Maktabatul Abrar - মাকতাবাতুল আবরার

Maktabatul Abrar - মাকতাবাতুল আবরার Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Maktabatul Abrar - মাকতাবাতুল আবরার, Publisher, 11/1, ইসলামী টাওয়ার, দোকান নং 22/23, বাংলাবাজার, ঢাকা-1100, Dhaka.

নাজেরা বিভাগ ও হেফজখানায়আল-কুরআন পাবলিকেশন্স-এর মুসহাফ(আল-কুরআনুল কারীম) চালু করা কেন জরুরিকারণ এই মুসহাফটির ত্রিশটি অন...
07/04/2025

নাজেরা বিভাগ ও হেফজখানায়
আল-কুরআন পাবলিকেশন্স-এর মুসহাফ
(আল-কুরআনুল কারীম) চালু করা কেন জরুরি
কারণ এই মুসহাফটির ত্রিশটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মুসহাফের শুরুতে ভূমিকায় বৈশিষ্ট ত্রিশটির বিবরণ রয়েছে। তন্মধ্যে বিশেষ কয়েকটি বৈশিষ্ট নিম্নরূপ-
১. এতে রছমেখত সহীহ করা হয়েছে, যেখানে এ দেশে প্রচলিত মুসহাফসমূহে প্রচুর সংখ্যক (কোনো কোনোটিতে শতাধিক) রছমেখতের গলতী রয়েছে।
২. যে সমস্ত সাফ্হার শেষ হয়েছে এমন শব্দের উপর এবং তার পরবর্তী সাফ্হার শুরু হয়েছে এমন শব্দ দিয়ে যা অর্থ ও তারকীবের বিবেচনায় অ-মুনাসেব, সে সমস্ত জায়গায় এ মুসহাফে সাফ্হার পরিমাণে কম-বেশ করে মুনাসেব সংগতি আনয়ন করা হয়েছে।
৩. এ মুসহাফে ২৯ ও ৩০ নং পারাকেও ২০ সাফ্হায় বিন্যস্ত করা হয়েছে। যা হাফেজদের তারাবীহে তিলাওয়াতের পেরেশানীকে দূর করবে।
৪. এ মুসহাফে মুশাব্বাহ্-র আয়াতসমূহের বিবরণ রয়েছে। এবং অন্যান্য মুসহাফের তুলনায় এটি অধিকতর সমৃদ্ধ।
৫. এ মুসহাফে ওয়াকফ ও ইবতিদা বিষয়ক দিক-নিদের্শনা রয়েছে। এবং এটি কোন নির্দিষ্ট কারীর অনুসরণ করে নয় বরং অর্থ বিবেচনা করেই বিষয়টি নিষ্পন্ন করা হয়েছে।
৬. কোনো সূরার একাধিক নাম থাকলে কিংবা কোনো সূরা মাক্কী বা মাদানী হওয়া নিয়ে একাধিক মত থাকলে অবলিক (/) সহকারে সবগুলো লিখে দেওয়া হয়েছে। যাতে ছাত্র জীবন থেকেই শিক্ষার্থীরা বিষয়গুলো অবগত হয়ে যায়।
৭. এই মুসহাফের রুমূঝে আওকাফ (ওয়াকফ করা না করা সংক্রান্ত নির্দেশক চিহ্নাদি) অর্থের সঙ্গে অধিকতর সংগতিপূর্ণ। এই রুমূঝে আওকাফ গ্রহণ করা হয়েছে ‘মুসহাফুল মদীনা’ থেকে।
৮. এই মুসহাফের প্রতি পৃষ্ঠায় উপরে পারা নম্বর ও সাফ্হা নম্বর বাংলায় লিখে দেয়া হয়েছে। ফলে ছাত্রদের এগুলো লিখে নেয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
৯. এ মুসহাফের art work পদ্ধতিতে তৈরি করা শব্দ ও হরকত ইত্যাদি এমন দৃষ্টিবান্ধব ও এতটুকু মোটা যা পাঠ করতে চোখের উপর প্রেসার পড়বে না, দীর্ঘ সময় দেখে তিলাওয়াত করলেও মাথা ব্যথার কারণ ঘটবে না।
১০. এর শব্দ ও হরকত ইত্যাদি অত্যন্ত ঝরঝরে, কোনটিই একটির উপর আরেকটি উঠে যায়নি বা একটির সংগে আরেকটি জড়িয়ে যায়নি।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:
1. আল-কুরআনুল কারীম মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন সাহেব-এর দীর্ঘ সাত বছরের তাহকীক ও মেহনতে প্রস্তুতকৃত। এবং হযরত মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবসহ আরও অনেক মুহাক্কিক আলেম কর্তৃক তাহকীকসমূহ যাচাইকৃত।
2. বিশুদ্ধতম হওয়ার প্রেক্ষিতে এবং প্রচুর সংখ্যক জরুরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে হযরত মাওলানা নূর হোছাইন কাছেমী রহ., হযরত মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম ও হাফেজ কারী আব্দুল হক সাহেব দামাত বারাকাতুহুমসহ বহু মুহাক্কিক আলেম ও বিজ্ঞ হাফেজ বিশেষত হাফেজ ও আলেমদের জন্য এই মুসহাফটি গ্রহণ করা উচিত বলে অভিমত ব্যাক্ত করেছেন এবং ইতিমধ্যে প্রচুর সংখ্যক মাদরাসার নাজেরা ও হিফজ বিভাগে এটি চালুও হয়েছে।

প্রকাশনায়:
আল-কুরআন পাবলিকেশন্স, কিতাব মার্কেট (যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসা সংলগ্ন), ঢাকা
মোবাইল- ০১৭৬৪-১৮৫৬৫৪

নিম্নের লাইব্রেরি থেকেও সমমূল্যে পাইকারি ও খুচরা ক্রয় করা যায়-
মাকতাবাতুল আবরার ১১/১, ইসলামী টাওয়ার, দোকান নং ২২-২৩, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০
মোবাইল: 01712- 306364

অনলাইনে অর্ডার করতে : www.maktabatulabrar.com

অর্ডার করতে নিম্নের নম্বরে ইনবক্সও করতে পারেন-01712- 306364
হাদিয়া : ২৭৫ টাকা
উল্লেখ্য: মাদরাসার জন্য একসঙ্গে বেশ কিছু সংখ্যক মুসহাফ ক্রয় করলে বিশেষ ছাড় মূল্য রাখা হয়।

তারাবীহতে কোন্ হাফেজ কোথা থেকে পড়বে: একটি প্রস্তাবনাআমি জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া (যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা...
18/02/2025

তারাবীহতে কোন্ হাফেজ কোথা থেকে পড়বে: একটি প্রস্তাবনা

আমি জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া (যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসা)-এর যেসব ছাত্রের তারাবীহের জন্য মসজিদ ঠিক হয় না- এরকম কিছু ছাত্র নিয়ে মাদরাসায় আমার রুমে খতম তারাবীহের ব্যবস্থা করি। সাধারণত পাঁচ জন ছাত্র তারাবীহ পড়ায়। প্রতিজন চার রাকআত করে পড়ায়। কিন্তু কে কোন্ চার রাকআত পড়াবে তা নামাযে দাঁড়ানোর পূর্বক্ষণে ঠিক করে দেওয়া হয়, আগে থেকে ঠিক করে দেওয়া থাকে না। এর ফলে প্রত্যেকেই পুরো পারা ইয়াদ করে আসে। এর বিপরীত সব জায়গাতেই আগে থেকে ঠিক করা থাকে কোন্ হাফেজ কোথা থেকে কতটুকু পড়াবে। এতে কী হয়- যে যতটুকু পড়াবে ততটুকু যতটা যত্নসহকারে ইয়াদ করে বাকিটুকু সেভাবে ইয়াদ করে না। ফলে পুরো রমজানেও হাফেজদের পুরো কুরআন ভালোভাবে ইয়াদ করা হয় না। আরও একটা সমস্যা হল- অন্য হাফেজেরটুকু ভালোভাবে ইয়াদ না করার কারণে অন্য হাফেজ ভুল পড়লে ঠিকমত লোকমা দিতে পারে না। ফলে তেলাওয়াতে এমনকি খতমে গোঁজামিল থেকে যায়। অন্য হাফেজের ভুল না ধরার পেছনে কোথাও হাফেজদের মধ্যকার পারস্পরিক ঘোষিত বা অঘোষিত বোঝাপড়াও কারণ থাকতে পারে, তবে অন্যেরটুকু ভালো ইয়াদ না থাকা যে সঠিকভাবে লোকমা না দিতে পারার একটা কারণ তা আমাদের অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত। অবশ্য দুই এক জায়গায় এমনও হয় যে, অন্য হাফেজকে ঘায়েল করার জন্য অন্য হাফেজের অংশটুকুও ভালোভাবে ইয়াদ করা হয় কিংবা এমনিতেই পুরো কুরআন ভালোভাবে ইয়াদ করা হয়। তবে এর পরিমাণ কম। অন্যেরটুকু ভালোভাবে ইয়াদ না করার বাস্তবতাই প্রকট। তাই রমজানে সামগ্রিকভাবে হাফেজদের পুরো কুরআন ইয়াদ করার স্বার্থে এবং সঠিকভাবে লোকমা দিয়ে তারাবীহতে তেলাওয়াত ও খতম সুন্দর করার স্বার্থে সব জায়গাতেই এরূপ নিয়ম হওয়া ভালো মনে হয় যে, আগে থেকে নির্ধারিত করা থাকবে না কোন্ হাফেজ কোথা থেকে পড়াবে। নামাযের পূর্বক্ষণে সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটি গত বছর পোস্ট করা হয়েছিল। কিঞ্চিত পরিবর্তন করে পুন:পোস্ট করা হলো

ফেসবুক ইউটিউব আপনার প্রচুর সময় খেয়ে ফেলছে? বাঁচার উপায়অনেকেই বলে থাকেন ফেসবুকে ঢুকলে আর কোন খেয়াল থাকে না, নিজের অজান...
09/02/2025

ফেসবুক ইউটিউব আপনার প্রচুর সময় খেয়ে ফেলছে? বাঁচার উপায়

অনেকেই বলে থাকেন ফেসবুকে ঢুকলে আর কোন খেয়াল থাকে না, নিজের অজান্তেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়। আমি তাদেরকে বলি, আমি ফেসবুকে ঢোকার পর পনের মিনিট গেলেই আমার মোবাইলে একটা রিমাইন্ডার বক্স ভেসে ওঠে, যাতে লেখা থাকে- আপনার নির্ধারিত পনের মিনিট সময় পার হয়ে গেছে। তখনই আমি ফেসবুক থেকে বের হয়ে আসি। বিশেষ কোন দেখার বিষয় থাকলে ভিন্ন কথা। আপনি পনের মিনিট হোক বা কম বেশ একটা সময় নির্ধারিত করে নিন। তাহলে সেই সময় পার হয়ে গেলে আপনার মোবাইলেও এমনটা দেখাবে। তখনই বের হয়ে আসবেন। তাহলে ফেসবুক আপনার অজান্তে আপনার সময় খেয়ে নিতে পারবে না। একটা সহজ সেটিংসের মাধ্যমে আপনি এটা করে নিতে পারবেন। ফেসবুকে ঢোকার পর স্ক্রিনের উপর দিকে ডান পাশে আপনার আইডি বা পেজের প্রোফাইল আইকন দেখতে পাবেন। তাতে ঢুকে Settings অপশনে যাবেন। তারপর Your time on Facebook অপশনে ঢুকলে Manage your time অপশন পাবেন। তার মধ্যে গিয়ে Daily time reminder য়ে আপনার ইপ্সিত সময় সেট করে নিবেন। ইউটিউবেও প্রোফাইল আইকনে ঢুকে Remind me to take a break অপশন থেকে আপনার সময় সেট করে নিতে পারবেন। ফেসবুক ও ইউটিউবে আপনার সময় নিয়ন্ত্রণ করুন। বহুমুখী ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্যই এটা করুন। Mental diversion তথা চিত্তবিক্ষেপ থেকে বাঁচার জন্যই এটা করুন। ফেসবুক ইউটিউবে খুব বেশি সময় ব্যয় করলে নানান তাল-বেতালের জিনিস দেখে ও পড়ে আপনার যেহেনে এনতেশার আসবে, মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হবে, চিত্তবিক্ষেপ ঘটবে। যা আপনাকে লেখা-পড়া, রিসার্চ-গবেষণা ও ইবাদত-বন্দেগির একনিষ্ঠতা ও ঐকান্তিকতা থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। আপনার বহু জরুরি কাজে ব্যাঘাত ঘটাবে। এমনকি আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার সদস্যদের সাথে ঘনিষ্ঠতাও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে। ফেসবুক ইউটিউবের তাল-বেতালের পোস্ট দেখে আমরা আমাদের জীবনের মহামূল্যবান সময় নষ্ট করে দিতে পারি না। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

AI -এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হোনমাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীনAI (এ আই) হল Artificial intelligence অর্থাৎ ...
02/02/2025

AI -এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন
মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

AI (এ আই) হল Artificial intelligence অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অনুকরণ এবং সমস্যা সমাধানের মতো গুণাবলিকে কম্পিউটার বা মেশিনের মাধ্যমে সম্পন্ন করার চেষ্টা করে। AI দিয়ে নানান রকম হিসাব নিকাশ, আর্ট, ড্রয়িং, অনুবাদ, রিসার্চ-গবেষণা ইত্যাদি করানো যায়। এর দ্বারা বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয় জানা যায়। AI-এর উপকারের অনেক দিক আছে সন্দেহ নেই। এ কারণে AI-এর চাহিদা ও জনপ্রীয়তা এখন তুঙ্গে। বাজার চাহিদা তুঙ্গে দেখে বিশ্বের বড় বড় ধনকুবেররা এর পেছনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে চলেছেন। কিন্তু এর এমন কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা কোনক্রমেই সমর্থনযোগ্য নয়। সেগুলো মারাত্মক ধ্বংসাত্মক। আমি এখানে সেরকম 3টা বড় ক্ষতির দিক তুলে ধরছি।

(1) সবচেয়ে বড় ক্ষতির দিক হলো AI মেধা ও মননের স্বাভাবিক বিকাশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং আরও দিবে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের মেধা অলস ও নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। কেউ আর মেধা খাটাতে উৎসাহিত হবে না। কারণ সবকিছুর সমাধান তো AI -এর কাছ থেকেই পাওয়া যায়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের লেখাপড়া, জ্ঞানচর্চা, রিসার্চ-গবেষণা, মাথা খাটিয়ে রচনা অনুবাদ, আর্ট ড্রয়িং করা সবকিছু অনুৎসাহিত হয়ে পড়বে। কারণ এতো কষ্ট করে লেখাপড়ার কী দরকার, এতো মাথা খাটিয়ে রিসার্চ-গবেষণা, রচনা অনুবাদ ইত্যাদি কেন করতে হবে, সবকিছুই তো AI -এর কাছে পাওয়া যায়। এই তো কিছুদিন পূর্বে আমাদের 'ইন্টারন্যাশনাল দাওয়াত মিশন'-এর কাজে কিছু ইসলামী বই ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য লোক আহবান করেছিলাম। অনুবাদ করার জন্য কিছু স্যাম্পল দিয়েছিলাম। দেখা গেল অধিকাংশ অনুবাদকই সম্পূর্ণ AI বা google translate-এর সাহায্য নিয়েই অনুবাদ করে জমা দিয়েছেন। নিজেরা একটুও মাথা খাটাননি। আর AI বা google translate-এর অনুবাদ যে কতো জায়গায় হাস্যকর বা গোজামিলে কিম্বা নাদানসুলভ হয়ে থাকে তা বিজ্ঞজন অবহিত আছেন।

(2) AI-এর আর একটি বড় ক্ষতির দিক হলো অনুকরণ। যেমন মানুষের কন্ঠ ও অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ করে হুবহু তার মতো কথা বলছে। কথার সঙ্গে মুখভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গিরও মিল থাকছে। যেমন ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ড. ইউনূস ও শেখ হাসিনার কিছু ভিডিও ছাড়া হয়েছে, যেগুলোর পুরোটাই AI-এর কারিশমা। এভাবে চলতে থাকলে কতো মানুষকে যে কতোভাবে ফাঁসানো হতে পারে বা লাঞ্ছিত করা হতে পারে তা ভেবে দেখার রয়েছে বৈকি! এই প্রক্রিয়া যে শুধু হাসি তামাশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, ব্লাকমেইল, তথ্যবিকৃতি ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হবে না তার গ্যারান্টি কে দিবে? অনেক মানুষ তো এগুলোকে বাস্তব মনে করে অন্তত প্রথম পর্যায়ে প্রতারিত হবেই। আবার অনেকে অনেক বাস্তবকেও অস্বীকার করবে এই বলে যে, এটা AI-এর কারসাজি। কী সব হ-য-ব-র-ল অবস্থাই না হবে।

(3) AI-এর আর একটি বড় ক্ষতির দিক হলো কল্পনাকে বাস্তবের মতো চিত্রায়িত করা। এভাবে আজকাল অনেকে নানান অদ্ভুত ধরনের জীবজন্তুর চিত্র বা ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ছে আর আমাজন অমুক তমুক জঙ্গলে এসব প্রাণী থাকার কথা বলছে। ভিন গ্রহের বিভিন্ন ভিডিও বানিয়েও ছাড়া হচ্ছে এবং নাসার আবিষ্কার বা বিজ্ঞানের আবিষ্কার ইত্যাদি দাবিও করা হচ্ছে। এগুলো যে AI দিয়ে বানানো তা অনেকে বুঝতেও পারছে না। ফলে ভুয়া ধ্যান-ধারণা তাদের মাথায় বাসা বাঁধছে। এর বিপরীত অনেকে প্রাণীজগতসহ বিজ্ঞানের অনেক অনুসন্ধানী বাস্তব চিত্র ভিডিও নিয়েও সন্দেহে পড়ে যাচ্ছে এই ভেবে যে, এগুলো আবার AI-এর বানানো কৃত্রিম নয়তো। একটু অসাধারণ সব ধরনের চিত্র ভিডিও নিয়েই এখন এরকম সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। কোনটা আসল কোনটা নকল আমরা সাধারণ মানুষরা পার্থক্য করতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে জ্ঞানজগত যে হ-য-ব-র-ল হয়ে যাবে তা নিয়ে কি ভাবনার সময় আসেনি।

আবারও বলছি AI-এর উপকারের অনেক দিক রয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে AIকে সমূলে নিষিদ্ধ করে দেওয়া না হলেও অন্তত এই ক্ষতিকর দিকগুলো AI-এর প্রোগ্রাম থেকে অতি অবশ্যই বাদ দেওয়া উচিত। AI -এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। শুধু AI নয় আরও যেসব সফটওয়্যার বা কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে এগুলো হচ্ছে সবগুলোর বিরুদ্ধেই সোচ্চার হোন। এগুলোর পেছনে যাদের ব্যবসা রয়েছে তারা নিবৃত্ত না হলে স্থানীয়ভাবে এগুলোকে বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা বিজ্ঞানের উন্নতি চাই। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির নামে আমাদের ক্ষতিসাধন করে কেউ ব্যবসা করে যাক আমরা আদৌ তা মেনে নিতে পারি না।

13/01/2025
প্রাইমারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনসমূহের পরিচালক ও শিক্ষকবৃন্দের নিকট আবেদন আজকের শিশু-কিশোর আগামী দিনের দেশ ও জাতির পরিচা...
20/11/2024

প্রাইমারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনসমূহের পরিচালক ও শিক্ষকবৃন্দের নিকট আবেদন
আজকের শিশু-কিশোর আগামী দিনের দেশ ও জাতির পরিচালক। আপনারা এই শিশু-কিশোরদের বেসিক শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে তাদেরকে দেশ ও জাতির পরিচালক হিসেবে গড়ে তুলছেন। এটা জাতির এক মহান সেবা। জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ।
প্লে-গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পর তথা শুরু থেকে প্রাইমারি শিক্ষা সমাপ্ত করার পর বহুশিশু-কিশোরের আর বেশি লেখাপড়ার সুযোগ হয় না। তাই এ পর্যন্ত শিক্ষার মধ্যে যথাসাধ্য এমন মৌলিক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত রাখা চাই, যা শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের সহায়ক হয়। আপনারা সিলেবাসে এ পর্যায়ের বৈষয়িক অনেক কিছুই যোগ করে শিশু-কিশোরদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আরও কয়েকটি মৌলিক প্রয়োজন পূরণার্থে সিলেবাসে আর একটা সাবজেক্ট যোগ করা অতি প্রয়োজনীয়। সেটা হল- "ইসলাম ও আরবী শিক্ষা"। এর জন্য আপনাদের প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্লাসের সময় থেকে মাত্র ২০/৩০ মিনিটের একটা সময় বের করে নিলেই যথেষ্ট হবে। (প্লে-গ্রুপ, নার্সারি এবং ১ম ও ২য় শ্রেণীর ক্ষেত্রে ২০ মিনিট হলেও চলবে। তার উপরের শ্রেণীসমূহের ক্ষেত্রে ৩০ মিনিট হলে উত্তম হবে।) এই সময়ে থাকবে ‘ইসলাম ও আরবী শিক্ষা’-এর একটি ঘণ্টা। এই একটি মাত্র ঘণ্টাতেই সংক্ষেপে মৌলিক 6টি বিষয় শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে, যেগুলো শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যত জীবনের 6 টি মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে। সেগুলো হলো-
(১) মুসলমান হিসেবে একজন মানুষের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস শিক্ষা দেওয়া। এই মৌলিক শিক্ষা থাকলে শিক্ষার্থীরা প্রাইমারির পর আর লেখাপড়া না করলেও সারাজীবন তারা মুসলমান হিসেবে চলতে সক্ষম হবে। শিশু-কিশোর মনে ইসলামের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে থাকলে আশা করা যায় ভবিষ্যতে তারা নাস্তিক বা একেবারে বেদ্বীন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
(2) মৌলিক ইবাদত-বন্দেগী ও সেগুলোর জরুরি মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দেওয়া। যাতে তাদের ভবিষ্যত জীবনের ইবাদত-বন্দেগী শুদ্ধ হতে পারে।
(3) মৌলিক ইসলামী আদর্শ ও কৃষ্টি-কালচার শিক্ষা দেওয়া। যাতে তারা অমুসলিম কৃষ্টি-কালচারের অনুবর্তী হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে।
(4) পুরো কুরআন মাজীদ শুদ্ধভাবে পড়তে শেখানো। তাহলে তাদের সারা জীবনের কুরআনের তেলাওয়াত সঠিক হবে, নামাযের কেরাত শুদ্ধভাবে হওয়ার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ ইবাদত নামায শুদ্ধ হবে।
(5) বিশেষ উপদেশমূলক চল্লিশটি আয়াত ও চল্লিশটি হাদীছ অর্থসহ মুখস্থ করিয়ে দেওয়া। যা সারা জীবন তাদের মস্তিষ্কে সু-প্রভাব ফেলতে থাকবে।
(6) প্রাথমিক পর্যায়ের আরবি কথোপকথন শিক্ষা দেওয়া। তাহলে দেশের প্রচুর সংখ্যক মানুষ যারা আরব দেশসমূহে কর্মের জন্য যায়, তারা আরবি কথোপকথন জানা থাকার কারণে ভালো অবস্থান করে নিতে পারবে। সেইসঙ্গে আরবী জানা থাকার কারণে ভবিষ্যতে তারা ইসলামিয়াত বিষয়ে ভাল নম্বর করাসহ উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষার অনুপ্রেরণাও লাভ করবে এই ভেবে যে, আমি তো আরবী কিছুটা জানিই, আরও একটু জানলেই তো আমি অগ্রসর হতে পারি। এভাবে আরবী ভাষায় কথোপকথন জানা তাদের বৈষয়িক ও ধর্মীয় উভয় দিকের কল্যাণ বয়ে আনবে।
প্রাইমারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনসমূহের পরিচালক ও শিক্ষকবৃন্দের নিকট আমাদের আবেদন- আপনাদের হাতে গড়া শিশু-কিশোরদেরকে নাস্তিকতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, তাদের মধ্যে সারাজীবন ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী চলার মনোবৃত্তি সৃষ্টি করে দেওয়ার ও তার ভিত্তি গড়ে দেওয়ার জন্য, তাদের সারা জীবনের নামায ও কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ করে দেওয়ার জন্য, তাদেরকে ইসলামী মন-মানস, ইসলামী আদর্শ ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার সম্পন্ন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, সর্বোপরি তাদের বৈষয়িক ও ধর্মীয় উভয় দিকের কল্যাণ সাধনের জন্য আপনারা আপনাদের সিলেবাসে ইসলাম ও আরবী শিক্ষার এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা সক্রিয় বিবেচনায় আনবেন। এতে আপনাদের এক মহান দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে ইসলামপ্রীয় লোকদের সন্তানের আগমনও নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে। এভাবে আপনারা বৈষয়িকভাবেও লাভবান হবেন ইনশাআল্লাহ! পরকালের প্রাপ্তি তো থাকবেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবূল করুন। আমীন!
উল্লেখ্য- প্লে-গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি শ্রেণীর এই একটি ক্লাসের জন্য আমরা ‘ইসলাম ও আরবী শিক্ষা’ নামে একটি সিরিজ পুস্তক (মোট ৭ শ্রেণীর জন্য ৭ খণ্ডে) তৈরি করেছি। যেগুলোতে উপরোক্ত 6টি বিষয়ের 5টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শুধু কুরআন তেলাওয়াত সহীহভাবে শেখানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উস্তাদ নিজের থেকে করাবেন। সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা পুস্তকটিতে রয়েছে। সিরিজ পুস্তকগুলোর ভাষা, উপস্থাপনা, আলোচ্য বিষয়ের ভারত্বে তারতম্য- সবিকছুই শিশু-কিশোরদের মেধার লেভেল ও মনস্তত্ত্ব বিবেচনায় রেখে নিষ্পন্ন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি পুস্তক পাঠদানের জন্য শিক্ষক-নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই উদ্যোগকে সফল করুন। আমীন!
প্রয়োজনে পুস্তকগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা, বুঝা ও দেখার জন্য আমাদের নিকট আপনাদের প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারবেন। অনলাইনে সংক্ষিপ্ত পিডিএফও দেখে নিতে পারেন। লিংক-

বিশেষ দ্রষ্টব্য-
1. ঢাকার যাত্রাবাড়ি, তেজগাও ও উত্তরা থানার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আগামী শিক্ষাবর্ষ (2025) থেকে সিরিজ পুস্তকটি চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অন্য যারা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তারা আগামী ডিসেম্বর (2024)- এর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমাদেরকে অবহিত করলে চাহিদা মোতাবেক আমরা পুস্তকগুলো মুদ্রণের উদ্যোগ নিব। আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পুস্তকগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
2. এ পুস্তকসমূহ পাঠদানের জন্য কুরআন শুদ্ধভাবে শেখাতে পারে এবং প্রাথমিক আরবী কথোপকথন জানে এমন শিক্ষক/শিক্ষিকা আবশ্যক। কওমী মাদরাসা ফারেগ শিক্ষক/শিক্ষিকা অধিকতর উপযোগী হবে।

বিনীত-
মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন
(আহকামে যিন্দেগী, আহকামুন্ নিছা,
ইসলামী মনোবিজ্ঞান, ইসলামী আকীদা
ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রভৃতি গ্রন্থের লেখক)
যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসা, ঢাকা
যোগাযোগের নম্বর- ০১৭১২-৫৮৫৯১৮
মোবাইলে কথা বলার সময়- আসরের পর থেকে রাত 10টা পর্যন্ত।

দেশ ও সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন আলেম সমাজ দ্বারাই বেশি হয়ে থাকেমাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীনبسم الله الرحمن الرحيم.نحمده...
05/10/2024

দেশ ও সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন আলেম সমাজ দ্বারাই বেশি হয়ে থাকে
মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

بسم الله الرحمن الرحيم.
نحمده ونصلي على رسوله الكريم. أما بعد :
কিছু লোক প্রশ্ন তুলে থাকে আলেমরা দেশ ও সমাজের উন্নয়নে কী করে থাকেন? এর উত্তর হল- দেশ ও সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় আলেম সমাজ দ্বারাই তা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু যারা প্রশ্ন তুলে থাকে তারা হয়তো দেশ ও সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন বলতে কী বুঝায় সেটাই বোঝে না, বরং উল্টো যেটা প্রকৃত উন্নয়ন নয় সেটাকেই উন্নয়ন বুঝে বসে থাকে, ফলে আলেম সমাজের কৃত প্রকৃত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো তাদের কাছে বিবেচ্য হয় না। কিংবা তাদের চোখের উপর ইসলাম ও উলামা বিদ্বেষের পর্দা সেঁটে থাকে, ফলে তারা আলেম সমাজ কর্তৃক সম্পাদিত প্রকৃত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো দেখতে পায় না।

অভিধানের বর্ণনা অনুযায়ী 'উন্নয়ন' (Development) অর্থ উন্নতি সাধন, প্রবৃদ্ধি ঘটানো, শ্রীবৃদ্ধিকরণ। এই 'শ্রীবৃদ্ধিকরণ' কথাটিকে সামনে রেখে সবগুলো অর্থ সমন্বিত করলে সার এই দাঁড়াবে যে, মন্দের বৃদ্ধি ঘটানো নয়, বরং ভালোর বৃদ্ধি ঘটানোই হচ্ছে উন্নয়ন। মানব উন্নয়ন হোক, নৈতিক উন্নয়ন হোক, সামাজিক উন্নয়ন হোক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক, সব উন্নয়নের ক্ষেত্রেই একই কথা- মন্দের নয়, বরং ভালোর বৃদ্ধি ঘটানোই হচ্ছে উন্নয়ন।
প্রকৃত উন্নয়ন-এর এই সংজ্ঞা ও পরিচয় সামনে রেখে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন সব ধরনের উন্নয়নে আলেম সমাজের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। এবং গর-আলেমদের তুলনায় আলেমদের ভূমিকাই বেশি। যেমন:

মানব উন্নয়ন (Human Development):
মানব উন্নয়ন বলতে মানুষের মনুষ্যত্ব ও মানবিকতা বৃদ্ধি পাওয়াই বোঝায়। মানুষকে কুমানুষ বানানো উন্নয়ন নয় বরং মানুষকে সুমানুষ হিসেবে গড়ে তোলা উন্নয়ন। দেশে কুনাগরিকের বৃদ্ধি ঘটানো উন্নয়ন নয় বরং সুনাগরিকের বৃদ্ধি ঘটানো উন্নয়ন।
এবার দেখুন- মানুষের মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি ও মানুষকে সুমানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আলেম সমাজের চেয়ে কাদের ভূমিকা বেশি রয়েছে? আলেম সমাজ যেসব মানুষ তৈরি করেন তারা হলেন হাফেজে কুরআন, আলেমে দ্বীন, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ ও ফকীহ তথা আম্বিয়ায়ে কেরামের উত্তরসূরী ও নায়েবে নবী। তারা তৈরি করেন ইমাম ও খতীব, জাতির ধর্মীয় শিক্ষক ও আধ্যাত্মিক পরিশোধনকারী ব্যক্তিত্ব। তারা তৈরি করেন খাঁটি দ্বীনদার ও ধর্মপ্রাণ মানুষ। আর আলেম সমাজের তৈরিকৃত এই সব শ্রেণীর মানুষ যে সমাজের সুমানুষ ও আদর্শ মানুষ তা সুস্থ্য বিবেক সম্পন্ন সকলের কাছেই স্বীকৃত। বস্তুত আলেম সমাজ মানুষকে কুরআন সুন্নাহর কিছু আক্ষরিক বিদ্যা শিক্ষা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন না। বরং তাদেরকে সেই বিদ্যার প্রতিচ্ছবি আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন।
দেশের মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আলেম সমাজের চেয়ে কাদের ভূমিকা বেশি রয়েছে? আলেম সমাজ যাদেরকে তৈরি করেন সেই হাফেজে কুরআন, আলেমে দ্বীন, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, ফকীহ, ইমাম, খতীব, খাঁটি দ্বীনদার ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মত সুনাগরিক আর কারা বেশি তৈরি করে থাকে?

চারিত্রিক উন্নয়ন (Character development):
চারিত্রিক উন্নয়ন বলতে বোঝায় চরিত্রকে সৎ বানানো, মানুষকে উত্তম চরিত্রসম্পন্ন বানানো।
এবার দেখুন- সৎ চরিত্র ও উত্তম চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে আলেম সমাজের চেয়ে কাদের ভূমিকা বেশি রয়েছে? আলেম সমাজ নবী সা.-এর শিক্ষা প্রচার করেন, যে নবীকে প্রেরণই করা হয়েছিল উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেয়ার জন্য। আলেম সমাজ ছাড়া অন্য কারা নৈতিকচরিত্র শিক্ষাদানে কার্যকর ভূমিকা রাখে? অন্যদের অবস্থা তো এই- কয়েক বছর আগে ভার্সিটির এক শিক্ষিকার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল যে, পাঠ্যবই পড়ানো আমাদের দায়িত্ব, নৈতিকচরিত্র শিক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব নয়।

সামাজিক উন্নয়ন (Social Development):
সামাজিক উন্নয়ন বলতে সমাজ ও সমাজের বিচার-ব্যবস্থায় জুলুম অবিচারের বৃদ্ধি ঘটানো নয় বরং ইনসাফ ও সুবিচারের বৃদ্ধি ঘটানোই বোঝায়। সমাজ সদস্যদের মাঝে সৌহার্দ সম্প্রীতির বৃদ্ধি ঘটানোই বোঝায়। এমনিভাবে সমাজ ও প্রশাসনে দুর্নীতির বৃদ্ধি ঘটানো উন্নয়ন নয় বরং ন্যায়-নীতির বৃদ্ধি ঘটানো উন্নয়ন।
এবার দেখুন- সামাজিক সৌহার্দ সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইসলাম প্রদত্ত অনন্য শিক্ষা, ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম প্রদত্ত অনন্য শিক্ষা আলেম সমাজের চেয়ে আর কারা বেশি প্রচার করে থাকে।

আরও দেখুন প্রশাসনে বিরাজমান দুর্নীতি দূরীকরণ ও সুনীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আলেম সমাজের চেয়ে কাদের ভূমিকা বেশি? এই যে এখনও হাজারো লাখো মানুষ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করা, কর্তব্য কাজে ফাঁকি না দেয়া, ঘুষ উৎকোচ গ্রহণ না করা, সরকারি অর্থ আত্মসাত না করা ইত্যাদি নৈতিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দুর্নীতি মুক্ত হয়ে থাকছেন এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও দেশ গড়ার কাজে ভূমিকা রাখছেন এই দুর্নীতি মুক্ত হওয়ার শিক্ষা তাদেরকে আলেম সমাজই দিচ্ছেন অন্য কেউ নয়।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development):
অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি করা নয় বরং সুব্যবস্থাপনা বৃদ্ধি করাই বোঝায়।
এবার দেখুন- অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আলেম সমাজের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা অনস্বীকার্য। মিল ফ্যাক্টরি, খামার হ্যাচারি প্রভৃতি অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান অনেকেই গড়ে তুলতে পারে, পরিচালনা করতে পারে, কিন্তু যে সততা, দায়িত্বনিষ্ঠা ও নীতি-নৈতিকতা ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানেরই আর্থিক সফলতা আসে না, সেই শিক্ষা আলেম সমাজই প্রদান করেন অন্য কেউ নয়। বস্তুত এ ক্ষেত্রে আলেম সমাজের ভূমিকা রয়ে যায় স্থূল দৃষ্টির অন্তরালে। যার ফলে মনে হয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আলেম সমাজের কোনোই ভূমিকা নেই।

এতক্ষণ প্রকৃত উন্নয়ন কাকে বলে এবং সে ক্ষেত্রে আলেম সমাজের কি ভূমিকা তার যে বিবরণ পেশ করা হল তা যদি কেউ না মানে বরং মনে করে যে, উন্নয়ন হল বেহায়া বেলেল্লাপনা বৃদ্ধির নাম, উন্নয়ন হল খেল-তামাশা বৃদ্ধির নাম, উন্নয়ন হল নীতি-নৈতিকতার বন্ধন থেকে মুক্তির নাম, উন্নয়ন হল অসচ্চরিত্রের প্রবাহে ভেসে যাওয়ার নাম ইত্যাদি, তাহলে বুঝতে হবে তার উন্নয়ন-এর সংজ্ঞা বুঝতে সমস্যা রয়েছে। আর যারা উন্নয়ন বলতে শুধু রাস্তাঘাট, কলকারখানা, বিল্ডিং ইমারত বৃদ্ধি পাওয়াকে বোঝে তাদের উন্নয়ন সম্পর্কিত ধারণা নিতান্তই সংকুচিত।

এখানে আরও একটা কথা চাই। তা হল এই যে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে যে উন্নয়ন সূচিত হয় এসব কাজের ঠিকাদারি ও দায়িত্ব গর-আলেমদেরকেই দেওয়া হয়। আর তাতে উন্নয়নের ফাঁক দিয়ে কী পরিমাণে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাত ঘটে তা সকলেরই কম বেশ জানা আছে। অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে হলেও এরকম দুই চারটা কাজের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব আলেমদের হাতে দিয়ে দেখা হোক, অবশ্যই জাতি তুলনামূলকভাবে ভাল রেজাল্টই দেখবে ইনশা আল্লাহ।

অতি শীঘ্রই প্রকাশিত হচ্ছে মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন সাহেবের সদ্য উজবেকিস্তান সফর থেকে ফেরার পর রচিত উজবেকিস্তানের...
30/09/2024

অতি শীঘ্রই প্রকাশিত হচ্ছে মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন সাহেবের সদ্য উজবেকিস্তান সফর থেকে ফেরার পর রচিত উজবেকিস্তানের সফরনামা-

'উজবেকিস্তানে কয়েক দিন'
• এ সফরনামাটি তাদের জন্য, যারা উজবেকিস্তানে ইলমী সফরে যেতে চান।
• এ সফরনামাটি তাদের জন্য, যারা উজবেকিস্তানের ইসলামী ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেককিছুর ব্যাপারে হাতে কলমে দিক-নির্দেশনা পেতে চান।
• এ সফরনামাটি তাদের জন্য, যারা উজবেকিস্তানের ইসলামী ইতিহাস ও ভূগোল সম্বন্ধে ধারণা অর্জন করতে চান।
• এ সফরনামাটি তাদের জন্য, যারা উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক স্থানসমূহের মানচিত্র জানতে চান।

ফেসবুকের নবীন আলেম ও তালিবে ইলমরা শীর্ষস্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে নাকয়েকদিন আগে এক ভদ্রলোক আমাকে বললেন, আপনা...
26/09/2024

ফেসবুকের নবীন আলেম ও তালিবে ইলমরা শীর্ষস্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না

কয়েকদিন আগে এক ভদ্রলোক আমাকে বললেন, আপনারা আলেম সমাজ এক একটা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এতো ক্যাচাল কেন করেন? উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন আলেম রাখা হবে জেনে ফেসবুকে এ নিয়ে কতো মত। একজন বলছেন, অমুককে রাখা হোক, আরেকজন বলছেন অমুককে রাখা হোক, এভাবে অসংখ্য জন অসংখ্য জনের নাম প্রস্তাব করল। তারপর একজনকে যখন রাখা হল তারও ছুতানাতা বিষয় নিয়ে বহু আলেমের বহু রকমের সমালোচনা। বাইতুল মুকাররমের খতীব নিয়ে অসংখ্য রকমের ক্যাচাল, অসংখ্য প্রস্তাব। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে অমুককে চাই তমুককে চাই অসংখ্য প্রস্তাব- আপনারা আলেম সমাজ এতো অস্থির চিত্ত কেন? এতো অসহনশীল কেন? আপনারা ছোটখাট বিষয়ে ছাড় দিতে পারেন না কেন? আপনাদের মধ্যে কেউ কাউকে মেনে নিতে পারে না কেন? আমি বললাম, ভাই! ফেসবুকের লেখালেখি দেখে আপনি গোটা আলেম সমাজকে দোষারোপ করলেন! ফেসবুক আর গোটা আলেম সমাজ কি এক? আলেম সমাজের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় আলেমরাই তো প্রধান। তাদের বক্তব্যই তো আমলে নেওয়ার যোগ্য। আর ফেসবুকে শীর্ষস্থানীয় আলেমদের বিচরণ নেই বললেই চলে। ফেসবুকে যারা এসব বলাবলি লেখালেখি করে তারা হল নবীন আলেম, অনেকে আলেম নয় তালিবে ইলম (মাদরাসার ছাত্র), আবার বহু এমন লোক আছে যারা আদৌ উলামা ঘরানার বা মাদরাসা ঘরানার লোকই নয়। তারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ যারা ইসলামের মেজাযে এখনও পুরো গড়ে ওঠেনি। অতএব নবীন আলেম, তালিবে ইলম ও গর-আলেম ঘরানার লোকদের কথাকে আপনি শীর্ষস্থানীয় আলেমদের কথা বা গোটা আলেম সমাজের কথা বলতে পারেন না। এদের অবস্থানকে গোটা আলেম সমাজের অবস্থান মনে করতে পারেন না। শীর্ষস্থানীয় আলেমদেরকে এমন বলাবলি করতে শুনেছেন? নিশ্চয়ই না। আমি বললাম, আমাদের বুঝা উচিত ফেসবুকের নবীন আলেমরা, ফেসবুকের তালিবে ইলমরা শীর্ষস্থানীয় আলেমদের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা বৃহত্তর আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। অতএব তারা যা-ই বলবে সবটাকে শীর্ষস্থানীয় আলেমদের কথা বা বৃহত্তর আলেম সমাজের কথা মনে করার কোন কারণ নেই। একথাও ঠিক যে, নবীনদের থেকেও অনেক সময় ভাল কোন কথা উঠে আসতে পারে। কিন্তু তাদের সব কথাই শীর্ষস্থানীয় আলেমদের কথা বা বৃহত্তর আলেম সমাজের কথা হবে এর নিশ্চয়তা নেই। অতএব বৃহত্তর আলেম সমাজের উপর তাদের সব কথার দায় বর্তায় না। সব ক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানীয় আলেমদের বক্তব্য এবং বৃহত্তর আলেম সমাজের বক্তব্যকেই চূড়ান্ত মনে করা চাই। এবং তার ভিত্তিতেই গোটা আলেম সমাজের মূল অবস্থান কি তা নির্ণয় করা চাই।

আমি সেই ভদ্রলোককে আমার মতো করে বুঝিয়ে ক্ষান্ত করলাম। কিন্তু আমাদের নবীন আলেম ও তালিবে ইলমদেরও বুঝা উচিত ধর্মীয় এক একটা ইস্যু নিয়ে এতসব ক্যাচাল ও অসহনশীলতা, ছোটখাট বিষয় নিয়ে এতো কচলানো- এগুলো ভালো নয়। এগুলো সাধারণ মানুষের মনে আলেম সমাজের ব্যাপারে কুধারণা সৃষ্টি করে থাকে। এতে আলেম সমাজের প্রতি মানুষের ভক্তি শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে শেষ নাগাদ ইসলামের ব্যাপারেই মানুষের মন খারাপ হয়ে যায়। একটু তো চৈতন্য রাখা চাই। যেকোনো কিছু লেখার আগে পরিণাম নিয়ে একটু তো ভাবা চাই। মোবাইল হাতে আছে, যা ইচ্ছা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করার সুযোগও আছে, তাই বলে কি একটুও হুঁশ রাখতে হবে না, একটুও ভাবতে হবে না। যা মনে চাইবে তা-ই লিখে পোস্ট করে দিতে হবে! ফেসবুক ইউটিউব প্রভৃতি সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে পাবলিক প্লাটফর্ম। এখানে ধর্মীয় বিষয়ে কথা বলতে গেলে কোন কথায় পাবলিকের মনে ভাল মন্দ কী প্রভাব পড়তে পারে তা যারা না বুঝে তাদের এখানে কথা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত।

এখানে আরও একটা কথা উল্লেখ করতে চাই। মাত্র কয়েকদিন আগে বিশ্বস্ত এক সূত্রে জানতে পারলাম সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের মাঝেও এসব বিষয় নিয়ে বিরূপ আলোচনা হয়েছে। ফেসবুকের এসব লেখা নিয়ে আলেম সমাজের ব্যাপারে অসন্তোষ ব্যক্ত করা হয়েছে। তাই আমরা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকগণ, সমন্বনয়কগণ, বুদ্ধিজীবীগণ, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজসহ সকলের কাছে নিবেদন রেখে বলতে চাই সকলেই যেন মনে রাখেন- "ফেসবুকের নবীন আলেম ও তালিবে ইলমরা শীর্ষস্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা বৃহত্তর আলেম সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। অতএব তাদের কথার দায় বৃহত্তর আলেম সমাজের উপর বর্তায় না।" নবীনদের মধ্যে অপরিপক্কতা, অপরিণামদর্শিতা, অদূরদর্শিতা থাকতেই পারে। কাজেই তাদের সব কথা সেভাবেই নিতে হবে। তবে হ্যাঁ নবীনদের থেকেও যদি ভাল কোন কথা বা প্রস্তাব উঠে আসে সেটির অবমূল্যায়নও না করা চাই। ভারসাম্য সর্বত্রই কাম্য।

আমরা কি কওমী শিক্ষাধারার বৈশিষ্ট্য ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি?মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন     ইদানিং দেখা য...
24/09/2024

আমরা কি কওমী শিক্ষাধারার বৈশিষ্ট্য ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি?
মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন

ইদানিং দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কওমী মাদরাসায় ছাত্ররা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মাতবরি শুরু করেছে। উস্তাদ ও মুরব্বী মান্যতার তোয়াক্কা মোটেই করছে না। যেন ছাত্ররাই উস্তাদ ও মুরব্বীদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী, বেশি বিচক্ষণ ও বেশি দূরদর্শী হয়ে গেছে। আন্দোলন করে ছাত্রদের কথা মানার জন্য উস্তাদ ও মুরব্বীদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে। উস্তাদ ও মুরব্বীদের সঙ্গে বেয়াদবিও করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর প্রভৃতি সহিংসতাও চালানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় উস্তাদ ও মুরব্বীদের দোষ-ত্রুটি প্রচার করে উস্তাদ ও মুরব্বীদের কাপড় খুলে ফেলা হচ্ছে। আল্লাহর কাছে এসব থেকে পানাহ চাই।

এসব আন্দোলনকারী নবীনদের অনেক যুক্তি। অন্যায়ের প্রতিবাদ, ন্যায্য দাবি আদায়, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি যুক্তির দোহাই দিয়ে তারা এগুলো করছে। কিন্তু উস্তাদ ও মুরব্বীদের আনুগত্য, তাদের আদব রক্ষা, তাদের সম্মান রক্ষা, তাদের অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতাকে মেনে নেওয়া- এগুলোর আবশ্যকতার কথা তারা মাথা থেকে একেবারেই ধুয়ে মুছে ফেলছে। আমি কসম করে নয় তবে কসমের কাছাকাছি প্রত্যয় থেকে বলছি এই ধারা চলতে থাকলে এবং ব্যাপকতা পেলে কওমী মাদরাসা শিক্ষাধারা তার শৃঙ্খলা হারাবে, ছাত্র গড়ার ঐতিহ্য হারাবে, বৈশিষ্ট্য হারাবে। কওমী মাদরাসা শিক্ষাধারা ধবংস হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে উস্তাদদের প্রতি ছাত্রদের ভক্তি শ্রদ্ধা এবং ছাত্রদের প্রতি উস্তাদদের স্নেহ-আন্তরিকতা, ছাত্রদের মঙ্গল ও কল্যাণকামিতার চিন্তা-চেতনা এটি হচ্ছে কওমী শিক্ষাধারার প্রতিষ্ঠানসমূহের ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি। উস্তাদদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন এই বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করে দিবে। উস্তাদদের প্রতি ছাত্রদের ভক্তি শ্রদ্ধা না থাকলে, উস্তাদদের সঙ্গে বেয়াদবি করলে, ছাত্রদের প্রতিও উস্তাদদের স্নেহ-আন্তরিকতা থাকবে না, ছাত্রদের মঙ্গল ও কল্যাণকামিতার চিন্তা থাকবে না। তখন উস্তাদদের মধ্যে ছাত্রদেরকে ভাল আলেম হিসেবে গড়ে তোলার স্বযত্ন প্রয়াস ও ব্যাকুলতাও থাকবে না। তখন উস্তাদরা শুধু চাকরি রক্ষার চিন্তায় পরিচালিত হবে। শুধু অফিসিয়াল ডিউটি পালন করেই ক্ষান্ত হবে। অতিরিক্ত আন্তরিকতা নিয়ে ছাত্রদেরকে গড়ে তোলার যে তৎপরতার ফলে কওমী মাদরাসা থেকে যোগ্য আলেম গড়ে ওঠে সেই তৎপরতা চালানোর উৎসাহ উস্তাদদের মধ্যে থাকবে না। তখন কওমী মাদরাসা থেকে উস্তাদদের স্বযত্ন প্রয়াসে যোগ্য আলেম তৈরি হওয়ার ধারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর এভাবেই কওমী মাদরাসা শিক্ষাধারা তার ছাত্র গড়ার ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলবে। জানি না কওমী মাদরাসার সফলতার ধারাকে বিনষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কোন গোষ্ঠি ছাত্রদেরকে ও নবীনদেরকে উস্তাদ মুরব্বীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে কি না। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।

কওমী শিক্ষাধারাকে তার ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্যে ধরে রাখতে হলে উস্তাদ মুরব্বীদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন বিশৃঙ্খলা বনাম আত্মঘাতি তৎপরতা অতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। আর যদি আমরা কওমী শিক্ষাধারাকে ধ্বংসের ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকি তাহলে এগুলোই চালিয়ে যাই এবং যুক্তির নামে কুযুক্তি দিয়ে একে উজ্জীবিত করতে থাকি!
কারও নাম উল্লেখ করে বিতর্কের দিকে যেতে চাই না। তবে মোটাকথা যে, ছাত্রদের এসব উগ্রতা ও সহিংসতার পেছনে অবশ্যই কারো না কারো উগ্র চিন্তা-চেতনার প্রভাব থাকে। সেই পেছনের কুশিলবরা যদি কওমী শিক্ষাধারার শত্রু হয়ে থাকে, তাহলে তাদের ব্যাপারে সকলে সজাগ সচেতন থাকুন। দলীল-প্রমাণসহ তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে থাকুন। আর যদি তারা আমাদেরই কওমী ধারার লোক হন এবং এই ধারার শত্রু না হন কিন্তু মুরব্বীদের বুঝ ও মুরব্বীদের অনুসৃত নীতি ছেড়ে নিজেদের বুঝমত তারা এসব তৎপরতা চালাচ্ছেন- এমন হয়, তাহলে তাদের কাছে বিনীত নিবেদন- জুমহুর মুরব্বীদের বুঝ ও তাদের অনুসৃত নীতি বর্জন করবেন না। কওমী শিক্ষাধারাকে ধ্বংস করে দিবেন না। হক ও হক্কানিয়াতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই ধারাকে ধ্বংস করে দিবেন না। যোগ্য আলেম গড়ার এই কারখানাগুলোকে ধ্বংস করে দিবেন না। আকাবিরের রেখে যাওয়া এই আমানতকে ধ্বংস করে দিবেন না।

মনে রাখবেন জুমহুর মুরব্বীদের বুঝ ও তাদের অনুসৃত নীতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। আপনাদেরটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নয়, বরং প্রবল সন্দেহপূর্ণ, নিশ্চিত ঝুঁকিপূর্ণ। হাদীছের ভাষ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-
دع ما يريبك إلى ما لا يريبك. (رواه الترمذي والنَّسائي، وقال الترمذي: حديث حسن صحيح.)
অর্থাৎ, সন্দেহপূর্ণটা ছেড়ে সন্দেহমুক্তটা ধরো। (সুনানে তিরমিযী ও নাসায়ী)
উস্তাদ ও মুরব্বীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উজ্জীবিত কোমলমতি ছাত্র ও নবীনদের বলব, কওমী মাদরাসা ধ্বংসের এই তৎপরতায় তোমরা ব্যবহৃত হয়ো না। কোন মাদরাসায় কোন সমস্যা দেখা দিতে পারে, কোন উস্তাদ বা মুরব্বীর কোন ভুল হতে পারে। অতীতেও কোন প্রতিষ্ঠানে এরকম সমস্যা ও ভুল দেখা দেয়নি তা নয়। কিন্তু তখন যেভাবে মুরব্বীদের মধ্যস্থতায় সবকিছুর প্রতিকার করা হয়েছে, এখনও সেভাবেই এগোতে হবে। ইমাম মালেক রহ.-এর একটা প্রসিদ্ধ উক্তি রয়েছে যা এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। উক্তিটি হল-
لن يصلح آخر هذه الأمة إلا بما صلح به أولها.
অর্থাৎ এই উম্মতের শুরুভাগের লোকদের ইসলাহ সংশোধন যে পদ্ধতিতে হয়েছে, শেষভাগের ইসলাহ সংশোধনও সেই পদ্ধতি ছাড়া অন্যভাবে হবে না।
মনে রাখতে হবে মুরব্বীদের মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধান হলে মুরব্বী মান্যতার ধারায় আর কেউ সাধারণত সেই বিষয় নিয়ে দ্বিতীয়বার ঘাটাঘাটি করতে যায় না। বলে, যা-ই হোক মুরব্বীগণ যখন বলছেন তখন আমরা মেনে নিলাম। এভাবে সমস্যার সমাধান স্থায়িত্ব লাভ করে। বা ন্যুনতম পরিস্থিত শান্ত হয়। কিন্তু ছাত্র ও নবীনদের প্রতি অন্যদের এরূপ মান্যতা হওয়া সম্ভব নয়, হয়ও না। ফলে তাদের আন্দোলনে সাময়িক কোন সমাধানে পৌঁছনো হলেও পরবর্তীতে আরেক নবীন গোষ্টি সময় সুযোগে আবার পাল্টা আন্দোলন গড়ে তোলে। সমস্যার সমাধান স্থায়িত্ব লাভ করে না। পরিস্থিতি শান্ত হয় না। যেমনটা ইদানিং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমরা লক্ষ করছি একই বিষয় নিয়ে কিছুদিন পরপর কাউন্টার রিকাউন্টার আন্দোলন চলছে।

উস্তাদ মুরব্বীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন প্রয়াসী ছাত্র ও নবীনদের বলব, তোমরা এখন ভাবছো উস্তাদ মুরব্বীদের চেয়ে তোমরা বেশি বোঝ, হয়তো খুব বেশি দিন যাবে না তোমাদের এই ভুল ভাঙ্গবে, যখন দেখবে তোমাদের ছাত্র ও অধীনস্থরা তোমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে এই বলে যে, তোমরা বোঝ না। তখন তোমরা ঠিকই বুঝবে তোমাদের ছাত্ররা না-বুঝ তাই এমন বলছে। এবং এ-ও বুঝবে অতীতে তোমরাও তোমাদের ছাত্রদের মতো ভুল বুঝেছিলে এবং সেই ভুল বুঝের উপর নির্ভর করে কতোকিছু করেছিলে। তখন আফসোস করবে। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা তো ইতিমধ্যে হয়েই গিয়ে থাকবে। অতএব সময় থাকতেই হূঁশে আসো। বুদ্ধিমত্তা, ভারসাম্য, আদব, শৃঙ্খলা সাথে রাখো।
وما علينا إلا البلاغ.

Address

11/1, ইসলামী টাওয়ার, দোকান নং 22/23, বাংলাবাজার, ঢাকা-1100
Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Maktabatul Abrar - মাকতাবাতুল আবরার posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category