
10/08/2022
শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়মকানুন।
স্বাস্থ্যের দীপ্তিতে ভরপুর, ঝলমলে, মসৃণ একমাথা চুলের আকাঙ্ক্ষা কার না থাকে! আর সেই আকাঙ্ক্ষাটুকু মেটানোর জন্য কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়! অথচ শুরু থেকে একটু নজর দিলে তেমন চুল পাওয়া মোটেই কষ্টসাধ্য নয়! শুধু কয়েকটা ছোটখাটো, খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর দিতে হবে! চুলে জমা তেল-ময়লা পরিষ্কারের জন্য শ্যাম্পুর বিকল্প নেই। তবে যেনতেনভাবে শ্যাম্পু করলে হবে না। মানতে হবে কিছু নিয়ম।
প্রথমেই চুল শুষ্ক (dry),তেলতেলে (oily) নাকি মিশ্র ধরনের, তা বুঝে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার বাছাই করুন। শ্যাম্পু (shampoo) করার আগে চুল আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে নিন। পুরো চুল ভাল করে পানি দিয়ে ভিজিয়েও নিতে হবে। একটি বাটিতে শ্যাম্পুর সঙ্গে পানি মিশিয়ে নিলে ভাল। তাতে শ্যাম্পুর ঘনত্ব কমে এবং তা চুলের গোড়ায় সহজে পৌঁছতে পারে। ১০- ১৫ মিনিট আঙুল দিয়ে আস্তে আস্তে মাথার ত্বক মাসাজ করতে হবে। এতে রক্ত সঞ্চালন হবে, যা চুলের গোড়া মজবুত করবে। এভাবে চুলের ময়লাও উঠবে। তার পর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
এরপর দ্বিতীয় দফার শ্যাম্পু করতে হবে। এবার আর মাসাজ নয়। কারণ, মাসাজের ফলে চুলের গোড়া থেকে সিবাম নামের একধরনের তেল নির্গত হয়, এটি থাকলে শ্যাম্পু করে লাভ নেই। তাই চুল শ্যাম্পু করতে হয় দু'বার।
*শ্যাম্পু করার আগে অনেকেই চুলে তেল দেন, এতে সমস্যা না থাকলেও ময়লা চুলে তেল দেওয়া যাবে না।চুল ভালো মতো না ভিজিয়ে সরাসরি শ্যাম্পু দেওয়া ঠিক নয়।
*চুলের পক্ষে গরমজল ভীষণ ক্ষতিকর। তাই সবসময় ঠান্ডা বা কুসুমগরম পানিই মাথায় ঢালবেন। গরমপানি চুলের স্বাভাবিক তেল নষ্ট করে চুল রুক্ষ করে দেয়, অন্যদিকে ঠান্ডা পানি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে শ্যাম্পু করার পর চুল অনেক বেশি জেল্লাদার আর চকচকে দেখায়।
*বেশিরভাগ শ্যাম্পুতেই কিছু না কিছু কেমিক্যাল থাকে যা রোজ ব্যবহার করলে চুল রুক্ষ আর কর্কশ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। সপ্তাহে দু'বার, বড়োজোর তিনবারের বেশি শ্যাম্পু করবেন না।
*ভেজা অবস্থায় চুল খুব স্পর্শকাতর অবস্থায় থাকে, সামান্য এ দিক ও দিক হলেই তা ভেঙে ঝরে যেতে পারে। তাই বেশিক্ষণ ধরে শ্যাম্পু করবেন না, তাতে চুল খুব দুর্বল হয়ে পড়বে। চুল ভেজানোর পর ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্যাম্পু আর কন্ডিশনিং, দুটোই সেরে ফেলুন।
*বারে-বারে শ্যাম্পুর ব্র্যান্ড বদলে ফেলা উচিত নয়। তাতে চুলের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যে কোম্পানির শ্যাম্পু ব্যবহার করছেন, সেটাই টানা অন্তত এক মাস ব্যবহার করুন। দেখবেন, দ্রুত উপকার মিলবে। চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে সপ্তাহে বারদুয়েক বাড়িতে তৈরি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন! তাতে স্ক্যাল্পের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। ফলে চুল পড়ার হার তো কমবেই। সেই সঙ্গে চুলের জৌলুসও বাড়বে।
*শ্যাম্পু লাগাতে হবে চুলের গোড়ায় আর স্ক্যাল্পে। তবেই নানা উপকার মিলবে। আর যখন কন্ডিশনার লাগাবেন, তখন একেবারে উলটো কাজটা করতে হবে। অর্থাৎ চুলের গোড়ায় না লাগিয়ে লাগাতে হবে সারা চুলে। তবেই সৌন্দর্য বাড়বে।
*শ্যাম্পু কেনার আগে ভালোভাবে দেখে নিতে হবে শ্যাম্পুতে প্যারাবিন ও সালফেট যেন না থাকে। শ্যাম্পুতে সালফেট অ্যাড করা হয় প্রিজার্ভেটিভ হিসেবে ও প্যারাবিন ব্যবহৃত হয় ঘন ফেনা তৈরির জন্য। এই দুইটি কেমিক্যাল উপাদান ত্বকের নানান ধরণের সমস্যা ও অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব তৈরির জন্য দায়ী। সম্প্রতি গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, শিশুদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্যেও এই উপাদান দুইটি ক্ষতিকারক। তাই হার্বাল শ্যাম্পু ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।
*লম্বা সময় নিয়ে শ্যাম্পু করার ফলে চুলের ঘনত্ব কমে যায় অনেকখানি। চুল হয়ে যায় ভঙ্গুর ও পাতলা। ফলে খুব সহজেই চুলের আগা ফেটে যায় অথবা চুল মাঝ বরাবর ভেঙ্গে যায়। তাই চুলে শ্যাম্পু করার জন্য ১০-১৫ মিনিট সময়ের বেশি নেওয়া একেবারেই উচিৎ নয়।
*জোরে জোরে ঘষে ময়লা পরিষ্কারের চেষ্টা করা ঠিক পদ্ধতি নয়। চুল ধোয়া শেষে তোয়ালে দিয়ে জোরে জোরে ঘষে মোছা উচিত না। চুলের পানি শুকানোর জন্য গামছা বা তোয়ালে দিয়ে চুল ঝাড়া ঠিক নয়। ভেজা চুল আঁচড়ানো উচিত না।