02/02/2025
দেওবন্দি/কওমি ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাদের অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর তুলনায় আলাদা ও বিশেষভাবে শক্তিশালী করতে সক্ষম। এই ইতিবাচক দিকগুলোকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ইসলামি রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম তৈরি করতে প্রয়োজন -( ১) উপযুক্ত নেতৃত্ব (২) যোগ্য কর্মী বাহিনী (৩) সমর্থক
আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের সবকিছুই আছে।
(১) ধর্মপ্রাণ জনগণের আস্থা
দেওবন্দি/কওমি ধারার রাজনীতির অন্যতম শক্তি হলো বিশাল ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর অকুণ্ঠ সমর্থন।
সাধারণ মানুষ ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত দলগুলোর প্রতি স্বাভাবিকভাবে আস্থাশীল, যা রাজনৈতিক মূলধন হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
(২) আলেমদের নেতৃত্বের প্রতি জনসমর্থন
ইসলামী দলগুলোর নেতা সাধারণত আলেম ও মাদরাসা শিক্ষিত, ফলে সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আস্থা রাখে।
ধর্মীয় ও নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব একটি বড় পুঁজি, যা অন্য দলগুলোর নেই।
(৩) দাওয়াতি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা
ইসলামী দলগুলো শুধু রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং সমাজ সংস্কারমূলক কাজেও নিয়োজিত, যা তাদের জনসমর্থন বাড়াতে সাহায্য করে।
ওয়াজ-মাহফিল, ইসলামী শিক্ষা, জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড—এসবের মাধ্যমে তারা সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে।
বিশেষত দাওয়াত ও তাবলীগের মতো বিশাল জনসম্পৃপ্ত প্লাটফর্ম আলেমদের হাতে। এখানে বিভিন্ন শ্রেনি ও পেশার বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে।
(৪) সাংগঠনিক শক্তি ও মাদরাসাভিত্তিক কাঠামো, কওমি মাদরাসা নেটওয়ার্ক
কওমি মাদরাসাগুলোর বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে, যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামী রাজনীতির বিস্তারে সাহায্য করতে পারে।
প্রতিটি মাদরাসাই একেকটি সাংগঠনিক ইউনিটের মতো কাজ করতে পারে, যা প্রচারণার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
(৫) দক্ষ কর্মী ও সংগঠক
ইসলামী ছাত্রসংগঠন, উলামা পরিষদ ও বিভিন্ন ইসলামী সামাজিক সংগঠন থেকে অভিজ্ঞ সংগঠক ও কর্মী পাওয়া যায়।
মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সহজেই ইসলামী আন্দোলনের প্রচারে যুক্ত হতে পারেন, যা রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম।
(৬) স্থানীয় পর্যায়ে গভীর সাংগঠনিক উপস্থিতি
কওমি ধারার রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায় কোনো না কোনোভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
স্থানীয় মসজিদ, মাদরাসা ও ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে তারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে।
(৭) আদর্শিক শক্তি ও নৈতিক অবস্থান, দ্বীনদার ও দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্ব
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে দেওবন্দি/কওমি ধারার ইসলামি দলগুলোর বড় শক্তি হলো তাদের স্বচ্ছ ও নৈতিক নেতৃত্ব।
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে তুলনামূলক মুক্ত থাকায় জনগণের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
(৮) ইসলামী আইন ও নীতির পক্ষে অবস্থান
ইসলামী আদর্শভিত্তিক রাজনীতি এবং শরিয়াহ-সম্মত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অনেক ইসলামপ্রেমী মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যায়।
ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি তাদের অঙ্গীকার জনগণের সমর্থন পাওয়ার অন্যতম কারণ।
(৯) শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ও ফতোয়া ভিত্তিক অবস্থান
কওমি ধারার আলেমদের মধ্যে বহু স্কলার রয়েছেন, যারা ইসলামী ফিকহ ও সমাজনীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দুর্বল, সেখানে ইসলামী দলগুলোর চিন্তাধারা সুসংহত ও নীতিনির্ধারণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।
(১০) গণসংযোগ ও প্রচার ক্ষমতা,ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামী সমাবেশের মাধ্যমে সহজ প্রচার
কওমি ধারার দলগুলোর অন্যতম শক্তি হলো ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানো।
ইসলামি আলোচকদের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে সহজেই রাজনৈতিক বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
(১১) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইসলামি মিডিয়ার ব্যবহার
ইসলামি বক্তাদের জনপ্রিয়তা সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে ব্যাপক, যা রাজনৈতিক প্রচারণার জন্য বড় হাতিয়ার হতে পারে।
ইসলামী ঘরানার নিউজ পোর্টাল, ইউটিউব চ্যানেল ও ইসলামি মিডিয়া নেটওয়ার্ককে আরও সুসংগঠিত করে রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
(১২) রাজনৈতিক কৌশলগত শক্তি, নিরপেক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক অবস্থান
ইসলামী দলগুলো যদি বড় দলের সঙ্গে জোট না করে, তাহলে তারা নিরপেক্ষভাবে জনগণের স্বার্থে কথা বলতে পারে, যা তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াবে।
বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলো যেখানে ক্ষমতার রাজনীতিতে আপস করতে বাধ্য হয়, সেখানে ইসলামী দলগুলো তাদের অবস্থান শক্ত রেখে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করতে পারে।
(১৩) জাতীয় ইস্যুতে জনগণের স্বার্থ রক্ষার শক্তিশালী ভূমিকা
নৈতিক ও সামাজিক ইস্যুগুলোতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে তারা জনগণের কাছে আরও জনপ্রিয় হতে পারে।
ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে তারা রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে।
(১৪) ইসলামি অর্থনীতি ও কল্যাণমূলক ব্যবস্থার প্রচার
সুদবিহীন ব্যাংকিং, ওয়াকফ সম্পদের সঠিক ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচনে যাকাত ও ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রসার ঘটিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি বাড়ানো সম্ভব।
জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কল্যাণমূলক উদ্যোগ (মাদরাসা-ভিত্তিক দাতব্য হাসপাতাল, বিনামূল্যে চিকিৎসা, দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্প) বাড়ানো যেতে পারে।
দেওবন্দি/কওমি ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের বিশাল ইসলামপ্রেমী জনগোষ্ঠীর সমর্থন, কওমি মাদরাসার সাংগঠনিক কাঠামো, ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে সহজে মানুষের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব।
কীভাবে স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা যায়?
1. অভ্যন্তরীণ ঐক্য গড়ে তোলা – ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি দূর করে একটি শক্তিশালী ইসলামী জোট তৈরি করা।
2. শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব গঠন – ইসলামি স্কলারদের রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন করে সুপরিকল্পিত নেতৃত্ব তৈরি করা।
3. গণসংযোগ ও মিডিয়া ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি – সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়াজ-মাহফিল ও ইসলামি মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী রাজনীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া।
4. রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ – সরাসরি বড় দলের সঙ্গে জোট না করে, বরং নিজস্ব অবস্থান থেকে শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক বলয়ে পরিণত হওয়া।হ্যাঁ,পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় একান্ত যদি রাজনৈতিক জোট করতেই হয় তাহলে নিজেদের স্বতন্ত্র, স্বকীয়তা বজিয়ে রাখার প্রতি গভীর মনোযোগী হতে হবে।
5. সামাজিক ও কল্যাণমূলক কাজের প্রসার – ইসলামী অর্থনীতি, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো খাতে কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করা।
সঠিক পরিকল্পনা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেওবন্দি/কওমি ধারার দলগুলো নিজেদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে, যা ভবিষ্যতে ইসলামি রাজনীতির জন্য টেকসই ভূমিকা রাখবে।