27/08/2025
কানাইঘাটে বিশাল গণ-মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ: জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন বাতিলের দাবিতে দুই জমিয়তের যৌথ উদ্যোগ
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন ও সর্বপ্রকার কার্যক্রম বাতিলের দাবিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়ত উলামা বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে কানাইঘাট বাজারে বিশাল গণ-মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৩টায় দারুল উলূম মাদ্রাসা থেকে শুরু হওয়া মিছিল উত্তর বাজার হয়ে কানাইঘাট থানা প্রদক্ষিণ করে রামিজা পয়েন্টে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ স্থলে মিলিত হয়। দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিল ও ব্যাপক জনসমাগম যেন ছিল “অস্তিত্ব জানানোর” এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
যদিও মূলত জাতিসংঘের কার্যক্রমের বিরোধিতার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, এটি ছিল কানাইঘাটে দুই জমিয়তের প্রথম যৌথ উদ্যোগ। ফলে শুধুমাত্র আলেম উলামা নয়, সাধারণ জনগণও এতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেন। ঐতিহ্যবাহী কানাইঘাটবাসী প্রকৃতপক্ষে আলেমপ্রিয়, এবং দুই জমিয়তের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তাদের আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
২০০৪ সালে চারদলীয় জোটে যোগ না দেওয়ার প্রেক্ষাপটে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে গঠিত হয় জমিয়তে উলামা। দীর্ঘ ২০ বছর পর, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (২৩ নং নিন্ধিত) এবং জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ (অরাজনৈতিক) নির্বাচনী সমঝোতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দারুল উলূম কানাইঘাটের শায়খুল হাদীস খলিফায়ে বায়মপুরী শায়খ মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস লক্ষীপুরী। যৌথ পরিচালনায় তেলাওয়াত করেন মুফতি ইবাদুর রহমান ও কারী মাও. হারুন আহমদ, এবং মুশাহিদিয়া কেরায় বিভাগের প্রধান কারী সাজ্জাদুর রহমান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে জমিয়তে উলামা বাংলাদেশের সভাপতি, খলিফায়ে ফেদায়ে মিল্লাত আল্লামা আলিম উদ্দীন দুর্লভপুরী বলেন, “বর্তমান ইন্টেরিম সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ না করে পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের জন্য তিন বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। পার্বত্য অঞ্চলসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এই কার্যালয় অনিয়মিত হস্তক্ষেপ করতে পারে। সমকামিতা, ট্রান্সজেন্ডার এবং অন্যান্য অনৈসলামিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রচেষ্টা এটির মূল লক্ষ্য। তাই বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এর কোনো প্রয়োজন নেই। ফিলিস্তিনে এর কার্যক্রমে দেখা যায়, মানবাধিকারের নামে কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টায় ভ্রান্ত ফলাফল হয়েছে। তাই দ্রুত এই চুক্তি বাতিল করতে হবে।”
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি, সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনের ভবিষ্যৎ কান্ডারি শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি বলেন, “ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তাই বাংলাদেশে মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের কোনো প্রয়োজন নেই। সরকারের উচিত দ্রুত এই চুক্তি থেকে বিরত থাকা।”
সভায় প্রস্তাবনা পাঠ করেন জমিয়তে উলামা বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি ও পূর্ব সিলেট আযাদ দীনী এদারা বোর্ডের শিক্ষাসচিব মাও. শামসুদ্দিন দুর্লভপুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস আল্লামা শফিকুল হক সুরইঘাটি, জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাও. জয়নুল আবেদীন, কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সিলেট-৪ আসনে জমিয়ত মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মুহাম্মদ আলী।
অনুষ্ঠানটি আল্লামা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস শায়খে লক্ষীপুরীর দুআ ও নসিহতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।