30/07/2025
জাহান্নামের পানাহার
আল্লাহ পাকের ইরশাদ- مِنْ وَرَابِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِنْ مَّاءٍ صَدِيدٍ يَتَجَزَعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَ مِنْ وَرَابِهِ عَذَابٌ غَلِيظً
"ওর পিছনে রয়েছে জাহান্নাম, আর ওকে পান করানো হবে পুঁজের (মতো) পানি- সে তা অতি কষ্টে ঢোক ঢোক করে পান করবে এবং সহজে গলা দিয়ে নামাতে পারবে না। আর সব দিক থেকে ওর কাছে উপস্থিত হবে মৃত্যু, কিন্তু সে
মরবে না। এবং ওর পিছনে রয়েছে কঠোর আযাব।" [সূরা ইবরাহীম: ১৬-১৭/
অর্থাৎ চতুর্দিকে রকমারি শান্তি দেখে সে মনে করবে যে, আমি মরে গেছি। কিন্তু সেখানে মৃত্যু আসবে না। কুরআনে পাকের আরেক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-
وَسُقُوا مَاءٌ حَبِيْبًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءَهُمْ
"তাদেরকে পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত গরম পানি, যা তাদের নাড়ি ভুঁড়ি ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে।" (সূরা মুহাম্মাদ-১৫।
ثُمَّ إِنَّكُمْ أَيُّهَا الضَّالُونَ المُكَذِّبُونَ لَاكِلُونَ مِنْ شَجَرٍ مِنْ زَقُومٍ اللَّهِ فَمَالِئُونَ مِنْهَا الْبُطُونَ اللَّهِ فَضْرِبُوْنَ عَلَيْهِ مِنَ الْحَمِيمِ فَشْرِبُونَ شُرْبَ الْهِيْمِ هَذَا نُزُلُهُمْ يَوْمَ
الدين
"অতঃপর তোমরা, হে পথভ্রষ্ট অস্বীকারকারীরা! অবশ্যই 'যাক্কুম' বৃক্ষ থেকে খাবে, আর তা দিয়ে উদর পূর্ণ করবে, অতঃপর তার উপর পান করবে ফুটন্ত পানি, আর পানও করবে এমনভাবে, যেভাবে পান করে প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত উট। এ হবে বিচারের দিনে ওদের আপ্যায়ন।" (সূরা ওয়াকিয়া: ৫১-৫৬]
যাক্কুম শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে এভাবে, যা তিক্ত কাঁটাদার বৃক্ষ হিসেবে প্রসিদ্ধ। কেননা তথাকার প্রত্যেকটি জিনিস এখানকার চেয়ে অধিকতর তিক্ত ও দুর্গন্ধময়। এই বৃক্ষ থেকে দোযখীরা ভক্ষণ করবে। এরপর ফুটন্ত গরম পানি পান করবে, তাও আবার তৃষ্ণার্ত উটের মতো প্রচুর পানি পান করবে। এতই পিপাসার্ত থাকবে যে, গরম পানির তাপে নাড়ি ভুঁড়ি গলে যাবে। তবুও পান করতে থাকবে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাক্কুম সম্পর্কে ইরশাদ ফরমান- "যদি যাক্কুমের এক বিন্দুও পৃথিবীতে পড়ত, তাহলে তা নিশ্চতভাবে সারা বিশ্বের খাদ্যদ্রব্য সব তিক্ত হয়ে যেত।" এবার ভাবুন, শুধু যাক্কুম খাদ্য হিসেবে কত তিক্ত হবে? (তিরমিযী।
আল্লাহ পাকের ইরশাদ-
إِنَّ لَدَيْنَا انْكَالًا وَ جَحِيمًا وَطَعَامًا ذَا غُصَّةٍ وَ عَذَابًا أَلِيمًا
"নিশ্চয় আমার নিকট আছে বেড়িসমূহ, লেলিহান আগুন, গলায় আটকে যায় এমন খাদ্য ও যাতনাদায়ক শাস্তি।" [সূরা মুজ্জাম্মিল: ১২-১৩।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বলেন- طعاما ذا غصة একটি কাঁটা জাতীয় ফলের নাম, যা এমনভাবে গলায় বিদ্ধ হবে যে, না তা বের হবে, না পেটের ভেতর যাবে।
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, জাহান্নামীদের প্রচণ্ড ক্ষুধা পাবে। তাই তারা আহার্যদ্রব্যের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবে। সেই ফরিয়াদ অনুযায়ী তাদেরকে কাঁটা জাতীয় খাদ্য দেয়া হবে। কিন্তু এতে তাদের পুষ্টিও বাড়বে না, ক্ষুধা নিবারণও হবে না। তাই তারা পুনরায় খাদ্য চাইবে। এবার তাদের গলায় আটকে যাওয়া খাদ্য দেয়া। হবে। এ খাদ্য তাদের গলায় এমনভাবে আটকে যাবে যে, দোযখীরা এগুলো গলা থেকে বের করার পন্থা খুঁজবে। তখন তাদের স্মরণ হবে যে, দুনিয়াতে গলায় কিছু আটকে গেলে পানি পান করলে তা পেটের ভেতর চলে যেত। কাজেই তারা পানির আকাঙ্খা করবে। তারা পানি চাইলে তাদেরকে ফুটন্ত পানি দেয়া হবে, যা হবে প্রচণ্ড গরম। তারা যখন সে পানি পান করতে যাবে, তখন তাদের চেহারা পর্যন্ত গলে যাবে। আর যখন তা পাকস্থলিতে পৌছবে, তখন তা পেটের নাড়ি ভুঁড়িসহ সকল বস্তু গলে যাবে এবং পরিশেষে মলদ্বার দিয়ে তা বেরিয়ে আসবে। আল্লাহ পাকের ইরশাদ-
فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَّارٍ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُوْنِهِمْ وَالْجُلُودُ
"তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে, যার ফলে তাদের চামড়া ও তাদের পেটে যা আছে তা গলে যাবে।" [সূরা হজ্জ: ১৯-২০]
হে ভাই বোনেরা!
আমি কীভাবে বুঝাব। আরে আপনি হারাম মাল কামাই করছেন, হারাম টাকায় বিশাল বিল্ডিং গড়ছেন, হারাম টাকায় সমাজ সেবা করছেন। আমি কোন্ পন্থায় আপনাদের বুঝাব। আমার ভাইয়েরা, আমার বন্ধুরা, আমার মা-বোনেরা কীভাবে বললে বুঝবেন যে, আমাদের সেই প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। এত নাফরমানী করে আমরা কোন্ মুখ নিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াব? আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে কবর, হাশর ও জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা করুন।