09/09/2025
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মানিক চানের পোলাওয়ের ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রায় ৭৯ বছর ধরে এই পোলাওয়ের ব্যবসা চলছে, যা একটি পারিবারিক ঐতিহ্য।
উৎপত্তি ও বিবর্তন:
শুরুটা পারিবারিক ব্যবসা: মানিক চানের বাবা পুরান ঢাকার প্রথম তিন বিরিয়ানি ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন ছিলেন। সেই সময় থেকেই তাদের পরিবার এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মানিক চান সেই পারিবারিক ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন এবং তার রান্না অসাধারণ বলে পরিচিত।
দোকান নয়, পথেই বিক্রি: মানিক চানের পোলাওয়ের বিশেষত্ব হলো, এর কোনো নির্দিষ্ট দোকান নেই। তিনি গলির পাশে একটি ডেচকি (বড় হাঁড়ি) নিয়ে পোলাও বিক্রি করেন। এটি তার ব্যবসার একটি অনন্য দিক, যা গ্রাহকদের মধ্যে কৌতূহল ও আকর্ষণ তৈরি করে।
ভোরের পোলাও: মানিক চানের পোলাওয়ের একটি বড় আকর্ষণ হলো এর বিক্রির সময়। একসময় এটি ভোরবেলা বিক্রি শুরু হতো এবং সূর্য ওঠার আগেই শেষ হয়ে যেতো। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ শুধুমাত্র এই পোলাও খাওয়ার জন্য ভোরের ঘুম বাদ দিয়ে ভিড় জমাতো। বর্তমানে, এটি অনেক সময় রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
টোকেন ব্যবস্থা: মানিক চানের পোলাওয়ের চাহিদা এতটাই বেশি যে, অনেক সময় টোকেন নিয়ে খাবার নিতে হয়। এটি তার খাবারের জনপ্রিয়তা ও মানের একটি প্রমাণ।
জনপ্রিয়তার কারণ:
ঐতিহ্যবাহী স্বাদ: মানিক চানের পোলাওয়ের স্বাদ ঐতিহ্যবাহী এবং এর রান্নায় পারিবারিক দক্ষতা ও গোপন মশলার ব্যবহার থাকে বলে মনে করা হয়।
ভিন্ন ভিন্ন পদ: শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন তিনি ৬ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন আইটেম বিক্রি করেন, যার মধ্যে খাসির মাংসের পোলাও, ডাল-ঝোল দিয়ে পোলাও ইত্যাদি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
খ্যাতি: মানিক চানের পোলাও কেবল সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, বরং বিভিন্ন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি, যেমন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক ডেপুটি হাইকমিশনার কামার আব্বাস খোকারও এই পোলাওয়ের স্বাদ নিতে এসেছেন।
মানিক চানের পোলাও শুধু একটি খাবার নয়, এটি পুরান ঢাকার খাদ্য সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা বহু বছর ধরে তার ঐতিহ্য ও স্বাদ ধরে রেখেছে।