্য
#পুরানঢাকারজীবন #ঢাকারসংস্কৃতি

 #ঢাকা_গেট_ও_মীর_জুমলার_অজানা_ইতিহাস ঢাকা গেট: ঢাকার উত্তর দরজা থেকে ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তেঢাকা শহরের হৃদয়ে, রমনা পার্ক ...
23/10/2025

#ঢাকা_গেট_ও_মীর_জুমলার_অজানা_ইতিহাস
ঢাকা গেট: ঢাকার উত্তর দরজা থেকে ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে
ঢাকা শহরের হৃদয়ে, রমনা পার্ক ও টিএসসির মাঝামাঝি একটি প্রাচীন খিলান আজও নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।
অসংখ্য প্রজন্মের পদচারণায় ক্ষয়প্রাপ্ত সেই গেটটির নাম “ঢাকা গেট” —
যার নিচ দিয়ে হেঁটে গেছেন নবাব, ইংরেজ অফিসার, মুক্তিযোদ্ধা এবং আজকের প্রজন্মের তরুণেরা।
এই গেট শুধু ইট-পাথরের দেয়াল নয়, বরং এটি ঢাকার ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী,
যার জন্ম মোগল আমলে, নবাব যুগে পুনর্জন্ম, আর আজ দাঁড়িয়ে আছে সময়ের দরজায়।

ঢাকা গেটের উৎপত্তি ও নির্মাণকাল:

ঢাকা গেটের ইতিহাস শুরু হয় মোগল আমলে,
যখন ১৬৬০ সালের দিকে বাংলার সুবেদার ছিলেন মীর জুমলা দ্বিতীয় (Mir Jumla II)।
ঢাকাকে তখন বলা হতো জাহাঙ্গীরনগর, মোগল বাংলার রাজধানী।
এই সময় শহরের উত্তর দিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিরক্ষামূলক প্রাচীর ও প্রবেশদ্বার নির্মাণের নির্দেশ দেন।
এই প্রবেশদ্বারই ছিল আজকের ঢাকা গেটের প্রাথমিক রূপ।

এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শহরের উত্তর সীমানা নির্ধারণ করা এবং শত্রুর আগমন নিয়ন্ত্রণ করা।
এটি ছিল ঢাকায় প্রবেশের প্রধান পথ — তাই স্থানীয় মানুষ একে বলত “মীর জুমলার গেট”।

মীর জুমলার পরিচয় ও ঢাকার প্রতি অবদান:

মীর জুমলা দ্বিতীয় (Mir Jumla II) ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের অধীনে বাংলার সুবেদার।
তিনি মূলত দক্ষিণ ভারতের গোলকোন্ডা রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন, পরে মোগল সাম্রাজ্যে যোগ দেন তাঁর বুদ্ধি, কৌশল ও সামরিক দক্ষতার জন্য।
বাংলায় এসে তিনি শুধু শাসক নন, বরং একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে পরিচিত হন।

তাঁর আমলে ঢাকায়:

নতুন রাস্তা ও প্রতিরক্ষা প্রাচীর নির্মিত হয়,

প্রশাসনিক ভবন, দিঘি ও বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠে,

এবং ঢাকার উত্তর প্রান্তে নির্মিত হয় সেই ঐতিহাসিক গেট, যা আজ ঢাকা গেট নামে টিকে আছে।

তিনি ১৬৬৩ সালে আসাম অভিযানে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন,

ঢাকা গেটের নামকরণ ও বিবর্তন:

প্রথমে এই গেটটি ছিল “মীর জুমলার গেট”,
কারণ এটি মীর জুমলার নির্দেশে নির্মিত হয়েছিল।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নামের পরিবর্তন ঘটে।

১৮০০ সালের দিকে যখন নবাব খাজা আলিমুল্লাহ পুরনো ঢাকায় সংস্কার ও উন্নয়নের কাজ শুরু করেন,
তখন তিনি গেটটি পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করেন।
এ সময় থেকে এটি পরিচিত হয় নতুন নামে — “ঢাকা গেট”।
নবাবদের সময়ে এই গেটের গুরুত্ব ছিল প্রতীকী —
এটি ছিল “ঢাকায় প্রবেশের দরজা”, অর্থাৎ ঢাকার উত্তর সীমার চিহ্ন।

ব্রিটিশ আমলে নামের পরিবর্তন – “রমনা গেট”:

ব্রিটিশ আমলে যখন রমনা এলাকা গড়ে ওঠে (বর্তমান রেসকোর্স ও রামনা পার্ক এলাকা),
তখন এই গেটটি হয়ে ওঠে সেই নতুন এলাকার প্রবেশদ্বার।
তাই ব্রিটিশ প্রশাসনিক নথিতে একে উল্লেখ করা হয় “Ramna Gate” নামে।
তাদের কাছে এটি ছিল “City Gate of Dhaka” —
ঢাকায় প্রবেশের উত্তর দরজা,
যেখান দিয়ে ব্রিটিশ অফিসার, সৈন্য ও কর্মকর্তারা পুরনো শহরে প্রবেশ করতেন।

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:

ঢাকা গেটের গঠন সম্পূর্ণ মোগল স্থাপত্যশৈলীতে।
অর্ধবৃত্তাকার খিলান, উঁচু বুরুজ, পুরু চুন-সুরকির দেয়াল এবং উপরে ছোট গম্বুজ-আকৃতির ছাদ এই গেটকে রাজকীয় সৌন্দর্য দিয়েছে।
পুরনো সময় গেটে কাঠের দরজা লাগানো থাকত, যা রাতে বন্ধ করে রাখা হতো — যেন শহরের নিরাপত্তা বজায় থাকে।
গেটটির পাশেই ছিল প্রহরীর কক্ষ এবং প্রাচীরের অংশবিশেষ, যা এখন বিলুপ্ত।

বর্তমান অবস্থান ও সংরক্ষণ:

আজকের ঢাকা গেট অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রামনা পার্ক ও সেন্ট্রাল শাহী মসজিদের মাঝামাঝি স্থানে।
বহু বছর অবহেলায় থাকলেও বর্তমানে এটি সংরক্ষণের আওতায় এসেছে।
যা ঢাকার নতুন যুগের প্রতীক —
গেটটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ঢাকার ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে।

ঐতিহ্যের প্রতীক ও আবেগ:

এই গেটের নিচ দিয়ে হেঁটে গেছে অসংখ্য প্রজন্ম —
মীর জুমলার সৈন্য, নবাব পরিবারের রথ, ব্রিটিশ ঘোড়ার গাড়ি, মুক্তিযোদ্ধার পদচিহ্ন আর আজকের তরুণেরা।
প্রতিটি যুগ পেরিয়ে গেটটি যেন বলছে —
“আমি দেখেছি ঢাকার উত্থান, পরিবর্তন আর ইতিহাসের ধ্বনি।”

ঢাকা গেট তাই কেবল একটি স্থাপনা নয়,
এটি ঢাকা শহরের আত্মা,
যার দেয়ালে লেগে আছে চার শতকের ধুলো, স্মৃতি আর সময়ের গন্ধ।

“Dhaka Gate isn’t just a doorway — it’s the silent witness of centuries.”
ঢাকার ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় যেন এখান দিয়েই প্রবেশ করেছে,
আর সময় থেমে থেকেছে সেই দরজার নিচে —
যেখানে দাঁড়িয়ে আজও ঢাকা বলে,
“আমার শুরু এখান থেকেই।”

কপি পেস্ট
লেখা-মোঃনাঈম ভুইয়া ||
এডমিন-ঢাকার গণপরিবহন ||

#ঢাকা_গেট #মীর_জুমলা #রমনা_গেট #ঢাকার_ইতিহাস #পুরান_ঢাকা #ঢাকার_ঐতিহ্য #ঢাকার #মোগল_ঢাকা #নবাব_ঢাকা #ঢাকার_দরজা #ঢাকা_বিশ্ববিদ্যালয় #রামনা_পার্ক



---

✈️ এলিফ্যান্ট রোডের ঐতিহাসিক ‘এরোপ্লেন মসজিদ’> ✈️ “ঢাকার আকাশ ছুঁয়ে থাকা এক বিশ্বাসের গল্প—এলিফ্যান্ট রোডের এরোপ্লেন মসজ...
23/10/2025

✈️ এলিফ্যান্ট রোডের ঐতিহাসিক ‘এরোপ্লেন মসজিদ’
> ✈️ “ঢাকার আকাশ ছুঁয়ে থাকা এক বিশ্বাসের গল্প—
এলিফ্যান্ট রোডের এরোপ্লেন মসজিদ!” 🌙

এক উড়োজাহাজের ছায়ায় ঢাকা শহরের এক অনন্য ইতিহাস

ঢাকার ব্যস্ততম এলিফ্যান্ট রোডে যখন হাঁটবেন, তখন হঠাৎই চোখে পড়বে এক অদ্ভুত অথচ চমকপ্রদ স্থাপনা—
একটি মসজিদ, যার ছাদের ওপর বসানো রয়েছে উড়োজাহাজের একটি মডেল!
এটাই সেই বিখ্যাত ‘এরোপ্লেন মসজিদ’—যা আজও ঢাকাবাসীর কাছে কৌতূহল, গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক।

---

🕌 ইতিহাসের সূচনা — ষাটের দশকের সেই সময়

১৯৬০ সালে, ঢাকার নবাব এস্টেটের মুনশি মো. ইব্রাহিমের পুত্র মো. ইসমাইল নিজের নয় কাঠা জমির ওপর মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন।
সেই সময় ঢাকায় আধুনিক স্থাপত্যের ছোঁয়া খুবই কম ছিল, আর মসজিদের ওপর উড়োজাহাজ বসানো ছিল সম্পূর্ণ নতুন চিন্তা।
মো. ইসমাইল ছিলেন অগ্রগামী মানসিকতার মানুষ—তিনি চেয়েছিলেন, এই মসজিদ যেন সময়ের সাথে আলাদা হয়ে দাঁড়ায়,
যেন মানুষ নামাজ পড়তে আসার পাশাপাশি মুগ্ধ হয় স্থাপত্যেও।

মাত্র দু–তিন বছরের মধ্যে মসজিদটির প্রথম ধাপ শেষ হয়।
তখন এটি ছিল একতলা মসজিদ, যার ছাদের ওপর বসানো হয় উড়োজাহাজের আদলের সেই বিখ্যাত মডেলটি।
সেই থেকেই মানুষ একে ভালোবেসে ডাকতে শুরু করে ‘এরোপ্লেন মসজিদ’ নামে।

---

🕋 সময়ের সঙ্গে রূপান্তর — একতলা থেকে পাঁচতলা

স্বাধীনতার পর মসজিদটি দোতলা করা হয়,
আর প্রতিবারই ভবনের উচ্চতা বাড়লে সেই উড়োজাহাজকেও নতুন করে ওপরে তোলা হয়।
আজ এটি পাঁচতলা বিশিষ্ট মসজিদ,
আর সেই পুরোনো উড়োজাহাজটি এখন শোভা পাচ্ছে মিনারের চূড়ায়—
ঢাকার আকাশের সঙ্গে যেন এক হয়ে আছে মসজিদের আত্মা ও ইতিহাস।

১৯৭৯ সালে মসজিদটি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়,
আর ২০০২ সালে এখানে চালু হয় একটি আবাসিক মাদ্রাসা,
যেখানে বর্তমানে বেশ কিছু শিক্ষার্থী কুরআন ও দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করছে।

---

💫 ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার

প্রতিষ্ঠাতা মো. ইসমাইল ১৯৮১ সালে ইন্তেকাল করেন,
কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া মসজিদ আজও বেঁচে আছে তাঁর আদর্শ ও দানের নিদর্শন হয়ে।
মসজিদের দায়িত্বে আছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মসজিদের সঙ্গে যুক্ত আছেন এক জন খতিব, তিন জন ইমাম, এক জন মোয়াজ্জিন, দুই জন শিক্ষক, তিন জন খাদেম এবং দুই জন প্রহরী।
মসজিদের আয় হয় দোকানভাড়া ও দানবাক্সের অর্থ থেকে।

সড়কের নাম যেমন বদলেছে—এলিফ্যান্ট রোড এখন শহীদজননী জাহানারা ইমাম সরণি,
কিন্তু ঢাকাবাসীর মুখে এখনো একটাই নাম:
“এরোপ্লেন মসজিদ”।
যা এখনো দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মো. ইসমাইল সাহেব । ১৯৮১ সালে তিনি মারা যান। মো. ইসমাইল সাহেবের ছোট ছেলে এস এম আনিসুর রহমান জানান। তাঁর দাদা মো. ইব্রাহিম ছিলেন ঢাকার নবাবদের স্টেটের মুনশি। সে সুবাদে নীলক্ষেত ও লালমাটিয়া এলাকায় তিনি আনুমানিক দুই হাজার বিঘা জমির মালিকানা পান। বাবার মৃত্যুর পর ইসমাইল সাহেব নিজেদের প্রায় ৯ কাঠা জমির ওপর ১৯৬০ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন। আনিসুর রহমান বললেন, ‘শুরুর দু–তিন বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন মসজিদটি ছিল একতলা। একতলার ছাদের ওপর স্থাপন করা হয় উড়োজাহাজের আদলের একটি মডেল।’

মসজিদের নাম এরোপ্লেন রাখার কারণ কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে এস এম আনিসুর রহমান বললেন, ‘আব্বা মসজিদটিকে একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তখন ছাতা মসজিদ, জাহাজ মসজিদ ইত্যাদি নামে মসজিদ ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন এরোপ্লেন প্রতীকের কারণে মসজিদকে একনামে সবাই চিনুক।’

---

❤️

এই মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়—
এটি স্মৃতির অংশ, ইতিহাসের দলিল,
ঢাকার মানুষের কাছে এটি এক ধরনের আবেগ।
শহরের পুরোনো বাসিন্দারা আজও সন্তানদের দেখিয়ে বলেন—
“এই দেখো, এই মসজিদের ওপরেই একটা উড়োজাহাজ আছে!”

মসজিদের কর্তৃপক্ষ বলেন,

> “এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ঢাকায় এমন মসজিদ আর নাই।
মানুষ মসজিদটি দেখতে আসে, নামাজ পড়ে—ভালো লাগে।”

---

🌆

ঢাকার ব্যস্ততার ভেতরও এই মসজিদ দাঁড়িয়ে আছে এক অমর ইতিহাসের মতো।
এটি আমাদের জানায়—
ধর্মীয় স্থাপত্যও হতে পারে কল্পনার, সৃষ্টিশীলতার ও সময়ের সাক্ষী।
‘এরোপ্লেন মসজিদ’ শুধু স্থাপত্য নয়,
এটি ঢাকার হৃদয়ে গাঁথা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে বহমান ঐতিহ্যের প্রতীক।
কপি পেস্ট
✍️ লেখা-মোঃনাঈম ভুইয়া ||
এডমিন-ঢাকার গণপরিবহন ||
_____________________________

---

#এরোপ্লেন_মসজিদ #ঢাকার_ঐতিহ্য #ঐতিহাসিক_ঢাকা
#ঢাকারগনপরিবহন #নাঈম #এরোপ্লেনমসজিদেরইতিহাস

22/10/2025

#নিউ_হোজাইফা_কালেকশন, এখানে উন্নত মানের টু পিস খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করা হয়। যোগাযোগ 01660200057 ইমো এবং হোয়াটসঅ্যাপ

 #ঢাকার_আকাশে_প্রথম_বেলুন_উড্ডয়ন ও জেনেট ভ্যান ট্যাসেলের ম-র্মান্তিক ইতিহাস ||ঢাকার ইতিহাসের অনেক অধ্যায় আজ ভুলে যাওয়া। ...
21/10/2025

#ঢাকার_আকাশে_প্রথম_বেলুন_উড্ডয়ন
ও জেনেট ভ্যান ট্যাসেলের ম-র্মান্তিক ইতিহাস ||

ঢাকার ইতিহাসের অনেক অধ্যায় আজ ভুলে যাওয়া। কিন্তু ১৮৯২ সালের ১৬ মার্চের একটি ঘটনা এখনও বিস্ময় জাগায়। সেদিন ঢাকার আকাশে প্রথমবারের মতো উড়েছিল একটি বেলুন—যার নায়ক ছিলেন না কোনো স্থানীয় অভিযাত্রী, বরং একজন তরুণী আমেরিকান নারী, জেনেট ভ্যান ট্যাসেল (Janet Van Tassel)। নবাব খাজা আহসানউল্লাহর উদ্যোগে আয়োজিত সেই প্রদর্শনী একদিকে ঢাকাবাসীর জন্য বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা এনে দিলেও, অন্যদিকে শেষ হয়েছিল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায়।

১৮৯২ সালে ঢাকার আকাশে প্রথমবার বেলুন উড়েছিল এক আমেরিকান নারী—জেনেট ভ্যান ট্যাসেল। আহসান মঞ্জিল থেকে আয়োজিত সেই প্রদর্শনী একদিকে বিস্ময়, অন্যদিকে ছিল এক ভয়াবহ দু-র্ঘটনার সাক্ষী। জেনে নিন ঢাকার এই ভুলে যাওয়া ইতিহাস।”

#ঢাকায়_বেলুন_উড্ডয়নের_সূচনা

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ইউরোপ ও আমেরিকায় হট এয়ার বেলুন ছিল বিনোদন ও প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ। সেই ধারা ঢাকায় নিয়ে আসেন তৎকালীন নবাব খাজা আহসানউল্লাহ। তিনি প্রায় ১০,০০০ টাকার চুক্তিতে আমেরিকার এক সাহসী বেলুনবাদক—জেনেট ভ্যান ট্যাসেলকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

খবর ছড়িয়ে পড়তেই ঢাকার সর্বস্তরের মানুষ উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। আহসান মঞ্জিল প্রাঙ্গণ, বুড়িগঙ্গা নদীর তীর, এমনকি মাঝনদীর নৌকাতেও মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকে বিরল দৃশ্য দেখার জন্য।

জেনেট ভ্যান ট্যাসেল: এক সাহসী অভিযাত্রী

জেনেট ভ্যান ট্যাসেল তখন মাত্র বিশের শেষ প্রান্তে। এর আগেও তিনি ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকার বিভিন্ন শহরে বহুবার বেলুন প্রদর্শনী করেছেন। ঢাকায় তাঁর প্রদর্শনীর পরিকল্পনা ছিল—বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ দিক থেকে আকাশে উড়ে উঠে আহসান মঞ্জিলের চূড়ায় অবতরণ করা।

এমন দৃশ্য আগে ঢাকার মানুষ কখনও দেখেনি। তাই উৎসাহ ও কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এই তরুণী আমেরিকান।

সেই ঐতিহাসিক দিন: ১৬ মার্চ ১৮৯২

📍 সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে প্রদর্শনী শুরু হয়। কেরোসিন ও কাঠ পুড়িয়ে বিশাল বেলুনটি ফোলানো হয়। শীঘ্রই সেটি আকাশে উড়তে শুরু করলে দর্শকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে।

কিন্তু পরিকল্পনার মতো আহসান মঞ্জিলের চূড়ায় নামতে পারলেন না তিনি। প্রবল বাতাসের তোড়ে বেলুন ভেসে যায় দূরে। ধোঁয়া ও আগুনের ঝলকানি দর্শকদের আতঙ্কিত করে তোলে।

#মর্মান্তিক_দুর্ঘটনা

আকাশে ভেসে চলা বেলুন অবশেষে গিয়ে আটকে যায় রমনার একটি গাছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে। একটি বাঁশের খুঁটির সাহায্যে নিচে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাঁশ ভেঙে পড়ে যায় জেনেট ভ্যান ট্যাসেল। মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও কয়েকদিন পর তিনি মৃ-ত্যুবরণ করেন।

সবচেয়ে করুণ বিষয় হলো—দুর্ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর স্বামীসহ ঢাকার বহু অভিজাত ব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

#সামাজিক_প্রতিক্রিয়া

ঘটনাটি ঢাকার অভিজাত সমাজে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। অনেকেই পুলিশের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতাকে দায়ী করেন। সমসাময়িক কিছু সংবাদপত্র, যেমন Bengal Gazetteer, ঘটনাটি প্রকাশ করে।

এটি ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গে প্রথম বেলুন উড্ডয়ন—এবং একইসাথে এক করুণ মৃত্যুর কাহিনী।

আজকের দিনে জেনেট ভ্যান ট্যাসেলের স্মৃতি

আজ প্রায় ভুলে যাওয়া এই ঘটনাটির একমাত্র চিহ্ন রয়ে গেছে তাঁর কবরের মাধ্যমে।
🪦 ঢাকার নারিন্দা খ্রিস্টান কবরস্থানে তাঁর সমাধি আজও আছে, তবে পরিচর্যার অভাবে তা প্রায় বিস্মৃতপ্রায়।

এই ঘটনার মাধ্যমে ঢাকার ইতিহাসে একদিকে যেমন যোগ হয়েছে নতুন অধ্যায়—‘আকাশযাত্রার প্রথম প্রচেষ্টা’, তেমনি জড়িয়ে আছে এক তরুণীর মর্মান্তিক মৃত্যু।

#কেন_এই_ঘটনা_গুরুত্বপূর্ণ?

এটি ঢাকার আকাশে প্রথম বেলুন উড্ডয়ন।

নবাব আহসানউল্লাহর উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে আলোচিত একটি প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল।

জেনেট ভ্যান ট্যাসেলের করুণ মৃ-ত্যু ঢাকার ইতিহাসের একটি অজানা অধ্যায় হয়ে আছে।

কপি পেস্ট
লেখা-মোঃনাঈম ভুইয়া ||
এডমিন-ঢাকার গণপরিবহন


#ঢাকারআকাশেপ্রথমবেলুনউড়ানোরগল্প

মোহাম্মদপুর :- ৪০০ বছরের পথচলার ইতিহাস ||সাত মসজিদের ছায়া ও সময়ের স্রোত -------ঢাকার ইতিহাস বলতে গেলে নদী আর মোগল যুগে...
21/10/2025

মোহাম্মদপুর :- ৪০০ বছরের পথচলার ইতিহাস ||
সাত মসজিদের ছায়া ও সময়ের স্রোত -------

ঢাকার ইতিহাস বলতে গেলে নদী আর মোগল যুগের গল্প না বললেই নয়। সেই ধারাবাহিকতায় মোহাম্মদপুর—আজকের ঘনবসতি, আবাসিক ব্লক আর ব্যস্ত সড়কের আড়ালে লুকিয়ে আছে চার শতকের স্মৃতি।

মোগল আমল থেকে সূচনা

১৭শ শতকে (শায়েস্তা খাঁর সময়) মোহাম্মদপুরের যে অঞ্চলটি ছিল ঢাকার পশ্চিম প্রান্তের বন্যাপ্লাবিত চরভূমি, সেখানেই ওঠে ঐতিহাসিক সাত গম্বুজ মসজিদ। স্থাপত্যের দিক থেকে একে অনন্য করে তুলেছে সাতটি গম্বুজের বিন্যাস, চার কোনায় মিনার ও সুবিন্যস্ত মুগল অলংকরণ। কাছেই ছিল এক অজ্ঞাত নারীর সমাধি—বিবির মাজার নামে লোকমুখে পরিচিত।
কথিত আছে, নবাব শায়েস্তা খাঁর কোনো এক মেয়ের কবর এটি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
সাইনবোর্ডে লেখা: অজানা সমাধি।

“সাত মসজিদের পাশেই ছিল বুড়িগঙ্গা”—আজ কোথায়?

পুরনো ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা একসময় সাত মসজিদের একেবারে কাছ ঘেঁষে বইত। নদীর ধারা ক্রমে দক্ষিণে সরে যেতে থাকায় আজ মসজিদটি পড়েছে ভিতরের দিকে; এখন বরং তুরাগ ও বোসিলা-ঘাটের জলভূমিই নিকটবর্তী। নদীপথ বদলের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো শাখাচ্যানেল (মোরাখারি/Old Channel) নানা জায়গায় ভরাট-দখলে সংকুচিত হয়েছে—বোসিলা থেকে লোহা-পুল পর্যন্ত সেই পুরনো ধারা আজও নথিতে টিকে আছে।

“মোহাম্মদপুর” নামের ইতিহাস:-

“মোহাম্মদপুর” নামটা নতুন DIT-এর বসতি গড়ার সময় (১৯৫০–৬০ দশক) বেছে নেওয়া হলেও নামটি নিজে অনেক পুরনো; এলাকাটা ব্রিটিশ আমল থেকেই “Muhammadpur/Mohammadpur” নামে মৌজা/গ্রাম হিসেবে নথিভুক্ত ছিল। নিচে নামকরণটা বোঝার তিনটি স্তর দিলাম—ভাষাগত, নথিগত, আর আধুনিক নগরায়ণ।

১) ভাষাগত উৎস (নামের অর্থ)

“মোহাম্মদ/মুহাম্মদ” + “পুর/পুরা” (সংস্কৃত pur = বসতি/নগর) → অর্থ দাঁড়ায় “মুহাম্মদের বসতি/নগর”।

এই গঠনটা মোগল-সুলতানি আমল থেকে পুরো বঙ্গদেশে খুব প্রচলিত (যেমন মিরপুর, যশোরের চন্দনপুর ইত্যাদি)।

২) পুরনো নথির ইঙ্গিত (নাম পুরোনো)

কলকাতা/ঢাকা সার্ভে মানচিত্র, ব্রিটিশ-আমলের রেভিনিউ/সার্ভে রেকর্ডে “Mohammadpur” নামে মৌজা দেখা যায়—লোকেশন বর্তমান রায়েরবাজার–বোসিলা–জাফরাবাদ–কাতাসুর ঘিরে।

মোগল আমলে পাশেই দাঁড়ানো সাত গম্বুজ মসজিদ (১৭শ শতক, শায়েস্তা খাঁ-পর্ব)–এর ওয়াক্‌ফ/খাস জমির চারপাশে যে মুসলিম বসতি বেড়েছিল, স্থানীয়রা সেটাকেই “মুহাম্মদ-পুর” বলত—এটাই নামটাকে টিকিয়ে রেখেছে বলে গবেষকেরা ধারণা করেন।

> সারমর্ম: “মোহাম্মদপুর” নাম DIT-এর আগেই ছিল; মানচিত্র/রেকর্ডে প্রমাণ মেলে।

৩) আধুনিক নগরায়ণ—নামটা স্থায়ী হয়

১৯৫০–৬০ দশকে DIT (Dhaka Improvement Trust) এখানে Mohammadpur Housing Estate/Model Town গড়ে তোলে।

তখনকার ব্লক/রোডের নামগুলো (বাবর, হুমায়ুন, নূরজাহান, তাজমহল রোড ইত্যাদি) মোগল-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আগের “Mohammadpur” নামটাকেই আনুষ্ঠানিক ও শহুরে ব্র্যান্ডিং দেয়।

পরের দশকগুলোতে থানা/ওয়ার্ড গঠনের সময়ও সেই প্রচলিত নামই প্রশাসনিক নাম হয়ে যায়।

বিকল্প/লোকজ ব্যাখ্যা যা শোনা যায়

কোনো স্থানীয় জমিদার/ফৌজদার “মুহাম্মদ খান/শাহ”-এর নামে নামকরণ—এমন লোককথা আছে, কিন্তু নির্ভরযোগ্য নথি কম।

মোগল শাহজাদা মুহাম্মদ আজম শাহ–এর স্বল্পকালীন ঢাকাবাসের সঙ্গে নাম জোড়ার চেষ্টা হলেও প্রমাণ দুর্বল—গবেষকেরা একে কম সম্ভাব্য বলে দেখেন।

> অর্থাৎ, শক্ত নথির দিক থেকে মৌজা-নাম + DIT-এর নগরায়ণ—এই দুইয়ে “মোহাম্মদপুর” স্থির হয়, কোনো একক ব্যক্তির নামে নয়।
মোহাম্মদপুর নামটা নতুন নয়—ব্রিটিশ আমল থেকেই এ এলাকা “Muhammadpur” নামে মৌজা ছিল। নামের গঠন “মুহাম্মদ + পুর” = মুহাম্মদের বসতি; মোগল আমলে সাত গম্বুজ মসজিদের চারপাশে মুসলিম বসতি গড়ে ওঠায় নামটি প্রচলিত হয়। ১৯৫০–৬০ দশকে DIT এখানে Mohammadpur Model Town গড়লে পুরনো নামটাই আধুনিক শহুরে পরিচয় পায়। লোককথায় কখনো কোনো “মুহাম্মদ খান/শাহ”-এর নাম জুড়ে ব্যাখ্যা করা হলেও শক্ত নথি বলছে—পুরনো মৌজা-নাম + পরিকল্পিত নগরায়ণ = আজকের “মোহাম্মদপুর”।

সাত মসজিদের গল্প—আরও কিছু

নির্মাণকাল: মোগল শাসনামল, ১৭শ শতক (শায়েস্তা খাঁ পিরিয়ডে)।

বৈশিষ্ট্য: সাত গম্বুজের ক্লাসিক বিন্যাস, চার কোণে অষ্টভুজ মিনার, অলংকরণের সূক্ষ্ম কাজ।

প্রেক্ষাপট: একসময় নদীর বন্যাপ্লাবিত পাড়ে দাঁড়ানো “সীমানা-মসজিদ”, আজ নগরায়ণে ঘেরা।

মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান ও স্মৃতিচিহ্ন

আসাদ গেট: ১৯৬৯ সালের ছাত্রনেতা শহীদ আসাদের স্মৃতিতে ‘আয়ুব গেট’ নাম বদলে ‘আসাদ গেট’—মোহাম্মদপুরের গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষী এক তোরণ।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ (রায়েরবাজার): ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বরের নৃশংস বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মৃতিবাহী স্মৃতিসৌধ—রায়েরবাজারের ইটভাটার স্থানে নির্মিত, মোহাম্মদপুর থানার ভেতরেই অবস্থান।

মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্প—জেনেভা ক্যাম্পের কাহিনি

১৯৭১-এর পর আন্তর্জাতিক রেডক্রস (ICRC)-এর তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদপুরে স্থাপিত জেনেভা ক্যাম্প—দেশের বৃহত্তম উর্দুভাষী (বিহারি) কমিউনিটির বসতি। “জেনেভা” নামটি এসেছে ICRC-এর সদর দপ্তরের শহরের নাম থেকে। সময়ের সঙ্গে নাগরিকত্ব ও অধিকার নিয়ে নানা অধ্যায় পেরিয়ে আজও এখানে হাজারো মানুষের ঘনবসতি, নিজস্ব অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক জীবনচক্র।

মোহাম্মদপুরের উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক/ঐতিহ্যচিহ্ন

সাত গম্বুজ মসজিদ ও বিবির মাজার (সাত মসজিদ রোড) – মোগল স্থাপত্য।

আল্লাকুড়ি মসজিদ (মোহাম্মদপুর কলোনি/জেনেভা ক্যাম্পের কাছে) – ১৭শ-১৮শ শতকের প্রাচীন মসজিদ।

আসাদ গেট ও আসাদ এভিনিউ – ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থানের স্মারক।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার – ১৯৯৯ সালে সম্পন্ন জাতীয় স্মৃতিচিহ্ন।

বোসিলা/বেরিবাঁধ নদীপাড় – বুড়িগঙ্গা-তুরাগের সঙ্গম-অঞ্চল ও পুরনো বুড়িগঙ্গার চ্যানেল এলাকার ধারাবৃত্ত ইতিহাস।

রামচন্দ্রপুর খাল ও চাঁদ উদ্যান-সংলগ্ন জলাধার – পশ্চিম ঢাকার বৃষ্টির জল নিষ্কাশনের ঐতিহ্যবাহী নালা-ব্যবস্থা।

আজকের মোহাম্মদপুর

DIT-পরিকল্পিত হাউজিং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, দারুশ সালাম-আদাবর-লালমাটিয়া-রায়েরবাজারের মতো উপ-পাড়া মিলিয়ে আজ মোহাম্মদপুর এক বৈচিত্র্যময় নাগরিক আবাস। অথচ একটু হাঁটলেই ধরা পড়ে মোগল যুগের ইট-পাথর, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, আর জেনেভা ক্যাম্পের দীর্ঘ সামাজিক ইতিহাস—সব মিলেই মোহাম্মদপুর একটি ‘লেয়ার্ড সিটি’।

_কপি পেস্ট _________________________
লেখা-মো:নাঈম ভুইয়া ||
এডমিন-ঢাকার গণপরিবহন ||
_________________________

#মোহাম্মদপুর #পুরানঢাকা #ঢাকারইতিহাস #ঐতিহাসিকঢাকা #ঢাকারপ্রাচীনঐতিহ্য #ঢাকারঐতিহ্য #ঢাকারপ্রাচীনস্থাপনা #পুরানঢাকারগল্প #ঢাকারপুরানচিত্র #ঢাকারঅতীত

#সাতমসজিদ #মোগলস্থাপত্য

#বুড়িগঙ্গা #ঢাকারনদী

#মোহাম্মদপুরনামকরণ
#জেনেভাক্যাম্প #উর্দুভাষীসম্প্রদায় #শহীদআসাদ
#১৯৭১

ছাড়া টির নাম মনে আছে কি?
13/10/2025

ছাড়া টির নাম মনে আছে কি?

14/05/2025

মুসলমান মেয়েদের ন’ষ্ট করতে প্রেমের সম্পর্ক গড়ছে সং’ঘ’ব'দ্ধ একটি হিন্দু চ’ক্র ​
লাভ জিহাদের চক্রান্ত হতে মুসলিম নারীদের সতর্ক করুন।

আমার পোস্ট করা একটি অশ্লীল ভিডিও'র কত প্রভাব দেখুন! ৬ লাখ ভিউ, ৫৭২+ শেয়ার, এবং ২২২ কমেন্টস! এথেকে আমি যেটা বুঝলাম যে, পা...
16/02/2025

আমার পোস্ট করা একটি অশ্লীল ভিডিও'র কত প্রভাব দেখুন! ৬ লাখ ভিউ, ৫৭২+ শেয়ার, এবং ২২২ কমেন্টস! এথেকে আমি যেটা বুঝলাম যে, পাবলিক ভালো কিছুর চেয়ে, মন্দ কিছুতেই বেশি আকর্ষিত হয়! আপনিও কি আমার সঙ্গে একমত?

বোধ করি, জান্নতী হুরীদের রক্ত সঞ্চালন এভাবেই দেখা যাবে ইনশাল্লাহ।
16/02/2025

বোধ করি, জান্নতী হুরীদের রক্ত সঞ্চালন এভাবেই দেখা যাবে ইনশাল্লাহ।

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আসোবা আতোভা posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to আসোবা আতোভা:

Share