18/08/2024
বিপ্লেবের সীমাবদ্ধতা: আমার উপলব্ধি
মনির ইউসুফ
. .অমর ব্যথায়
অসীম নিরুৎসাহে অন্তহীন অবক্ষয়ে সংগ্রামে আশায় মানবের
ইতিহাস-পটভূমি অনিকেত না কি? তবু অগণন অর্ধসত্যের
উপরে সত্যের মতো প্রতিভাত হয়ে নব নবীন ব্যাপ্তির
স্বর্গে সঞ্চারিত হয়ে মানুষ সবার জন্যে শুভ্রতার দিকে
অগ্রসর হতে চায়- অগ্রসর হয়ে যেতে পারে।
(পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে- জীবনানন্দ দাশ)
জীবন হচ্ছে একটি আনন্দের অমৃত উৎস। কিন্তু, এসব উৎসের যেকোনো উৎসধারেই জনতা করে ভীড়, সেটারই সমস্ত সুধা পরিণত হয় গরলে।
সব জিনিসের প্রতি রয়েছে আমার সুপরিচ্ছন্ন পরিস্কার রুচি। কিন্তু যারা মুখ হা করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং অপবিত্র জিনিসের জন্য যাদের ব্যাকুল তৃষ্ণা, আমি তাদের ভালোবাসি না।
তারা দৃষ্টিপাত করে কূপের দিকে। আর দেখা যায় তাদের ঘৃণিত হাসি প্রতিফলিত হচ্ছে কূপের পানিতে।
তাদের জঘন্য লালসার বিষে অপবিত্র হয়েছে জীবনের সুধা ধারা এবং তাদের এই নোংরা স্বপ্নকে আনন্দ বলে প্রচার করতে গিয়ে ভাষাকেও তারা বিষাক্ত করে তুলেছে।
জনতার মুঠোর চাপে পড়ে অতি-পক্কতার দোষে নষ্ট হয় জীবনের ফল। আর তাদের অলক্ষণে দৃষ্টির সামনে জীবনের বৃক্ষ তার মূল থেকে উপড়ে পড়তে চায়- আর তার সবুজ পাতায় লাগে মৃত্যুর ম্লানিমা। জরথুস্ত্র বললেন- ফ্রেডারিখ নীটশে, (পৃষ্ঠা ১০১-১০২), মহীউদ্দীন অনূদিত, দিব্য প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০০৫).
ছাত্র অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর শাসন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে না দিলে কোনো না কোনোদিন এদের পতন হতো, একনায়ক সুলভ ও ফ্যাসিস্ট ক্ষমতার স্বাভাবিক গরিমার ভেতর সে পতনের বীজ অংকুরিত হতে থাকে।
কিন্তু ক্ষমতাধর শাসকশ্রেণি শাসন গরিমায় তা টের পেয়েও একের পর এক জনবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটাতে থাকে।
এই আন্দোলনের সমস্ত কৃতিত্ব শাসকবিরোধী শ্রেণির যেমন প্রাপ্য, তেমনি প্রাপ্য গণজনেরও। কেননা, এতে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন ছিল, অংশগ্রহণ ছিল পার্টিজানদেরও। বিএনপি, জামাত, গণসংহতি, বামদলসমূহ ইত্যাদি। বুদ্ধিজীবী শ্রেণির একাংশের অংশগ্রহণ এই আন্দোলনকে তরান্বিত করেছে।
পার্টিজানেরা এতদিন কোথায় ছিল? যারা বাচ্চাদের রক্তের বিনিময়ে শাসনক্ষমতায় যাওয়ার জন্য স্বপ্নেবিভোর হয়ে আছে। বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের পূর্বে যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্দোলন করেছে তারা অবশ্যই বামসংগঠনসমূহ, কবি সাহিত্যিকদের কিছু আন্দোলন। এখানে আমি ক্ষমতায় যাওয়ার লোভের আন্দোলনকে এক করে দেখেতে পারি না। যারা ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে আন্দোলন করেছে তাদেরকে আমি অভিনন্দিত করতে পারি না।
তাই, আমার উপলব্ধি ভিন্ন। যারা নিজের শ্রেণির পার্টিজানের মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছে তারাও ঐ পার্টি বা ফ্যাসিস্টদের অন্তর্গত। আমরা অতীতে দেখেছি, অতীতের ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না, এখনও নিচ্ছে না। সত্তা এখানে নিজের সঙ্গে নিজে বুঝাপড়া করতে পারে না। অজকে যারা বিএনপি-জামাত, বাম বা অন্যান্য নতুন দল তারা কি হলফ করে জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারবে ক্ষমতায় গিয়ে তারাও একনায়কসুলভ ফ্যাসিস্ট আচারণ করবে না। সেই না পারার সিনড্রমতো এখন দেখা যাচ্ছে।
এই ছাত্রঅভ্যুত্থানকে আমি গণঅভ্যুত্থান বলতে নারাজ। কেননা, পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই- আভিধানিক অর্থে যে গণঅভ্যুত্থান তা ঘটেছে। এটিকে সরকার পতনের আন্দোলন বলতে পারি।
কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ম্যাসাকারও খুব কম হয়েছে। নিজ দেশের সরকার দ্বারা নিরীহ ছাত্র আন্দোলনে সরকার পক্ষ এমন নৃশংস হয়েছে তা এই মুহূর্তে ভাবাও যাচ্ছে না। এই আন্দোলনে পথশিশু বা টোকাইরা অংশগ্রহন করেছে সবচেয়ে বেশি। যাদের কোন ঘর নেই, পথই ঘর। এবং টোকাই বলে তুচ্ছ এদের এই ফ্যাসিস্ট সরকার নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে। এখনও তাদের কতজন শহিদ হয়েছে তার হিসেব মেলেনি। তাই বলবো সব ক্রেডিট নেওয়ার আন্দোলন নই এটি, ক্ষমতা নেওয়ার আন্দোলনও না।
মানুষের সার্বিক মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। এখন যারা ক্ষমতা নিয়েছেন তাদের ভাল কাজকে আমরা সমর্থন জানাবো, তারা খারাপ কাজকে আমরা নিন্দা করবো। তাদের ভুল হলে তারা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠলে আমরা আবারো পথে নামবো। আমরা সব সময় বিরোধী পক্ষে। ক্ষমতার নোনতা স্বাদ আমাদের জন্য নই। তবে, ভালভাবে বাঁচার জন্য একটি রাষ্ট্রে ব্যক্তির যেটুকু প্রাপ্য তা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। স্বর্গে সঞ্চারিত হয়ে মানুষ সবার জন্যে শুভ্রতার দিকে অগ্রসর হতে চায়- অগ্রসর হয়ে যেতে পারে....