24/05/2024
চাল কিভাবে প্রক্রিয়াজাত হয়ে বাজারে আসে, সেটা একটু বুঝতে হবে। প্রথমেই ঘর্ষণের মাধ্যমে ধানের বাহিরের খসখসে খোসাটিকে (Husk) আলাদা ও পরবর্তীতে অপসারণ করা হয়, যার ওজন ধানের ওজনের প্রায় ২০ শতাংশ। এরপর ব্রাউন চালকে স্লিম ও চকচকে সাদা করতে হোয়াইটেনার (Whitener) ও পলিশার (Polisher) নামক দুটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এখানেও মূলত ঘর্ষনকে কাজে লাগিয়ে চালের বাহিরের বাদামী বর্ণের আবরণটিকে এমন ভাবে সরিয়ে ফেলা হয় যাতে করে চালটি অনেকটাই স্লিম হয়ে যায়। ফলাফল bran অর্থাৎ pericarp, seed coat, aleurone layer ও embryo বা germ সম্পুর্নরূপে দূরীভূত হয়। এই দূরীভূত হওয়া অংশের ওজন মুল চালের ৮ থেকে ১০ শতাংশ।
সাদা চাল দেখতে সুন্দর, চকচকে glossy, ভাত খেতে মজা, আর চাল টিকেও বেশিদিন। ব্রাউন চালে যে ফসফরাস থাকে সেটা "ফাইটিক এসিড" হিসেবে থাকে। এই ফাইটিক এসিড শরীরে জিংক গ্রহণে বাধা দেয়। তাই ফাইটিক এসিড দুষ্ট, একে দূরীভূত করাই শ্রেয়। এর বাইরেও, যদি কোন ভাবে ধানটি আর্সেনিক দ্বারা দুষিত হয়ে থাকে, তবে bran অপসারণ করার মাধ্যমে চালের আর্সেনিক দূষণ অনেকাংশে দূরীভূত হয়।
তবে একটু সূক্ষ্মভাবে লক্ষ করলেই বুঝতে পারব ক্ষতিটা কোথায় ও কিভাবে হয়ে যাচ্ছে। কিভাবে লাভের গুড় পিপড়ায় খাচ্ছে। চালে প্রাপ্ত টোটাল ভিটামিন B3 এর ৮৫ ভাগই থাকে pericarp এর মধ্যে। Aleurone layer টি প্রোটিন ও ফ্যাটে ভরপুর। চালে প্রাপ্ত টোটাল খনিজের ৫১ ভাগ ও টোটাল আঁশের ৮০ ভাগই এই bran এর মধ্যে রয়েছে। এর সাথে germ টি অপসারণের ফলে, আমরা সিগ্নিফিকেন্ট পরিমাণ ভিটামিন B1 ও ভিটামিন E হারাচ্ছি। রয়ে যাচ্ছে শুধুই শর্করা। উপরন্তু যখন মাড় গেলে ভাত রান্না করা হয়, তখন সেই ভাতে আর কিইবা অবশিষ্ট থাকে, সেটাই বড় প্রশ্ন!!
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন বলেছিলাম সাদা চাল বেশি দিন টিকে? প্রথমত, ফ্যাট অংশ না থাকার কারণে চাল rancid হয়না। দ্বিতীয়ত, পুষ্টিকর অংশগুলো অপসারণের ফলে, জীবাণু দ্বারা কম সংক্রমিত হয়। জীবাণুরা আমাদের চেয়ে ঢের ভাল বুঝে, যেখানে পুষ্টি নেই, সেখানে তাদের ইন্টারেস্ট কম।
এভাবে, চালকে সাদা ও স্লিম করার কারণে আমরা গুরুতপুর্ন প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিনস, মিনারেলস ও আঁশ হারাচ্ছি। আঁশের পরিমাণ কম থাকার কারণে পরিপাকের সময় খুব তাড়াতাড়ি শর্করা ভেঙ্গে উৎপন্ন চিনি রক্তে চলে যায়। তাই সাদা চালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (Glycemin index) অনেক উপরে। গবেষণা বলে, সাদা চাল গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে ব্রাউন চাল দৈনিক আঁশের চাহিদার প্রায় এক সপ্তমাংশ পূরণ করতে সক্ষম। শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় সেলেনিয়াম এর প্রায় এক চতুর্থাংশের যোগান হতে পারে ব্রাউন চাল থেকে। তাই ব্রাউন চাল শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, হার্টের সমস্যা, ক্যান্সার, গলগণ্ড রোগ, এজমার প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে, সর্বপরী শরীরের immune সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও দৈনিক ম্যাংগানিজের চাহিদার প্রায় ৮৮ শতাংশ পূরণ করতে পারে ব্রাউন চাল। উল্লেখ্য প্রোটিন সহকারে ব্রাউন চাল খেলে শরীর সহজেই জিংক গ্রহণ করতে পারে। তাই দুষ্ট ফাইটিক এসিড নিয়েও দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, পেট মোটা ব্রাউন চাল খেয়ে স্লিম হবেন, নাকি মিনিকিট চাল খেয়ে নিজের পেট বাড়াবেন??
লেখক: ড. মোঃ নাহিদুল ইসলাম, খাদ্য গবেষক, ওডেন্স, ডেনমার্ক