13/06/2025
সম্পাদকীয়:
নির্বাচন, সংলাপ ও একটি সম্ভাবনার জানালা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ করেছে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় ডরচেস্টার হোটেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উঠে এসেছে সময়োপযোগী একটি প্রস্তাব: ২০২৬ সালের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা।
এই বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে তারেক রহমানের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবকে প্রধান উপদেষ্টা স্বাগত জানান এবং বলেছেন—যদি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়, তাহলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন সম্ভব। তবে তিনি সতর্ক করেছেন—এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন করতে হলে সংবিধান, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও বিশ্বাসযোগ্য অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।
একটি ইতিবাচক বার্তা
গত কয়েক বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক আকাশে যে অস্থিরতা ও আস্থাহীনতার ধোঁয়া জমে ছিল, আজকের এই সংলাপ তাতে আশার আলো ফেলেছে। অনেকদিন পর দেশের প্রধান দুটি পক্ষের এমন কৌশলগত আলোচনা, তাও সরাসরি বা পরোক্ষভাবে, রাজনৈতিক সমঝোতার পথে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
তবে সব আশার মাঝেও চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। নির্বাচন আয়োজনের পূর্বশর্ত হিসেবে যে 'সংস্কার' ও 'বিচার' এর কথা বলা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? কে করবে? সেই রূপরেখা এখনো স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া নির্বাচনের সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাঠামো, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি, সেনাবাহিনীর ভূমিকা—সবকিছুতেই জাতিগত ঐক্যমত প্রয়োজন।
জাতিকে প্রস্তুত করতে হবে
রমজানের আগে নির্বাচন মানে মাত্র আট থেকে নয় মাস হাতে সময়। এ সময়ে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার যদি প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ ও কার্যকর রূপরেখা উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে এই সময়টুকুই হতে পারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
তবে এর জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য, আন্তরিক সংলাপ এবং আস্থাশীল রাজনৈতিক পরিবেশ। দলীয় আক্রমণ নয়, পরস্পরের বক্তব্য ও প্রস্তাবকে সহনশীলতার সঙ্গে মূল্যায়নের সংস্কৃতি প্রয়োজন।
শেষ কথা
এই মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে যে বাস্তবসম্মত আলোচনা শুরু হয়েছে, তা যেন গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথে এক স্থায়ী সংলাপের ভিত্তি হয়ে ওঠে। প্রতিটি নাগরিকের কামনা, আমরা যেন আরেকটি 'প্রহসনের নির্বাচন' না দেখি, বরং একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে এগিয়ে নিতে পারি।