26/07/2025
বিধবার লাল টিপের সাহস
মেঘলার জীবন থেমে গেছে তিন বছর আগে, কিন্তু পৃথিবী থামে না।
স্বামীর মৃত্যু কেবল একজন মানুষের প্রস্থান ছিল না, সমাজের চোখে সেটা ছিল মেঘলার জীবনের শেষ প্রহর।
তার বয়স পঁইত্রিশের কাছাকাছি—তবে সমাজের হিসাবমতো সে এখন বৃদ্ধ, নির্বাক, নিষ্প্রাণ।
একদিন সে ছিল রঙিন— সিঁথি ছিলো সিঁদুরে লাল রাঙা, কপালে ছিলো
লাল সূর্য , লাল শাড়ি, নাক ফুল, হেসে উঠত মৃদু বাতাসে; আর এখন সমাজ তাকে বেঁধে দিয়েছে সাদা শাড়ির শোকের শিকলে।
দিনগুলো কেটেছে নিঃশব্দে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে চোখ সরিয়ে নেয় সে নিজেই।
হাসতে গেলেও মনে পড়ে, "তুমি তো বিধবা, তুমি কি হাসতে পারো?"
কিন্তু আজ সকালটা একটু আলাদা ছিল।
ঘরের এক কোণে ধুলো ঢাকা নীল শাড়িটা হাতে নিল মেঘলা।
এই শাড়িতে একদিন তার স্বামী তাকে বলেছিল, “তুমি নীল পরলে আমার আকাশ মনে হয়।”
আস্তে আস্তে সে চোখে টানল কাজল, ঠোঁটে ছোঁয়াল সামান্য লিপস্টিক, আর কপালে রাখল লাল টিপ—একটা ছোট্ট বিন্দু, তবু যেন আগুন জ্বালায় সমাজের চোখে।
জানালার ওপাশে তখন কুৎসার বাতাস বইছে—
—“টিপ পরে কেন?”
—“স্বামী মরেছে, এখনো সাজে?”
—“বিধবা হয়েও এই রকম!”
মেঘলা কিছুই বলল না। জানালার কপাট টেনে দিল ধীরে। আয়নার সামনে বসে রইল কিছুক্ষণ।
সে জানে, সাজ তার পাপ নয়—সাজ তার বেঁচে থাকার প্রমাণ।
সন্ধ্যায় বের হলো সে। মাথা উঁচু করে,
পা ফেলে ধীরে, সম্মানে।
লোকজন তাকাল, কেউ কটাক্ষ করল, কেউ চোখ ঘোরাল।
তবুও মেঘলা জানে—
এই হাঁটা কেবল হাঁটা নয়,
এ এক বিদ্রোহ,
এ এক বেঁচে থাকার সাহস।
টিপটা লাল, তবু সমাজ দেখে আগুন,
কাজলের রেখা—তার চোখে দুঃখের গুণ।
নীল শাড়ি জড়ানো এক মেয়ে হেঁটে যায়—
বুকের ভেতর যুদ্ধ, মুখে কোন কথা নাই।
সে জানে না হয়, হাসিতে অপরাধ খোঁজে লোক,
তবুও হাসে, কেননা সে আজো জীবিত, চোখে শোক।
তাকে ভাবো না কেবল কারো ছায়া কিংবা ক্ষয়,
সে নিজেই নিজের এক আকাশ—
তাসলিমা মুক্তা