02/06/2023
"সম্ভাবনাময় ই-কমার্স ব্যবসায় নারীদের ভবিষ্যৎ"
এখন সময়টা ই-কমার্সের। ই-কমার্সের মানে ইলেকট্রনিক কমার্স। যার অর্থ হলো- ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ সম্পন্ন করা। অনলাইনের প্রচার ও প্রসার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে ব্যবসার সুযোগ অনলাইনে কেনাকাটা, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফেসবুকে কেনাকাটা সবই ই-কমার্সের আওতাভুক্ত।
গোটা অর্থনীতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে ই-কমার্স, এ কথা বলা যায় এখন অনায়াসেই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি বড়ো অংশই নারী। এ ধরনের ব্যবসায় জড়িত থেকে নারীরা ঘরে বসেই যেমন উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন তেমনি ক্রেতারাও ঘরে বসে তাদের পণ্যটি বুঝে নিচ্ছেন।
ই-কমার্সে নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে যা বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ই-কমার্স। এই সেক্টরে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তা আমাদের দেশের জন্য অবশ্যই আশাব্যঞ্জক দিক। অনলাইনভিত্তিক ক্রেতা হিসেবেও সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে আছেন নারীরা। ই-ক্যাবের তথ্যমতে, গত বছর এক হাজার কোটি টাকা ই-কমার্স সেক্টরে লেনদেন হয়েছে। এ বছর টাকার পরিমাণ অনেক বেশি বাড়বে। ডিজিটালাইজেশনের কারণে ই-কমার্সের ব্যবসা দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
ই-কমার্স বর্তমানে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। অনলাইন শপিং সাইটসহ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এখন অনেক নারী উদ্যোক্তা ব্যবসা করছেন। বেসিসের তালিকাভুক্ত প্রায় দুই হাজার ফেসবুক পেজ আছে যার মধ্যে প্রায় তিন থেকে চারশ পেজ নারী উদ্যোক্তাদের। এছাড়া এক হাজার অনলাইন শপিং সাইট আছে এগুলোর মধ্যে প্রায় দুশটি ওয়েবসাইট নিয়মিত চলছে। এখানেও অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন।
বেচা কেনার জন্য নির্দিষ্ট সাইটগুলোর পাশাপাশি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও জমে উঠেছে এই কেনাবেচা। উদ্যোক্তাদের মতে, নতুনদের পাশাপাশি বিশ্বের বড় মাপের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের পণ্যের প্রচারে ব্যবহার করছে ফেসবুক। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াই ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় বলে নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে এ মাধ্যমটি বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে বিশেষ করে শহরগুলোতে।
অফিস করে সংসার সামলানো সেই সঙ্গে শিশুদের দেখাশোনার পর বাড়তি সময় বের করা মুশকিল। তাই শপিংয়ের জন্য অনেক নারী পুরোপুরি নির্ভরশীল অনলাইন শপিং সাইটগুলোর ওপর। ফেসবুকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বেছে নেয়া যায় পছন্দের পণ্যটি। রাস্তায় যানজট আর ভিড় ঠেলে মার্কেটে যাওয়ার চেয়ে অনলাইন শপিং কর্মজীবী মায়েদের জন্য ভরসার জায়গা এখন।
ওয়েবসাইটগুলোতে ফোন নম্বর দেয়া থাকে। ফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলে পণ্য সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা নিয়ে অর্ডার দেয়ার পর কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাসায় পৌঁছে যায় পছন্দের পণ্যটি।
ই-কমার্স একটি স্মার্ট ব্যবসা সন্দেহ নেই। এখানে উন্নত গ্রাহক সেবা, গ্রাহক সন্তুষ্টি সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে ব্যবসায় সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়।এক কথায় বলা যায়, কেবলমাত্র যোগ্যরাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে।তবে এ ব্যবসার জন্য কিছু বিষয় শুরু থেকে মাথায় রাখা প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের। যেমন ই-কমার্সের আওতায় কেউ পণ্য বিক্রি করতে চাইলে নিজস্ব ওয়েব সাইট বা পেজ থাকা জরুরি। যেখানে থাকতে হবে, কোন্ পণ্য বিক্রি করা হবে, কোথা থেকে সেই পণ্য সরবরাহ করা হবে বা পণ্যের সরবরাহ কিভাবে নিশ্চিত হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি।
সফল ই-কমার্স ম্যানেজার হতে গেলে,কমিউনিকেশন স্কিল এবং নিজের উৎসাহ থাকা দরকার। নিজেদের মধ্যে পার্টনারশিপ করার মানসিকতা,অনলাইন ব্র্যান্ডিং, সাইটের আইনি আওতা সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা রাখা।
গ্রাহকরা যাতে সময়মতো সেবা পান, সে জন্য মার্কেটিং ডিরেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করে স্ট্রাটেজি বেছে নেওয়া। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে আপগ্রেডশন। সাইটের তরফ থেকে অর্ডার করা পণ্য সরবরাহ।
উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের এগিয়ে আসা বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের অনেক নারী আছেন যারা ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি করতে পারছেন না কিন্তু তারা স্বাবলম্বী হতে চান।
সেদিক থেকে ই-কমার্সের মাধ্যমে নারীরা ঘরে বসে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ই-কর্মাসের সুবিধা হলো- অল্প পুঁজিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াই ব্যবসা করা যায়। এটা মেয়েদের জন্য স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। শুধু একটু ব্যবসায়িক জ্ঞান থাকলেই উন্নতি করা সম্ভব। ভবিষ্যতে ই-কমার্স সেক্টরে নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা ব্যাপক আকারে বাড়াবে বলে আশা করা যায়।
Writer : Fatema Yeasmin