গল্পের পৃথিবী

গল্পের পৃথিবী Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from গল্পের পৃথিবী, Radio Station, Fulbaria.

সকল গল্প প্রেমিদের গল্পের পৃথিবীতে(Story World) স্বাগতম।

"নতুন পর্ব সবার আগে পেতে এবং সবধরনের গল্প পেতে এখনই পেজটি ফলো করে সাথে থাকুন!"

জয়েন্ট করুন- গল্পের পৃথিবী (রাইটার্স Vs রিডার্স)

 েলে #আরেব্বা_চৌধুরী  #পর্ব_সংখ্যাঃ- ২৮সকাল সকাল উঠে নাশতা সেরেই ব্যাগপত্র গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো অহনা।মায়ের কাপড়চোপড় গু...
08/07/2025

েলে
#আরেব্বা_চৌধুরী
#পর্ব_সংখ্যাঃ- ২৮

সকাল সকাল উঠে নাশতা সেরেই ব্যাগপত্র গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো অহনা।
মায়ের কাপড়চোপড় গুছাতে গিয়ে আলমারির দরজা খুলতেই একরাশ ধুলোর গন্ধে ভরে উঠলো চারপাশ।
পুরনো স্মৃতির ভারে নুয়ে থাকা সেই আলমারিতে, একটার উপর আরেকটা করে রাখা নানান রঙের শাড়ি।
এক এক করে যখন নামাচ্ছিলো তখন চোখে পড়লো নিচে রাখা একটা ডায়েরি।
ধুলোমলিন পাতাগুলোর উপর স্পষ্ট করে লেখা, "সাব্বির।"

এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়িয়ে গেলো অহনা।
আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখলো সেই অক্ষরগুলো,
যেন শব্দের ভেতরও জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসগুলো চুপ করে বসে আছে।
ডায়েরিটা খুলে দেখার সুযোগ তখন ছিল না,
তবুও নিঃশব্দে যেন একটি কণ্ঠ বললো, কোনো একদিন পড়ে নিও।
অহনা ডায়েরিগুলো শাড়ির ফাঁকে ভরে রাখলো ব্যাগে,
কারণ কিছু কিছু লেখা চোখের চেয়ে হৃদয় দিয়ে পড়া উচিত।

এদিকে হালকা নাশতা করে আয়নার সামনে দাঁড়ালো সাব্বির।
চেহারায় ক্লান্তির রেখা, কিন্তু তাতে যেন এক আলাদা তৃপ্তির ছায়া।
বুকের ভেতর জমে থাকা দীর্ঘদিনের ভার একটুখানি হলেও যেন হালকা হয়েছে।

মৃদুল নীরব, কোনো কথা নেই মুখে,
সাব্বির বেরিয়ে যাবার সময় শুধু ছোট একটা শব্দ উচ্চারণ করেছিলো,
"ভালো থাকিস।"

অবশেষে মা, শাশুড়ি, স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে শহরের উদ্দেশে রওনা হলো সাব্বির।
আজ আর কোনো দুঃখ, অভিমান কিংবা অভিযোগ নিয়ে নয়।
রওনা হলো নতুন করে সবকিছু শুরু করার আশায়।

এই শহর, যেখানে কখনো সে আশ্রয় খুঁজেছিলো,
সেই শহরই আজ তার ঠিকানা, তার ঘর।
তবে এবার সে একা নয়।
সাথে আছে তার পৃথিবী, তার আত্মার অবশিষ্ট অংশগুলো।

বাড়ি ফিরেই ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো অহনা।
তিন দিন তালাবদ্ধ থাকায় রুম দুটোতে যেন একধরনের ভারি গুমোট ভাব।
দেয়ালে জমে থাকা ধুলো, বাতাসে আটকে থাকা একঘেয়েমি।
জানালা খুলতেই দিনের আলো ঝাপসা হয়ে এসে ছুঁয়ে দিলো ঘরটিকে।
অহনা পরিপাটি করে বিছানা গুছিয়ে নিলো, কাপড় সরিয়ে রাখলো আলমারিতে,
সব কিছুতে যেন নতুন করে জীবনের স্পর্শ ছড়িয়ে দিতে চাইছে সে।

সাব্বির কাকার কাছ থেকে আরও একটি রুম ভাড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লো গ্যারেজের দিকে।
মাথায় দায়িত্বের বোঝা, মনজুড়ে ভবিষ্যতের চিন্তা।
কোথা থেকে শুরু করবে, কীভাবে আবার আগের মতো সবকিছু গুছিয়ে তুলবে?

গ্যারেজের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মনে হলো,
এই ছোট্ট গ্যারেজটাই যেন তার জীবনের সবচাইতে বড় প্রশ্নের উত্তর খোঁজে।
তালাবদ্ধ সেই দরজাটা আজ যেন আরও ভারী হয়ে উঠেছে।
সাব্বির চোখ বুলিয়ে নিলো আশেপাশে,
একসময় এই দরজার ওপারে দিনভর চলতো ব্যস্ততা,
মেকানিকদের হাঁকডাক, যন্ত্রের ঘর্ষণ,
আর আজ সেখানে স্তব্ধতা।

গলার ভেতর একরাশ কষ্ট আটকে গেলো।
ভেতরের অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে যেন ছুঁতে চাইলো সেই আলো,
যেখান থেকে তার রুটি-রুজি আর সম্মান দুটোই জন্ম নিয়েছিলো।

নিজেকে শক্ত করে মনে মনে বললো,
শূন্য থেকেই তো শুরু করেছিলাম, আবার পারবো,
এবার পিছনে রয়েছে পরিবার মা, অহনা আর আমার সন্তানেরা।
আর আমি তো এখনও হেরে যাইনি।

তার পা আবারও গড়িয়ে গেলো কর্মের পথে,
এক নতুন শুরু, এক নিঃশব্দ লড়াই।
পরের দিনই তিন কর্মচারীর মধ্যে দুজনকে ছাঁটাই করে দিলো সাব্বির।
হৃদয়ে কষ্ট নিয়েই সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে তাকে।
জানতো, এই সিদ্ধান্ত কারো কাছে নির্মম মনে হবে,
কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতাই তার সবচেয়ে বড় শিক্ষক।

বাকি একজন সালাম, বছরের পর বছর ধরে তার পাশে ছিলো ছায়ার মতো।
দক্ষ, বিশ্বস্ত আর পরিশ্রমী।
সাব্বির তাকে রেখে দিলো পাশে, যেন এক নীরব যোদ্ধা।
বললো শুধু,
-তুই আছিস বলেই আমি সাহস পাই।

নিজের কাঁধেই তুলে নিলো গ্যারেজের অধিকাংশ ভার।
সকালের আলো ফোটার আগেই চলে আসে সে,
রাত গড়ালে তবেই ফেলে ক্লান্ত শরীরটা নিজের সংসারের চৌকাঠে।

কারণ, এখন টাকার দরকার শুধু নিজের জন্য নয়,
একটা সংসার, বৃদ্ধা মা, দুটো নিষ্পাপ মুখ, আর অহনার প্রতিটি না বলা স্বপ্ন
সব মিলিয়ে যেনো সে হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত দায়িত্বের প্রতিমূর্তি।

নিজেকে প্রতিদিন একটু করে গড়ছে সে,
একটা ইট আরেকটা ইটের উপর রাখছে নিঃশব্দে,
হয়তো কেউ দেখছে না, কিন্তু সে জানে,
আকাশের পানে তাকানোর আগে মাটি শক্ত করতে হয়।

কেটে গেছে এক বছর,,,

অনাথআশ্রম থেকে তিন বছরের এক শিশুকে দত্তক নিয়েছে মৃদুল।
না, ভালোবাসা কিংবা মমতার টানে নয়,
সে খুঁজছিলো নিজের বার্ধক্যের এক অবলম্বন,
যে বৃদ্ধ বয়সে তার ওষুধ-পানি এগিয়ে দেবে,
তার দেহখানা কবরে রাখার বন্দোবস্ত করবে।

ঘরের ভিতর যতটুকু কোমলতা থাকা উচিত,
মৃদুলের আচরণে তা ছিলো রুক্ষ মরুভূমির মতো।
বাচ্চাটার কান্না, ভয় কিংবা অভিমান,
তাকে স্পর্শ করে না এতটুকু।

বাবার থেকে জোর করে নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়া
শেষ সম্বল সেই একখানা ভিটেটুকুও আজ বিক্রি করে দিলো সে।
যেই ঘরে একদিন ছিলো মায়ের হাসি,
বাবার সন্ধ্যাবেলা নামাজের সময়ের ডাক,
আর ছিলো ছোট ছোট ঝগড়ার মধ্যেও পরিপূর্ণ এক সংসার।

কিন্তু মৃদুলের কাছে ঘর ছিলো কেবল একখানা সম্পত্তি,
যার বদলে শহরে গিয়ে সে গড়বে নিজের স্বপ্নের রাজ্য।

স্ত্রীর শেষ গয়না আর নিজের কিছু জমানো টাকা
সঙ্গে নিয়ে শহরের দিকে পাড়ি জমালো সে,
পেছনে ফেলে গেলো সম্পর্ক, আবেগ আর দায়বদ্ধতার গল্পগুলো।

তার চোখে এখন কেবলই হিসাব,
কে কতটা দিতে পেরেছে, কে কতটা কেড়ে নিয়েছে।
শিশুটিকে কোলের বদলে ধরলো বগলে,
আর পাথরের মতো ঠোঁটে ফিসফিসিয়ে বললো,
-এখন থেকে তুইই আমার ইনভেস্টমেন্ট।

রাতে অহনা চুপচাপ বিছানার একপাশে শুয়ে ছিলো। আলো নিভে গেছে অনেকক্ষণ, শুধু পাশ ফিরে ঘুমিয়ে থাকা সাব্বিরের নিশ্বাসের শব্দটাই ভেসে আসছে নীরব রাতে।

তবুও অহনার চোখে ঘুম নেই।

হঠাৎ ধীর কণ্ঠে বললো,
-আপনি কি জানেন, আপনার জীবনের গল্পটা আমার কাছে এখন একটা অপূর্ণ উপন্যাসের মতো লাগে?

সাব্বির চমকে উঠলো।
-মানে?

-মানে, আমি সেই শেষ অধ্যায়ের চরিত্র, যার আগে অনেককিছু লেখা হয়ে গেছে, আর আমার অংশটুকু যেন শুধু দায়সারা।

সাব্বির পাশে ফিরে অহনার মুখোমুখি হলো।
-তুমি এমন বলছো কেন?

-কারণ আমি আজও বুঝি না, আমি আপনার জীবনের ভালোবাসা, না দায়িত্ব?
আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন, সংসার করছেন, সন্তানদের মানুষ করছেন সব ঠিক আছে, কিন্তু তবু কোথাও যেন শূন্যতা, যেন আমি আপনার অতীতে লেখা কারো ছায়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যার নাম অধরা।

-মানে?
-আপনার একটা পুরনো ডায়েরি পেয়েছিলাম মায়ের শাড়ির নিচে। বহু দিন ধরে রেখে দিয়েছিলাম পড়ে দেখবো বলে। কাল হঠাৎ সময় পেলাম, খুলে পড়লাম কয়েকটা পাতা, প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দে আপনি শুধু অধরাকে ডেকেছেন, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন, ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছেন, তাহলে আমার জায়গা কোথায়?

সাব্বির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-তুমি জানো না, আমি প্রতিদিন কতটা চেষ্টা করি তোমার সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর হতে।
আমি অধরাকে ভালোবেসেছিলাম, ঠিক, কিন্তু সেটা ছিল আমার কৈশোরের অনুভব।
তোমার সঙ্গে আমার জীবন শুরু হয়েছে সেই দিন থেকে, যেদিন তুমি নিজের সব ছেড়ে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলে।

অহনা চুপ করে রইলো

সাব্বির আবার বললো,
-অধরা আমার প্রথম অনুভব ছিলো, কিন্তু তুমি আমার জীবনসঙ্গী।
তুমি আমার জীবনের সেই অধ্যায়, যেটার পরে আর কোনো পাতা ওল্টাবো না।
তোমার আগে ভালোবাসা ছিলো, তোমার পরে নেই, আর কখনো আসবেও না।

বাবা যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, সংসারের হাল যখন ধরতে হলো, সেদিনই এই ডায়েরি তুলে রেখেছিলাম মায়ের শাড়ির ভাঁজে আর খোলা হয় নি।
ভেবেছিলাম, যেখানে আমি অধরাকে রেখে এসেছি, সেইখানেই তার সমস্ত স্মৃতি চিরতরে গুটিয়ে রাখবো।
তুমি তো জানো না, তুমি না থাকলে আমি কেমন হয়ে যাই। তুমি আমার ভাঙা সময়ের সবচেয়ে মজবুত ভরসা। অধরা ছিলো আবেগ, তুমি বিশ্বাস। অধরা ছিলো স্বপ্ন, তুমি বাস্তবতা। আর আমি বিশ্বাস করি, বাস্তবতাই মানুষের জীবনে সবচেয়ে স্থায়ী আশ্রয়।

তুমি যদি কখনো অনুভব করতে পারতে, আমি তোমাকে কতখানি ভালোবাসি,
তাহলে আর প্রশ্ন করতে না, অহনা।
অধরা আমার শৈশবের অনুভব ছিলো, আর তুমি আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তোমায় ছাড়া আমার ঘর, আমার দিন, আমার রাত্রি, কিছুই তো চলে না।

অহনা চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-তবুও আমি চাই না কোনো পাতায়, কোনো কোণে, কোনো হৃৎপিণ্ডের অলিন্দে, অন্য কারো নাম থাকুক।
আমি আপনার ‘পুরোটা’ চাই, ভগ্নাংশ নয়।

সাব্বির একটু হাসলো, সেই হাসিতে অভিমানের ছায়া, ভালোবাসার স্পর্শ।

-ভালোবাসা যদি ভাঙা-ভাঙা হতো, তাহলে এ জীবন অনেক আগেই থেমে যেতো অহনা।
তুমি শুধু স্ত্রী নও, তুমি আমার সংসারের ভরসা, আমার জীবনের দিশা।
অধরাকে ভালোবেসেছিলাম আমি,কিন্তু তাকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলিনি।
তোমাকে ভালোবেসে চলছি, প্রতিটি পদক্ষেপে।

অহনা নিঃশব্দে সাব্বিরের বুকে মাথা রাখলো।
চোখ বেয়ে নেমে এল জল, তবে এবার সেই জলে হিংসা ছিল না, ছিল আত্মপ্রত্যয়।
কারণ সে জানে, প্রথম নয়, শেষ ভালোবাসা হতেই তো ভাগ্য লাগে।

সাব্বিরের বাসার লাগোয়া গলিতেই ভাড়া নিয়েছে মৃদুল।
বলে বেড়ায়, শহরের নামী এক মার্কেটে কাপড়ের দোকান দিয়েছে সে।
আসলে উদ্দেশ্য কেবল ব্যবসা নয় চোখের আড়াল হলেও মনে মনে সাব্বিরের প্রতিটি পদক্ষেপের হিসেব রাখা।

দিনে একবার করে মা’র খোঁজ নিতে এসে বড় ছেলের সংসারে ঢুঁ মেরে যায়।
বলে,
-মা কেমন আছো? সাব্বির ঠিক মতো খাওয়ায় তো?

আসলে তার চোখ পড়ে অন্যখানে, সাব্বিরের পরিশ্রমে গড়া একেকটা ইটের দিকে, গ্যারেজের ধুলোমলিন বারান্দায় জমে ওঠা স্বপ্নের দিকে, সায়েমের অবুঝ হাসিতে লেগে থাকা অহনার শান্ত প্রশান্তির দিকে।

মৃদুল তুহিনকে নিয়ে আসলে মা আদরে ভরিয়ে দেন।
তুহিন মায়ের গলা জড়িয়ে বলে,
-দাদী, আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
মায়ের চোখ ঝাপসা হয়, অথচ কিছু বলেন না।

অপরদিকে সায়েম ধীরে ধীরে হাঁটতে শিখেছে।
ছোট্ট দু’পায়ে পা ফেলে টুকটুক করে ঘরে ঘরে হেঁটে বেড়ায়।
মৃদুল একবারও কোলে তোলে না তাকে।
চোখে চোখ রাখলেও, ভালোবাসার ন্যূনতম স্পর্শটুকু দেয় না।

সাব্বির যতটুকু পারে তা দিয়েই ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে চায়, সাব্বির সায়েমের জন্য একটা রঙিন জামা কিনে আনলে মৃদুল পরদিনই তুহিনের জন্য এনে দেয় দামি দুটো পোশাক।
তুহিন হাঁটতে গিয়েও পা মাটিতে ফেলে না, বাবা কাঁধে তুলে নিয়ে ঘোরায়।

এ যেন অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতা, যেখানে কেউ কিছু না বললেও, যার যার চোখে স্পষ্ট উচ্চারণ,
"কে বেশি ভালো বাবা?"

সাব্বির এসব দেখে কিছু বলে না, শুধু দূর থেকে একটুখানি হেসে ছেলে সায়েমের মাথায় হাত রাখে।
মনের ভেতর দিয়ে ঢেউয়ের মতো বয়ে যায় একটাই কথা।

ভালোবাসা কখনো প্রতিযোগিতা হতে পারে না। ভালোবাসা মানে নিঃস্বার্থ থাকা, নিরব দায়িত্ব নেওয়া, প্রতিদান না চাওয়া।

কিন্তু মৃদুল পদে পদে বুঝাতে চায়, সাব্বির তার কাছে সায়েমকে দত্তক না দিয়ে কত বড় ভুল করেছে।

দিনের অর্ধেক সময় কাটে গ্যারেজের তপ্ত ইঞ্জিনের মাঝে,
লোহার গন্ধ, গ্রীসের দাগ, আর ক্লান্ত ঘাম মিশে যেন শরীর থেকে বেরিয়ে আসে তার জীবনের কাহিনি।
বাকি অর্ধেক সময় চলে যায় বাড়ির কাজ সামলাতে ইট, সিমেন্ট, রডের হিসাব, শ্রমিকদের তদারকি।
নিজের জন্য সময় রাখার মতো কোনো অবসর নেই, নেই বিশ্রামের ছায়া।

রাতে একা দাঁড়ায় আয়নার সামনে,
কোনো বিশেষ কারণ ছিল না, হঠাৎই নিজেকে দেখার ইচ্ছে হলো।
আয়নার দৃষ্টিতে চমকে উঠে সে,
চেনা সেই চেহারা যেন বদলে গেছে,
চোখে ঘুমহীনতা, মুখে ক্লান্তির রেখা,
শরীর শুকিয়ে জীর্ণ হয়েছে, মাথার চুলে স্পষ্ট ফাঁক।
কখন যেন বয়স কাঁধে চেপে বসেছে নিঃশব্দে।

নিজেই নিজের চোখে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
-এতো কিছু করে শেষ পর্যন্ত কি আমি আমার পরিবারের মুখে হাসি এনে দিতে পেরেছি?

কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় স্নেহা ও সায়েমের উচ্ছ্বল হাসি,
অহনার গভীর মমতা,
আর মায়ের প্রশান্ত মুখ।

তখনই সে আয়নার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ফেলে,
-যদি ভালোবাসা থাকে পুরস্কার, তাহলে এই ক্ষয় হয়ে যাওয়া দেহও হয়ে উঠুক সবচেয়ে মূল্যবান উৎসর্গ।

রোজার সময় হয়ে আসছে।
চৈত্রের রোদ যেন রোজার প্রস্তুতির আগেই পরীক্ষা নিতে চায়।
সাব্বির কিছুদিনের জন্য ঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখলো,
পুরো মনোযোগ দিলো গ্যারেজে কারণ এখন উপার্জনের টাকা দিয়ে রোজার বাজার করতে হবে।
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে নিজেই খাটে, ঘামে ভেজে শরীর,
তবু ক্লান্তির কোনো ছাপ নেই চোখে মুখে।
কারণ তার একটাই লক্ষ্য ঘরটা আবার গড়ে তোলা,
আর নিজের আত্মসম্মানটাকে ফিরিয়ে আনা।

গ্যারেজে বসেই এক দুপুরে রুশাকে ফোন করলো সে।
রুশার কণ্ঠে প্রশান্তির ঢেউ,
সে জানালো এখন বেশ ভালোই আছে।
শাশুড়ী কিছু বললে সে কিছু বলার আগেই তার স্বামী উত্তর দিয়ে দেয়।
এখন শাশুড়ী অনেকটাই বদলে গেছেন,
একটা অদৃশ্য সীমারেখা তৈরি হয়েছে যেটা কারো সম্মানকে ম্লান হতে দেয় না।

দোকানটা ছোট, আয়ও আহামরি না,
তবু শান্তি আছে ভাইয়া।
তোমার দেওয়া টাকাটার মর্যাদা আমি কখনো ভুলবো না।
একটা আশ্রয়, একটুখানি সম্মান, এর চেয়ে বড় সম্পদ আর কিছু নেই।

সাব্বির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-এসব শুনেই শান্তি পাই, রুশা।
তোরা ভালো থাকলেই আমার শান্তিতে ঘুম আসে।

ফোন কেটে দিয়ে ছায়ায় বসে চোখ বন্ধ করলো সাব্বির।
এক মুঠো নিঃশ্বাস বুকে জমিয়ে মনে মনে বললো,
এই জীবনের যুদ্ধে সে হেরে যেতে চায় না,
কারণ অনেক মানুষের হাসি এখন তার কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে।

মৃদুলের মধ্যে আজও কোনো পরিবর্তন নেই।
তার কথাবার্তা, চালচলন, এমনকি হাঁটাচলার ভঙ্গিতেও এখনও ঝরে পড়ে একরকম ঔদ্ধত্য।
সে ব্যবসার কাজে শহরে এসেছে, এই নামেই পরিচিতি দিয়ে বেড়ায়,
কিন্তু সাব্বিরের মনে গভীর একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খায়,
সে কি সত্যিই ব্যবসার তাগিদে এসেছে?
না কি নীরব প্রতিযোগিতায় নেমেছে বড় ভাইকে হারানোর মঞ্চে?

মাঝেমধ্যে বাসায় বড় রুই মাছ, ব্রয়লার মুরগি কিংবা বাহারি ফলমূল এনে হাজির করে মৃদুল ।
তারপর ছোট্ট সায়েম ও স্নেহাকে ডেকে বলে,
-এই দেখো চাচ্চু কত বড় মাছ এনেছে, এই দেখো মুরগি!
কিন্তু এই দেখানোতেই শেষ,
না কোনো মাছের একটা টুকরো,
না কোনো রসালো ফলের এক খণ্ড
সায়েম কিংবা তার ছোট বোনটির ভাগ্যে জোটেছে।
শুধুই চোখের সামনে একরাশ বিলাসিতা,
আর হাতের মুঠোয় অভাবের শিকল।

একদিন সন্ধ্যায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা অহনাকে দেখে সাব্বির কড়া গলায় বলেছিলো,
-ছেলেমেয়েকে এ বাড়ি ও বাড়ি যাতায়াত করতে দিবে না অহনা।
ওদের চোখে যেন লোভের ছবি না আঁকে।
ওদের শেখাতে হবে কীভাবে মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার আগে
নিজের কপালের ঘাম মুছতে হয়।
আমি চাই আমার সন্তানরা হোক অল্পে তুষ্ট,
অহংকার নয়, তারা যেন শিখে কৃতজ্ঞতা।

তবুও শান্তি মেলে না মৃদুলের,
মা'কে দেওয়ার নাম করে,রোজ রোজ ইফতারি নিয়ে আসে,
কিন্তু খাবারের পরিমাণটা এমন হিসাবি
যেন শুধু একজনের পেটই ভরুক,
আর কারও যেনো নজর না পড়ে।
সাব্বির বোঝে, এ এক ধরনের সূক্ষ্ম খোঁচা,
এক ধরণের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর প্রয়াস।
নিজে বসে মা'কে খাইয়ে দেয়,
মায়ের ঠোঁটের কোণায় কিছুমাত্র হাসি ফুটলেও
সাব্বির যেন দেখতে না পারে এমন কৌশলে বিদায় নেয়।

সায়েম জানে না, কেন ইফতারের সময় বাবার মুখটায় গাম্ভীর্য লেগে থাকে,
কেন মা অল্প খাবার পাতে তুলে দেয়, কেন ইফতারিতে ফলমূল থাকে না।
কেন দাদির প্লেটের পাশে তার হাত ছুঁতে গেলেই মা তাকে টেনে সরিয়ে নেয়।

এই ঘর, এই পরিবার, এই রক্তের বন্ধন,
সব আছে, তবু কিছু নেই।
ভালোবাসা নেই, সংবেদন নেই, তা স্পষ্ট।
*মন্তব্য যখন গঠনমূলক হয়, তখন কলমের ডগা দিয়ে আপনা-আপনি কালি বের হয়।

চলবে,,,,

    (মৌচাক)  #পর্বঃ৩৪(এর শেষ অংশ)🚭(রাজনীতি+পজেসিভ+রোমান্টিক+টক্সিক লাভ স্টোরি)[অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]❌“চারিদিকে ...
08/07/2025


(মৌচাক)
#পর্বঃ৩৪(এর শেষ অংশ)

🚭(রাজনীতি+পজেসিভ+রোমান্টিক+টক্সিক লাভ স্টোরি)[অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]❌

“চারিদিকে হইচই, এর আওয়াজে জুথি আর ঘরে বসে থাকতে পারলো না, আরিশ গেছে প্রায় দেড় ঘন্টা হতে চলল, সেই তখন থেকে ঘর বন্দী হয়ে আছে। আর কতক্ষণ থাকা যায়? এখন নিচ থেকে সাউন্ডবক্সের, উরাধুরা লিরিক্স গান শুনে বুঝতে বাকি থাকে না নিচে কাজিনমহলরা নাচ গান শুরু করে দিয়েছে। এখন সেখানে না গেলে সবকিছু মিস করবে,তাই আর নিজেকে রুম বন্দি না রেখে, আর একবার আয়নার সামনে নিজেকে দেখে, দরজাটা খুলে দ্রুত পায়ে হেঁটে সিঁড়ি বরাবর আসতে থামতে হয় সানজিদা খানের পিছু ডাকে।
‘মৌ!
‘জি বড় আম্মু!
‘তোমার সাথে কথা ছিল, আমার সাথে আসো।

জুথি সানজিদা খানের কথায় একবার নিচে তাকালো, দেখে সবাই স্টেজের সামনে যাচ্ছে। অতঃপর তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বাধ্য মেয়ের মত ওনার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে রুমে আসতে, সানজিদা খান ওকে বসতে বলে আলমারির কাছে গিয়ে দুটো বক্স বের করে, জুথির পাশে বসে বক্সগুলো খুলে ওখান থেকে এক জোড়া, মোটা দু বড়ি স্বর্ণের প্লাস হীরার পাথর মিশ্রিত সেপ ডিজাইনের রুলি বের করে ওর হাতটা তুলে দুহাতে পরিয়ে বললেন,
‘এগুলো তোমার, কখনো খুলবে না।
‘এগুলো তো অনেক ভারী।
‘সামলাতে শেখো!

সানজিদা খানের কথায় জুথি সেদিনের আরিশের পরানো বালাটার দিকে তাকিয়ে নম্র কন্ঠে বললো,
‘কিন্তু উনি তো এই বালাটা আমাকে সেদিন পরিয়ে খুলতে নিষেধ করেছিলেন, এখন,,, — ওর কথার মধ্য সানজিদা খান ওর পা দুটো ওনার কোলের মধ্যে নিয়ে দুটো স্বর্ণের ডায়মন্ড পাথর দিয়ে ডিজাইন করা একজোড়া নুপুর পরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
‘কিছু বললে, বলবে আমি খুলে দিয়ে এটা পরিয়ে দিয়েছি।

তৎক্ষণে জুথি সানজিদা খানের কোল থেকে পাটা সরিয়ে আনতে চেয়ে বললো,
‘কি করছো বড় আম্মু? আমার পা তোমার কো, - ওকে সম্পূর্ণ শেষ করতে না দিয়ে সানজিদা খান দৃঢ় কন্ঠে শুধালেন,
‘আমাকে বড় আম্মু বলে ডাকবে না।

জুথির মুখটা তৎক্ষণে ছোট হয় আসে, তার বড় আম্মু বলছে, তাকে বড় আম্মু বলে না ডাকতে? কি দোষ তার? জুথি কে মাথা নিচু করতে দেখে সানজিদা খান নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
‘আজ থেকে মা ডাকবে! পারবে না?

জুথি নিচু মাথাটা তুলে সানজিদা খানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
‘মা ডাকবো?
‘হুম। — বলে গোল মাঝারি বক্স থেকে ছোট ডায়মন্ড পাথরের স্বর্ণের নাকফুল বের করে জুথি কে তারা দিয়ে বললেন,
‘নাকের ওটা খোলো, এটা পরিয়ে দিচ্ছি।

জুথি সানজিদা খানের কথায় ওনার হাতের দিক তাকাতে দেখে, বেশ মোটামুটি বিবাহিত নারীদের মতো ডায়মন্ড স্বর্ণের নাকের তা জলজল করছে। এটা পরলে নিশ্চিত ওকে বিবাহিত লাগবে, তাই কন্ঠটা চাপিয়ে বললো,
‘এটাই তো ঠিক আছে, ওটা পড়লে কেমন বুড়ো টাইপের লাগবে না?
‘যেটা বললাম, সেটা করো না।

“ব্যাচারির কি আর করার? যেহেতু সানজিদা খান বলেছেন এখন না চাইলেও পড়তে হবে। তাই নাকের ছোট নাক পিনটা খুলে রাখতে সানজিদা খান নিজেই পরিয়ে দিলেন। অতঃপর ওকে দাঁড়া করিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বললেন,
‘নাও,পারফেক্ট আছে।

জুথি ছোট ছোট পায়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতে দেখে আজ ওকে একদম ওর মা চাচীদের মত লাগছে। উনারাও এমন মোটা মোটা ভারী গহনা পড়ে থাকেন। অতঃপর নিজেকে সম্পূর্ণ দেখে আনমনেই বিড়বিড় করে বললো, —‘আমাকে তো পুরো বউদের মত লাগছে, কেমন বুড়ো টাইপের লোকেদের মত সাজিয়ে দিল। এসব নিজের মনে বিড়বিড় করে ঘুরে সানজিদা খানের দিক তাকিয়ে বললো,
‘আমি নিচে যাই?
‘হুম। – উনার হুম বলার সাথে সাথে জুথি দরজা পর্যন্ত যেতে উনি আবারও ডেকে বললেন,
‘মৌ শোন!
‘হ্যাঁ বড় আম্ম, বলতে নিয়েও থেমে বললো –‘ মা বলো?
‘সন্ধ্যার পরে তো কিছু খাওয়া হয়নি, দুপুরেও খেতে যাওনি, টেবিলে খাবার রাখা আছে, আগে খাবে তারপর স্টেজের ওখানে যাবে। ওয়াডার দেওয়ার মতো করে কথাটা বললেন।

জুথি যেতে নিয়েও দৌড়ে এসে সানজিরা খানের গলা জড়িয়ে বললো,
‘মা তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
‘হুম।
‘তুমি কি বকা দিবে?
‘বলো!
‘আমি তো ওনাকে ভালবাসতাম, উনার জন্য সবকিছু সহ্য করে নিতাম। কিন্তু বিগত কিছুদিন ধরে উনার প্রতি অতিরিক্ত দুর্বল অনুভব হয়, ওনার প্রতি অন্তর থেকে কেমন অদ্ভুত টান অনুভব করি। উনি ছাড়া প্রতিটা মুহূর্ত কেমন খালি খালি লাগে, কেন এমনটা হয় মা?

জুথির কথায় সানজিদা খান মুচকি হেসে ওর মাথায় চুমু খেয়ে,বললেন,
‘এটাতো হওয়ারই কথা, প্রণয়নের টান যে! সেটা আল্লাহর তরফ থেকে স্বামী স্ত্রী দুজনের হৃদয় তৈরি করে দেন।

জুথি চমকালো অবিশ্বাস্য চোখে মাথাটা একটু উঁচু করে সানজিদা খানের মুখটা দেখল, সত্যি কি ওর বড় আম্মু ওকে চুমু খেলো? জুথি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন,
‘একজন মেয়ে, মা ব্যতীত আর কাকে মা বলে ডাকে? আর কেনই বা ডাকে?

জুথি সরু চোখে তাকিয়ে নম্র স্বরে বললো,
‘ওই ব্যক্তির ছেলের সাথে যখন মেয়েটার বিয়ে হয়!
‘এগজ্যাক্টলি! বিয়ে’ বিয়ের পর একটা মেয়ের হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালা অদৃশ্য যাদুর মত এক মায়া সৃষ্টি করে দেন স্বামীর প্রতি। আর তোমারও এজন্যই আরিশের প্রতি এমন অনুভূতি হয়।
‘মানে?
‘সেদিন রাতের কথা মনে আছে? ঐদিন তোমাদের বিয়ে হয়েছে।

জুথির মুখে খুশির ঝলক দিয়ে উঠলো সানজিদা খানের কথায়, তাহলে তার ধারণাই ঠিক, সেদিন সত্যি তার বিয়ে হয়েছিল? আরিশ ভাই তার স্বামী? স্বামী কথাটা মনে হতেই কয়েকবার বিড়বিড় করে আওড়ালো অতঃপর উনাকে আবারও জড়িয়ে ধরে লজ্জা লজ্জা ভাব টেনে বললো,
‘শাশুড়ি আম্মু!
‘হুম।
‘উনি যে আমার স্বামী উনার প্রতি ভালোবাসা থাকলেও উনার প্রতি ভয় জিনিসটা কমে না কেন আমার?
‘সময়ের ব্যবধানে ঠিক হয়ে যাবে!
____________
“চারদিক লাইটিং এর স্বচ্ছ আলোয়, হলুদ শাড়িতে uk সাজ ফর্সা মুখোনিতে তানিশাকে যেন দোকানে সাজিয়ে রাখা পুতুল গুলোর মত লাগছিল, আয়ান বার কয়েক তানিশাকে পর্যবেক্ষণ করে, নিজেকে আর স্থির রাখতে পারল না। সাউন্ড বক্সের দায়িত্ব ওখানে থাকা একটা ছেলেকে দিয়ে, উঠে দাঁড়ালো প্রিয়সির নিকট যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তানিশার হঠাৎ স্টেজের সামনে চোখ পরতে দেখে আয়ান ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে কেমন করে এগিয়ে আসছে। এটা দেখে তাড়াহুড়ায় চেয়ার থেকে উঠে, দৌড়ে চলে যেতে নিলে আয়ান খপ করে পিছন থেকে হাতটা ধরে একটানে বুকের উপর ফেলে হিসহিশিয়ে বললো,
‘সেজেছো ভালো কথা, আমার সামনেই কেন বাচ্চাদের মত কাচুমাচু করতে থাকো? বোঝো না আমি ঠিক থাকতে পারি না?
‘দেখুন স্টেজ জুরে অনেক মানুষ আছে, এভাবে দেখলে মানুষ খারাপ ভাব,,
‘বুঝতে পেরেছি, অনেক শখ তোমার’ তোমার সবকিছু আমাকে দেখানোর, চিন্তা করো না বেশি দিন অপেক্ষা করাবো না তার আগে,, ততক্ষণে তানিশা দুহাত দ্বারা পা দুটো উঁচু করে আয়ানের মুখ চেপে ধরে বললো,
‘চুপ করুন, এত নির্লজ্জ কেন আপনি?

তৎক্ষণে গমগম কন্ঠে চেপে রাখা হাতের নিচ থেকে শোনা গেল,
‘বউ যদি সারাদিন সামনে ঘুরঘুর করে, তাহলে কি স্বামী নিজেকে ঠিক রাখতে পারে?

তানিশা বুঝলো, এই লোকটার সাথে পেরে ওঠা সম্ভব না। তাই মুখের চেপে রাখা হাতটা সরিয়ে আবার চলে আসতে নিলে আয়ান তাৎক্ষণে ওকে হুট করে কোলে তুলে স্টেজের সামনে যেতে যেতে একটু ঝুঁকে ওর নাকে নাক ঘষে বললো,
‘পালাই পালাই করা অভ্যাসটা বন্ধ কর, এখন আমরা কপাল নাচ করবো!
‘আল্লাহ, লজ্জা লাগছে! আমাকে নামান প্লিজ।
‘সবাইকে দেখাতে হবে তো, খান বাড়ির ছোট ছেলের বউকে? – বলে লিরিক্সের থাকা ছেলেটির দিক তাকিয়ে রোমান্টিক গান ছাড়তে বললে,

Hum teri mohabbat mein..
yun pagal rahte hain…
Deewane bhi ab humko
deewana kehte hain…

ছেলেটা গান চালু করতে আয়ান তানিশার দিক করা চোখে তাকিয়ে বললো,
‘এখন যদি ঠিক মত নাচ না করো, তো স্টেজে সবার সামনে চুমু খাব!

কি আর করার? এমন হুমকি দিয়েছে, এখন না চাইলেও নাচতে হবে তার সাথে। তাই গানের সাথে তাল মিলিয়ে দুজনে নাচার মধ্য বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে কয়েকবার, ওদেরকে এভাবে কপাল নাচতে দেখে কাজিন মহল প্লাস সমবয়সী ছেলেমেয়েরা সবাই একটু জোরেই চেঁচিয়ে উঠলো, জিও জিও বলে। সবার এমন উৎসাহ পেয়ে আয়ান মুচকি হেসে, আরেকটু তানিশার কাছে ঘিষতে তানিশা লজ্জায়, ওর শাড়ি খামছে ধরল। এর আগে মনে হয়, এমন বিব্রস্থ অবস্থায় আর কখনোই পড়েনি ও। ওদেরকে কাপল নাচ করতে দেখে লুসিয়ান মুচকি হেসে ফারির কাছে এগিয়ে ওর হাত চেপে স্টেজে উঠলো। যদিও লুসিয়ান সেভাবে নাচতে পারেনা, আর ফারি সেও তানিশের মত লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেল। লুসিয়ান সে ওকে কিছু না বলেই এভাবে ডাইরেক্ট স্টেজে নিয়ে আসবে ভাবেনি, কিন্তু এখন স্টেজে উঠে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে মান সম্মান সব পাঞ্জা হয়ে যাবে। তাই যেটুকু পারলো দুজনে মিলে, মিলিয়ে নাচার চেষ্টা করল।

“তখন জুথি সানজিদা খানের সাথে কথা শেষ করে আসার সময় উনি আবারও খেতে বললে, ও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে, আর কোন রূপ কথা না বলে হেঁটে চলে আসে খাবার টেবিলে। খিদে সংবরণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু খেয়ে ডানে বামে না চেয়ে সোজা দৌড়ে স্টেজের কাছে যেতে দেখে। আয়ান তানিশা, লুসিয়ান ফারি কাপল ডান্স করছে। কি সুন্দর লাগছে দুই জুটিকে, জুথি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকার মধ্য ওদের ডান্স শেষ হয়। আর ওদের নাচ শেষ হতে জুথির মুখ থেকে আফসোসের সুরে বেরিয়ে আসে,
‘ইস মিস করলাম!

ওদের ডান্স শেষ হতে মাইশা, মনি দৌড়ে গিয়ে,
Ishqam dilbar didi na, didi na.. গানটা ছাড়তে বলে উরাধুরা নাচতে শুরু করলো। ওদের তিন মিনিটের নাচ শেষ হতে পাশ থেকে, আয়ান কালো চশমা পড়ে জামা কাপড়ের উপরে লুঙ্গি পেঁচিয়ে অন্য হাতে লুসিয়ানের দিক লুঙ্গি ক্যাচ করতে সেও ডান হাতে, লুঙ্গিটা কেচিং করে হাটু পর্যন্ত প্যান্টের উপর পড়ে নিয়ে লুঙ্গি ড্যান্স গানটায় স্টেজে উঠে লুঙ্গি জাগিয়ে নাচ দিতে সবাই হু হু করে হেসে দিল। যদিও লুসিয়ান শুধু লুঙ্গিটা উপর নিচ করছে, কারণ তার নাচার কোন অভ্যাস নাই। ওদের এমন ডিজে নাচ দেওয়ার মধ্যে কোত্থেকে আরিশ ও ওদের মত লুঙ্গি পেঁচিয়ে উরাধুরা নাচ দিতে জুথি অবিশ্বাসে চোখে হা করে তাকিয়ে দৌড়ে গেল, স্টেজের উপর। জুথি গিয়েছে তো ভালো কথা, গিয়ে আয়ানের পরনের লুঙ্গিটা টেনে খুলতে নিলে, আইয়ান হঠাৎ এমনটা হওয়ার দরুন ঠাস করে চিৎ হয়ে পরে লুঙ্গি চেপে সামনের দিক তাকিয়ে জুথি কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘কি করছিস বনু? আমার মান ইজ্জত!

কে শুনে কার কথা? জুথি আয়ানের পরনের লুঙ্গি টেনে খুলে ওদের মতো শাড়ির উপর পেঁচিয়ে বললো,
‘তুমি অনেক নাচ করেছো আয়ান ভাই! এখন আমি তোমার ভাইয়ের সাথে নাচবো তুমি বরং দেখো, — বলে আরিশের সামনে গিয়ে সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে, আরিশের মত লুঙ্গি জাগিয়ে জাগিয়ে মুখে লুঙ্গি ড্যান্স গানটা বিড়বিড় করে নাচতে লাগলো। ওদের লুঙ্গি ড্যান্স শেষ হতে কাজিন মহলের সব স্টেজে উঠে ‘চিকনে চামিলি চুপকে রাঙ্গলি, দুয়া খেলোসে আইয়ি.. সাড়ে তিন মিনিটের গানটায় একসাথে নাচ শেষ করে সবগুলো ক্লান্ত হয়ে একেকটা চেয়ারে এসে বসলো। এইবার বুড়ো বুড়িদের পালা! উনাদের নাচতে বলায় প্রথমে ওনারা নাচতে না চাইলেও ওদের জোরাজুরিতে জুথির নানা-নানী, ফারির নানী, রাদিফের নানা-নানী সবাই স্টেজে উঠে এমন নাচ দিল যা দেখে ছোট থেকে শুরু করে বুড়োরা না হেসে পারলো না। বিশেষ করে জুথির নানীর নাচ দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার পালা। কি ভৌতিক স্টাইল নাচ। আরিশের নানা নানী কেউ বেঁচে নেই, ওর মামারা আর খালারা এসেছেন বিয়েতে। ওনাদের বিখ্যাত নাচ শেষ হতে জুথিদের নাটকের পালা এল, তাই ওরা ক্যাটাগরী অনুযায়ী যে যার সাজ দিতে মাঝ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো আরিশ। আরিশ কে দেখে জুথি কিছু বলবে তার আগেই আরিশ বললো,
‘মৌ কোন জামাই সাজবে না! ও তোদের নাটকের বউ হবে।

আরিশের এমন কথায় সবাই সবার দিকে তাকিয়ে, ফারি ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘ও না হলে জামাই হবে কে?
‘কেন আমি!
‘তুমি? – চোখ দুটো বড় বড় করে।

আরিশ আর দাঁড়ালো না জুথির হাত ধরে স্টেজের দিক যেতে যেতে বললো,
‘জামাই বউ, আমি আর মৌ! তোরা কে কি সাজবি, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়, গো।

কি আর করার? আরিশ ভাই তাদের সাথে অভিনয় করবে এটা ভাবতেই কেমন লাগছে। তবে ছেলের বাড়ি যেতে দেরি হয়ে যাবে বলে, ওদিকে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করে, ফারি মাদবর চাচা সাজল, ওর আব্বুর পাজামা পাঞ্জাবি পরে। সূচি সাফওয়ান খানের ফতুয়া লুঙ্গি পরে ঘটক সাজলো। তানিশা শালী, এভাবে পাট অনুযায়ী একেকজন একেকটা পরে চলে এলো আবারও স্টেজে। ওদের এমন সাজ দেখে চোখ কোঠায় উঠে গেল, সাফওয়ান খান, সাইফুল খানের, সাথে উনাদের কর্তীরা তো আছেন নি। ওনারা মুচকি হাসলেন, উনাদের ছেলে মেয়েরা যে এতটা আনন্দ করতে জানে, বিয়ের অনুষ্ঠান না পাতলে হয়তো জানাই হতো না।

ওরা রেডি হয়ে আসতে, জুথি আরিশের কাছে একটু ঘিঁষে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘আপনি যে চলে এলেন অভিনয় করতে? জামাই এর অভিনয় পারবেন?
‘জানিনা!

জুথি আরিশের মুখে জানিনা শুনে, নিঃশ্বাস ছেড়ে আয়ানের আনা তখনকার একটা লুঙ্গি এনে ওর হাতে দিয়ে বললো,
‘নিন এটা পড়ুন, আর শার্টটা খুলুন!
‘কেন?
‘এটাই জামাই পড়া থাকবে!
‘আমি পারবো না!
‘তাহলে আমি আপনার বউ হব না!
‘বউ তোকে আমারই হতে হবে। গম্ভীর কন্ঠে।
‘তাহলে লুঙ্গি পরেন, শার্টটা খুলেন!

আরিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে, জুথি লুঙ্গিটা নিজেই আরিশকে কোনরকম পরিয়ে, গায়ের শার্ট টা টেনে খুলে ভিতরের সেন্ডেল গেঞ্জিটা টেনেটুনে ছিড়ে দম নিয়ে বললো,
‘এইবার পারফেক্ট!

জুথি আরিশের নতুন গেঞ্জিটা ছিড়ে ফেলতে, আরিশ রাগি চোখে তাকিয়ে দাঁত দাঁতের উপর চেপে বললো,
‘এটা কি করলি?

জুথি একটু বেশিই আবেগি হয়ে গিয়েছিল, সন্ধ্যা বেলার সানজিদা খানের কথায়, ও আরিশের এমন ডিপলি নরম ব্যবহারে। ওর মনেই ছিল না,আরিশ কতটা ডেস্পারেট গম্ভীর রাগী মানুষ। সেখানে ও কিনা আরিশের গেঞ্জিটা ছিঁড়ে দিল?
জুথি কে কাচুমাচু করতে দেখে, আরিশ বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে ওর হাতটা টেনে কাছে এনে বললো,
‘একদম ঢং করবি না, বিরক্তি লাগে আমার।

তৎক্ষণে ফারি মাদবর চাচা নাটকটা প্লে করে, আরিশ কে তারা দিয়ে বললো, – ‘ভাই শুরু হয়ে গেছে, ব্যাস কথার তালে তাল মিলিয়ে সবগুলো অভিনয় শুরু করল।
‘আপনি চেইতেন মাদবর চাচা! চুপ কইরা বন.. আপনি চাইতেন না মাদবর চাচা। আর ওদের অভিনয়তে গড়াগড়ি করে হাসতে শুরু করলো বড়রা সবাই। শেষ পর্যায়ে এসে, যখন ফারি লুঙ্গি জাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, – ‘ আবে তুই শালায় মানুষ খারাপ লাঠির বাড়ি খা, বলে সবাই আরিশের পিঠে মারতে শুরু করলে জুথি দৌড়ে এসে কান্নার অভিনয় করে ফারির হাত ধরে বললো,
‘মারবেন না, মারবেন না,মাদবর গো, ও মাদবর মারবেন না মোর স্বামী রে, শোনেন মাদবর গো। আমাগোরে মাফ কইরা দেন। বলে নিচ থেকে আরিশ কে তুলে বাড়ি চলো বলে যেতে নিলে, আরিশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ব্যক্তিত্বে ফিরে এসে স্টেজে বসেই জুথি কে কোলে তুলে সবার উদ্দেশ্যে একটু চেচিয়ে বললো,
‘দুনিয়া এক দিক, বউ এক দিক, বউয়ের খুশির জন্য মাঝে মাঝে নিজের খোলস ছেড়ে এমনটা হওয়া যায়। কারণ সবার ঊর্ধ্বে বউ, তাই আমি আমার মৌ কে নিয়ে গেলাম। – বলে কারো দিকে আর না তাকিয়ে, রাফ পায়ে হেঁটে ভিতরে চলে গেল।

Continue,,,

অবাধ্য_পিছুটানসাদিয়া_শওকত_বাবলিপর্ব_১০( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )১৩.হোটেল ছেড়েছে তুর্য। আর কতদিন হোটেলে...
08/07/2025

অবাধ্য_পিছুটান
সাদিয়া_শওকত_বাবলি
পর্ব_১০

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

১৩.
হোটেল ছেড়েছে তুর্য। আর কতদিন হোটেলে থাকা যায়? তাছাড়া এ তো কোনো দর্শনীয় স্থানের হোটেল নয়। যে জানালাটা খুললে মন প্রাণ জুড়িয়ে যাবে,স্নিগ্ধ শীতল বাতাস এসে আবেসিত করবে তাকে। এটা শহরের বুকে রাত কাটানোর জন্য হোটেল। যেখানে জানালা খুললে গরম বায়ু, অযাচিত কোলাহল, যানবাহনের প্যা পো ধ্বনির উৎপাত পাওয়া যায়। যদিও উচ্চমানের পরিপাটি এক সুন্দর হোটেলে ছিল তুর্য তবুও দিনের পর দিন এখানে থাকতে আর ভালো লাগছে না তার। তাছাড়া এখন যেহেতু রাজশাহীর বুকে বউয়ের দেখা পেয়েছে তখন এখানে তাকে থাকতে হবে বেশ অনেকটা দিনের জন্য। আর তো উপায় নেই। প্রথম দিকে বউয়ের দেখা পেয়েও তাকে না চিনে যে ভুলগুলো করেছে তার সংশোধন করতে হবে এখন। বউকে মানাতে হবে, তাকে নিজের প্রেমে ফেলতে হবে, তার প্রণয় উপলব্ধি করাতে হবে। সব মিলিয়ে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন তুর্যের। তাই তো রাজশাহীতে বাসা ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলেটা। ঢাকায় নিজেদের ব্যবসার কাজ বাপ চাচাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে কিছু দিনের জন্য। তারপরও এখানে বসে যতটা তদারকি করা সম্ভব সে করবে। আর মাঝে মাঝে খুব প্রয়োজনে হলে স্বল্প সময়ের জন্য ঢাকায় যাবে।

১৪.
রাজশাহীতে ইতমধ্যে বাসা ভাড়া নিয়ে ফেলেছে তুর্য। পৃথাদের বাড়ির কাছাকাছিই রেখেছে বাসাটা তবে দুই তিনটা ঘরের পরে। পাছে যদি তার রা'জা'কা'র শ্বশুরটা কোনোভাবে দেখে নেয় তাকে তখন দেখা যাবে দলবল নিয়ে তাকে এ বাসা থেকে উচ্ছেদ করতে চলে এসেছে। তুর্য এই মুহূর্তে কোনো ঝামেলা চাইছে না, শ্বশুর বাড়ির সাথে তো একদমই নয়। তাই একটু দূরে দূরেই বাসাটা রেখেছে সে।

আজ সন্ধ্যার দিকেই তুর্য উঠেছে সে বাসায়। যদিও ব্যাচেলর মানুষ থাকবে ততকিছু গুছানোর নেই। যতটুকু প্রয়োজনীয় ফার্নিচার কিনেছিল তাও ঐ ফার্নিচারের দিতে যে ছেলেপেলে এসেছিল তারাই গুছিয়ে দিয়ে গেছে। আর বাদ বাকি গুছানোর জন্য তো আরুশ আছেই। তুর্য আর ঐ গুছ গাছের দিকে মনযোগ না দিয়ে বিশাল আকারের তিনটা প্যাকেট নিয়ে বসলো মেঝেতে। আরুশ কপাল কুঁচকালো। পুরো ফ্ল্যাটের জন্য তেমন আসবাবপত্র কিনলো না তুর্য অথচ বেশ হম্বিতম্বি করে জনবল দ্বারা এই বড় বড় প্যাকেটগুলো অনালো। কি আছে প্যাকেটগুলোর মধ্যে? আরুশের হৃদয়ে সন্দেহ জাগলো। সন্দিহান কন্ঠে সে শুধালো,

-"এর ভিতরে কি আছে স্যার?"

তুর্য আরুশের কথা শুনেও যেন শুনলো না। কোনো উত্তর না দিয়ে সে বেশ গুরুত্ব সহকরে খুললো প্রথম বড় প্যাকেটটা। সাথে সাথেইপ্যাকেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো এক নরীর চিত্র। আরুশের ভ্রু কুঁচকে এলো। এ কার ছবি? তাছাড়া ছবিটি দেখেও তো বেশ পুরোনো দিনের কোনো নারী চরিত্র মনে হচ্ছে। চিত্রকর্মের আদলও বেশ পুরোনো, আজকালকার যুগের ন্যায় রঙিন এবং খুব নিখুঁত নয়। আগের দিনের চিত্রশিল্পীদের জ্যামিতিক প্যাটার্ণে ন্যায় আঁকা এ চিত্রকর্ম। আরুশ ভিতরে ভিতরে কৌতুহল অনুভব করলো। কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

-"এ কার ছবি স্যার?"

তুর্য দুই হাত দ্বারা চিত্রকর্মটা দেয়ালে লাগাতে লাগাতে জবাব দিল,

-"আমার মায়ের বংশের পূর্ব নারী ঘসেটি বেগমের চিত্র এটা।"

আরুশ অবাক হতে গিয়েও অবাক হলো না। তুর্যের আচার আচরন কথা বার্তা সব কিছুর সাথেই সে বেশ পরিচিত। এ বান্দার দ্বারা যে সব কিছু সম্ভব তা সে জানে। সেখানে এই সমন্য ঘসেটি বেগমের চিত্রকর্ম আর কি?

ঘসেটি বেগমের ছবিটা দেয়ালে টানিয়ে পরের আরেকটা প্যাকেট খুললো তুর্য। এবার প্যাকেট থেকে একজন পুরুষের চিত্রকর্ম বেরিয়ে এলো। এই পুরুষের চিত্রও এই যুগের বলে মনে হচ্ছে না কোনো ক্রমেই। আগের ঘসেটি বেগমের চিত্রের ন্যায়ই আঁকা। আরুশ আবারও কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করলো,

-"এটা কার ছবি স্যার?"

এবার তুর্য ফিরে তাকালো আরুশের পানে। দুই হাতে চিত্রটা আরুশের সামনে ধরলো। অতঃপর বলল,

-"তোর তো একে চেনার কথা আরুশ। ভালো করে দেখ। চোখ নাক মুখ সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখ। দেখবি ঠিক চিনে যবি।"

আরুশ বিশ্বাস করলো তুর্যর কথা। বড় বড় চোখ করে সে তাকালো ছবিটার পানে। নিশ্চই এ ব্যক্তি ইতিহাস খ্যাত কোনো পুরুষ মানুষ হবে যাকে আরুশের চেনার কথা। ইতিহাস খ্যাত ব্যক্তিদের ছাড়া তো আর তেমন কারো চিত্রকর্ম তৈরী করা হতো না তৎকালীন সময়ে। আরুশ সময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো ছবিতে থাকা পুরুষকে। বেশ কিছুক্ষণ নানা ভাবে সে চেষ্টা চালালো লোকটাকে চেনার। কিন্তু ফলাফল শূন্য। আরুশ মাথা চুলকে বলল,

-"কে এটা? আমি চিনতে পারছি না স্যার।"

সাথে সাথে নাক মুখ কুঁচকে ফেললো তুর্য। নাক ছিটকে বলল,

-"ছিঃ আরুশ তোকে নিয়ে তো আমার এবার লজ্জা হচ্ছে। তুই কিনা শেষে নিজের পূর্ব পুরুষদের চিনতে পারছিস না। কেমন ছেলে তুই?"

আরুশ অবাক হলো, সাথে সাথে কিছুটা লজ্জাও পেল। এই পুরুষ কিনা তার পূর্ব পুরুষ অথচ সে চিনে না? আরুশের মনে মনে খারাপ লাগলো ভীষন। সে নিজ বংশের পূর্বপুরুষদের চিনে না অথচ তার পূর্ব পুরুষদের তুর্য চিনে। এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে ভাই? তবুও আপাতত আরুশ লজ্জা গিলে খেল। তার এই পূর্বপুরুষকে অবশ্যই চিনতে হবে তাকে। নয়তো পরবর্তীতে আবার কেউ হুট করে এসে এই ছবি দেখিয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলে লজ্জায় পড়তে হবে। আরুশ জ্বীহ্বা দিয়ে নিজের ওষ্ঠ ভেজালো। জানার আগ্রহ নিয়ে তুর্যকে শুধালো,

-"এর নাম কি স্যার? এ আমার কোন পূর্ব পুরুষ?"

তুর্য যেন এবার মহা বিরক্ত হলো। আরুশের দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ছবিটা দেয়ালে লাগাতে উদ্যত হলো। কপাল কুঁচকে জবাব দিল,

-"এটা মীর জাফর। তোর কলিজার বন্ধনের পূর্ব পুরুষ।"

আরুশ হতাশ হলো। নিজের উপর নিজে বেশ বিরক্ত হলো। এ তো জানা কথা ছিল যে তুর্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ উত্তর দিবে না। কিন্তু তুর্যের চরিত্র সম্পর্কে জানার পরও এ কথা তার মাথায় কেন এলো না? ধূর আর কিছু সে জিজ্ঞেসই করবে না তুর্যকে। পাগল লোকের সব পাগলামী কথা বার্তা। আরুশের ভাবনার মধ্যেই তৃতীয় নাম্বার প্যাকেটটা খুললো তুর্য। তার ভিতর থেকেও বেরিয়ে এলো এক পুরুষের ছবি। তবে এ ছবিটা আগের গুলোর মতো পুরোনো নয়। যদিও এটা কোনো অংশেই চিত্রকর্ম বলে মনে হচ্ছে না। এটা ক্যামেরা বন্ধি কোনো ছবি মনে হচ্ছে। আরুশ জিজ্ঞেস করবে না করবে না ভেবেও কৌতুহলী হয়ে পড়লো। কোনো কিছু না ভেবেই জিজ্ঞেস করে ফেললো,

-"এটা কার ছবি?"

তুর্য দেয়ালে ছবিটা লাগালো। ছবির পানে দৃষ্টি রেখেই বলল,

-"হবে কোনো এক রা'জাকা'রের। আমার রা'জা'কার শ্বশুরটার ছবি সংগ্রহ করতে পরিনি তাই আপাতত অন্য একজন রা'জাকা'রের ছবি টানিয়ে দিয়েছি। তবে শ্বশুরের ছবি সংগ্রহ করতে পারলে এ ব্যাটার স্থানে শ্বশুরের ছবিটাই লাগিয়ে দেব নিশ্চিত থাক।"

আরুশ ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। সে জানতো এমন কিছুই তুর্যর মুখ থেকে বের হবে। তারপরও কেন জিজ্ঞেস করে নিজের কান নষ্ট করলো কে জানে। আরুশ মাঝে মাঝে ভেবে পায় না, সৃষ্টিকর্তা এ তুর্য নামক প্রাণীকে কি দ্বারা সৃষ্টি করেছে। এর আগা গোড়া সবটাই আদ্ভুত কথাবার্তা এবং কার্যক্রম দ্বারা ভরপুর।

তুর্য ছবি গুলো দেয়ালে টানিয়ে হুট করেই করে টান টান হয়ে শুয়ে পড়লো ফ্লোরে। বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে হঠাৎ করেই আবার উঠে বসলো। আরুশের পানে তাকিয়ে বেশ ভাবুক ভঙ্গিতে বলল,

-"আমার নতুন ঘর, নতুন সংসার। বউকে এনে তো অন্তত একটা বার দেখানো প্রয়োজন তাই না আরুশ?"

অরুশ সাথে সাথে তাল মেলালো তুর্যের কথায়। তার হ্যা তে হ্যা মিলিয়ে বলল,

-"জ্বী স্যার। ম্যামকে ছাড়া আপনার এ ঘর একদম অসম্পূর্ণ কিন্তু।"

আরুশের কথা শুনে চোখ জোড়া চকচক করে উঠলো তুর্যের। আনন্দের সহীত সে বলল,

-"তাহলে তোর ম্যামকে নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি।"

আরুশ ভরকালো। আমতা আমতা করে বলল,

-"আমি কিভাবে আনবো?"

তুর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আরুশের পানে। থমথমে কন্ঠে বলল,

-"তা আমি কি জান? তুই যখন বললি আনা প্রয়োজন তখন নিয়ে আসবি। কিভাবে আনবি তা তুই জানিস।তবে আগামীকাল সকালের মধ্যে আমার বউকে আমি আমার বাসায় চাই নয় তো তোকে আমি ঠুস করে গু'লি করে ঠাস করে উপরে পাঠিয়ে দেব।"

কথাটা বলেই তুর্য উঠে দাঁড়ালো। আরুশকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ধুপ ধাপ পা ফেলে নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে প্রস্থান ঘটালো। আরুশ বেচারা আবেগে ফ্লোরে বসে পড়লো ঠাস করে। কি বিপদে পড়লো সে। কে বলেছিল তাকে তুর্যের হ্যা তে হ্যা মিলাতে? আজ তুর্যের কথায় যদি সে তাল না মিলাতো তবে এত বড় একটা বিপদে তো পড়তে হতো না। এখন সে কিভাবে পৃথাকে নিজেদের বাড়িতে আনবে? ভয়ং'কর স্বামীর দ'জ্জ্বা'ল বউকে কিভাবে বাগে আনবে? এমনিই মেয়ের যা তেজ!

১১.
সুদীর্ঘ এক রাতের সমাপ্তি ঘটিয়ে সকালের দেখা মিলেছে। সূর্যের ফুটফুটে আলোয় ভরে উঠেছে চারপাশ। আরুশের কাল রাতে ঘুম হয়নি একটুও। গতকাল সারা রাত শুধু এই চিন্তায় চিন্তায়ই কেটেছে যে পৃথাকে এ বাসায় কিভাবে আনবে। আর যদি না আনতে পারে তাহলে তুর্য যদি সত্যি সত্যি তাকে ঠুস করে গু'লি করে ঠাস করে উপরে তুলে দেয় তখন কি হবে? তুর্য নামক ঐ প্রাণীর না আছে মুখের উপর কোনো বিশ্বাস আর না আছে হাতের উপর কোনো বিশ্বাস। চিন্তায় চিন্তায় আরুশের প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। তাই তো সে সকাল সকালই নেমে দাঁড়িয়েছে বাসার সম্মুখে রাস্তার কাছে। এই পথ দিয়েই তো পৃথা কলেজে যাবে। যদিও সে জানে পৃথার কলেজে যেতে এখনও অনেক দেরী কিন্তু যাবে তো। আরুশ কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। সে যে সময়ে গেটে দাঁড়াবে তার আগেই যদি পৃথা চলে যায় তখন কি হবে? তাই তাড়াহুড়ো করে ঘরের পোশাক অর্থাৎ থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট এবং টিশার্ট জড়িয়েই উসকোখুসকো চুলে হাজির হয়েছে গেটের সম্মুখে। বারবার পৃথাদের বাসার দিকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। আবার একটু পর পর চিন্তিত ভঙ্গিতে পায়চারী করছে।আরুশকে এভাবে পাগলের ন্যায় পায়চারী করতে দেখে তার দিকে এগিয়ে এলো ঐ বাড়িরই দাড়োয়ান। অর্ধবয়স্ক দাড়োয়ান দুই চোয়ালের সাহায্যে পান চিবুতে চিবুতে আরুশকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো,

-"আপনে কেডা?"

আরুশ আমতা আমতা করে জবাব দিল,

-"জ্বী নতুন এসেছি।"

-"ওহ।"

এইটুকু বলে আর দাড়োয়ান বলল না কিছুই। যেভাবে এসেছিল সেভাবেই প্রস্থান করলো। আরুশ আরও কিছুক্ষণ অতিবাহিত করলো পৃথার অপেক্ষায়। অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। ঐ তো আসছে মেয়েটা। সাদা কলেজ ড্রেসে নিজেকে আবৃত করে মাথায় হিজাব পেঁচিয়ে। আরুশ সময় ব্যয় করলো না একটুও। ব্যস্ত পায়ে ছুটে গিয়ে দাঁড়ালো পৃথার সম্মুখে। হাসিমুখে বলল,

-"আসসালামুয়ালাইকুম ম্যাম।"

হঠাৎ রাস্তার মাঝে কেউ পথ আটকাতে বিরক্ত হলো পৃথা। কপাল কুঁচকে সে তাকালো সম্মুখ পানে। আরুশকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বলল,

-"আপনি ঐ ব্রিটিশ লোকটার চ্যালা না?"

চলবে.....

Address

Fulbaria

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গল্পের পৃথিবী posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category