08/11/2025
কেক তৈরির ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকে শুরু হয়েছে, যা রুটির মতো তৈরি মিষ্টি খাবার থেকে আজকের আধুনিক কেক পর্যন্ত বিবর্তিত হয়েছে।
এখানে কেক তৈরির ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ তুলে ধরা হলো:
১. প্রাচীনকালের উৎপত্তি (রুটির মতো কেক)
প্রাচীন মিশর: খাদ্য ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাচীন মিশরীয়রাই প্রথম উন্নত বেকিং দক্ষতা প্রদর্শন করে এবং মিষ্টি রুটির মতো খাবার তৈরি করে। তারা ময়দা, ইস্ট, ডিম, দুধ, এবং মশলা ব্যবহার করত এবং মধু, ডুমুর বা খেজুর দিয়ে মিষ্টি করত।
প্রাচীন গ্রীস ও রোম:
গ্রীকরা মধু, বাদাম, ডিম, দুধ ও ময়দা মিশিয়ে "প্ল্যাকাস" (plakous) নামে চ্যাপ্টা, ঘন কেক তৈরি করত। চাঁদের দেবী আর্টেমিসের সম্মানে গোল কেক বানিয়ে তার উপর মোমবাতি জ্বালানোর ঐতিহ্যও গ্রীকদের থেকেই আসে বলে মনে করা হয়।
রোমানরা কেকের রেসিপি আরও উন্নত করে মাখন, ডিম এবং ফলের ব্যবহার শুরু করে।
২. মধ্যযুগ ও রেনেসাঁস (বিলাসিতা ও পরিবর্তন)
নামকরণ: ইংরেজি শব্দ "কেক" (Cake) ১৩শ শতাব্দীতে পুরোনো নর্স শব্দ "কাকা" (kaka) থেকে এসেছে।
মধ্যযুগীয় ইউরোপ: এই সময়ের কেকগুলো সাধারণত ঘন, ফল এবং বাদামযুক্ত হতো এবং বেশিরভাগই ধনী ও অভিজাতদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
রেনেসাঁস: এই সময়ে ফেটানো ডিম দিয়ে তৈরি স্পঞ্জ কেকের (Sponge Cake) উৎপত্তি হয়। চিনি আরও সহজলভ্য হওয়ায় কেক আরও মিষ্টি এবং অলংকৃত হতে শুরু করে।
৩. আধুনিক কেকের জন্ম (১৭শ থেকে ১৯শ শতাব্দী)
১৭শ শতক (ইউরোপ): আজকের আধুনিক, গোল আকৃতির ও আইসিংযুক্ত কেকের পূর্বসূরিরা এই সময়ে ইউরোপে তৈরি হতে শুরু করে।
প্রথম দিকের আইসিং বা সজ্জা ছিল মূলত চিনি, ডিমের সাদা অংশ ও সুগন্ধির ফুটানো মিশ্রণ।
এই সময় কেকের আকার দেওয়ার জন্য ধাতব বা কাঠের রিং (cake hoops) ব্যবহার করা হত।
বেকিং পাউডারের আবিষ্কার (১৮৪০-এর দশক): এটি কেক তৈরির ইতিহাসে একটি বড় পরিবর্তন আনে। ইস্টের পরিবর্তে বেকিং পাউডার ব্যবহার করে সহজেই আরও হালকা ও তুলতুলে কেক তৈরি করা সম্ভব হয়।
শিল্প বিপ্লব ও সহজলভ্যতা (১৯শ শতক):
শিল্প বিপ্লবের ফলে ময়দা, চিনি, বেকিং সোডা, এবং বেকিং পাউডারের মতো উপকরণগুলো সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।
এই সময়েই আজকের পরিচিত লেয়ার কেক (Layer Cake) জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সংক্ষেপে, কেকের সূচনা প্রাচীন মিষ্টি রুটি থেকে হলেও, আধুনিক কেকের জন্ম হয়েছে ইউরোপে বেকিং প্রযুক্তির উন্নতি এবং বেকিং পাউডারের আবিষ্কারের হাত ধরে।