06/08/2025
দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ : স্বাস্থ্য প্রকৌশলে দুর্নীতির সম্রাট প্রকৌশলী
মো. জাকির হোসেন এখন সিলেটে
বিশেষ প্রতিবেদন : স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণ খাতটি যেখানে হওয়া উচিত দেশের জনগণের সেবার প্রধান অগ্রাধিকার, সেখানে একে বানানো হয়েছে দুর্নীতির সবচেয়ে লাভজনক খাত—এমনই অভিযোগ উঠে আসছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
এক সময় বরিশাল, এখন সিলেট—প্রতিটি কর্মস্থলে গিয়ে সরকারি প্রকল্পের আড়ালে গড়ে তুলেছেন টেন্ডার বাণিজ্য, ঘুষের সিন্ডিকেট ও ক্ষমতার বেপরোয়া অপব্যবহার। অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের গোপনে স্টিমিট সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নিচ্ছেন।
২০২৪ সালের মার্চে বরিশাল অঞ্চলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১২টি প্যাকেজ টেন্ডারে পাওয়া যায় ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ। নির্ধারিত অফিস স্টিমিট ৩২,৪৬,০৮১.৪৯২ টাকা থাকলেও, “আদনিন কনস্ট্রাকশন” ও “মাদার্স কনস্ট্রাকশন” নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ২৯ লাখ টাকার আশপাশে দর দিয়ে কাজ পেয়ে যায়। স্থানীয়রা দাবি করেন, ওই প্রতিষ্ঠান দুটিকে গোপন স্টিমিট আগেই সরবরাহ করা হয়েছিল মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে।
বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সিলেট স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । এখানে তাঁর পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া অন্য কেউ সরকারি কাজের টেন্ডারে সুযোগ পাচ্ছেন না বলেই অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “স্যার একাই যেন রাজা। কেউ তাঁর ‘পারসেন্টেজ সিস্টেম’ না মানলে, তাঁদের বদলি বা চাকরি খাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।”
একদিকে নিজেকে বিএনপি ঘরানার বলে দাবি করলেও, শেখ হাসিনার সরকারের সময় নিজেকে ‘আওয়ামীপন্থী’ প্রমাণ করে পদ আঁকড়ে ছিলেন দীর্ঘদিন। সরকারি দল, উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে নিজেকে রেখেছেন সব সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে।
সূত্র জানায়, ঢাকায় ও নিজ এলাকায় রয়েছে তার একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি। স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ব্যাংকে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার এফডিআর। অথচ তাঁর সরকারি বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এ ধরনের সম্পদের মালিক হওয়া অসম্ভব।
এইচইডির এক কর্মকর্তা বলেন, “চাকরির শুরু থেকেই স্যার শুধু টাকা কামানোর ধান্দায় থাকেন। সিরাজগঞ্জে থাকাকালীনই তিনি কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন। অফিসে গল্পের ছলে বলেন, ‘কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি—টাকা খাব না তো কী খাব!’”
এছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িও রয়েছে এবং দেশে-বিদেশে জীবনযাপনের মান ব্যয়ের সাথে আয়ের কোনো মিল নেই বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
এই বিষয়ে জানতে পত্রিকার পক্ষ থেকে মো. জাকির হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হয়। প্রথমে কল রিসিভ করলেও পরিচয় জানার সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে আর ফোন রিসিভ করেননি। একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দেওয়া তাঁর দায়িত্ব হলেও, তা তিনি এড়িয়ে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান,“জাকির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভীতিকর আচরণ দিয়ে সৎ কর্মকর্তাদের কোণঠাসা করে রেখেছেন। তাঁকে এখনই থামাতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও বড় অনিয়মের আশঙ্কা রয়েছে।”
স্থানীয় ঠিকাদার, পেশাজীবী, সচেতন নাগরিকসহ অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের নিরপেক্ষ তদন্ত, সম্পদের উৎস অনুসন্ধান এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।