25/11/2025
বর্তমান সময়ে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে—কওমি ওলামায়ে কেরামগণ যদি কোনো বৃহত্তর জামাত বা প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হন, তবে নাকি তারা নিজেদের আদর্শ থেকে সরে যাবেন। এই যুক্তি শুধু দুর্বলই নয়, বরং ওলামায়ে কেরাম সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি থেকে জন্ম নেওয়া।
১৪ বছরের শিক্ষা কি তবে ব্যর্থ?
একজন ছাত্রকে দেড় যুগ—১৪ বছর—মাদ্রাসায় কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ, মেহনত ও নিষ্ঠার সাথে শিক্ষা দেওয়া হয়। এই পুরো সময়ে তাকে কোরআন-হাদিস, ফিকহ, আকীদা, ইতিহাস ও দ্বীনের গভীরতম ভিত্তি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে প্রশ্ন আসে:
১৪ বছরে কি আমরা তাকে নিজের পরিচয়, আদর্শ ও অবস্থান শেখাতে পারিনি?
যদি সত্যিই শেখাতে পারি, তবে সাময়িকভাবে কারো সাথে ঐক্য করলে তার পরিচয় নষ্ট হবে কেন?
আর যদি এত দীর্ঘ শিক্ষার পরও সে নিজের আদর্শ হারিয়ে ফেলে, তবে শিক্ষকতার যোগ্যতা কোথায়?
যারা মনে করেন ঐক্যে যুক্ত হলেই আদর্শ নষ্ট হয়ে যায়, তাদের যুক্তি গ্রহণযোগ্য হলে তো বলতে হয়—এত বছরের শিক্ষা মূলত অকার্যকর ছিল। অথচ বাস্তবতা তার ঠিক বিপরীত।
ঐক্য মানে আত্মসমর্পণ নয়
ঐক্য কখনোই নিজের আদর্শ বিক্রি করে দেওয়া নয়। বরং এটি হলো সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী একটা সাধারণ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো, যেখানে প্রতিটি পক্ষ নিজের পরিচয় বজায় রেখে একসাথে কাজ করে।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—
দ্বীনের বড় বড় বিপদে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, ওলামায়ে উম্মত বারবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, কিন্তু কেউই নিজের আদর্শ হারাননি।
আত্মবিশ্বাসের সংকটই আসল সমস্যা
যারা ঐক্যকে ভয় পান, তাদের ভেতরে আসলে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকে।
নিজের অবস্থান, জ্ঞান ও আদর্শ সম্পর্কে যদি অভ্যন্তরীণ দৃঢ়তা না থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা মনে করেন যেকোনো সহযোগিতা তাদের ভেসে নিয়ে যাবে।
কিন্তু—
যাদের ভেতরে শক্ত আত্মবিশ্বাস থাকে, তারা জানেন—
ঐক্যে শক্তি আছে, বিভাজনে দুর্বলতা।
ময়দানে জয়ী হতে চাইলে প্রথম শর্ত—নিজের পরিচয় সম্পর্কে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস।
আর যে আত্মবিশ্বাসী, সে কখনো ঐক্যকে ভয় পায় না।