Nazim-Ud-Daula

Nazim-Ud-Daula Welcome to the official page of author, screenwriter, creative director and social activist Nazim-Ud-Daula. He likes to tell stories.

If you are a good listener and love to hear stories, follow this page and keep visiting to stay updated. Nazim Ud Daula is a Bangladeshi author and screenwriter. He has written a number of popular thriller novels. Bloodstone, Mithya Tumi Dosh Pipra, Mohazatra, Scarlet, Chompa House etc. are some of his notable works. Besides, he has written the screenplay for some of the most anticipated Bangla mo

vies, such as: Surongo, MR-9: Do or Die, Damal, Operation Sundarban, Shaan etc.

নাজিম উদ দৌলা একজন বাংলাদেশী লেখক এবং চিত্রনাট্যকার। তিনি বেশ কিছু জনপ্রিয় থ্রিলার উপন্যাস ও গল্প গ্রন্থ লিখেছেন। ব্লাডস্টোন, মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া, মহাযাত্রা, স্কারলেট, চম্পা হাউজ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য বই। এছাড়া তিনি সুড়ঙ্গ, দামাল, অপারেশন সুন্দরবন, শান, এমআর-৯ ইত্যাদি বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত বাংলা সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন।

সেদিন এক ছোটোভাই জিজ্ঞেস করলো—"ভাই, ইনসাফ নাকি নীলচক্র?" আমি বেশ কিছুক্ষণ ভেবেও কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। কারণ, সত্যি ব...
08/06/2025

সেদিন এক ছোটোভাই জিজ্ঞেস করলো—"ভাই, ইনসাফ নাকি নীলচক্র?" আমি বেশ কিছুক্ষণ ভেবেও কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। কারণ, সত্যি বলতে কি, ভালো-মন্দের বিচার তো দর্শক কিংবা পাঠকই সবচেয়ে ভালো করতে পারেন। কিন্তু একজন লেখকের কাছে তার সব লেখাই সমান প্রিয়। তাই এবারের ঈদটা আমার জন্য হয়ে উঠেছে একধরনের মধুর যন্ত্রণা।

এবার ঈদের দুটি সিনেমায় লেখকের ভূমিকায় আমাকে পাবেন আপনারা। মিঠু খান ভাইয়ের "নীলচক্র" আর সঞ্জয় সমাদ্দার দাদার "ইনসাফ"। দুটো সিনেমার গল্প, জনরা, এমনকি নির্মাণশৈলীতেও রয়েছে স্পষ্ট পার্থক্য। তাই তুলনা করা প্রায় অসম্ভব। তবে প্রত্যাশা একটাই—আপনারা হলে যাবেন, এবং দুটি সিনেমাই দেখবেন।

আমার এই দুটি কাজ সহ ঈদে মোট ছয়টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। পরিচালক রায়হান রাফি ও সাকিব খান ভাইয়ের কম্বিনেশন নিয়ে এসেছে ‘তাণ্ডব’—একটা বিগ বাজেটের ধামাকা। তানিম নূর ভাইয়ের ‘উৎসব’ ইতোমধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে। এছাড়াও আছে ‘এশা মার্ডার’ এবং ‘টগর’—সব মিলিয়ে ঈদে জমজমাট এক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়ে গেছে।

আমি চাই, দর্শকরা হলে যান, সিনেমাগুলো দেখুন, এবং নিজেদের মতামত জানান। আর আমার জন্য একটু দোয়া রাখবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব বাজে একটা সময় পার করছি। তবুও গল্প বলাটা থামেনি। দোয়া করবেন যেন ভালো ভালো গল্প আপনাদের উপহার দিয়ে যেতে পারি।

সবার ঈদ কাটুক আনন্দে ও নিরাপদে। ঈদ মোবারক।

জাপানি টেক জায়ান্ট কাওয়াসাকি সম্প্রতি বিশ্বকে চমকে দিয়েছে তাদের নতুন সৃষ্টি CORLEO দিয়ে—চার পা বিশিষ্ট একটি জন্তুর মতো...
08/04/2025

জাপানি টেক জায়ান্ট কাওয়াসাকি সম্প্রতি বিশ্বকে চমকে দিয়েছে তাদের নতুন সৃষ্টি CORLEO দিয়ে—চার পা বিশিষ্ট একটি জন্তুর মতো রোবট, যা একসাথে আধুনিক প্রযুক্তি আর পরিবেশবান্ধব শক্তিকে মিলিয়ে দিয়েছে। CORLEO চলবে হাইড্রোজেন পাওয়ারে, যার কারণে এটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব।

রোবটটির চলাফেরা এমনই সাবলীল, যেন বন্য চিতা লাফিয়ে যাচ্ছে কিংবা শক্তপোক্ত ঘোড়া পাহাড় পেরিয়ে যাচ্ছে। এর ফ্লেক্সিবল জয়েন্ট, স্মার্ট সেন্সর, ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষমতা—সব কিছুই দেখে মনে হয়, ভবিষ্যৎ যেন আমাদের চোখের সামনেই হাঁটছে।

কদিন আগেই ওসাকা এক্সপোতে CORLEO যখন প্রথম প্রকাশ্যে এল, তখনই স্পষ্ট হলো—জাপান শুধু প্রযুক্তির দেশ না, তারা ভবিষ্যতের কল্পনাকেও বাস্তব বানিয়ে ফেলে। CORLEO শুধু একটা রোবট না, এটা একটা স্বপ্ন—যেখানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নও হচ্ছে, আবার সেই উন্নয়ন পরিবেশের উপর বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়াও ফেলছে না।

এদিকে আমরা এখন কী করছি? আমরা এখন শো-রুম থেকে জুতা লুটপাটের তালে আছি! আমাদের স্বপ্ন নাই, স্বপ্ন দেখার ক্ষমতাও নাই! আমরা শুধু ধান্দাবাজি বুঝি! জাপানের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে হাজার বছর—শুধু প্রযুক্তিতে না, চিন্তায়ও।

আমরা যদি আজ না ভাবি, এখনই যদি বিজ্ঞান শিক্ষায় জোর না দেই, তাহলে আগামীতে আমাদের সন্তানেরা শুধু কাওয়াসাকি-র মতো কোম্পানির রোবট দেখে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে, নিজেরা কিছু গড়তে পারবে না। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে আমাদের দর্শক হিসেবে তালি দেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবে না!

---
©নাজিম-উদ-দৌলা

আমার গল্প ও চিত্রনাট্যে, ভার্সাটাইল নির্মাতা তানীম রহমান অংশু ভাইয়ের পরিচালনায় আসছে অ্যাকশনধর্মী ইউটিউব ফিল্ম "খালিদ"।না...
02/04/2025

আমার গল্প ও চিত্রনাট্যে, ভার্সাটাইল নির্মাতা তানীম রহমান অংশু ভাইয়ের পরিচালনায় আসছে অ্যাকশনধর্মী ইউটিউব ফিল্ম "খালিদ"।

নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জিয়াউল হক পলাশ। এবার তিনি তার পরিচিত কমেডি ঘরানার চরিত্র থেকে বেরিয়ে একদম নতুন রূপে হাজির হচ্ছেন। চরিত্রের প্রয়োজনে তিনি ছয় মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন—নিজেকে ফিট করেছেন, ফাইট শিখেছেন, আর পুরোপুরি নিজেকে চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন।

নির্মাতা অংশু ভাই ও তার পুরো টিম প্রায় দুই মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। সব মিলিয়ে দর্শকদের জন্য জমজমাট একটি এন্টারটেইনমেন্ট প্যাকেজ তৈরি করেছি আমরা।

ফিল্মটি দেখতে পাবেন আগামীকাল বিকেল ৫টায় Club 11 ইউটিউব চ্যানেলে। আমার সকল পাঠক, দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক আমন্ত্রণ রইলো!

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, যে জীবন আপনি যাপন করে চলেছেন, সেটি আসলেই আপনার নিজের জীবন কি-না? যে জীবনের গল্পটি আপনি প্রতিন...
24/03/2025

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, যে জীবন আপনি যাপন করে চলেছেন, সেটি আসলেই আপনার নিজের জীবন কি-না? যে জীবনের গল্পটি আপনি প্রতিনিয়ত লিখছেন, তা কি সত্যিই আপনার নিজের গল্প? নাকি অন্য কারো গল্প লিখছেন নিজের জীবনের খাতায়?

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত TEDx ইভেন্টে এই ভাবনাগুলো নিয়েই আলোচনা করেছি। এটা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। TEDx-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের গল্প বলা; সাফল্য, ব্যর্থতা, হারিয়ে যাওয়া আর ফিরে আসার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা—এটা সত্যিই সম্মানের এবং গর্বের।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অপরূপ সৌন্দর্য এবং আয়োজকদের আতিথেয়তা আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু সময় স্বল্পতায় ক্যাম্পাসটা ভালোভাবে ঘুরে দেখার সুযোগ পাইনি। আবার কখনো সুযোগ হলে ছুটে যাবো, মিশে যাবো প্রকৃতির সাথে, গল্প করবো এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় ও স্বপ্নবাজ তরুণের সাথে।

আমার বক্তব্যের ভিডিওটি এখনো TEDx-এর অফিশিয়াল চ্যানেলে প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশিত হলেই শেয়ার করে জানিয়ে দেবো।

সুনীতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি উইলমোর ৮ দিনের একটি মিশনে মহাকাশে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মহাকাশযানে যান্ত্রিক সমস্যা ধরা পড়ে...
23/03/2025

সুনীতা উইলিয়ামস এবং ব্যারি উইলমোর ৮ দিনের একটি মিশনে মহাকাশে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের মহাকাশযানে যান্ত্রিক সমস্যা ধরা পড়ে, ফলে তারা আটকা পড়ে যান। দীর্ঘ ২৮৬ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে থাকার পর, অবশেষে অন্য একটি মহাকাশযান গিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে এলো।

এই পুরো সময়টায়, তারা অসীম ধৈর্য, সহনশীলতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের এই অভিজ্ঞতা শুধু মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসেই নয়, বরং জীবনযুদ্ধে ধৈর্য ধরার অনুপ্রেরণা হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এখান থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে।

আমরা নিজের জীবন নিয়ে যে প্ল্যান করি, তা কি সবসময় সফল হয়? শতভাগ চেষ্টা থাকার পরও আমরা অনেক কাজে ব্যর্থ হই। সময়মতো দরকারি জিনিসটা না পেলে নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। অথচ জীবন কখনোই আমাদের ইচ্ছামতো চলে না। জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে, আর আমাদের করতে হয় "অপেক্ষা"।

একবার নিজেকে সুনীতা উইলিয়ামস ও ব্যারি উইলমোরের জায়গায় কল্পনা করে দেখো তো?

- তুমি হাতে গোনা কয়েকটা দিনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কোথাও গেলে। কিন্তু যাওয়ার পর আটকা পড়লে। এরপর পুরো ১ বছর পার হয়ে গেল আটকা অবস্থায়!
- তোমার চারপাশে মানুষ নেই, বাড়ি-ঘর নেই, নেই বিশুদ্ধ বাতাস, নেই প্রিয়জনদের ছোঁয়া, নেই পায়ের নিচে মাটি, চারিদিকে শুধু অসীম শূন্যতা!
- কবে ফিরতে পারবে তা জানো না তুমি, বা আদৌ কখনো ফিরতে পারবে কি-না তাও জানা নাই!

এমন অবস্থায় পড়লে তুমি কী করতে? প্যানিকড হয়ে যেতে নিশ্চয়ই? তবে সুনীতা আর ব্যারি কিন্তু একদমই প্যানিকড হয়নি। তারা অসীম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছে আর অপেক্ষায় থেকেছে। ওদের হাতে কিন্তু কোনো বিকল্প উপায় ছিল না। চাইলেই ওরা "রিটার্ন টিকিট" কেটে ফিরে আসতে পারতো না। তাদেরকে চরম প্রতিকুল পরিবেশে মানিয়ে নিতে হয়েছে, সহ্য করতে হয়েছে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে—একটি, দুটি নয়, পুরো ২৮৬ দিন!

আমরা অনেক সময় কোনো কিছু পাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করি, পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করি, কিন্তু ফলাফল পেতে দেরি হয়। আবার অনেক সময় সেই ফলাফল আমাদের ইচ্ছামতো হয় না। তখন আমরা হাল ছেড়ে দেই। কিন্তু সত্যিকারের লড়াকু মানুষেরা কখনো হাল ছাড়ে না, তারা অপেক্ষা করতে জানে।

এই "অপেক্ষা" করতে পারাটা শুধুমাত্র একটি গুণ নয়, এটি একটি শক্তি। চারপাশের সফল মানুষদের দিকে তাকিয়ে দেখো—তারা কখনো হাল ছাড়েনি। স্টিভ জবস যদি প্রথম ব্যর্থতার পর অ্যাপল ছেড়ে দিতেন, তাহলে আমরা আজ আইফোন পেতাম না। জে.কে. রাউলিং যদি প্রথম প্রকাশকের কাছে ‘হ্যারি পটার’ নিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে থেমে যেতেন, তাহলে আমরা ওসব জাদুকরি কাহিনী কখনোই পড়তে পারতাম না।

ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য নিচের পয়েন্টগুলো মাথায় রাখবে:

১. অপেক্ষার সময়টাকে মেনে নাও—জীবনে কিছু জিনিস সময় মতো আসবে না, অনেক অপেক্ষা করতে হবে, তুমি এই অপেক্ষার সময়টাকে মেনে নাও।
২. ছোট ছোট অর্জনে আনন্দ খুঁজে নাও—একবারে বিশাল কিছু পেতে চাইলে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তার চেয়ে বরং জীবনের ছোটো ছোটো অর্জনগুলো উপভোগ করতে শেখো।
৩. অপ্রত্যাশিত বাঁধা মেনে নাও—জীবন সবসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে না, অনেক বাঁধা আসবে, সেগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করো।
৪. ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা ধরে রাখো—মাথায় কোনো নেগেটিভ চিন্তা আসতে দেবে না। কঠিন সময়েও মনোবল ধরে রাখার জন্য ভালো বই পড়ো, অনুপ্রেরণাদায়ক মানুষের কথা শুনো।

সুনীতা ও ব্যারি অপেক্ষার চরম পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে, তাই তো ফিরে আসতে পেরেছে। তাদের এই ফিরে আসার গল্পটা আমাদের ধৈর্য, সহনশীলতা শেখায়, আর প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার প্রেরণা দেয়। তাই, এরপর থেকে যখন জীবনে কোনো অপ্রত্যাশিত বাঁধা আসবে, কোনো কিছু পেতে দেরি হবে, তখন অপেক্ষা করবে আর নিজেকে বোঝাবে—আমি তো মহাকাশে আটকা পড়িনি! এই দুই নভোচারী যদি ৮ দিনের জায়গায় ৯ মাস মহাকাশে টিকে থাকতে পারেন, তাহলে আমিও জীবনের ছোটখাটো বাঁধাগুলো ধৈর্য ধরে উতরে যেতে পারবো।

---
©Nazim-Ud-Daula
23/3/2025

বাংলাদেশে এমন অনেক ক্রাইম ঘটে, যা দুনিয়ার নামকরা ক্রাইম থ্রিলার মুভি বা উপন্যাসকেও ম্লান করে দেয়। তেমনই এক ভয়ংকর ঘটনা ঘট...
22/03/2025

বাংলাদেশে এমন অনেক ক্রাইম ঘটে, যা দুনিয়ার নামকরা ক্রাইম থ্রিলার মুভি বা উপন্যাসকেও ম্লান করে দেয়। তেমনই এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে।

দিনের আলোয় খুবই সাধারণ একটি অপরাধ। ইজিবাইক চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে রিফাত নামে এক যুবক। বয়স মাত্র ২৩। উত্তেজিত জনতা তাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়, তাই কেউ খুব একটা আমলে নেয়নি।

কিন্তু এরপর যা ঘটল, তা ছিল সাধারণ কাহিনীতে এক ভয়ঙ্কর টুইস্ট!

থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশ যখন নিয়মমাফিক রিফাতের মোবাইল চেক করছিল, তখন তারা এমন কিছু দেখল, যা তাদের রক্ত হিম করে দিল। মোবাইলে একটি ভিডিও—এক তরুণীকে বেঁধে রেখে নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে!

তৎক্ষণাৎ রিফাতকে চেপে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও, জায়গামতো ডান্ডার বারি খেয়ে সে সব স্বীকার করে নেয়।

গত জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ, ঢাকাগামী "একতা এক্সপ্রেস" ট্রেনে রিফাতের পরিচয় হয় এক তরুণীর সঙ্গে। সে কৌশলে ভুলিয়ে-ভালিয়ে মেয়েটিকে নামিয়ে আনে আটোয়ারীর কিসমত স্টেশনে। সেখান থেকে রিফাত খবর দেয় তার দুই বন্ধুকে।

এরপর তিনজনে মিলে ভয়ঙ্কর এক পরিকল্পনা ফাঁদে। তারা মেয়েটিকে গোপন এক জায়গায় নিয়ে আটকে রাখে। সারা রাত পালাক্রমে ধর্ষণ করে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়! শারীরিক চাহিদা মেটার পর শুরু হয় বিকৃত মস্তিস্কের উন্মাদনা। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেয়েটির যৌনাঙ্গ, স্তনসহ পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। এবং পুরো ঘটনাই তারা নিজেদের মোবাইলে ভিডিও করে রাখে, যেন পরবর্তীতে সেই ভিডিও দেখে বিকৃত আনন্দ নেওয়া যায়!

তাদের নির্মম অত্যাচারে ভোরের দিকে মেয়েটি মারা যায়। এরপর তিনজনে মিলে লাশটা নিয়ে রেললাইনে ফেলে রাখে। পরদিন পুলিশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন একটা লাশ উদ্ধার করে রেললাইন থেকে, কিন্তু কেউ তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারে না।

ঐসময় ঠাকুরগাঁও থেকে কাছাকাছি বয়সের একটা মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটির পরিবার এই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মরদেহটিকে নিজেদের মেয়ের লাশ ভেবে দাফন করে ফেলে। এতদিনে জানা গেল যে তারা আসলে ভুল করেছিল! মনে প্রশ্ন জাগে—দেশে মানুষের সংখ্যা বেশি, নাকি লাশের? অবস্থা এমন হয়েছে যে, একটা লাশ পাওয়া গেলেই পরিবারের নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ ভেবে কবরে শুইয়ে দিচ্ছে মানুষ!

এই ঘটনায় এখনো দুইটা অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে!
এক: ঠাকুরগাঁও থেকে হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি তাহলে কোথায় আছে?
দুই: রিফাতদের নির্যাতনে মারা যাওয়া এই মেয়েটির আসল পরিচয় কী?

এটা কোনো সিনেমার গল্প না, কোনো দুর্দান্ত ক্রাইম থ্রিলার উপন্যাসের পটভূমি না। এটা চরম বাস্তব। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সুযোগে নরপশুরা সব জেগে উঠেছে, আর আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে!

চলছে মার্চ মাস। জুলাই আর খুব বেশি দূরে না। মনে হচ্ছে, আরেকটা রক্তাক্ত জুলাই আসন্ন। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে পচন ধরেছে, সেই পচন সারাতে আরেকবার আমাদের পথে নামতে হবে!

---
©Nazim-Ud-Daula
11/3/2025

খুবই আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি আগামীকাল (২২শে ফেব্রুয়ারি) TEDx Bangladesh Agricultural University-তে বক্তা হিসেবে উপস্...
21/02/2025

খুবই আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি আগামীকাল (২২শে ফেব্রুয়ারি) TEDx Bangladesh Agricultural University-তে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকছি!

দিনের বেলা মার্কেটিংয়ের দুনিয়ায় বিচরণ, আর রাতের নির্জনে গল্প লেখার মধ্য দিয়ে কেটেছে আমার জীবনের গত দশটি বছর। এই যাত্রায় সৃজনশীলতার চর্চা, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া, আর প্রতিকূলতার বিপরীতে বারবার উঠে দাঁড়ানোর লড়াই আমাকে শিখিয়েছে জীবনের আসল অর্থ। প্রতিটি সাফল্য নতুন স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে, আর প্রতিটি ব্যর্থতা নতুন করে শুরু করার সাহস জুগিয়েছে।

আমার এই পথচলার সাহস, জীবনের দরকারি শিক্ষা, এবং অনুপ্রেরণার গল্পগুলো পরবর্তী প্রজন্মের সাথে শেয়ার করার জন্য মুখিয়ে আছি। এই সম্মানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ। নতুন চিন্তা আর উদ্যমী মানুষের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় আছি। ❤️

প্রকাশিত হয়েছে আমার ১২তম বই "যবনিকা"! এটি গোয়েন্দা মনসুর হালিম সিরিজের তৃতীয় নভেলা। এর আগে "প্রহেলিকা" ও "কুহেলিকা" আপনা...
14/02/2025

প্রকাশিত হয়েছে আমার ১২তম বই "যবনিকা"! এটি গোয়েন্দা মনসুর হালিম সিরিজের তৃতীয় নভেলা। এর আগে "প্রহেলিকা" ও "কুহেলিকা" আপনাদের অসীম ভালোবাসা পেয়েছে। আশা করছি, "যবনিকা"-ও আপনাদের ভালো লাগবে।

বইটি প্রকাশ করেছে প্রিমিয়াম পাবলিকেশন্স এবং বইমেলায় পরিবেশনায় আছে বইমই প্রকাশনী (স্টল নম্বর ১৪৭)। ১৫০ পৃষ্ঠার এই নভেলাটি পাবেন মাত্র ১২৫ টাকায়। দেখা হবে বইমেলায়!

কাহিনী সংক্ষেপ:

সারাদেশে তোলপাড়! মারা গেছেন দেশের প্রখ্যাত নারী উদ্যোক্তা মারিয়া আহমেদ। বয়সে ১২ বছরের ছোট সাব্বির নামে এক যুবককে বিয়ে করে মিডিয়ায় খুব আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। বছর না ঘুরতেই তার রহস্যময় মৃত্যুও হয়ে গেল সংবাদের শিরোনাম!

সাব্বির বলছে— স্বাভাবিক মৃত্যু।
ডাক্তাররা বলছেন— কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।
মিডিয়া বলছে— দাম্পত্য কলহ থেকে আত্মহত্যা।
মারিয়ার মামা বলছেন— ঠান্ডা মাথার খুন!
কিন্তু সত্যটা আসলে কী?
উত্তর খোঁজার জন্য সময় আছে মাত্র ২৪ ঘণ্টা!

মামুলি কেইস ভেবে দায়িত্ব নিল এএসপি মনসুর হালিম। কিন্তু তদন্তে নেমেই বুঝতে পারলো— ধরা পড়েছে নিজের ফাঁদেই। ওসি আকরাম কেন তাকে বাধা দিচ্ছে পদে পদে? কোন সত্য লুকোতে চাইছে কাজের মেয়েটি? সাব্বিরের চোখের পানি কি সত্যি, নাকি নিখুঁত অভিনয়?

রহস্যের জালে আটকে যাওয়া মনসুরের পাশে এসে দাঁড়ায় ইনস্যুরেন্স ইনভেস্টিগেটর নাবিলা রহমান। দুজনে মিলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বের করে আনে এক ভয়ংকর অ্যানাকোন্ডা! একদিকে কারখানায় বন্দি আছে ১৬ জন কিশোরী, রাত পোহালেই যারা পাচার হয়ে যাবে দেশের বাইরে। আরেকদিকে জানতে হবে ভয়ানক বিষাক্ত কেমিকেল হাত-বদল হচ্ছে কীভাবে!

মনসুর কি পারবে সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে সব রহস্য উন্মোচন করতে? নাকি কিছু প্রশ্নের উত্তর আজীবন সবার অজানাই থেকে যাবে?

"যবনিকা"— এক টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ডিটেকটিভ থ্রিলার নভেলা! মনসুর হালিম ফিরে আসছে নতুন এক রহস্যের পর্দা সরাতে। আপনি প্রস্তুত তো?

এক নজরে:

যবনিকা (মনসুর হালিম সিরিজ #৩)
জনরা: ডিটেকটিভ থ্রিলার, মার্ডার মিস্ট্রি
লেখক: নাজিম-উদ-দৌলা
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৫
মূল্য: ১২৫ টাকা

ঘাড়ের কাছে তপ্ত নিঃশ্বাস। না তাকিয়েও বুঝলাম জেনি ঝুঁকে আছে আমার কাঁধের উপর। ল্যাপটপে চলা ভিডিওটা পজ দিলাম। পেছনে ঘুরে তা...
16/12/2024

ঘাড়ের কাছে তপ্ত নিঃশ্বাস। না তাকিয়েও বুঝলাম জেনি ঝুঁকে আছে আমার কাঁধের উপর। ল্যাপটপে চলা ভিডিওটা পজ দিলাম। পেছনে ঘুরে তাকাতেই জেনি জিজ্ঞেস করলো, “কী দেখো?”

জেনি কথাটা বললো বাংলায়। উচ্চারণ শোনালো- “কী ধ্যাকো?” অল্প কদিনেই জেনি ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে শিখে গেছে। ভালোবাসার শক্তি অনেক! এই শক্তির সন্ধান পেলে মানুষের পক্ষে আর অসম্ভব বলে কিছু থাকে না!

আমি বললাম, “বাংলাদেশে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেটাই দেখছিলাম।”

জেনি আগ্রহী হয়ে উঠলো, “আমিও দ্যাখবো!”

আমি মৃদু হেসে ভিডিওটা প্লে করলাম আবার। আমার জন্ম নিউ ইয়র্কে, বড় হয়েছি এখানকার আলো-বাতাসে। কিন্তু মনটা সব সময় পড়ে থাকে বাংলাদেশে। বাবা ছোটোবেলা বাংলাদেশ থেকে চলে আসেন দাদির হাত ধরে। আর কখনও ফিরে যাননি। আমিও কখনো যাইনি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট ঐ দেশটার প্রতি নাড়ির টান অনুভব করি সবসময়। দেশটাতে কী হচ্ছে না হচ্ছে- রেগুলার খোঁজ রাখি অনলাইনে।

ভিডিও প্লে করতেই দেখা গেলো একজন বয়স্ক মহিলা ক্যামেরার সামনে কথা বলছেন। মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করছেন তাঁর ছেলে। মহিলা বাংলায় কথা বলছেন, আমি ইংরেজিতে জেনিকে বুঝিয়ে দিচ্ছি- “এই মহিলার নাম নুসরাত সুলতানা। উনার পিতা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। একাত্তরে শহীদ হন। পিতার সব স্মৃতি উনি এখনও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।”

মহিলা ভিডিওতে বাবার স্মৃতিচিহ্নগুলো দেখাচ্ছেন- “এইযে ভাঙা চশমাটা দেখছেন, এটা আমার বাবার সারাক্ষণের সঙ্গী ছিলো। কিন্তু যুদ্ধে যাওয়ার আগে বাবা চশমাটা রেখে যান, বলেন চশমা চোখে নাকি যুদ্ধ করা যাবে না! তারপর এই যে দেখছেন সাদা পাঞ্জাবিটা, এটা বাবার খুব পছন্দের ছিল। শুধুমাত্র শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় পড়তেন, অন্যান্য দিন তুলে রাখতেন। আর এই যে এইটা দেখছেন, এটা নজরুলের সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ, বাবা প্রায়ই পড়তেন…”

ক্যামেরা ধরে রাখা মহিলার ছেলে প্রশ্ন করলো- “মা, ঐ কালো লোহার ট্রাংকটা? ওটার ভেতর কি আছে?”

নুসরাত সুলতানা এক মুহূর্ত থেমে থাকলেন। তারপর ট্রাংকটা ধরে বললেন, “এটা বাবার প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর সুবিমল রায়ের, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের…”

আমি ঝট করে সোজা হলাম। শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে গেছে! হাত কাঁপছে…

“হোয়াট হ্যাপেনড?” জেনি উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলো।

আমি উত্তর দিলাম না। তাকিয়ে আছি ভিডিওর দিকে। মহিলা বলে যাচ্ছেন- “…স্যার মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। মৃত্যুর আগে তিনি কিছুদিন আমাদের বাড়িতে ছিলেন…”

জেনি আমার কাঁধে-পিঠে হাত হাত বুলিয়ে বলছে, “কী হলো তোমার? এমন করছো কেন?”

আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম, “প্র… প্রফেসর সুবিমল রায়… হি ইজ মাই গ্রান্ড ফাদার!”

***

একবার কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো একটা টিনএজ মেয়ে। সম্ভবত বাসার কাজের মেয়ে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কারে চান?”

আমি একটু হেসে বললাম, “জি আমি এসেছি নুসরাত সুলতানা ম্যাডামের সাথে দেখা করতে।”

মেয়েটি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, “আপনের কি আওয়ার কতা?”
আঞ্চলিক টানের বাংলা বুঝতে আমার একটু কষ্ট হয়। তবে মেয়েটির চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি- কী বলতে চাইছে। আমি হাসি ধরে রেখে বললাম, “উনি জানে আমি আসবো, ফোনে কথা হয়েছে।”

মেয়েটি এক পাশে সরে গিয়ে ভেতরে ঢুকতে ইঙ্গিত করলো। আমি ভেতরে ঢুকলাম। ছিম ছাম গোছানো একটা ড্রয়িং রুম।
“আপনে বসেন। ম্যাডামরে ডাইকা দিতাছি।” বলে মেয়েটি ভেতরে চলে গেলো।

আমি একটা সোফায় বসলাম। দেয়ালগুলোতে নজর বুলাচ্ছি। সুন্দর সুন্দর আর্টওয়ার্ক বাধাই করে রাখা। মনে হচ্ছে বড় কোনো পেইন্টারের আঁকা।
সেদিন ভিডিওটা দেখার পর আমি আর এক মুহূর্তও দেরি করিনি। সাথে সাথে বাংলাদেশে আসার ব্যবস্থা করার জন্য উঠে পড়ে লাগি। তবে জেনির সহযোগিতা ছাড়া এত দ্রুত বাংলাদেশে আসার ব্যবস্থা হতো না! আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান যে জেনির মতো একটি মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই আমাদের বিয়ে হবে। এই সময় কোনো মেয়ে চাইবে না তার হবু হাজব্যান্ড দেশ ছেড়ে অচেনা যায়গায় গিয়ে অনুসন্ধানের কাজে নেমে পড়ুক!

“ছবিগুলো আমার বড় মেয়ের আঁকা।”

কথাটা শুনে আমি উঠে দাঁড়ালাম। দেখলাম- নুসরাত সুলতানা ঢুকছেন ঘরে। মহিলার বয়স ষাটের মতো হবে। সুন্দর করে হাসছেন। আমাকে দাঁড়াতে দেখে বললেন, “আরে, বসুন বসুন! চা-কফি কিছু খাবেন?”
আমি বসলাম। বললাম, “থ্যাংকস, কিছু খাবো না আমি।”

মহিলা আমার মুখোমুখি বসলেন। বললেন, “তাহলে বলুন, কী জন্য এসেছেন?”

আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, “আমার নাম শুভ্র রায়। নিউইয়র্ক থেকে ফোন করেছিলাম আপনার কাছে। ঐ ভিডিওটা দেখে…”

‘হ্যাঁ, আমার ছোটোছেলে ভিডিওটা করে ফেসবুকে দিয়েছিল। অনেক মানুষ নাকি দেখেছে। কিন্তু ভিডিওতে কী এমন দেখলেন যে নিউইয়র্ক থেকে দেশে চলে এলেন?’

‘প্রফেসর সুবিমল রায়, আপনার বাবার শিক্ষক…’ এক মুহূর্ত থেমে থাকলাম। ‘উনি আমার দাদা।’

মহিলার চেহারা দেখে মনে হলো শক খেয়েছেন। কিছু বলছেন না, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।

‘আমি এসেছি দাদার শেষ স্মৃতি ঐ ট্রাংকটা নিয়ে যেতে। যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে…’

‘তুমি সুবিমল স্যারের নাতি!’ নুসরাত সুলতানার কণ্ঠে উচ্ছ্বাস। ‘এইজন্যই চেনা চেনা লাগছিল! অবিকল স্যারের মতোই নাক-মুখ-চোখ। তুমি বসো, আমি এক্ষুনি ট্রাংকটা নিয়ে আসছি…’

বলে নুসরাত সুলতানা প্রায় দৌড়ে ভেতরে চলে গেলেন। একটু পর কাজের মেয়েটি আর একটা ছেলে মিলে ট্রাংকটা ধরে নিয়ে এলো। আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো সেটা দেখে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছি। মোটা লোহার ট্রাংক, মজবুত করে বানানো। এত বছরেও মরিচা পড়েনি।
‘দেখতে চাও ভেতরে কী আছে?’ নুসরাত জিজ্ঞেস করলেন।

আমি প্রবলবেগে হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়লাম।

ট্রাংকে একটা ছোট্ট তালা লাগানো। নুসরাত তালা খুলে দিলেন। ভেতরে সাজিয়ে রাখা কিছু বই, কাপড়-চোপড় আর টুকটাক জিনিসপত্র আছে।
আমি হাত বাড়িয়ে সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলাম। হাত কাঁপছে! আমার দাদার ব্যবহৃত সব জিনিস। দেশের জন্য জীবন দিয়েছিলেন তিনি। গর্বে বুকটা ভরে যাচ্ছে! একটা বই হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখলাম। কেমিস্ট্রির বই। বইয়ের ভেতর থেকে ভাজ করা একটা কাগজ পড়লো পায়ের কাছে। বইটা রেখে আমি কাগজটা তুললাম। একটা চিঠি মনে হচ্ছে!

চিঠির ভাজ খুললাম আমি। চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম। পড়তে পড়তে হতবাক হয়ে গেলাম! পুরোটা পড়ার পর স্তব্ধ হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ!

***

দুই বছর পর…

বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধার আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা যারা বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে ইনভাইট করা হয়েছে এই অনুষ্ঠানে।

আমি বসে আছি দর্শকসারিতে একদম পেছনের দিকে। এখান থেকে আমার স্ত্রী জেনির মাথা দেখতে পাচ্ছি। সামনের সারিতে কিছু ফরেন ডেলিকেটদের সাথে বসে আছে সে। জেনি একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। আমার সাথে চোখাচোখি হলো। আমি হাসলাম।

উপস্থাপিকা মাইক্রোফোনে বললেন, “এবার আমাদের সামনে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর, বিখ্যাত কেমিস্ট ড. আলমগীর হায়দারকে।”
দর্শক সারিতে তুমুল করতালি।

ড. আলমগীর স্টেজে উথলেন। লোকটার বয়স ৭০ এর বেশি। এখনও শারীরিকভাবে খুব স্ট্রং আছেন! সবাই ভেবেছিল ড. আলমগীর হয়তো ইংরেজিতে বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি বাংলায় বলতে শুরু করলেন-

‘আমাকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আজকের এই দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সকল শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এসেছিল বিজয়।

আপনারা হয়তো আমি বাংলা বলছি দেখে অবাক হয়েছেন। ভাবছেন ৫০ বছর দেশের বাইরে থেকেও লোকটা বাংলা ভোলেনি? আসলে বাংলা এমন এক ভাষা যা একবার কারো হৃদয়ে গেঁথে গেলে, কোনোদিন ভোলা সম্ভব নয়! যদিও আমি ব্রিটিশ নাগরিক, থাকি লন্ডনে, কিন্তু আমরা মনটা সব সময় বাংলাদেশেই পড়ে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধের মাত্র এক বছর আগে, ১৯৭০ সালে আমি পড়াশুনার জন্য অক্সফোর্ডে চলে গিয়েছিলাম। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমার সারাক্ষণই মনে হতো- ইস! যদি এই মুহূর্তে দেশে থাকতাম, তাহলে আমিও যুদ্ধে অংশ নিতাম! হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর গুলিতে আমিও শহীদ হতাম। তারপরও জীবনটাকে সার্থক মনে হতো! আজ আমি অক্সফোর্ডের প্রফেসর, অসংখ্য পুরস্কার জিতেছি, এত নাম-ডাক হয়েছে, যেখানেই যাই সম্মান পাই। তারপরও তৃপ্তি পাই না! এরচেয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে জীবন দেওয়াটা আমার কাছে বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলে মনে হয়…’

এভাবে অনুষ্ঠান চললো ঘণ্টা দুয়েক। অনুষ্ঠান শেষে জেনিকে দেখলাম প্রফেসর আলমগীরের সাথে হাত মেলাতে। কী নিয়ে যেন কথা বলছে দুজনে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। কনফারেন্স হলের বাইরে একটা নির্জন করিডোরের দিকে এগিয়ে গেলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। সিগারেট টানতে টানতে ভালো করে দেখে নিলাম চারিদিক- এই দিকটাতে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। পায়ের আওয়াজ পেলাম। দেখলাম করিডোর ধরে হেঁটে আসছে জেনি আর প্রফেসর আলমগীর। কিছু একটা বিষয়ে কথা বলছে দুজন। আমি আলগোছে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করলাম।

পাশ দিয়ে দুজনে হেঁটে যাওয়ার মুহূর্তে আমি রুমাল চেপে ধরলাম প্রফেসর আলমগীরের মুখে। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করলেন তিনি। তারপর জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লেন। জেনি একা হেঁটে চলে গেলো সামনে। যেন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব। আর আমি প্রফেসরের দেহটা টানতে টানতে কাছেই পার্ক করে রাখা একটা গাড়িতে নিয়ে তুলতাম। তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।

ভার্সিটির গেটের সামনে এসে গাড়ি থামালাম। হেঁটে এলো জেনি। সে দরজা খুলে আমার পাশের সিটে বসে পড়লো। তারপর আবার গাড়ি স্টার্ট দিলাম। বিজয় দিবসে রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। ফুল স্পিডে গাড়ি ছোটালাম। কেউ টের পাওয়ার আগেই সরে যেতে হবে। শহর ছেড়ে অনেক দূরে…

***

অন্ধকার ঘর।

প্রফেসর আলমগীরকে একটা চেয়ারে বেঁধে রেখেছি। আমি বসে আছি তার মুখোমুখী একটা একটা চেয়ারে। জেনি দাঁড়িয়ে আছে জানালার কাছে, নজর রাখছে বাইরে।

অল্প আলোর একটা বাল্ব জ্বলছে প্রফেসরের মাথার ওপর। ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে আসছে তার। বার কয়েক চোখ পিট পিট করে চোখ খুললেন তিনি। প্রথমে সম্ভবত বুঝতে পারলেন না- ঠিক কোথায় আছেন। তারপর আমার উপর চোখ পড়তেই চমকে উঠলেন।

প্রফেসর চিৎকার করে উঠলেন- ‘হু আর ইউ? হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?’
‘শান্ত হোন স্যার’। আমি অভয় দিয়ে হাসলাম। ‘আমরা আপনার সাথে একটু কথা বলবো’।

প্রফেসর থামছেন না। ইংরেজিতে চিৎকার করছেন- ‘ডু ইউ নো হু আই এম? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট ইউ হ্যাভ ডান?’

আমি হাসলাম, ‘জানি স্যার। আপনি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা কেমিস্টদের মধ্যে একজন। আপনার খোঁজে এতক্ষণে সারা বাংলাদেশের পুলিশ হয়তো রাস্তায় নেমে গেছে। কিন্তু আমরা আপনার কোনো ক্ষতি করবো না, স্যার। শুধু একটু কথা বলতে চাই।’

প্রফেসরের রাগ পড়ছে না। “কথা বলার জন্য কিডন্যাপ করতে হবে? আর ইউ ম্যাড?”

“স্যার, আমি আপনার স্কেডিউল দেখেছি। আপনি আগামী চারদিন বাংলাদেশে আছেন। খুবই বিজি স্কেডিউল। এই প্রোগ্রাম, ঐ কনফারেন্স, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান… কথা বলার মতো স্কোপ আপনার ছিলো না। তাছাড়া, আমি যে বিষয়ে কথা বলতে চাই, স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো আপনি সে বিষয়ে কথা বলতে চাইবেন না! তাই বাধ্য হয়ে…”

‘বাধ্য হয়ে এখানে নিয়ে এসেছ? এটা কথা বলার মতো জায়গা?’

‘সরি স্যার। দেখতে একটু টর্চার সেলের মতো হয়ে গেছে, তাই না? আনফরচুনেটলি এর চেয়ে বেটার কিছু এফোর্ড করতে পারলাম না। চা-কফির ব্যবস্থা আছে, স্যার! খাবেন?’

প্রফেসর একটু শান্ত হয়ে এসেছেন। বললেন, “পানি খাবো”।

জেনি বিনা বাক্যব্যয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো। প্রফেসরের মুখের সামনে ধরলো। প্রফেসর ঢক ঢক করে পানি খেলেন। তারপর জেনির দিকে তাকিয়ে বললেন, “হু আর ইউ? হোয়াই আর ইউ হেল্পিং হিম?”
জেনি পরিষ্কার বাংলায় বললো, ‘স্যার, আমি জেনি। শুভ্রর ওয়াইফ’।
‘আমার ক্রাইম পার্টনার, স্যার!’ আমি যোগ করলাম জেনির সাথে। ‘আমি যা-ই করতে চাই, তাতেই রাজি হয়ে যায়! কী অদ্ভুত! এমন ভালোবাসা বর্তমান সময়ে বিরল, তাই না, স্যার?’

‘ওহ! আই এম সিক অফ ইউ!’ আবার চিৎকার করলেন প্রফেসর। ‘কাম টু দ্যা পয়েন্ট! বলো, কী বলতে চাও?’

‘বলছি স্যার। আপনি একটু রিল্যাক্সড হোন’। জেনির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘জেনি, স্যারের দুই হাতের বাঁধন খুলে দাও তো’।

জেনি প্রফেসর আলমগীরের হাতের বাঁধন খুলে দিলো। প্রফেসর বললেন, ‘পায়ের বাঁধনও খুলে দাও। পালানোর চেষ্টা করবো না। আই প্রমিজ!’

জেনি প্রফেসরের কথা অনুযায়ী কাজ করলো। আমি একটা সিগারেট ধরালাম। কয়েকবার টান দিলাম আয়েশি ভঙ্গীতে। মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছি।

‘কই? শুরু করো?’ প্রফেসর তাগাদা দিলেন।

‘করছি, স্যার।’ আমি বলতে শুরু করলাম, ‘স্যার, আপনি সব জায়গায় একটা ভুল তথ্য দেন। যত কনফারেন্সে যান, যত বক্তৃতা দেন- সব জায়গায় ভুলটা বলেন। আপনার উইকিপিডিয়া পেইজেও এই ভুলটা আছে। এমনকি আপনার লেখা অটোবায়োগ্রাফি বইটিতেই এই ভুল তথ্যটি দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে- আপনি অক্সফোর্ডে পড়াশুনা শুরু করেন ১৯৭০ সালে। কিন্তু অক্সফোর্ডের অফিসিয়াল ডেটাবেজের রেকর্ড অনুযায়ী আপনি সেখানে ভর্তি হয়েছেন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে। এত বড় একটা ভুল তো হওয়ার কথা না!’

“দেখো, আমার বয়স হয়েছে। অনেক কিছুই এখন আর মনে রাখতে পারি না। ৭১ এর যায়গায় ৭০ হতেই পারে। প্রায় ৫০ বছর আগের কথা! ৭০ আর ৭১-এ পার্থক্য আর কতটুকু? মাত্র এক বছরই তো!”

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “না স্যার, বিরাট পার্থক্য। ৭০-এ আমরা এক দেশ ছিলাম, ৭১-এ হয়েছি আরেক দেশ। আপনি সবখানে বলেন যে আপনি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের বাইরে ছিলেন। অথচ আপনি দেশ ছেড়ে লন্ডনে গিয়েছেন ১৯৭১ এর নভেম্বরে। অর্থাৎ দীর্ঘ ৮ মাস আপনি মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা নিজের চোখে দেখেছেন! এত বছর হলো বাংলা ভাষাটা মনে রেখেছেন, আর মুক্তিযুদ্ধ দেখার কথা ভুলে গেছেন, তাই কি হয়?

কিছুক্ষণ নীরবতা। প্রফেসর কিছু বলবেন এই আশায় আমি অপেক্ষা করছি। অবশেষে তিনি মুখ খুললেন, ‘হ্যাঁ। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ছিলাম… আর যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই লন্ডনে চলে যাই। কিন্তু আমি চাইনা বিষয়টা পাবলিকলি জানাতে। লোকে আমাকে কাপুরুষ ভাবুক, স্বার্থপর ভাবুক… আমি সেটা চাই না! আরও কিছু ব্যক্তিগত কারণ আছে। আই হোপ ইউ গেট দ্যা পয়েন্ট?’

আমি বুঝতে পারার ভঙ্গীতে মাথা ঝাঁকালাম।

‘ক্যান আই গো নাও?’ প্রফেসর বললেন।

‘আর একটু কথা আছে, স্যার’। আমি মাথা নেড়ে বললাম। ‘প্রফেসর সুবিমল রায়ের ব্যাপারে।’

প্রফেসর আলমগীর নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে বসে আছেন।

‘আমি আপনার অটোবায়োগ্রাফি বইটি পুরো পড়েছি। বইয়ের নাম দ্য কেমিস্ট, আপনার কেমিস্ট হওয়ার জার্নি! বইতে ছোটোবেলার অনেক স্ট্রাগলের কথা আছে। বাবা ছিলো না, মা পরের বাসায় কাজ করতো, চার ভাই-বোন। এন্ট্রান্স পরীক্ষার পর আপনার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। আপনি একটা ফ্যাক্টরিতে ক্যাশিয়ারের চাকরী নেন। এরপর এক যায়গায় লিখেছেন…’ আমি পকেট থেকে একটা কাগজ বের করলাম। কাগজের লেখাটা হুবুহু পড়লাম, “প্রফেসর সুবিমল রায়ের সহযোগিতায় আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হই এবং পুনরায় লেখাপড়া শুরু করি”। কাগজটা আবার রেখে দিলাম পকেটে। ‘ব্যাস! এইটুকুই! কিন্তু প্রফেসর সুবিমল রায়ের ভূমিকা কি আপনার জীবনে এইটুকুই ছিলো? তিনি আপনাকে ক্যাশিয়ারের চাকরী থেকে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। ভার্সিটিতে একটা দাপ্তরিক কাজের ব্যবস্থা করে দেন। আপনার থাকার যায়গা ছিলো না বলে থাকার যায়গা করে দেন। সন্তানের মতো বুকে আগলে রেখেছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। এসবের কিছুই আপনি বইতে লেখেননি। আজকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বক্তৃতা দিলেন, প্রফেসর সুবিমল রায়ের নামটি একবারের জন্যেও উচ্চারণ করলেন না! কেন স্যার?’

প্রফেসর আলমগীর নিরুত্তর। চেহারায় কোন অভিব্যক্তি নেই কিন্তু চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে যেন ফিরে গেছেন অতীতে!

‘কই বলুন?’ আমি তাগাদা দিলাম।

উত্তরে প্রফেসর বললেন, ‘আর একটু পানি খাওয়ানো যাবে?’

জেনি আর এক গ্লাস পানি নিয়ে এগিয়ে এলো। প্রফেসর পানির গ্লাসটা হাতে নিলেন। ঢক ঢক করে গিলে ফেললেন। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছলেন। তারপর বললেন, “এতক্ষণে বুঝতে পারছি কেন তোমাকে এতো চেনা চেনা লাগছে! তুমি সম্ভবত স্যারের গ্রান্ডচাইল্ড, তাই না?”

আমি হাসলাম। হ্যাঁ বা না কিছুই বললাম না।

দেখো তোমার দুইটা প্রশ্ন পরস্পরের সাথে রিলেটেড। এবং দুই চার কথায় এর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আমি বরং তোমাকে একটা গল্প বলি, মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা অধ্যায়ের গল্প। তাহলে তুমি তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাবে…

***

প্রফেসর সুবিমল রায়ের স্ত্রী সুলতা দেবী, আইমিন তোমার দাদী- চাকরি করতেন একটা বিদেশী কোম্পানিতে। ১৯৬৮-৬৯ সালের দিকে প্রমোশন হয়ে ঐ কোম্পানির নিউইয়র্ক শাখায় তাঁর পোস্টিং হয়। সুলতা দেবী চেয়েছিলেন স্বামী-সন্তান নিয়ে একবারের জন্য নিউইয়র্কে চলে যেতে। কিন্তু তোমার দাদা রাজি হননি। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে খুব দ্বন্দ্ব হয়। তোমার বাবার বয়স তখন ১৪-১৫ হবে। তাকে নিয়ে দাদী চলে গেলেন আমেরিকায়। আর দাদা থেকে গেলেন এখানেই।

প্রফেসর সুবিমল রায়ের বয়স তখন ৫০ এর আশে পাশে। এই বয়সী একজন মানুষের পক্ষে একা বাস করা খুব কঠিন। সে সময় এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। আমি পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে টপ রেজাল্ট করি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের জন্য আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। তখন এগিয়ে আসেন প্রফেসর সুবিমল রায়। তিনি আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করেন, একটা খন্ডকালীন চাকরির ব্যবস্থা করেন, আমার থাকার যায়গা ছিলো না বলে নিজের কাছে রাখেন।

প্রফেসর সুবিমল রায়কে আমি বাবার মতোই ভক্তি-শ্রদ্ধা করতাম। তাঁর সেবা যত্ন করতাম। সকালে নাস্তা বানিয়ে খাওয়াতাম, বিকেলে চা। ফুট ফরমাশ খাটতাম। উনিও আমাকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। লেখাপড়ায় খুব উৎসাহ দিতে। বলতেন- আমি একদিন নামকরা কেমিস্ট হবো।

সে সময় পাকিস্তান সরকারের একটা বৃত্তি প্রচলিত ছিল। সরকারি খরচে প্রতিবছর বেশ কিছু ভালো ছাত্রকে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বড় বড় ইনস্টিটিউটগুলোতে পড়তে পাঠানো হতো। বলা বাহূল্য এই লিস্টে শতকরা ৯৫ ভাগ থাকতো পশ্চিম পাকিস্তানী, হাতে গোণা কয়েকজন বাঙালি ছাত্র সুযোগ পেতো। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শুরুতে ঐ বছর বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের নামের তালিকে প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় আমার নাম আসে, অক্সফোর্ডে পড়তে যাওয়ার জন্য সিলেক্টেড হয়েছিলাম। কী পরিমাণ খুশি লাগছিল তা বলে বোঝাতে পারবো না! অনেক স্বপ্ন ছিলো বিলেতে গিয়ে পরাশুনা করার। প্রফেসর সুবিমল রায়ও খুব খুশি হন।

আমাদের যাওয়ার কথা ছিল জুন মাসে। ধীরে ধীরে মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এই সময় আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের আভাস। ২৫ শে মার্চের কালরাত্রির পর শুরু হয়ে গেলো মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেশিরভাগই ভারতসহ অন্যান্য দেশে চলে গেলেন। কিন্তু প্রফেসর সুবিমল রায় গেলেন না। মরলে এই দেশেই মরবেন বলে পণ করেন।

এদিকে পাকিস্তান সরকার বাঙালি ছাত্রদের বৃত্তি বাতিল করে দিলো। খবরটা শুনে আমি প্রচন্ড শকড হলাম। ততদিনে আমি অক্সফোর্ডে আমার ভবিষ্যতের দিনগুলো নিয়ে রঙিন স্বপ্ন সাজাতে শুরু করেছি। হঠাৎ স্বপ্নভঙ্গের কষ্টটা সহ্য করতে না পেরে ভেঙে পড়লাম পুরোপুরি। তখন স্যার আমাকে আশা-ভরসা দিলেন। বললেন বিলেতে পড়তে যাওয়ার আরো উপায় আছে। কিছু একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।

মাস দুয়েক কেটে গেলো। আমি আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নিলাম। যা হওয়ার নয়, তা নিয়ে মিছে আশা করে কী লাভ? সময়টা তখন খুব অস্থির। চারিদিকে গুলির শব্দ, আগুন আর কান্না! স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দলটা প্রায়ই স্যারের সাথে দেখা করতে আসতো। স্যারের অনেক ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলো। স্যার তাদের নানারকম তথ্য-পরামর্শ দিতেন। আমারও খুব ইচ্ছে হতো যুদ্ধে যেতে, কিন্তু আমি ছোট বেলা থেকেই একটু ভীতু ছিলাম। তাই সাহস করতে পারেনি। আসলে সবাইকে দিয়ে যুদ্ধ হয় না!

আগস্ট মাসের দিকে একদিন স্যরের প্রাক্তন ছাত্র নবিউল হক এলেন। ভদ্রলোকের চেহারা দেখে মনে হলো খুব ভয় পেয়েছেন। বললেন যে স্যারের নাকি বিপদ। চট্টগ্রামে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর উইং এর কাছে একটা লিস্ট এসেছে, তাতে স্যারের নাম আছে। লিস্টের সবাইকে ধরে ধরে মেরে ফেলা হবে! স্যার খুব অবাক হলেন। বুঝলেন না তার মতো এমন নিরীহ লোককে মেরে কী লাভ?

নবিউল হক আমাদের নিয়ে গেলো তার বাসায়। তার মেয়ে নুসরাত আমাদের আপ্যায়ন করলো। পরবর্তী কয়েকদিন আমরা সেখানেই থাকলাম। নবিউল হক জানালেন তার বাসা আমাদের জন্য নিরাপদ। কিন্তু এক সন্ধ্যায় আবার তিনি ছুটে এসে জানালেন পাক সেনারা কীভাবে যেন খবর পেয়ে গেছে যে স্যার এখানে আছেন! আমি জিজ্ঞেস করলাম- “তাহলে উপায় কী?”

নবিউলই সিদ্ধান্ত দিলেন। বললেন, “সামান্য দূরে পাহাড়ে আমাদের একটি পুরোনো বাগান আছে। জায়গাটা অতি দূর্গম। কিছুদিন লুকিয়ে থাকার জন্য খুব ভাল আদর্শ স্থান। আমি আপনাদের সেখানে রাত গভীর না হওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে রাখবো। তারপর মানুষজন ঘুমিয়ে গেলে নৌকা করে পাশের গ্রামে আমার মামার বাড়ি পদুয়াতে রেখে আসবো।”

আমরা রাতের বেলা সেই পাহাড়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম। চারিদিকে ঘন জঙ্গলে। কোনো আশ্রয় নেই। খোলা আকাশের নিচেই অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের রেখে নবিউল হক আবার বাড়ির পথ ধরলেন। স্যার আমাকে বললেন, নবিউলের সাথে গিয়ে যাওয়া-আসার পথটা ভালো করে চিনে নাও। আমি স্যারকে রেখে নবিউলের সাথে বেরিয়ে এলাম। তাকে নৌকা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসতে যাবো, এমন সময় দূর থেকে পাক সেনাদের জিপগাড়ির আওয়াজ পেলাম। একটা নয়! অনেকগুলো জিপ! এখানেও কীভাবে যেন খবর পেয়ে গেছে!

আমি দ্রুত স্যারের যেখানে আছে, সেদিকে রওনা দিলাম। ভয়ে আমার পা ঠিক মতো চলছিলো না। বেশ কিছুদূর আসার পর দেখলাম ওরা স্যারের কাছে পৌঁছে গেছে। স্যার একটা ঝোপের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করছিলো, কিন্তু লাভ হয়নি। ওরা টর্চ লাইটের আলোয় দেখে ফেললো। তারপর মাথার চুল ধরে তাকে টেনে বের করে আনলো।

আমার ইচ্ছে করছিলো এক দৌড়ে গিয়ে স্যারের সামনে দাঁড়াই। কিন্তু আমি সাহস করতে পারছিলাম না। আমি মানুষটা খুবই ভীরু, কাপুরুষ! ওরা স্যারকে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেললো। মারার পর স্যারের মৃত্যুদেহের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করছিলো! আমি শুধু দূর থেকে দেখে চোখের পানি ফেলছিলাম! কিচ্ছু করার সাহস হয়নি!

এরপর আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই। কিছুদিন এখানে সেখানে ঘুরলাম। এর মধ্যে একদিন জানতে পারলাম পাকিস্তানী সরকার আমার বৃত্তি পুনর্বহাল করেছে। এর পেছনে একটা কূটনৈতিক কারণ ছিলো। আসলে ততদিকে বহিঃর্বিশ্বে বাঙালিদের উপর পাক হানাদার বাহিনীর আগ্রাসনের খবর পৌঁছে গেছে। চারিদিক থেকে চাপ আসছিলো ভুট্টোর উপর। তাই সে আন্তর্জাতিক মহলকে সবকিছু স্বাভাবিক দেখানোর জন্য কিছু চাল চালে। তারই অংশ ছিলো বাঙালি ছাত্রদের সরকারি বৃত্তিতে অক্সফোর্ডে পড়তে পাঠানো।

আমি তখন আর দেশে থেকে কী করবো? এই কাপুরুষের জীবন নিয়ে আমি আর বাংলার মাটিতে থাকতে পারছিলাম না। তাই সুযোগটা নিলাম। চিরতরে চলে গেলাম বাংলার মাটি ছেড়ে। যে মাটিতে বীরের রক্ত মিশে আছে, সেখানে কি আর আমার মতো কাপুরুষকে জায়গা হবে?

***

প্রসের আলমগীরের দুচোখ বেয়ে অঝোরধারায় অশ্রু নামছে। গাল বেয়ে টপ টপ করে পড়ছে স্যুটের ওপর। ভিজে গেছে বুকের অনেকখানি। তার দিকে মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার স্ত্রী জেনি। তার চোখদুটোও ছলছল করছে।

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালাম। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম। নিজের ঠোঁটে একটা লাগিয়ে প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরলাম প্রফেসর আলমগীরের দিকে, “চলবে স্যার?”

বিনা বাক্যব্যয়ে প্রফেসর একটা সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে লাগালেন। আমি লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দিলাম। দুজনে বুক ভরে ধোঁয়া টানতে শুরু করলাম। যেন বুকের ভেতর জমাট বাধা পাথর গলিয়ে দিতে চাইছি!
আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “স্যার, সব কিছু ঠিক ছিলো। শুধু দুই-একটা জায়গা আপনি একটু ঘুরিয়ে বলেছেন।”

প্রফেসর সিগারেটে বড় একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লেন, “যেমন?”
“যেমন ধরেন, নবিউল হক যখন আপনাদের কাছে এসে জানালো- পাক সেনাদের কাছে একটা হিটলিস্ট এসেছে, সেখানে দাদার নাম আছে, তখন সে এটাও বলেছিলো যে লিস্টের লোকগুলোকে ধরিয়ে দিলে পাকিস্তান সরকার থেকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে।”

কাঁধ ঝাঁকালেন প্রফেসর আলমগীর, “হতে পারে! এতো ডিটেইলস তো এখন আর মনে নেইরে বাবা!”

“মনে আছে স্যার!” আমি মৃদু হাসলাম। “অবশ্যই মনে আছে আপনার। কারণ আপনি নিজে সেই পুরস্কার জিতেছিলেন!”

প্রফেসর আলমগীর ঠোঁটে সিগারেটে আরেকটা টান দিতে গিয়েও থেমে গেলেন, হাত নামিয়ে নিলেন, পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে, “কী বলতে চাও?”

আমি সাথে সাথেই উত্তর দিলাম না। আয়েশ করে আরো দুটো টান দিলাম সিগারেটের ফিল্টারে। এক রাশ ধোঁয়া ছেড়ে বলতে শুরু করলাম, “পুরস্কারের কথা শুনে আপনার মনের নিভে যাওয়া আশা আবার জেগে উঠলো। নবিউল হকের বাড়িতে যাওয়ার পর আপনি এক সুযোগে গিয়ে পাক সেনাদের সাথে যোগাযোগ করলেন। বললেন আপনি প্রফেসর সুবিমন রায়ের খোঁজ দেবেন, বিনিময়ে আপনার অক্সফোর্ডের বৃত্তি পুনর্বহাল করার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা রাজি হয়ে গেলো। ব্যাস! আপনি খবর দিয়ে দিলেন। কিন্তু নবিউল হক সেই খবর পেয়ে গেলো। আপনাদের নিয়ে গেলো এক দূর্গম পাহাড়ে। প্রফেসর সুবিমল আপনাকে পথ চিনে আসতে বলেননি। আপনি নিজেই পথ চেনার নাম করে বেরিয়ে এলেন। তারপর আবার খবর দিলেন পাক সেনাদের। ওরা পেয়ে গেলো সুবিমল রায়কে আর আপনি পেয়ে গেলেন আপনার পুরস্কার! নভেম্বর মাসে ঢাকা থেকে পাকিস্তানগামী শেষ প্লেনটি আকাশে ওড়ে। সেই প্লেনে করে আপনি প্রথমে করাচি, তারপর চলে গেলেন লন্ডনে। এরপর বাকিটা আপনার অটোবায়োগ্রাফি বইতে একদম ঠিক ঠাক লেখা আছে!”

“ঠিক করেছি!”

রাগে দাঁতে দাঁত পিষে কথাটা বললো প্রফেসর আলমগীরের। তার চেহারার অভিব্যক্তি একেবারে বদলে গেছে। একটু আগের গোবেচারা সাধারণ একজন বয়স্ক মানুষের মুখোশ খুলে বেরিয়ে এসেছে এক স্বার্থের কারণে অন্ধ ব্যক্তির রূপ। সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে বললো, “কী লাভ হতো ঐ বুড়ো ভাম বেঁচে থাকলে? তার বদলে আমি বড় কেমিস্ট হয়েছি। পৃথিবীর উপকার হয় এমন অনেক কিছুই করেছি! ঐ বুড়ো ছিলো এক নম্বরের স্বার্থপর! সে আমাকে নিজের কাছে রেখেছিলো স্বার্থের জন্য! তার বাসায় রান্না থেকে শুরু করে সব ফুট-ফরমাশ খাটতাম আমি। আমার বৃত্তি বাতিল হয়ে যাওয়ায় সে খুশিই হয়েছিলো! আমি থাকলে তার বুড়ো বয়সে অনেক উপকার হয়। আরে! সে তো চাইলে কথা বলতে পারতো পাকিস্তান সরকারের সাথে? বলেছে? বলেনি! সে বলেছিলো বিলেতে যাওয়ার আরো অনেক ব্যবস্থা আছে। কই? সে কিছু করেছে? করেনি…”

“করেছিলো!” আমি হ্যাঁ-বোধক মাথা নেড়ে বললাম, “সবই করেছিলো দাদা। কিন্তু আপনাকে জানিয়ে করেনি। সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো।”
প্রফেসর নির্বাক তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

“নোবেল বিজয়ী কেমিস্ট আলেক্সান্ডার টডের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? একাত্তরে তিনি কেমব্রিজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের হেড ছিলেন। দাদা আপনার ব্যাপারে রিকমেন্ডেশন করে চিঠি লিখেছিলেন তার কাছে। ভদ্রলোক এক মাস পরেই চিঠির উত্তর পাঠান। উত্তরে জানান আপনাকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খরচায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।”

আমি পকেট থেকে সেই লোহার ট্রাংকে পাওয়া চিঠিটা বের করলাম। ৪৯ বছরে ক্ষয়ে গেছে অনেকটা, কিন্তু এখনও স্পষ্ট পড়া যায়! চিঠিটা বাড়িয়ে ধরলাম প্রফেসর আলমগীরের দিকে। “চিঠিটা দাদা আপনাকে দেখানোর সময় পাননি, তার আগেই আপনি নিজের পথ খুঁজে নিয়েছেন…”

প্রফেসর আলমগীর কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা ধরলো। ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করলো।

এই সময় বাইরে পুলিশের গাড়ির সাইরেন শোনা গেলো। হয়তো জেনে গেছে প্রফেশরকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে। জেনি দ্রুত এগিয়ে এসে আমার হাত ধরলো। বললো, “চলো, আমাদের কাজ শেষ।”

আমিও হ্যাঁ-বোধক মাথা ঝাঁকালাম।

দুজনে হেঁটে বেরিয়ে যাচ্ছি ঘর থেকে। একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম- প্রফেসর আলমগীরের দুচোখ বেয়ে অশ্রু নামছে আবার। এবার অভিনয় নয়, উপলব্ধির অশ্রু।

(সমাপ্ত)

---

বিজয়ের গল্প: বুকের ভেতর অন্ধকার
নাজিম উদ দৌলা
২৬/৩/২০২০

Address

Dhaka

Website

https://www.goodreads.com/author/show/7734452.Nazim_Ud_Daula,

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Nazim-Ud-Daula posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Nazim-Ud-Daula:

Share

Category

নাজিম উদ দৌলা (লেখক ও চিত্রনাট্যকার)

নাজিম উদ দৌলার জন্ম ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর নানাবাড়ি কেরানীগঞ্জে। পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার আলো বাতাসের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি “অ্যানালাইজেন”-এ কর্মরত আছেন। লেখালেখির চর্চা অনেক দিনের। দীর্ঘসময় ধরে লিখছেন ব্লগ, ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে। ২০১২ সালে প্রথম গল্প “কবি” প্রকাশিত হয় কালান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস “ইনকারনেশন”। একই বছর আগস্টে প্রকাশিত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার “ব্লাডস্টোন” তাকে এনে দেয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। এ পর্যন্ত ৬টি থ্রিলার উপন্যাস ও ১টি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের কালজয়ী চরিত্র “মাসুদরানা” নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তিনি। এছাড়াও “শান”, “অপারেশন সুন্দরবন” সহ বেশ কিছু বড় বাজেটের বাংলা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। অবসর সময় কাটে বইপড়ে, মুভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। সদালাপী, হাসি খুশি আর মিশুক স্বভাবের এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর বাংলাদেশের, যেখানে প্রত্যেকটি এক হয়ে মানুষ দেশ গড়ার কাজে মন দেবে।