Golper Shesh Patay

Golper Shesh Patay Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Golper Shesh Patay, Digital creator, Dhaka.

"গল্পের শেষ পাতায়"
"শেষ পাতায় থামে না গল্প, শুরু হয় অজানা এক রহস্য।"
----------------------------------------------
আমাদের পেইজের গল্প গুলো বিভিন্ন গ্রন্থ এবং ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।
দেখার আমন্ত্রণ রইলো।

গল্প : তেতুল তলা।শেষ পর্বলেখকঃ মারুফ ইসলাম। “ভুতের আড্ডা”এখানে ভয় হয় বাস্তব…আর গল্প হয় একেকটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার ক্যানভা...
05/07/2025

গল্প : তেতুল তলা।শেষ পর্ব
লেখকঃ মারুফ ইসলাম।
“ভুতের আড্ডা”
এখানে ভয় হয় বাস্তব…
আর গল্প হয় একেকটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার ক্যানভাস!”
“আপনার চারপাশেই আছে…
ভয়, রহস্য… আর অজানা কিছু...
তাহলে, প্রস্তুত তো?
চলুন… শুরু করা যাক আজকের ‘ভুতের আড্ডা’!”--গল্প ১৪--
--
মকবুল চাচা!
লোকটাকে দেখতে অনেকটা মকবুল চাচার মতো মনে হচ্ছে, মকবুল চাচা হাঁটার সময় মাঝে মধ্যেই কুজো হয়ে নুইয়ে পরেন আবার একটু পর পর সোজা হয়ে হাঁটেন! যার জন্য তার এইরকম হাঁটার গতিবিধি এলাকার সবাই চিনেন। মাঝে মাঝে এটা নিয়ে তাকে দু'একজন খোঁচা মেরে কথাও বলেন রাগিয়ে দেয়ার জন্য।
আর এই যে লোকটা তেতুল তলা থেকে হেঁটে আসছেন তিনিও ঠিক মকবুল চাচার মতোই হাঁটার মাঝে নুইয়ে পরছেন আবার নিজেকে সোজা করে হাঁটছেন!
কিন্তু মকবুল চাচা এতো রাতে তেতুল তলায় কেনো! আর তেতুল তলা থেকে ভেসে আসা মেয়েটার চিৎকারও এখন আর শোনা যচ্ছে না! তবে কি মেয়েটাকে মেরে ফেললো!
তবে মকবুল চাচার চেহারা দেখা যাচ্ছে না, শীতের পোশাক পরে বের হয়েছেন বোধহয়। হুডির টুপি দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছেন আর মাথা নিচু করে হাঁটছেন যার জন্য তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না....
লোকটা হাঁটতে হাঁটতে ঠিক মকবুল চাচার বাসার সামনে এসে দাড়ালেন কিন্তু ভিতরে ঢুকলেন না। এলাকার মানুষজন নেমে তাকে ধরতে আসতেই পালিয়ে গেলেন রাতের অন্ধকারে...
তৎক্ষণাত সবাই বলে উঠলো পুলিশের খবর দিতে, যেই ভাবা সেই কাজ। পুলিশ এলো, তাদেরকে সব খুলে বলার পরে তারা প্রথমে তেতুল তলার দিকে যেতে নিলেও সবাই গেলেন না। কিছু দিন সংখ্যক তেতুল তলায় আর কয়েকজন মকবুল চাচার বাসায়।
পুলিশ না আসা অবদি কেউ মকবুল চাচার বাসার সামনে থেকে সরেনি, পুরো বাড়ির চারপাশে নিজেরাই পাহারা দিয়েছে।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে মকবুল চাচার দরজায় কড়া নাড়ার পরে তিনি নিজেই বাসার দরজা খুলে বেরিয়েছেন!
কে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না কেউ।
পুলিশ মকবুল চাচাকে বিভিন্নভাবে জেরা করেও কিছু সন্দেহজনক আন্দাজ করতে পারেনি। আবার কেউ মকবুল চাচার চেহারা দেখেনি শুধু হাঁটার গতিবিধি দেখে সন্দেহ করেছে তাই প্রমাণ না থাকায় তাকে সহ সবাই তেতুল তলায় চললেন এবং ইতমধ্যে ঘটে যাওয়া সব কিছু খুলে বললেন। প্রথমে মকবুল চাচা চেচিয়ে উঠলেন যে তার ওমন হাঁটার জন্যই হয়তো সবাই মজা নিচ্ছে! কিন্তু পুলিশ আর সকলের মুখে তাকিয়ে তার গলা শুকিয়ে কাঠ, তিনি নিজেও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেছেন তার মতো দেখতে খুনীর অবস্থা শুনে।
মেয়েটার চিৎকারের সন্ধানে যে দুজন পুলিশ আগে তেতুল তলায় গিয়েছেন তারা সেখানে কোনো মেয়েকে খুঁজে পায়নি।
কোনো জনমানুষের চিহ্ন নেই তেতুল তলায়... অথচ পুরো এলাকা ওখান থেকে ভেসে আসা চিৎকারে জেগে উঠেছে। আশেপাশে ভালোভাবে দেখেও কোনো হদিস পাওয়া গেলো না কোনো মেয়ের, হয়তো কোথাও চলে গেছে মেয়েটা কিন্তু কি হয়েছিল এখানে! মকবুল চাচার মতো দেখতে লোকটা আসলে কে আর এখানে কোন মেয়ে ছিলো! কি হয়েছে মেয়েটার সাথে!
মন ভর্তি উত্তরহীন প্রশ্ন নিয়েই সবাই যে যার গন্তব্যে চলে গেলেন কিন্তু কেউ জানতেন না তাদের জন্য সকালে কত বড় চমক ছিল....
আমি সকাল ন'টা নাগাদ বের হয়েছি বাসার প্রয়োজনে দোকানে, একটু দূরে হওয়া স্বত্বেও পনির ভাইয়ের দোকানেই গেলাম কারণ ওখানে সিমিনের মতো দেখতে পাগলটা রয়েছে। কেন জানিনা ওরে দেখলে আমার সিমিন মনে হয় আর অনেকদিন সিমিনকে না দেখায় মনের ভিতর অনেক অজানা ভাবনা চিন্তা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় দাঁড়িয়ে পণ্য নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হাঁটছি এমন সময় দেখলাম রহিম চাচা সিমিনকে নিয়ে বের হয়েছেন!
আমি যেনো হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি ওরে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে! মনের ভিতর কতো অজানা জল্পনা-কল্পনা ভেবে বসে ছিলাম আর সিমিন আমার সামনে, কি সুন্দর ভাবে হাসতে হাসতে বের হচ্ছে রহিম চাচার সাথে। আমি পিছে ফিরে দেখছি পাগলটা আছে তোহ! হ্যাঁ সেও বসে আছে পনির ভাইয়ের দোকানের সোজা অপরপ্রান্তে....

রহিম চাচা হয়তো কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছেন আমাকে দেখে, তাই নিজেই আসলেন আমার সাথে কথা বলতে আর সাথে সিমিন।

চাচা কি চান বা ভেবেছেন জানিনা, সিমিনকে আমার সাথে কথা বলতে রেখে নিজেই রাস্তার ওপাশে গেলেন তার বয়সী মুরব্বিদের সাথে কথা বলতে!
চাচার এমন অবস্থা দেখে যা কথা মনে জমে ছিল সব ভুলে বসেছি আমি। সামনে সিমিন থাকতেও আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে যে কি চাচ্ছেন তিনি! নাকি আবার এমনিতেই বিশ্বাস করে ওরে আমার কাছে রেখে গেলেন! আশেপাশে থেকেও মানুষজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সিমিবের দিকে, হয়তো তারাও আমার মতো কিছু ভেবেছেন পাগলটাকে দেখে!
যা হোক আমি সিমিনকে একের পর এক প্রশ্ন করা শুরু করে দিলেও ওর একটা উত্তরেই আমার সব উত্তর পাওয়া হয়ে গিয়েছে। জ্বর হয়েছিল সিমিনের যা খুব খারাপ পরিস্থিতির রূপ নিয়েছিল আর এখন ও সুস্থ। স্বস্থির নিশ্বাস ফেললাম আমি, সিমিনের সাথে কথা হচ্ছে এমন সময়
হঠাৎ তিনটি গাড়ি ভর্তি পুলিশের গাড়ি এসে থামলো মকবুল চাচার বাসার সামনে। তড়িৎ গতিতে সব গুলো পুলিশ ঘেরাও দিয়ে দাড়িয়েছেন মকবুল চাচার বাড়ির পাশে লিখন ভাইয়ের বাসায়!
ঘটনার আকস্মিক পরিস্থিতিতে সবাই আতংকিত হয়ে তাকিয়ে আছে এই বাড়ির দিকে। রহিম চাচা ছুটে এসে সিমিনকে বাড়ি পাঠিয়ে আমাকে দূরে সরে যেতে বললেন।
হঠাৎ পনির ভাইয়ের দোকানের অপরপ্রান্তে থাকা পাগলটা দৌঁড়ে আসতেই এলাকার মানুষ ওরে ধাওয়া দিতে যাচ্ছে এমন সময় পুলিশ এসে তাদের বাধা দিলেন এবং দাঁড়িয়ে থাকা সব পুলিশ কর্মকর্তা স্যালুট দিলেন পাগলটাকে! পাগলটা দেখলাম তার চেহারা ধরে টান দিচ্ছে নিজেই আর ওমনি কেমন যেনো সিমিনের চেহারা আর জমাট বাঁধা চুল গুলো তার হাতে চলে এলো! অবাক হয়ে দেখছে সবাই...
সিভিল পোশাকে কয়েকজন বেশ শক্তপোক্ত ব্যক্তি এসে দাড়ালেন পাগলটার পিছনে, যাদের ভিতর কয়েকজন লুঙ্গিও পরা!
পুলিশের গাড়ি থেকে বেশ উন্নত মানের অস্র নিয়ে পাগলটাসহ পাঁচজন সিভিল পোশাক পরা অফিসার চলে গেলেন লিখন ভাইয়ের বাসায়!
লিখন ভাই আমাদের এলাকায় এসেছেন বছর খানেক হয়েছে কিন্তু তা কেউ বলতে পারবে না, কারণ সবার সাথে সে এমন আন্তরিক ভাবে মিশেছেন যেনো কতকাল ধরে আছেন আমাদের সাথে।
আনুমানিক প্রায় ঘন্টা খানেক পরে হাতে হ্যান্ডকাফ আর মুখে কালো কাপড় পরিয়ে বের করা হয়েছে লিখন ভাইকে! একে একে কয়েকজন পুলিশ পোশাক পরা অফিসার গেলেন বাসার ভিতর।
নিয়ে এলেন সাদা রঙের কিছু দড়ি, ধারালো অস্র আরও কিছু সরঞ্জাম এবং সব শেষে একটা মেয়ের লাশ! আনুমানিক পনেরো ষোল বছর বয়স হবে মেয়েটার।
সকলের কৌতুহলের যেনো শেষ নেই, এমন ঘটনা ঘটবে তা যেনো কল্পনায়ও আসেনি কারো! এতো আপন এতো আন্তরিক ছেলেটা এসব করতো কেউ ভাবতেও পারেনি।
ধীরে ধীরে সবাই জানতে পেরেছে আসল ঘটনা,
লিখন ভাই হচ্ছে সাইকো কিলার! পুলিশ জানিয়েছেন এর আগেও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে লাগাতার মানুষ খুন করে রাতারাতি পালিয়ে আসতেন তিনি! অল্পদিনেই আন্তরিক হয়ে মানুষের সাথে মিশে এমন কাজ করাই তার ভালো লাগা! তার লক্ষ্য শুধু বিবাহিত যুবক কারণ তাদের মেরে ফেলার আগে তাদের শারীরিক নির্যাতনে জেনে নেন স্ত্রীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য যা দিয়ে অল্প বয়সে বিধবা নারীদের একাকিত্বকে বশে এনে দৈহিক সম্পর্কে আনন্দিত হন লিখন!
তাকে প্রমাণসহ ধরতেই এলাকায় পাগল সেজে এসেছেন সদ্য পুলিশে যোগদান করা এসপি ইমরাতুল জান্নাত।
.......সমাপ্ত........

আজকের ভৌতিক গল্পগুলো কেমন লাগলো তা কমেন্ট এ জানান।
নিয়মিত মজার এবং ভৌতিক গল্প পেতে পেইজটি ফলো করে রাখুন।
(“ ভুতের আড্ডা” প্রতি বৃহস্পতি,শুক্র ও শনিবার রাত ০৯:০০ টায়)
শেয়ার করুন আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতা।
E-mail:- [email protected]
অথবা Inbox করুন।
আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্পগুলো
পোস্ট করবো অমাদের ”Golper Shesh Patay” FB Page-এ ।
ধন্যবাদ
#গল্প #গল্পের_শেষ_পাতায় #ভুতের_গল্প #ভুত

গল্প : তেতুল তলা। পর্ব-২লেখকঃ মারুফ ইসলাম। “ভুতের আড্ডা”এখানে ভয় হয় বাস্তব…আর গল্প হয় একেকটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার ক্যানভাস...
04/07/2025

গল্প : তেতুল তলা। পর্ব-২
লেখকঃ মারুফ ইসলাম।
“ভুতের আড্ডা”
এখানে ভয় হয় বাস্তব…
আর গল্প হয় একেকটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার ক্যানভাস!”
“আপনার চারপাশেই আছে…
ভয়, রহস্য… আর অজানা কিছু...
তাহলে, প্রস্তুত তো?
চলুন… শুরু করা যাক আজকের ‘ভুতের আড্ডা’!”--গল্প ১৪--
--
মিন্টু ভাই এলাকায় মোটামুটি পরিচিত একজন ব্যাক্তি, বছর তিনেক হয়েছে বিয়ে করেছেন তবে এখনো সন্তান হয়নি তার। মিন্টু ভাইয়েরা আমাদের এলাকায় স্থানীয় না তবে অনেক পুরনো ভাড়াটিয়া তারা, আমি ছোট থেকেই তাদের দেখে এসেছি।
পুলিশ যাদের থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল তাদের আজ সবাইকে নিয়েও এসেছেন।
কারণ তাদের ভিতর কেউ খুনি হলে আজ মিন্টু ভাইয়ের লাশ তেতুল গাছে ঝুলত না!
সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের বড় কর্মকর্তার গাড়ি এসে থামলো ঠিক রহিম চাচার বাসার সামনেই।
অফিসার গাড়ি থেকে নামার আগে তার গাড়ির দরজার সম্মুখে এস. আই কনস্টেবল এসে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন তার গাড়ি থেকে নামার অপেক্ষায়। বোঝাই যাচ্ছে খুব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তিনি, গাড়ি থেকে নেমেই সোজা চলে গেলেন রহিম চাচার বাসায়!

আমরা নিস্তব্ধ হয়ে সবাই তাকিয়ে আছি রহিম চাচার বাসার দিকে, সবার মনে একটাই প্রশ্ন যে রহিম চাচার বাসায় পুলিশ কেনো! তাহলে কি তিনি খুন করেছেন এতোদিন! প্রশ্ন দিয়ে যে প্রশ্ন বাড়বে এটাও স্বাভাবিক। রহিম চাচা আর্মি অফিসার হয়ে এমন কাজ করলেন! কিন্তু কেনো করলেন!
সবার চোখ রহিম চাচার বাড়ির দিকে আর আমি এখন তাকিয়ে আছি পাগলটার দিকে। পাগলটা ঘুমিয়ে আছে, গায়ে নোংরা কাপড়, রোদে পুড়ে যাওয়া লাল চুল যার যত্ন না নেয়ায় জট বেঁধে আছে।
ঘুমিয়ে থাকায় পাগলটাকে কেমন যেনো মায়াবী মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে সিমিন থাকলেও ওরে ঠিক এমনই লাগবে!
সিমিনের কথা মনে পরতেই বুক কেমন ধড়ফড় করে উঠছে আমার। তাহলে কি এটাই সিমিন! কিন্তু কি থেকে কি হচ্ছে এসব! সিমিনের এমন অবস্থা কেনো হবে! আর রহিম চাচার বাড়িতে এতো পুলিশ কেনো এলো!
পুরো এলাকা এখন উৎসুক জনতা, সিমিনদের বাসার চারপাশে জমায়েত হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই। দু'একজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ রহিম চাচার বাসায় যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে। ভিড় জমানো মানুষ গুলোকেও দূরে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কেউ দু'এক কদমের বেশি সরছে না কারণ সবাই মন ভর্তি প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে, যার উত্তর কেউ হয়তো এখন পাবে না কিন্তু চোখের অনুমান নিয়ে প্রশ্নের উত্তর মিলাবে বলে অপেক্ষায়...
তেতুল তলা থেকে এখনো মিন্টু ভাইয়ের লাশ হাসপাতালে নেয়া হয়নি। এর আগের পাওয়া লাশ গুলো এতো সময় রাখা হয়নি।
সবার মিনিট ত্রিশেক অপেক্ষার প্রহর বোধহয় শেষ হয়ে এলো, পুলিশ বের হয়ে আসছে সিমিনদের বাসা থেকে। ধীরে ধীরে রহিম চাচাকেও দেখা যাচ্ছে সেই বড় কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছেন তিনি। কিন্তু সবাই খুব আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে কারণ রহিম চাচা আর অফিসার বেশ হাস্যজ্বল ভাবে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছেন দুজন। যদিও হাসিটা অন্য দিনের মতো সাধারণ নয় কারণ এলাকায় লাগাতার মানুষ খুন হওয়ায় সবার মুখই ইদানীংকালে কিছুটা শুকনো।
পুরো এলাকা রহিম চাচার হাসিতে যেনো স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো। কেউ জানে না তাঁর বাসায় পুলিশ কেনো আসলো, তবে সবই নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে বলাবলি করছে যে রহিম চাচা রিটায়ার্ড প্রাপ্ত আর্মি অফিসার তাই তার সাথে পুলিশের বড় কর্মকর্তাদের ভালো পরিচয় থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
রহিম চাচাকে সাথে নিয়ে সব পুলিশ কর্মকর্তারা তেতুল তলায় পৌঁছেছেন। মিন্টু ভাইয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে, দু'একজন পুলিশ বাদে ধীরে ধীরে অন্যসব পুলিশও চলে গেছেন।
বাড়ির দিকে আসছেন রহিম চাচা,
কিন্তু তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে গেছেন এলাকার বাচ্চা থেকে মুরব্বি সবাই। সবাই যে যা আন্দাজ করলেও মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, "কি হয়েছিল!"
রহিম চাচা দাঁড়িয়ে গেলেন তাদের সম্মুখে, সবাইকে বললেন তার সাথে ওই কর্মকর্তার ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে। যার দরুন এলাকায় মানুষ খুন হওয়ায় তার সাথে কথা বলতে এসেছে কাউকে সন্দেহ হয় কিনা সে বিষয় জানতে।
"তা আপনি কি বললেন? কেউ কি আছে যার উপর আপনার সন্দেহ হয়?" (মকবুল চাচা প্রশ্ন করলেন)
"ভাই আমরা তো আইনের মানুষ আইন নিয়ে কাজ করেছি আমাদের চোখে সন্দেহের পাত্রের অভাব নেই। কিন্তু খুন দেখে বোঝা যাচ্ছে খুনী কিছু একটা বুঝাতে চাইছে তাই সন্দেহ করার আগে খুনীর বার্তাটা জানা জরুরী। শুনলাম ঢাকা থেকে নাকি স্পেশাল অফিসার এসেছেন যে ইতমধ্যে এলাকায় অবস্থান করছেন এবং সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। আপনারা কারো সাথে কোনো রকম ঝামেলায় জড়াবেন না আর অপরিচিত মানুষ দেখলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবেন না।
কথাগুলো বলে রহিম চাচা তার বাড়ির ভিতর চলে গেলো, ধীরে ধীরে লোকসমাগম কমতে শুরু করলো। আমিও বাসায় চলে এলাম, কেন জানিনা পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। রহিম চাচা যে খুনী নন তা কেউ বলতে পারবে না আর কে খুনী তাও কেউ বলতে পারবে না তবে সবাই একটু আগে তার বাসায় পুলিশ দেখে যা ভেবেছিল ওই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য এখন ভিন্নরকম পরিবেশ বিরাজমান হচ্ছে।
রাত আনুমানিক দুটো বাজে,
তেতুল তলার কাছ থেকে একটা মেয়ের চিৎকার শোনা যাচ্ছে!
অন্য সময় হলে সবাই চিৎকারের শব্দ শুনে কোথা হতে শব্দ ভেসে আসছে তা নিয়ে বিচলিত হতো৷ কিন্তু কয়েকদিন ধরে সবাই তেতুল তলায় যাতায়াত আর ওদিকের ভাবনায় থাকার কারণে বুঝতে বেশি কষ্ট হয়নি যে চিৎকার তেতুল তলার দিক থেকেই ভেসে আসছে!....
কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে কেউ বাসা থেকে নামছেন না! চিৎকারের শব্দ ধীরে ধীরে সব বাড়ির অন্ধকার ঘুচে লাইট জ্বলে আলোকিত হয়ে গিয়েছে। সবাই যে যার জানালায় অবস্থান করছেন, দরজাটা পর্যন্ত কেউ খুলছে না। একজন অন্যজনের সাথে ফোনে কথা বলে বিষয়টা ধীরে ধীরে যারা ঘুমিয়ে ছিলেন বা এলাকার বাহিরে আছেন তাদের কাছেও ছড়িয়ে গেছেন কিন্তু কেউ বাসা থেকে নামছে না!
এক এক করে চারটি শক্তপোক্ত মাঝ বয়সী যুবক ছেলের খুন হয়েছে তেতুল তলায় যার কারণে ভয় এতোই গ্রাস করেছে যে কেউ সাহস করে যেতেই পারছে না চিৎকার করা মেয়েটি কে বা কেন চিৎকার করছে এটা দেখতে....
দূর থেকে কে যেনো আসছে তেতুল তলার দিক থেকে, বেশ জোরে হাঁটতে হাঁটতে আসছেন। হাতে একটা টর্চ লাইট দেখা যাচ্ছে আর কাঁধে সাদা রঙের মোটা রশি! যে চারজন খুন হয়েছে তারা এরকম মোটা রশিতেই ঝুলছিল! লোকটার হাঁটার গতিবিধি দেখে অনেকটা পরিচিত মনে হচ্ছে।
তাহলে কি!.....
To be continued
আজকের ভৌতিক গল্পগুলো কেমন লাগলো তা কমেন্ট এ জানান।
নিয়মিত মজার এবং ভৌতিক গল্প পেতে পেইজটি ফলো করে রাখুন।
(“ ভুতের আড্ডা” প্রতি বৃহস্পতি,শুক্র ও শনিবার রাত ০৯:০০ টায়)
শেয়ার করুন আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতা।
E-mail:- [email protected]
অথবা Inbox করুন।
আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্পগুলো
পোস্ট করবো অমাদের ”Golper Shesh Patay” FB Page-এ ।
ধন্যবাদ
#গল্প #গল্পের_শেষ_পাতায় #ভুতের_গল্প #ভুত

গল্প : তেতুল তলা। পর্ব-১লেখকঃ মারুফ ইসলাম। “ভুতের আড্ডা”এখানে ভয় হয় বাস্তব…আর গল্প হয় একেকটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার ক্যানভাস...
03/07/2025

গল্প : তেতুল তলা। পর্ব-১
লেখকঃ মারুফ ইসলাম।
“ভুতের আড্ডা”
এখানে ভয় হয় বাস্তব…
আর গল্প হয় একেকটা রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার ক্যানভাস!”
“আপনার চারপাশেই আছে…
ভয়, রহস্য… আর অজানা কিছু...
তাহলে, প্রস্তুত তো?
চলুন… শুরু করা যাক আজকের ‘ভুতের আড্ডা’!”--গল্প ১৪--
--
পর পর তিনজন মধ্যবয়সী যুবক তেতুল তলায় আত্নহত্যা করার পর আমাদের এলাকা এখন থম থমে পরিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে!
বাসা থেকে বাবা মা আমাকে একদম বের হতে দেন না। যদিও সেই যুবকরা তিনজনই বিবাহিত ছিলেন!
তিনজন যুবককেই ঠিক আলাদা দিন এ একই সময়ে তেতুল গাছের সাথে ফাঁসি লাগিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ ময়নাতদন্তের তথ্য থেকে জানতে পেরেছে তাদের আগে খুন করা হয়েছে আর পরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে!
এলাকার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকান গুলোতে এখন আর তেমন জন মানুষ বসে না, সবাই যে যার কাজ সেড়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় খুনের পর থেকে বেশ শক্ত পোক্ত অচেনা মানুষের সমাগম বেড়ে গেছে এলাকায়।
রহিম চাচা বলেছেন ওনারা নাকি পুলিশ, খুনিকে ধরার জন্য সিভিল পোশাকে এসে চারদিক নজর রাখছেন।
রহিম চাচা রিটায়ার্ড প্রাপ্ত আর্মি অফিসার, ঘরে তার দুই কন্যা আর স্ত্রী। দিন বিশেক আগেও রহিম চাচা বেশ হাসি খুশি থাকতেন আমাদের সাথে। প্রতিবেশী আর একসাথে খেলাধুলা করায় রমিম চাচার সাথে সখ্যতা বেড়ে একদম বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছি আমরা। রহিম চাচা তার মেয়েদের নিজেই স্কুল কলেজে আনা নেয়া করতেন এই বয়সেও। কিন্তু অনেকদিন হয়ে গেলো তিনি তার মেয়েদের নিয়ে বের হন না, মাঝে মধ্যে কলেজ পড়ুয়া বড় মেয়েটাকে দেখা গেলেও তার ছোট মেয়েটাকে অনেকদিন দেখিনি। অথচ তিনি বেশিরভাগ সময় ছোট মেয়েটাকে নিয়েই বের হতেন।
পনির ভাইয়ের দোকানের সোজা ঠিক অপরপ্রান্তে একটা একটা পাগল দেখা যাচ্ছে দিন দশেক হলো। পাগলটা সারাদিন প্রলাপ বকতে থাকে আর মাঝ বয়সী যুবক ভাইদের গালাগালি করতে থাকে অকথ্য ভাষায়! তাই বেশ অল্প দিনেই পাগলের উপস্থিতি আর পরিচিতি লক্ষ্য করেছে সবাই। দিনরাত পাগলটা ওখানেই থাকে, কেউ কেউ শুকনো বোনরুটি ছুড়ে মারে কেউ বিস্কুট দেয় কিন্তু পাগলটা খেতে চায় না। একমনে তাকিয়ে থাকে তেতুল তলার পাণে!
আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম যেদিন পাগলটাকে প্রথম দেখেছি, দেখতে অনেকটা সিমিনের মতো লাগে, ওর মতো টানা টানা চোখ মুখ নাক সব কিছুই প্রায় একই শুধু ঠোঁটের কোনে যেখানটায় সিমিনের একটা তিল আছে আর পাগলটার সেখানে কাটা দাগ!
সিমিন হচ্ছে রহিম চাচার দশম শ্রেণিতে পড়া ছোট মেয়েটা, ওর বিষয়ে এতো জানার কারণ হচ্ছে অজানা কোনো কারণে সিমিনকে খুব ভালো লাগে আমার। রহিম চাচা ওরে নিয়ে যখন স্কুলে যেতো তখন খুব ভালো প্রতিবেশীর ভূমিকায় আমিও রহিম চাচার সাথে কথা বলতে বলতে তাদের সাথে আগাতাম। কেন জানিনা সিমিনের আশেপাশে থাকতে আমার বেশ ভালো লাগতো। সিমিনও মাঝে মধ্যে কেমন একটা অন্যরকম চাহনি নিক্ষেপ করতো আমার পাণে। তখন বুকের ভিতর এতো ভালো লাগতো যার তুলনা আমি অন্য কিছুতেই পাইনি।
অনেকদিন ধরে সিমিনকে রহিম চাচার সাথে দেখছি না আর তাকে জিজ্ঞেসও করতে পারছি না যদি সে অন্য কিছু ভেবে বসে এই ভয়ে। কিন্তু হঠাৎ করে ওর মতো দেখতে পাগলটাকে দেখে আমার কেনো যেনো পুরো দুনিয়াটাই অন্ধকার হয়ে এসেছিল! যখন দেখলাম ঠোঁটের কোনে তিলের জায়গায়টা কাটা তখন থেকে মনের ভিতর অন্যরকম ভাবনা চলে এসেছে আমার। তড়িঘড়ি করে রহিম চাচাকে ডেকে এনে যখন দেখালাম,
"দেখুন চাচা পাগলটাকে দেখতে একদম সিমিনের মতো মনে হয় না?"
"কিহ! কক কক কই কই! ধুর কি যে বলো তুমি? সিমিন তো ঘুমাচ্ছে ও এখানে আসবে কি করে!"
"কি বলেন চাচা? এই সন্ধ্যা বেলায় ঘুমাচ্ছে?"
"ও তো এখন সব সময়ই ঘুমায় বাবা"(নিস্তেজ হয়ে)
"মানে কি বলছেন?"
"কি, কই না কিছু না। বলছি একটু অসুস্থ তো তাই বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে থাকে কিনা তাই।"
"কি হয়েছে চাচা সিমিনের? ও ঠিক আছে তো! নাকি এমনিতে জ্বর হয়েছে?"
ওর অসুস্থতার কথা শুনে আমাকে বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করতে দেখে চাচা আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন কিন্তু কিছু বললেন না।
"তেমন কিছুনা সুস্থ হয়ে যাবে সমস্যা নেই।"
আমি বুঝলাম না পাগলটাকে আমি সিমিনের মতো বলায় চাচা ওমন ভাবে ঘাবড়ে গেলেন কেনো! আর সিমিন অসুস্থ এতোদিন আমাদের বললেন ও না। হবে হয়তো বলার প্রয়োজন মনে করেনি কিন্তু সিমিনের কি হয়েছে বুঝতে পারছি না।
পুলিশ কাল রাত থেকে খুব কড়াকড়ি ভাবে এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে দিয়েছে। তিনটা খুন হলো পর পর তিনদিন বাদে নয়দিনের ভিতর অথচ খুনিকে এখনো ধরতে পারছে না তারা। সংবাদ মাধ্যমের লোকজন প্রায়ই এসে পুলিশের ব্যার্থতার কথা তুলে ধরছেন আর তারা এটাও বলছেন যে বারোদিনের মাথায় যদি তেতুল তলায় আরেকটা লাশ ঝুলতে দেখা যায় তাহলে পুলিশ কি করবে! এই নিয়ে এলাকার অবস্থা বেশ গরম। শুনলাম কাল রাত থেকে এখন দুপুর অবদি যাদের সাথে কথা বলে সন্দেহজনক মনে হয়েছে তার ভিতর থেকে জন পনেরো লোকজনকে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ!
বিকেলে বাসার জন্য ডিম কিনতে গিয়ে দেখি তেতুল তলার দিকে যাচ্ছে সবাই আর বলাবলি করছে মিন্টু ভাইকে কে জানি মেরে তেতুল তলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে!
To be continued
আজকের ভৌতিক গল্পগুলো কেমন লাগলো তা কমেন্ট এ জানান।
নিয়মিত মজার এবং ভৌতিক গল্প পেতে পেইজটি ফলো করে রাখুন।
(“ ভুতের আড্ডা” প্রতি বৃহস্পতি,শুক্র ও শনিবার রাত ০৯:০০ টায়)
শেয়ার করুন আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতা।
E-mail:- [email protected]
অথবা Inbox করুন।
আপনার ভৌতিক অভিজ্ঞতার গল্পগুলো
পোস্ট করবো অমাদের ”Golper Shesh Patay” FB Page-এ ।
ধন্যবাদ
#গল্প #গল্পের_শেষ_পাতায় #ভুতের_গল্প #ভুত

”পাসওয়ার্ড”ফারহানা কবীর মানাল______(শেষ পর্ব)_______সেদিন রাতে নাজিম আর কোনো এসএমএস দিলো না। সারারাত আমি একটুও ঘুমাতে পা...
02/07/2025

”পাসওয়ার্ড”
ফারহানা কবীর মানাল______(শেষ পর্ব)_______
সেদিন রাতে নাজিম আর কোনো এসএমএস দিলো না। সারারাত আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি। শুধু ছটপট করেছিলাম আর ভাবছিলাম যে নাজিম কি সত্যি আমাকে ভুলে গিয়ে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করবে। এতোদিনে ভালোবাসা বিশ্বাস সবকিছু কি নষ্ট হয়ে যাবে!
চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যাচ্ছে, নাজিম আমার পাশেই শুয়ে আছে। হয়তো ঘুমিয়ে আছে না হলে আমার চোখের পানিতে তার কিছু যায় আসে না। এমন নানান সব চিন্তার মাঝে কেউ আমার ধাড়ে হাত রাখলো। স্পর্শটা বড্ড পরিচিত,
--" কাঁদছো কেন তুমি? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো নাকি? দেখি আমার কাছে এসে ঘুমাও। "
নাজিমের কথার কোনো জবাব দিলাম না। চুপচাপ শুয়ে রইলাম। নাজিম আমার বাহু ধরে ওর দিকে ফিরালো তারপর খুব যত্ন করে চোখে মুখে লেপ্টে থাকা পানির কণাগুলো মুছে দিতে দিতে বললো, " কি স্বপ্ন দেখেছো তুমি হুম? আমি মরে গেছি নাকি তোমাকে রেখে চলে গেছি?"
নাজিমের কথায় আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। নাজিম আমাকে ও-র বাহুর মাঝে আবদ্ধ করে নিলো তারপর মুচকি হেসে বললো, " কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?"
--" আপনি হাসছেন কেন? আমার কান্না দেখে খুব ভালো লাগছে তাই না?"
কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলে নাজিমের বাহুর বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু তাতে কোনো প্রকার লাভ হলো না। বরং নাজিম আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
--" না তোমার কান্না দেখে হাসছি না। কেউ একজন আমাকে হারানোর ভয় পায় তাই হাসছি। জানো তো প্রেয়সী ভালোবাসার মানুষ যখন তোমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করবে তখন তুমি হাসতে বাধ্য হবে। তুমি না চাইতেও তোমার ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত হবে। তোমার মলিন মুখে খুশির আভা ছড়িয়ে যাবে। চাইলে তুমি মিলিয়ে নিতে পারো। আমি তোমায় মিথ্যা বলছি না।"
আমি অপলক দৃষ্টিতে নাজিমের দিকে তাকিয়ে আছি। নাজিমকে বড্ড অপরিচিত লাগছে আমার কাছে। হয়তো ও-র কথার সত্যতা বোঝার চেষ্টা করছি বলে। আমি চুপ করে আছি দেখে নাজিম আর কিছু বললো না। আমার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। আমার কানে ভেসে আসছে নাজিমের হৃদয় স্পন্দন। আমি খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছি ও-কে। তবুও কেন জানি অনেক দূরত্ব আমাদের। হয়তো আমি নাজিমের থেকে দূরে সরে গিয়েছি নয়তো নাজিম আমার থেকে অনেক অনেক দূরে। এগুলো সব আমার ভাবনা। নাজিম আমাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। আলতো করে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কোনো মেয়ের কাছে এর থেকে বেশি সুখের মুহুর্ত বুঝি আর নেই।
নানান কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি ঠিক মনে নেই। ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে নিজেকে নাজিমের বাহুর মাঝে আবিষ্কার করলাম। ঘুমন্ত নাজিমকে বড্ড শান্ত লাগছে। চোখ মুখ কিছুটা ফুলে ওঠেছে। সারা মুখে তেল লাগিয়ে আছে এমন দেখাছে। তবুও এই মানুষটাই আমার কাছে বড্ড সুদর্শন। বিবাহিত নারীদের কাছে তার স্বামীই সব থেকে সুন্দর। অন্য কোনো পুরুষ যেন বড্ড বিরক্তিকর। স্বামী থাকার পরও অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার অধিকার কোনো রমণীর নেই। কোনো পুরুষের স্ত্রী ব্যতিত অন্য কারো প্রতি আকর্ষিত হওয়ার অনুমতি নেই। দুইজন মানুষ যেন দুইজনের মাঝেই সীমাবদ্ধ। হাজারও বেড়াজালে আটকে আছে দুইজন। এ গন্ডির ভিতর তৃতীয় কারো প্রবেশের অনুমতি নেই, তৃতীয় কারো উপস্থিতি সহ্য করার মানসিকতাও হয়তো কোনো নরনারীর নেই।
--" আমাকে দেখা হলে কি আমরা ওজু করে আসতে পারি? আমি জানি আমি সুন্দর, এতো দেখার কি আছে শুনি?"
নাজিমের কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো। দুইজন মিলে ওজু করে নামাজ আদায় করে নিলাম। নামাজ শেষে নাজিম প্রায়ই কুরআন তিলাওয়াত করে। আমি তখন নাজিমের পাশে বসে থাকি। কখনো কখনো সকালে মনোমুগ্ধকর বাতাসে দুইজন হেঁটে বেড়াই। কখনো কখনো আমি রান্না করার সময় নাজিম পাশে বসে তরকারিতে লবন ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করার তীব্র বাসনা প্রকাশ করে। সত্যি বলতো আমরা অনেক খুশি। এতো সুখের মাঝেও আজ কোথাও কিছু খামতি রয়েছে।
প্রতিদিনের মতো নাজিম অফিসে যাওয়ার পর আমার মোবাইলটা নিয়ে বসলাম। ফেইক আইডি গিয়ে দেখলাম নাজিম এসএমএস দিয়েছে,
--" কি দরকারে এসএমএস দিয়েছেন? "
নাজিমের এসএমএসটা বড্ড খাপছাড়া লাগলো আমার কাছে। তবুও নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলাম। তারপর এসএমএসের রিপ্লে দিলাম।
--" আপনিই তো কাল নক দিলেন।"
--" আপনি ভুল বলছেন। আপনি আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে এসএমএস দিয়েছিলেন যে কেমন আছেন। তাই আমি আপনাকে রিপ্লে দিয়েছি। "
--" প্রয়োজন ছাড়া কি আপনাকে এসএমএস দেওয়া যাবে না? এমনটাও তো হতে পারে আমি আপনাকে ভালোবাসি।"
--" আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা আমি জানি না। এমনকি আমি মনেও করি না এটা জানার কোনো প্রয়োজনীয়তা আমার রয়েছে।"
--" কেন আপনাকে ভালোবাসা কি অপরাধ নাকি?"
--" অনেকটা তেমনই। আমি বিবাহিত। আমার স্ত্রী আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। আমার স্ত্রী ব্যতিত কোন মেয়ে আমাকে নিয়ে কেমন ধারণা করলো বা কেমন অনুভব করলো তা জানার বিন্দুমাত্র প্রয়োজনীয়তা আমার নেই।"
নাজিমের এসএমএসটা দেখে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। আমার বরটা কত ভালো। আমি শুধু শুধুই সন্দেহ করছিলাম। কিন্তু না নাজিমকে আর একটু পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এতো সহজে আমি ও-কে ছাড়বো না হি হি। কিছু সময় খুশিতে গড়াগড়ি দিয়ে নাজিমকে আবারও এসএমএস দিলাম।
--" বউ থাকলেই যে কারো সাথে কথা বলা যাবে এমনটা কোথায় লেখা আছে? আপনার বউয়ের কাছে বুঝি আপনার আইডি পাসওয়ার্ড আছে? বউকে ভয় পান নাকি?"
--" বউ থাকলেই যে কারো সাথে কথা বলা যাবে না এমনটা নয়। তবে আপনি প্রথমেই অন্যভাবে কথা বলা শুরু করেছেন। আর আমার স্ত্রীর মন এতোটা নিচু নয় যে সামান্য আইডি পাসওয়ার্ডও নিজের কাছে রেখে দিবে। আমাদের সম্পর্কটা ভালোবাসায়, বিশ্বাসের, সম্মানের। আমাকে সে বিশ্বাস করে আর আমি তার বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে চাই না। প্রয়োজন ব্যতিত কোনো কারণে আমাকে বিরক্ত করবেন না। "
ইসসসস! বউয়ের প্রতি কতো ভালোবাসা উনার। দেখলে একদম মন ভরে যায়। শেষবারের মতো একটু জ্বালানোর ইচ্ছায় একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি দিলাম। তারপর লিখলাম,
--" এতো সুন্দর একটা মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে আফসোস হচ্ছে না আপনার?"
--" না আফসোস হচ্ছে না। বরং এটা ভেবে ভালো লাগছে যে আমি মানুষ। কোনো পশুর স্বভাব আমার ভিতর নেই, পশুর মতো নানান সঙ্গীর প্রয়োজন নেই আমার। আপনি নিজেকে সুন্দর দাবী করলেও আমার কাছে আমার স্ত্রী পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী রমণী। "
আহা! আমার যে কি ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। শুধু শুধু আমার বরটাকে আমি সন্দেহ করলাম। সত্যিই তো আমাদের সম্পর্কটা ভারচুয়াল না যে আইডি পাসওয়ার্ড এসব ব্যাপারে সীমাবদ্ধ থাকবে। নাজিম যেমন কখনো ও-র আইডি পাসওয়ার্ড আমাকে দেয়নি। তেমনই কখনো আমার মোবাইল চেক করেনি বা আমার ফেসবুক আইডি চায়নি। কারণ আমাদের সম্পর্কে বিশ্বাস আছে। আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করি। ভালোবাসা ছাড়া সম্পর্ক টিকে থাকলেও বিশ্বাস ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকে থাকে না। নাজিমকে আর কিছু বলতে যাবো এমন সময় খেয়াল করলাম নাজিম আমাকে ব্লক করে দিয়েছে। আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী যে নাজিমের মতো বর পেয়েছি।
মোবাইলটা বালিশে পাশে রেখে নিজের কাজে চলে গেলাম। আজ নাজিমের পছন্দসই খাবার রান্না করবো। নিজেকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবো ও-র জন্য।
সন্ধ্যায় নাজিম বাড়িতে আসলো। ততোসময় আমি সেজেগুজে একদম পরিপাটি হয়ে রয়েছি। নাজিম গজগজ করতে করতে বাড়িতে আসলো। তারপর রাগী গলায় বললো, মিতা আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। "
আমি এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে ও-র কাছে গেলাম। নাজিম আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি একটু ভাব দেখিয়ে বললাম, " আমি জানি আমি সুন্দরী। এতো দেখার কি আছে?"
নাজিম সোফা থেকে উঠে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, " তোমার সাজে অপূর্ণতা রয়ে গেছে।"
কথাটা বলে ও-র পকেট থেকে একগুচ্ছ ঘাসফুল আমার কানে গুঁজে দিলো। ও-র এমন কান্ড দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে। মানুষ গোলাপ বেলি কত ধরনের ফুল দেয় আর উনি আমাকে ঘাসফুল দিচ্ছে। তবুও কেন জানি খুব ভালো লাগছে। ভালোবাসার উপহার কখনো টাকার মূল্যে আটকে থাকে না। তা সর্বদাই অমূল্য।
রাতে ঘুমানোর সময় নাজিম আমার মোবাইলটা নিয়ে ও-র আইডি লগইন করে দিতে দিতে বললো, " আমি ছাড়া কোনো ছেলের দিকে তাকাবে না বুঝেছ। তবে কোনো ডাইনি রাক্ষসী আমাকে বিরক্ত করলে ইচ্ছে মতো শিক্ষা দিয়ে দিবে। আজকে মেজাজটাই খারাপ করে দিয়েছে।
নাজিমের কথার কোনো জবাব না দিয়ে আমি ও-কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলাম। আজ কেন জানি খুব ভালো লাগছে আমার। নাজিম ফোনটা রেখে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, " কি হলো তোমার?"
আমি মুচকি হেসে বললাম, " আমাদের সম্পর্কে এইসব অবিশ্বাস না-ই বা রইলো। কোনো ডাইনি রাক্ষসী অথবা সুন্দরী রমণী আমার বরকে নিতে আসলে কি আমার বর আমাকে রেখে তার সাথে চলে যাবে নাকি? "
নাজিম দৃঢ় কন্ঠে বললো, " না যাবে না। তুমি বিশ্বাস করতে পারো তোমার বরকে। "
আমি নাজিমের বুকে হাত রেখে বললাম, " আমি বিশ্বাস করি তোমায়! "
সমাপ্ত

গল্পটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট এ জানান।
নিয়মিত মজার মজার গল্প পেতে পেইজটি ফলো করে রাখুন।

#গল্প #গল্পের_শেষ_পাতায় #

”পাসওয়ার্ড”ফারহানা কবীর মানাল______(পর্ব ০১)_______আমার স্বামী আমাকে সত্যিই ভালোবাসে কি-না জানতে খুব ইচ্ছে করে। তাই ফেসব...
30/06/2025

”পাসওয়ার্ড”
ফারহানা কবীর মানাল______(পর্ব ০১)_______

আমার স্বামী আমাকে সত্যিই ভালোবাসে কি-না জানতে খুব ইচ্ছে করে। তাই ফেসবুকে একটা ফেইক আইডি ওপেন করে, আমার স্বামীকে রিকোয়েস্ট পাঠালাম। খুব ইচ্ছে তার ভালোবাসা পরীক্ষা নিবো। আগে অবশ্য এইসব ইচ্ছে মাথায় আসেনি। কিন্তু তানিয়া কাছ থেকে যখন জানতে পারলাম ও-র কাছে ও-র বরের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড আছে। সে তানিয়ার থেকে কিছুই লুকিয়ে রাখে না তখন তানিয়ার সুখ দেখে খুশি হলেও, নিজের জন্য অনেক খারাপ লাগছিল। নাজিমের মোবাইলটাও আমি কখনো ছুঁয়ে দেখতে পারি না। ফেসবুক আইডি তো অনেক দূরের ব্যাপার। খুব ইচ্ছে হলো ভালোবাসার পরীক্ষা নেওয়ার। নাজিমকে পরীক্ষা করবো বলে একটা ফেইক আইডি খুললাম। তারপর নাজিমকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। আমি এই পরীক্ষায় হারবো না জিতবো কিছুই বলতে পারছি না। মনের ভিতর নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। আমি খুব করে চাই যেন আমি এই পরীক্ষায় হেরে যায়। নাজিমকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমি সত্যিটা জানতে চাই। কয়েকদিন আগে আমি আমার কলেজ জীবনের বান্ধবী তানিয়ার সাথে দেখা করতে গেছিলাম। সেদিন,
--" দোস্ত জানিস আমার বর আমাকে খুব ভালোবাসে। ও-র দুইটা ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ডই আমার কাছে আছে। আমাদের ভিতর কোনো লুকোচুরি নেই। ও নিজে থেকেই আমার ফোনে লগইন করে দিয়েছে। স্বামী স্ত্রী ভিতর লুকোচুরি রাখতে নেই।
তানিয়ার কথায় আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। নাজিমের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় দুইবছর। এর ভিতর কখনোই নাজিম ওর ফোনের লক পর্যন্ত আমাকে জানতে দেয়নি। আমি অবশ্য কখনো নাজিমের কাছে এসব ব্যাপারে জানতে চাইনি। প্রয়োজন হলে ও-র ফোন থেকে কথা বলতাম শুধু। কথা বলা শেষ হলে নাজিম নিজের মোবাইল নিয়ে যেতো। নাজিমকে আমি সন্দেহ করি এমনটা না তবুও কেন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে তানিয়া আবারও বলে উঠলো, " কি হলো তোর? মুখ কালো করে বসে আছিস কেন? "
তানিয়ার কথায় আমি হাসতে চেষ্টা করলাম, ঠোঁটের কোণে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বললাম, " কিছু না রে। এমনই ভালো লাগছে না কিছু।"
--" আচ্ছা মিতা তুই বিবাহিত জীবনে সুখী তো?
--" হ্যা রে আমি অনেক সুখী। নাজিম খুব ভালো। আমার অনেক খেয়াল রাখে।"
--" ফাহাদও আমার অনেক খেয়াল রাখে। আচ্ছা নাজিমের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড জানিস তুই?"
তানিয়ার এমন প্রশ্ন শুনে আমি কিছুটা বিব্রতবোধ করতে লাগলাম। সত্যি বলতে নাজিমের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড আমি জানি না। এমনকি আমি কখনো নাজিমের ফোনটাও হাতে ধরি না৷ বিয়ের কয়েকদিন পর নাজিম আমাকে একটা মোবাইল কিনে দিয়েছিলো। সেই থেকে আমি আমার ফোনই ব্যবহার করি। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তানিয়া বলে উঠলো, " বুঝতে পেরেছি, তোর বরের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড তুই জানিস না। আজকালকার ছেলে ফেসবুকে হয়তো নানান মেয়ের সাথে কথা বলে সেগুলো তোর থেকে লুকিয়ে রাখতেই তোকে পাসওয়ার্ড দেয় না। "
তানিয়ার এই সামান্য কথাগুলোই আমার মনকে বিষিয়ে দিতে সক্ষম হলো। মনের ভিতর হাজারও সন্দেহ জেগে উঠলো। কেন নাজিম আমাকে ও-র মোবাইল ধরতে দেয় না। তানিয়ার বর তো তানিয়ার থেকে কিছু লুকিয়ে রাখে না। তাহলে কি নাজিমের অন্য কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে? না এসব আমি কি ভাবছি! আমি নাজিমকে পাগলের মতো ভালোবাসি, নাজিমও আমাকে অনেক ভালবাসে, আমার অনেক খেয়াল রাখে, আমাদের সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় কেউ থাকতে পারে না।
আমি চুপচাপ বসে আছি দেখে তানিয়া বললো, " একটা কাজ করতে পারিস মিতা। একটা ফেইক আইডি খুলে তোর বরকে পরীক্ষা করে দেখতে পারিস। সরাসরি পাসওয়ার্ড চাইলে হয়তো সর্তক হয়ে যেতে পারে। "
তানিয়ার বুদ্ধিটা আমার বেশ পছন্দ হলো। নাজিম কখনো আমার মোবাইল চেক করে না। ফেইক আইডি চালালেও বুঝতে পারবে না।
--" আচ্ছা তানিয়া তুইও তোর বরকে পরীক্ষা করে দেখতে পারিস। যদিও তোর বরের আইডি তোর কাছে আছে তবুও একবার না হয় হেরে গিয়ে সুখ পেলি।"
তানিয়া আমার কথায় হো হো করে হেসে উঠলো। তারপর চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললো, " কি যে বলিস না মিতা! ফাহাদের আইডি তো আমার কাছে। '
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ফাহাদ চিৎকার করতে করতে ঘরে ঢুকলো। ঘরে আসার পর তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো, " তুমি কবে ঠিক হবে বলো তো? আজ একটা মেয়েকে আমি ফেসবুকে এড করেছিলাম তুমি তাকে ব্লক দিয়েছো কেন? "
তানিয়া স্বাভাবিক ভাবে বললো, " আমি চাই না তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলো। ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়ে কেন তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড থাকবে?"
--" তানিয়া নিজের মনটাকে একটু বড় করো। ওই মেয়েটা আমাদের নতুন এমডি। উনার থেকে আমার কিছু কাজ বুঝে নেওয়ার ছিলো তাই ফেসবুকে এড হয়েছি এতে দোষের কি আছে?"
তানিয়া আর কিছু না বলে আমার দিকে ইশারা করলো। ফাহাদও আমাকে দেখে শান্ত গলায় বললো, " আরে মিতা তুমি! তোমার পাগলী বান্ধবীকে দেখো কোনো মেয়ের সাথেই আমাকে দেখতে পারে না। শুধু সন্দেহ করে। তা তুমি কখন এলে?"
আমি মুচকি হেসে জবাবে বললাম, " এইতো বেশ কিছুসময় হয়েছে। তোমাদের ভিতর অনেক ভালোবাসা। সারাজীবন একসাথে থেকো তোমরা। "
ফাহাদ আমার কথায় কোনো জবাব দিলো না। শুধু মুচকি হাসলো। সেদিনের মতো ঘোরাঘুরি করে বাড়িতে চলে আসলাম। কিন্তু নাজিমকে পরীক্ষা করার ব্যাপারটা আমার মাথায় থেকে গেলো। সেদিন রাতে খাওয়ার পর নাজিমকে বললাম, " আচ্ছা নাজিম তোমার ফেসবুক আইডিটা আমাকে দেবে? "
নাজিম বিরক্ত চোখে আমার দিকে তাকালো। তারপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো, " কেন আমার আইডি তোমার দরকার কি জন্য? তোমার তো আইডি আছে। তুমি নিজের আইডি চালাও"
নাজিমর কথায় আমার ঠিক কতোটা কষ্ট হয়েছিলো বলে বোঝাতে পারবো না। মনে হচ্ছিল কেউ আমার বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। কথা বলতেও পারছিলাম না। বারবার গলা ধরে আসছিলো। সেদিন কোনো রকম নাজিমের চোখ ফাঁকি দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছিলাম। যার কাছে আমার থেকে তার ফেসবুক আইডি বড় তাকে নিজের কষ্ট দেখানোর কোনো মানে হয় না। রান্নাঘরের দরজা আটকে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু কেন জানি কাঁদতে পারছিলাম না। হয়তো অধিক শোকে পাথার হয়ে গিয়েছিলাম। কোনো কথা বলতে পারছিলাম না।
এরপর থেকে নাজিমের কাছাকাছি খুব একটা যেতাম না আমি। কথা বলাও কমিয়ে দিয়েছিলাম। একদিন নাজিম আমাকে ডেকে প্রশ্ন করলো, " মিতা কি হয়েছে তোমার? কয়েকদিন ধরে দেখছি কেমন চুপচাপ হয়ে গিয়েছো। কোনো বিষয় নিয়ে মন খারাপ নাকি কোনো দুশ্চিন্তায় আছো?"
ইচ্ছে করছিলো ও-র চোখের দিকে তাকিয়ে বলি যে, " ফেসবুক আইডি দিলে আপনার সব প্রেমিকার খবর পেয়ে যাবো তাই আমাকে ফেসবুক আইডি দিতে পারলেন না এইতো!"
কিন্তু এখন এমনটা বললে চলবে না। আমি নিজে আগে পরীক্ষা করে নিবো। হাতে প্রমাণ না নিয়ে কোনো কিছু বললে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমি মুচকি হেসে বললাম, " আজকাল শরীরটা অনেক খারাপ থাকে তাই কিছু ভালো লাগে না।"
আমার শরীর খারাপের কথা শুনে নাজিম ব্যস্ত হয়ে আমার কপালে গলায় হাত দিতে থাকলো। তারপর বললো, " শরীর তো ঠান্ডা আছে। কোথায় কি খারাপ লাগছে বলো? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো। আমাকে আগে বলবে না তুমি যে শরীর খারাপ!"
নাজিমের অস্থিরতা দেখে আমার মন একরাশ মুগ্ধতায় ভরে গেলো। আমি হয়তো ভুল ভাবছি। নাজিম অন্যকাউকে ভালোবাসলে আমার এতোটা খেয়াল রাখতো না। মনে মনে ভাবলাম আইডিটা ডিলেট করে দিবো নাজিমকে পরীক্ষা করা হয়তো ঠিক হবে না আমার। সেদিন নাজিম জোর করে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো। ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আমাকে নিয়ে নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলো। অনেক সুন্দর সময় কাটালাম নাজিমের সাথে। এতোদিনের বিষন্নতা কেটে উৎফুল্ল হয়ে উঠলাম। সারা বিকাল ঘোরাঘুরি করার পর হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতে আসলাম। আজকে আমার মনটা অনেক ভালো আছে। বোরকা হিজাব খুলে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসার পর নাজিম আামকে বললো, " মিতা তুমি কিছু সময় বিশ্রাম নেও। আমি একটু বাইরে থেকে আসি। "
খুব বলতে ইচ্ছে করলো, " না তুমি কোথাও যেও না। আমার কাছে থাকবে এখন। " কিন্তু কথাগুলো মুখে বলা হলো না। মনের মাঝেই রয়ে গেলো। মন খারাপ করে বললাম, " সাবধানে চলাচল করবেন। "
নাজিম মুচকি হেসে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুক ওপেন করলাম। কিন্তু যা দেখলাম তাতে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নাজিম আমার ফেক আইডির রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে। সেই সাথে এসএমএস দিয়ে জানতে চেয়েছে আমি কে!
আমার তখন কেমন লাগছিলো বলে বোঝাতে পারবো না। একদিনও হলো না এর আগেই রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে এসএমএসও দেওয়া হয়েছে। এসএমএস দেওয়ার সময়টা দেখলাম কয়েক মিনিট আগে। তার মানে ঘর থেকে এসব কারণে বেরিয়েছে। চোখের পানিগুলো মুছে রিপ্লে দিলাম, তারপর মোবাইলটা বালিশের নিচে রেখে শুয়ে রইলাম। পরবর্তী রিপ্লে দেখার জন্য!
To be continued…
(পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন)
গল্পটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট এ জানান।

#গল্প #গল্পের_শেষ_পাতায় #

Address

Dhaka

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Golper Shesh Patay posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share