23/04/2025
আরবের বিখ্যাত কবি ইমরুল কায়েসের কবিতা প্রেম, প্রকৃতি, বিচ্ছেদ, বীরত্ব এবং যাযাবর জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার গভীর প্রতিফলন। তাঁর কাব্যসংগ্রহ বিশেষত "আল-মুয়াল্লাকাত"-এ সংরক্ষিত, যা আরবি সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন। এখানে তাঁর কিছু কবিতার বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো।
১. "আমার ভালোবাসা মরুর বাতাস"
(মূল: لقد طوّفتُ في الآفاقِ حتى...)
আমি ঘুরেছি দিগন্তে, মরুর পথে,
যাযাবরের মতো ভালোবাসার খোঁজে।
তবে এমন রূপ আর এমন চাহনি,
কখনো দেখিনি কারও চোখে।
তোমার সৌন্দর্য যেন বজ্রবিদ্যুৎ,
যা হঠাৎ ঝলক দিয়ে হারিয়ে যায়।
তোমার হাসি যেন মরুর জল,
যা কষ্টের মাঝে শান্তি আনে।
---
২. "যোদ্ধার গর্ব"
(মূল: وَلَيلةٍ كالجَحيمِ طُولُهَا...)
এক রাত্রি কাটিয়েছি ভয়ংকর যুদ্ধে,
যেখানে তরবারি ঝলসে উঠেছিল বারবার।
আমি ছিলাম একাকী, উটের পিঠে,
আমার তরবারি ছিল আমার সাথী।
শত্রুরা এলো ঝড়ের মতো,
কিন্তু আমি পিছু হটিনি একবারও।
আমার ঘোড়া উড়ছিল বাতাসের মতো,
আমার অস্ত্র জ্বলছিল আগুনের শিখা।
---
৩. "বিচ্ছেদের শোক"
(মূল: أَجِدُ النّوى يعتادُني ويُريبُني...)
বিচ্ছেদ আমার হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে,
প্রিয়তমা হারিয়ে গেছে দিগন্তের ওপারে।
আমি একাকী মরুর পথে দাঁড়িয়ে,
তার জন্য অশ্রু ফেলার অধিকার খুঁজি।
আমার চোখের জল শুকিয়ে গেছে,
কিন্তু হৃদয়ের কান্না এখনো বয়ে যায়।
তুমি কি জানো, এই মরুর বাতাসে,
তোমার নাম ধ্বনিত হয় প্রতিক্ষণে?
---
৪. "উটের গান"
(মূল: تَحمّلْنَا هَواجرَها فَأَصبَحْنا...)
আমরা উটের পিঠে পাড়ি দিই মরুপ্রান্তর,
সূর্যের তাপে পুড়েও ক্লান্ত হই না।
আমার উট জানে পথের দুঃখ,
তবু সে চলে অবিরত, থামে না।
আমার পথ যেন জীবনযুদ্ধ,
যেখানে ভালোবাসা কেবলই মরীচিকা।
তবু আমি চলতে থাকি, আশায়,
যদি কোনোদিন তোমার দেখা পাই।
---
৫. "তোমার স্মৃতির কাছে ফিরে যাই"
(মূল: وقوفاً بها صحبي عليّ مطيّهم...)
আমার সঙ্গীরা বলে, "ভুলে যাও তাকে,"
কিন্তু আমি পারি না, হৃদয় বাঁধা তার স্মৃতিতে।
যেখানে সে একদিন বসেছিল,
সেখানে আজও আমার চোখ ভিজে আসে।
বাতাসের মধ্যে শুনি তার হাসি,
তার কণ্ঠস্বর মিশে গেছে বালুর স্রোতে।
আমি কি ভুলতে পারবো তাকে?
না, সে থেকে যাবে আমার প্রতিটি শ্বাসে।
ইমরুল কায়েস ছিলেন প্রাচীন আরবি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর কবিতায় প্রেম ও বিচ্ছেদ যেমন স্পষ্ট, তেমনই প্রকৃতির রূঢ় বাস্তবতা ও যুদ্ধজয়ের গল্পও উঠে এসেছে।
তাঁর লেখা "মুয়াল্লাকা" কবিতা আরবি সাহিত্যের সর্বোচ্চ কাব্যিক কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম।