
05/07/2025
গল্প : তেতুল তলা।শেষ পর্ব
লেখকঃ মারুফ ইসলাম।
“ভুতের আড্ডা”
এখানে ভয় হয় বাস্তব…
আর গল্প হয় একেকটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার ক্যানভাস!”
“আপনার চারপাশেই আছে…
ভয়, রহস্য… আর অজানা কিছু...
তাহলে, প্রস্তুত তো?
চলুন… শুরু করা যাক আজকের ‘ভুতের আড্ডা’!”--গল্প ১৪--
--
মকবুল চাচা!
লোকটাকে দেখতে অনেকটা মকবুল চাচার মতো মনে হচ্ছে, মকবুল চাচা হাঁটার সময় মাঝে মধ্যেই কুজো হয়ে নুইয়ে পরেন আবার একটু পর পর সোজা হয়ে হাঁটেন! যার জন্য তার এইরকম হাঁটার গতিবিধি এলাকার সবাই চিনেন। মাঝে মাঝে এটা নিয়ে তাকে দু'একজন খোঁচা মেরে কথাও বলেন রাগিয়ে দেয়ার জন্য।
আর এই যে লোকটা তেতুল তলা থেকে হেঁটে আসছেন তিনিও ঠিক মকবুল চাচার মতোই হাঁটার মাঝে নুইয়ে পরছেন আবার নিজেকে সোজা করে হাঁটছেন!
কিন্তু মকবুল চাচা এতো রাতে তেতুল তলায় কেনো! আর তেতুল তলা থেকে ভেসে আসা মেয়েটার চিৎকারও এখন আর শোনা যচ্ছে না! তবে কি মেয়েটাকে মেরে ফেললো!
তবে মকবুল চাচার চেহারা দেখা যাচ্ছে না, শীতের পোশাক পরে বের হয়েছেন বোধহয়। হুডির টুপি দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছেন আর মাথা নিচু করে হাঁটছেন যার জন্য তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না....
লোকটা হাঁটতে হাঁটতে ঠিক মকবুল চাচার বাসার সামনে এসে দাড়ালেন কিন্তু ভিতরে ঢুকলেন না। এলাকার মানুষজন নেমে তাকে ধরতে আসতেই পালিয়ে গেলেন রাতের অন্ধকারে...
তৎক্ষণাত সবাই বলে উঠলো পুলিশের খবর দিতে, যেই ভাবা সেই কাজ। পুলিশ এলো, তাদেরকে সব খুলে বলার পরে তারা প্রথমে তেতুল তলার দিকে যেতে নিলেও সবাই গেলেন না। কিছু দিন সংখ্যক তেতুল তলায় আর কয়েকজন মকবুল চাচার বাসায়।
পুলিশ না আসা অবদি কেউ মকবুল চাচার বাসার সামনে থেকে সরেনি, পুরো বাড়ির চারপাশে নিজেরাই পাহারা দিয়েছে।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে মকবুল চাচার দরজায় কড়া নাড়ার পরে তিনি নিজেই বাসার দরজা খুলে বেরিয়েছেন!
কে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না কেউ।
পুলিশ মকবুল চাচাকে বিভিন্নভাবে জেরা করেও কিছু সন্দেহজনক আন্দাজ করতে পারেনি। আবার কেউ মকবুল চাচার চেহারা দেখেনি শুধু হাঁটার গতিবিধি দেখে সন্দেহ করেছে তাই প্রমাণ না থাকায় তাকে সহ সবাই তেতুল তলায় চললেন এবং ইতমধ্যে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বললেন। প্রথমে মকবুল চাচা চেচিয়ে উঠলেন যে তার ওমন হাঁটার জন্যই হয়তো সবাই মজা নিচ্ছে! কিন্তু পুলিশ আর সকলের মুখে তাকিয়ে তার গলা শুকিয়ে কাঠ, তিনি নিজেও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেছেন তার মতো দেখতে খুনীর অবস্থা শুনে।
মেয়েটার চিৎকারের সন্ধানে যে দুজন পুলিশ আগে তেতুল তলায় গিয়েছেন তারা সেখানে কোনো মেয়েকে খুঁজে পায়নি।
কোনো জনমানুষের চিহ্ন নেই তেতুল তলায়... অথচ পুরো এলাকা ওখান থেকে ভেসে আসা চিৎকারে জেগে উঠেছে। আশেপাশে ভালোভাবে দেখেও কোনো হদিস পাওয়া গেলো না কোনো মেয়ের, হয়তো কোথাও চলে গেছে মেয়েটা কিন্তু কি হয়েছিল এখানে! মকবুল চাচার মতো দেখতে লোকটা আসলে কে আর এখানে কোন মেয়ে ছিলো! কি হয়েছে মেয়েটার সাথে!
মন ভর্তি উত্তরহীন প্রশ্ন নিয়েই সবাই যে যার গন্তব্যে চলে গেলেন কিন্তু কেউ জানতেন না তাদের জন্য সকালে কত বড় চমক ছিল....
আমি সকাল ন'টা নাগাদ বের হয়েছি বাসার প্রয়োজনে দোকানে, একটু দূরে হওয়া স্বত্বেও পনির ভাইয়ের দোকানেই গেলাম কারণ ওখানে সিমিনের মতো দেখতে পাগলটা রয়েছে। কেন জানিনা ওরে দেখলে আমার সিমিন মনে হয় আর অনেকদিন সিমিনকে না দেখায় মনের ভিতর অনেক অজানা ভাবনা চিন্তা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় দাঁড়িয়ে পণ্য নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হাঁটছি এমন সময় দেখলাম রহিম চাচা সিমিনকে নিয়ে বের হয়েছেন!
আমি যেনো হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি ওরে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে! মনের ভিতর কতো অজানা জল্পনা-কল্পনা ভেবে বসে ছিলাম আর সিমিন আমার সামনে, কি সুন্দর ভাবে হাসতে হাসতে বের হচ্ছে রহিম চাচার সাথে। আমি পিছে ফিরে দেখছি পাগলটা আছে তোহ! হ্যাঁ সেও বসে আছে পনির ভাইয়ের দোকানের সোজা অপরপ্রান্তে....
রহিম চাচা হয়তো কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছেন আমাকে দেখে, তাই নিজেই আসলেন আমার সাথে কথা বলতে আর সাথে সিমিন।
চাচা কি চান বা ভেবেছেন জানিনা, সিমিনকে আমার সাথে কথা বলতে রেখে নিজেই রাস্তার ওপাশে গেলেন তার বয়সী মুরব্বিদের সাথে কথা বলতে!
চাচার এমন অবস্থা দেখে যা কথা মনে জমে ছিল সব ভুলে বসেছি আমি। সামনে সিমিন থাকতেও আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে যে কি চাচ্ছেন তিনি! নাকি আবার এমনিতেই বিশ্বাস করে ওরে আমার কাছে রেখে গেলেন! আশেপাশে থেকেও মানুষজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সিমিবের দিকে, হয়তো তারাও আমার মতো কিছু ভেবেছেন পাগলটাকে দেখে!
যা হোক আমি সিমিনকে একের পর এক প্রশ্ন করা শুরু করে দিলেও ওর একটা উত্তরেই আমার সব উত্তর পাওয়া হয়ে গিয়েছে। জ্বর হয়েছিল সিমিনের যা খুব খারাপ পরিস্থিতির রূপ নিয়েছিল আর এখন ও সুস্থ। স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম আমি, সিমিনের সাথে কথা হচ্ছে এমন সময়
হঠাৎ তিনটি গাড়ি ভর্তি পুলিশের গাড়ি এসে থামলো মকবুল চাচার বাসার সামনে। তড়িৎ গতিতে সব গুলো পুলিশ ঘেরাও দিয়ে দাড়িয়েছেন মকবুল চাচার বাড়ির পাশে লিখন ভাইয়ের বাসায়!
ঘটনার আকস্মিক পরিস্থিতিতে সবাই আতংকিত হয়ে তাকিয়ে আছে এই বাড়ির দিকে। রহিম চাচা ছুটে এসে সিমিনকে বাড়ি পাঠিয়ে আমাকে দূরে সরে যেতে বললেন।
হঠাৎ পনির ভাইয়ের দোকানের অপরপ্রান্তে থাকা পাগলটা দৌঁড়ে আসতেই এলাকার মানুষ ওরে ধাওয়া দিতে যাচ্ছে এমন সময় পুলিশ এসে তাদের বাধা দিলেন এবং দাঁড়িয়ে থাকা সব পুলিশ কর্মকর্তা স্যালুট দিলেন পাগলটাকে! পাগলটা দেখলাম তার চেহারা ধরে টান দিচ্ছে নিজেই আর ওমনি কেমন যেনো সিমিনের চেহারা আর জমাট বাঁধা চুল গুলো তার হাতে চলে এলো! অবাক হয়ে দেখছে সবাই...
সিভিল পোশাকে কয়েকজন বেশ শক্তপোক্ত ব্যক্তি এসে দাড়ালেন পাগলটার পিছনে, যাদের ভিতর কয়েকজন লুঙ্গিও পরা!
পুলিশের গাড়ি থেকে বেশ উন্নত মানের অস্র নিয়ে পাগলটাসহ পাঁচজন সিভিল পোশাক পরা অফিসার চলে গেলেন লিখন ভাইয়ের বাসায়!
লিখন ভাই আমাদের এলাকায় এসেছেন বছর খানেক হয়েছে কিন্তু তা কেউ বলতে পারবে না, কারণ সবার সাথে সে এমন আন্তরিক ভাবে মিশেছেন যেনো কতকাল ধরে আছেন আমাদের সাথে।
আনুমানিক প্রায় ঘন্টা খানেক পরে হাতে হ্যান্ডকাফ আর মুখে কালো কাপড় পরিয়ে বের করা হয়েছে লিখন ভাইকে! একে একে কয়েকজন পুলিশ পোশাক পরা অফিসার গেলেন বাসার ভিতর।
নিয়ে এলেন সাদা রঙের কিছু দড়ি, ধারালো অস্র আরও কিছু সরঞ্জাম এবং সব শেষে একটা মেয়ের লাশ! আনুমানিক পনেরো ষোল বছর বয়স হবে মেয়েটার।
সকলের কৌতুহলের যেনো শেষ নেই, এমন ঘটনা ঘটবে তা যেনো কল্পনায়ও আসেনি কারো! এতো আপন এতো আন্তরিক ছেলেটা এসব করতো কেউ ভাবতেও পারেনি।
ধীরে ধীরে সবাই জানতে পেরেছে আসল ঘটনা,
লিখন ভাই হচ্ছে সাইকো কিলার! পুলিশ জানিয়েছেন এর আগেও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে লাগাতার মানুষ খুন করে রাতারাতি পালিয়ে আসতেন তিনি! অল্পদিনেই আন্তরিক হয়ে মানুষের সাথে মিশে এমন কাজ করাই তার ভালো লাগা! তার লক্ষ্য শুধু বিবাহিত যুবক কারণ তাদের মেরে ফেলার আগে তাদের শারীরিক নির্যাতনে জেনে নেন স্ত্রীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য যা দিয়ে অল্প বয়সে বিধবা নারীদের একাকিত্বকে বশে এনে দৈহিক সম্পর্কে আনন্দিত হন লিখন!
তাকে প্রমাণসহ ধরতেই এলাকায় পাগল সেজে এসেছেন সদ্য পুলিশে যোগদান করা এসপি ইমরাতুল জান্নাত।
.......সমাপ্ত........
আজকের ভৌতিক গল্পগুলো কেমন লাগলো তা কমেন্ট এ জানান।
নিয়মিত মজার এবং ভৌতিক গল্প পেতে পেইজটি ফলো করে রাখুন।
(“ ভুতের আড্ডা” প্রতি বৃহস্পতি,শুক্র ও শনিবার রাত ০৯:০০ টায়)
শেয়ার করুন আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতা।
E-mail:- [email protected] এ
অথবা Inbox করুন।
আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্পগুলো
পোস্ট করবো অমাদের ”Golper Shesh Patay” FB Page-এ ।
ধন্যবাদ
#গল্প #গল্পের_শেষ_পাতায় #ভুতের_গল্প #ভুত