মাসিক আল কাউসার

  • Home
  • মাসিক আল কাউসার

মাসিক আল কাউসার Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from মাসিক আল কাউসার, Media/News Company, .

🕌 ইমাম হিসেবে সমাজ সংস্কারে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কিছু কৌশল✍️ — মুহাম্মাদ নূরুল আমিন (একজন দায়ী ও ইমাম)✅ সমাজে কিছু বিদ...
26/06/2025

🕌 ইমাম হিসেবে সমাজ সংস্কারে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কিছু কৌশল

✍️ — মুহাম্মাদ নূরুল আমিন (একজন দায়ী ও ইমাম)

✅ সমাজে কিছু বিদআতি প্রথা, যেমন মৃত্যু উপলক্ষে তিন দিন, চল্লিশ দিন, বা খাবার আয়োজন—এসব বন্ধ করা সহজ নয়। কিন্তু হেকমত, ধৈর্য, আন্তরিকতা ও সুদৃঢ় অবস্থানের মাধ্যমে সমাজকে ধীরে ধীরে বদলানো সম্ভব—ইন শা আল্লাহ।

আমি কীভাবে চেষ্টা করেছি?

➊ মৃত্যু কেন্দ্রিক আয়োজন ও দাওয়াতে আমার কৌশল:

দাওয়াতে গেলে দোয়া করতাম – এবং ধীরে বের হয়ে আসতাম।

আয়োজকদের বলতাম:

“আমি এই দোয়া করেছি শুধু আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে, মৃতের মাগফিরাতের জন্য, বিনিময়ে কিছু নেই। খাবার খাবেন গরীবরাই।”

টাকার বিষয়ে বলতাম:
“মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে টাকা নেওয়া আমার বিবেকের কাছে অমানবিক মনে হয়।”

🎯 ফলাফল: তারা মেনে নেয়। কখনোই তাদের ছোট করিনি। বরং ধীরে ধীরে বিষয় বুঝিয়েছি।

➋ অন্যান্য ইমামদের বিষয়ে সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি:

কেউ যখন বলতো: “অমুক ইমাম নেন, আপনি কেন নেন না?”
তখন বলতাম:
“হয়তো উনি অপারগ হয়ে নিচ্ছেন। হয়তো তার বেতন ঠিক নাই। হয়তো সমাজের চাপে আছেন। তার মতো করে আমাকে ওজন করা ঠিক হবে না।”

📌 উল্টো ইমামদের সমস্যা দূর করতে বলতাম। কারণ যারা নিচ্ছেন, তারা দোষী নয় বরং পরিস্থিতির শিকার।

➌ যারা আমাকে বুঝাতে চাইতো — ‘সবাই নিচ্ছে, আপনি নেন না কেন?’

আমি বলতাম:
“চিংড়ি মাছ সবাই খায়? টাকি মাছ সবাই খায় না। কারো রুচি একরকম, কারো ভিন্ন। আপনি কি কাউকে জোর করে খাওয়াবেন? আমারও তো স্বাধীনতা থাকা উচিত, তাই না?”

✅ যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা দিয়েছি, কাউকে ছোট করিনি।

➍ অন্যান্য ইমামদের সম্মান দিয়েই এড়িয়ে চলা:
দাওয়াতে গেলে দোয়া শেষে বলতাম, “হুজুর একটু ব্যস্ত আছি, উঠি।”
নিজেকে পরহেজগার বানাইনি, বরং তাদের সীমাবদ্ধতা বুঝেছি।

➎ বিতর্কপ্রিয় লোকদের এড়িয়ে যাওয়া কৌশল:
“ভাই, আগে থেকেই অন্য জায়গায় খাবারের ব্যবস্থা আছে।”
“আপনার দাওয়াত উপেক্ষা নয়, বরং পূর্বব্যবস্থা।”

🎯 তাদের সম্মান রেখেই আসল উদ্দেশ্য পূরণ করেছি।

➏ বিস্তৃত দাওয়াহ: মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দেওয়া ধাপে ধাপে:

ফজরের পর, জুমার বয়ান, অন্যান্য সময় দলীলভিত্তিক আলোচনা করতাম।

সংক্ষিপ্ত সারাংশ ফটোকপি করে দায়িত্বশীলদের হাতে দিতাম।

➐ একান্তে বলে দিতাম স্পষ্ট করে:
“আমি আপনাদের চিন্তা, প্রথা আমার ওপর চাপিয়ে দিলে সসম্মানে বিদায় নিবো।”
“আমি শিখাতে এসেছি, শিখতে নয়। কিন্তু অহংকার করে নয়, দায়িত্ববোধ থেকে।”

✅ সারকথা:

📌 আদর্শিক অবস্থান রাখা যায় — যদি হেকমত থাকে।
📌 মানুষকে অপমান নয়, সম্মান দিয়ে বোঝানোই ফলপ্রসূ।
📌 সত্যে অটল থাকা মানে কারো গায়ে ওঠা নয়, বরং নিজেকে রক্ষা করে অবস্থান ধরে রাখা।

🤲 আল্লাহ তাওফিক দিন, যেন ইমামরা কেবল বেতন-ভাতা না দেখে সত্য প্রতিষ্ঠায় নিজের অবস্থান বুঝে চলেন।
সমাজের মানুষও যেন ইমামদের পাশে দাঁড়িয়ে বাস্তব সহযোগিতা করেন।

📌 কারণ, সমাজ বদলাতে হলে কেবল ইমাম নয়, সম্পূর্ণ সমাজকেই বদলাতে হবে।

✍️ – মুহাম্মাদ নূরুল আমিন

⏭️ঈসালে সওয়াবের মাসনুন পদ্ধতি
https://www.alkawsar.com/bn/article/2009/
⏭️কিছু মুবাহ পদ্ধতি
https://www.alkawsar.com/bn/article/2022/
⏭️কিছু মনগড়া পদ্ধতি
https://www.alkawsar.com/bn/article/2094/
এসকল বিষয় বারংবার বুঝাতাম তারপরও আমি পুরো সফল নই তবে আশাবাদী। দোয়া করবেন

‘ঈসালে সওয়াব’ ফারসী শব্দ। আরবীতে হবে ‘ঈসালুস সাওয়াব’ (তবে এ ক্ষেত্রে আরবীতে অন্য শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ‘ই.....

05/06/2025

কুরবানীর পশু জবাই করা সংক্রান্ত মাসআলা
নিজ হাতে জবাই করা উত্তম
---------------------------------------
আনাস ইবনে মালিক রা. বলেন-

ضَحّى النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِكَبْشَيْنِ أَمْلَحَيْنِ، فَرَأَيْتُهُ وَاضِعًا قَدَمَهُ عَلَى صِفَاحِهِمَا، يُسَمِّي وَيُكَبِّرُ، فَذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি সাদা-কালো বর্ণের নর দুম্বা কুরবানী করেছেন। এবং বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলেছেন। আর আমি দেখেছি যে, তিনি দুম্বা দুটির গর্দানে পা রেখে নিজ হাতে সেগুলো জবাই করেছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৫৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৮৭
জবাই করার সময় কষ্ট দেওয়া যাবে না
-----------------------------------------------------
হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

إِنّ اللهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذّبْحَ، وَلْيُحِدّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ.

আল্লাহ তাআলা সকল কিছুর উপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। এতএব, যখন তোমরা (কাউকে শরীয়ত মুতাবেক হদ বা কিসাস হিসাবে) হত্যা করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা কর, যখন যবেহ করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ কর। এবং প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দিবে, যেন জবাইয়ের প্রাণির বেশি কষ্ট না হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৫৫; আবু দাউদ, হাদীস ২৮১৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪০৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৪০৫

অনেকে যবাইয়ের পর পশু ঠান্ডা হওয়ার পূর্বেই চামড়া ছিলার কাজ শুরু করে দেয়, যা মাকরূহ। এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
জবাই করার সময় কী বলবে?
-----------------------------------------
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন দুটি দুম্বা জবাই করেছেন। যখন সেগুলোকে কেবলামুখী করে শোয়ালেন, তখন বললেন-

إِنِّي وَجّهْتُ وَجْهِيَ لِلّذِي فَطَرَ السّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوّلُ الْمُسْلِمِينَ، بِسْمِ اللهِ اللهُ أَكْبَرُ، اللّهُمّ مِنْكَ وَلَكَ مِنْ مُحَمّدٍ وَأُمّتِهِ.

এরপর যবেহ করেছেন। -সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ২৮৯৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯৫; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫০২২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৭১৬

সুতরাং আমরা যবেহ-এর সময় বলব-

إِنِّي وَجّهْتُ وَجْهِيَ لِلّذِي فَطَرَ السّموَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا، وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ، اللّهُمّ مِنْكَ وَلَكَ،بِاسْمِ اللهِ، وَاللهُ أَكْبَرُ.

আয়েশা রা. থেকে অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিসমিল্লাহ বলে জবাই করেছেন এবং বলেছেন-

اللهُمّ تَقَبّلْ مِنْ مُحَمّدٍ، وَآلِ مُحَمّدٍ، وَمِنْ أُمّةِ مُحَمّدٍ.

হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে, মুহাম্মাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং মুহাম্মাদের উম্মতের পক্ষ থেকে কবুল করুন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৯১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯২

আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

بِسْمِ اللهِ مِنْكَ وَلَكَ اللهُمّ تَقَبّلَ مِنْ مُحَمّدٍ.

আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ! তোমার নিকট থেকে এবং তোমার উদ্দেশ্যে।হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। -আল মুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১১৩২৯

এই হাদীসগুলো থেকে বুঝা গেল, কুরবানীর পশু জবাই করার পর তা কবুলের জন্য আল্লাহর দরবারে উক্ত পদ্ধতিতে দুআ করা মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে নিজের নাম উল্লেখ করবে। যাদের জন্য ঈসালে সওয়াব করতে চাচ্ছে, তাদের নামও উল্লেখ করবে।
কুরবানীর পশু জবাই সম্পর্কীয় ভ্রান্তিসমূহ
=============================
হুজুরকে দিয়ে জবাই করানাে জরুরি মনে করা
---------------------------------------------------------------
অনেকেই কুরবানীর পশু মসজিদের ইমাম বা হুজুরকে দিয়ে জবাই করানাে জরুরি মনে করে। অথচ এটি ভুল ধারণা। কুরবানীদাতা জবাই করতে জানলে নিজেই জবাই করা উত্তম। -মুসনাদে আহমাদ হাদীস ২২৬৫৭; আলমগীরী ৫/৩০০; ইলাউস্ সুনান ১৭ /২৭১-২৭৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২
কুরবানীর আগে শরিকদের নাম পড়া
---------------------------------------------------
সাধারণত কুরবানীর আগে সকল শরিকের নাম পিতার নামসহ পড়াকে জরুরি মনে করা হয়। ফলে অধিকাংশ জায়গায় পশুকে শুইয়ে বেধে জবাইয়ের জন্য পূর্ণ প্রস্তুত করার পরও জবাইকারীকে ওই নামের তালিকা পড়তে দেখা যায়। একাজটি নিতান্তই ভুল। শরিকদের নাম পড়া জরুরি নয়। এমনকি জবাইকারী শরিকদের কথা না জেনে জবাই করলেও সকল শরিকের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। কেননা কাদের কুরবানী করা হচ্ছে তাতাে নির্দিষ্টই আছে। এখন জবাইয়ের মুহূর্তে নামের তালিকা উচ্চারণ করার কোন প্রয়ােজন নেই। জবাইয়ের আগে এভাবে নাম উচ্চারণ করাটা সালাফ থেকে প্রমাণিত নয়। আর এমন অপ্রয়ােজনীয় একটি কাজের জন্য পশুকে জবাইয়ের পুর্বে কতইনা কষ্ট দেওয়া হয়।
জবাইয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তির সহযােগিতা
-------------------------------------------------
অনেক ক্ষেত্রে জবাইকারী জবাই করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে কসাই বা অন্য কেউ এসে ছুরি ধরে এবং বাকি জবাই পূর্ণ করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বিসমিল্লাহ বলতে শােনা যায় না। যদি প্রথম ব্যক্তির জবাই সম্পন্ন না হয় (অর্থাৎ দুই শাহরগ, শ্বাস নালী ও খাদ্যনালী-এ চারটির কমপক্ষে তিনটি কাটা না হয় ) তাহলে দ্বিতীয় জনকে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলতে হবে। অন্যথায় জবাই অশুদ্ধ হয়ে যাবে। ওই পশুর গােস্ত খাওয়া হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪
ওজর ছাড়া ১১ বা ১২ তারিখে কুরবানী করা
-------------------------------------------------------------
সাধারণত যাদের একাধিক কুরবানী থাকে তাদেরকে ১০ তারিখে একটি এবং ১১ বা ১২ তারিখে অন্যটি কুরবানী করতে দেখা যায়। বিনাওজরে এমন করা ঠিক নয়। বিনাওজরে প্রথমদিন কুরবানী না করে পরে কুরবানী দেওয়া অনুত্তম। -মুআত্তা মালেক ১৮৮; বাদায়েউস্ সানায়ে ৪/১৯৮; আলমগীরী ৫/২৯৫
পণ্ড ঠাণ্ডা হওয়ার আগে চামড়া ছিলা
--------------------------------------------------
অনেকেই পশু ঠাণ্ডা হওয়ার আগে পায়ের রগ কাটা এবং চামড়া ছিলা শুরু করে। এতে পশু কষ্ট পায়। এটি মাকরূহ। পশুকে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত কষ্ট দেওয়াই গুনাহ। -জামে তিরমিযি ১/২৬০, সূনানে আবু দাউদ ২/৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩; আলমগীরী ৫/২৮৭
*****
কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর
===============
৩৯৪৫. প্রশ্ন
এবার কুরবানীর ঈদে আমাদের মহল্লায় ১০/১১ বছরের এক ছাত্র স্বাভাবিক নিয়মে একটি গরু যবাই করে। কিন্তু পরে একজন বলল, কুরবানীর পশু যবাইকারীর বালেগ হতে হবে। ১৫ বছরের কম বয়সের কেউ যবাই করলে কুরবানী সহীহ হয় না। জানতে চাই, এ লোকের কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী আর উক্ত কুরবানীর কী হুকুম?

উত্তর
বুঝমান না-বালেগ যদি সঠিক পন্থায় পশু যবাই করে তাহলে তা সহীহ হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, বালেগ-না-বালেগ, পুরুষ-মহিলা যে-ই (পশু) যবাই করুক তা খাও। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস: ৮৫৫২) মুজাহিদ রাহ. বলেন, না-বালেগের জবাইয়ে কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৮৫৫৪) তবে জবাই যেন সঠিকভাবে হয় তাই বালেগ সক্ষম ব্যক্তিরই জবাই করা উচিত।

-কিতাবুল আছল ৫/৪০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৩৯০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৭

*****

৩০৩০. প্রশ্ন
এক লোক গরু যবাই করার জন্য আমাকে তার বাসার কাছে নিয়ে যায়। কসাইরা গরুটাকে উত্তর দিকে মাথা ও পূর্ব দিকে পা দিয়ে শুইয়ে দেয় এবং আমিও অজ্ঞতাবশত ঐভাবে যবাই করে দেই। যবাইয়ের সময় কুরবানীদাতা উপস্থিত ছিলেন না। পরে সে জানতে পেরে আমাকে খুব বকাঝকা করে এবং বলতে থাকে, তুমি আমার কুরবানী নষ্ট করেছ। এখন তুমি জরিমানা দিবা ইত্যাদি। এখন আমার প্রশ্ন হল, উক্ত কুরবানী কি সহীহ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর
হ্যাঁ, ঐ কুরবানী সহীহ হয়ে গেছে। পশু যবাইয়ের সময় পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং সীনা কিবলামুখী করে যবাই করা উত্তম।

হাদীস শরীফে আছে, জাবির রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন হৃষ্টপুষ্ট শিং বিশিষ্ট দুটি ভেড়া যবাই করেছেন। তিনি ভেড়া দুটির সীনা কিবলামুখী করে শুইয়ে দিলেন এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবাই করলেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৭৮৮; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১৬

সহীহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ ‘‘আলমিনহাজে’’ ইমাম নববী রাহ. বলেন, এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত এবং মুসলমানদের আমলও এভাবে চলে আসছে যে, যবাইয়ের সময় পশুকে বাম পার্শ্বদেশের উপর শোয়াবে। কেননা এ পদ্ধতিতে যবাইকারীর জন্য ডান হাতে ছুরি নেওয়া এবং বাম হাত দিয়ে পশুর মাথা চেপে ধরে যবাই করা অধিকতর সহজ। (শরহে মুসলিম, নববী ১৩/১২২)

তাই ইচ্ছাকৃত এর ব্যতিক্রম করা উচিত নয়। ভুলবশত বা বেখেয়ালে হয়ে গেলে অসুবিধা নেই।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১

*****

১৯৫৬. প্রশ্ন
খ) কুরবানীর পশুকে জবাই করার জন্য শোয়ানোর সময় তার মাথা কোন দিকে থাকবে? উত্তর দিকে নাকি দক্ষিণ দিকে এবং পশুর পা কোন দিকে থাকবে? পূর্ব দিকে নাকি পশ্চিম দিকে?

উত্তর
খ) পশুকে জবাই করার সময় মাথা দক্ষিণ দিকে ও সীনা কিবলামুখী থাকবে। এতে পা পশ্চিম দিকে থাকবে। এভাবে শোয়ানো উত্তম।-উমদাতুল কারী ২১/১৫৭; ফাতহুল বারী ১০/২১; ইলাউস সুনান ১৭/১০০

*****

৩৪৬৬. প্রশ্ন:
আমাদের এলাকায় দেখি যে, অনেক সময় কুরবানীর পশুকে মাটিতে শোয়ানোর সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পশুর পা ভেঙ্গে যায়। এমতাবস্থায় কেউ বলে যে, এ পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। কেউ বলে যাবে। মুফতী সাহেবের নিকট সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর:
কুরবানীর পশু জবাইর সময় শোয়াতে গিয়ে পা ভেঙ্গে গেলে তা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।
Ñআলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৭; মাজমাউল আনহুর ৪/১৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৫

*****

প্রশ্ন:
এ বছর আমরা একটি গরু কুরবানী করেছি। যবাইয়ের জন্য যখন শোয়ানো হল তখন যবাইয়ের পূর্ব মুহূর্তে গরুটি লাফিয়ে উঠে। ফলে ছুরির আঘাতে গরুটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। উক্ত অবস্থায় আমরা গরুটি যবাই করেছি। জানতে চাই, এর দ্বারা আমাদের কুরবানী আদায় হয়েছে কি?

উত্তর:
হ্যাঁ, গরুটি দ্বারা আপনাদের কুরবানী আদায় হয়ে গেছে। কারণ যবাইয়ের সময় ছুরির আঘাত বা অন্য কোনোভাবে পশুর অঙ্গহানি হলেও তাতে কুরবানীর কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এ পশু দ্বারা কুরবানী যথাযথভাবে আদায় হয়ে যায়।
-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৬৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/

*****

৩৮২৮. প্রশ্ন
ক) যদি কুরবানীর পশুর পেটে মৃত বাচ্চা পাওয়া যায় তবে তার বিধান কি? সেটা খাওয়া যাবে, নাকি ফেলে দিবে?

উত্তর
ক) কুরবানীর পশুর পেটে মৃত বাচ্চা পাওয়া গেলে বাচ্চার গোশত খাওয়া যাবে না। তা ফেলে দিতে হবে। তবে মূল পশুর গোশত খাওয়া যাবে এবং কুরবানী সহীহ হবে। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৮৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৬৫৬

প্রকাশ থাকে যে, যে পশুর গর্ভ অল্প দিনের ঐ পশু দ্বারা কুরবানী করা অনুত্তম। আর বাচ্চা হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে সে পশু দ্বারা কুরবানী করা মাকরূহ।

*****

প্রশ্ন:
আমাদের এলাকার কুরবানীর পশু যবাই, গোশত বানানো ইত্যাদি কাজের বিনিময়ে কসাইরা কুরবানীর গোশত ও চামড়া নেওয়ার শর্ত করে থাকে। কাজের বিনিময়ে গোশত দেওয়ার চুক্তি করা বৈধ কি না?

উত্তর:
কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয নেই। সুতরাং আপনাদের এলাকার ঐ প্রচলনটি নাজায়েয। এক্ষেত্রে করণীয় হল, কসাইয়ের সাথে কাজের বিনিময়ে টাকা বা অন্য কিছু দেওয়ার চুক্তি করবে। কুরবানীর প শুর কোনো অংশ দেওয়ার চুক্তি করবে না। হ্যাঁ, চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন বা গরীবদের যেমনিভাবে কুরবানীর গোশত বা চামড়া দেওয়া হয় তেমনি কোনো রূপ চুক্তি ব্যতিত কসাইকেও হাদিয়া হিসেবে কুরবানীর চামড়া বা গোশত দেওয়া যাবে। শর্ত বা চুক্তি করে কুরবানীর কোনো অংশ দেওয়া যাবে না।
হযরত আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উট নহর করতে আদেশ করেছেন এবং কসাইকে (পারিমশ্রমিক হিসেবে) কুরবানীর পশুর কোনো কিছু দিতে নিষেধ করেছেন। আলী রা. বলেন, আমরা তাদেরকে নিজেদের অংশ থেকে (এমনিই) দিয়ে থাকি। (পারিশ্রমিক হিসেবে নয়)।
-সহীহ বুখারী ১/২৩২; সহীহ মুসলিম ১/৪২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮

*****

৩৪৭২. প্রশ্ন:
আমাদের গ্রামে অনেক বাড়িতে এরকম প্রচলন আছে যে, কুরবানীর সময় কসাইয়ের সাথে তারা এভাবে চুক্তি করে, এই গরুটা বানিয়ে দিলে এত টাকা পাবা আর এত কেজি গোশত পাবা।
প্রশ্নহল, এভাবে টাকা ও গোশতের বিনিময়ে চুক্তি করা কি বৈধ? কেউ যদি এমনটি করে তাহলে সেক্ষেত্রে তার করণীয় কী?

উত্তর:
কুরবানীর পশুর গোশত বা অন্য কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া বৈধ নয়। সহীহ মুসলিমে আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনিবলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন, যেন আমি তাঁর উটের দায়িত্ব গ্রহণ করি এবং তার গোশত, চামড়া ও আনুষাঙ্গিক আচ্ছাদনবস্ত্র সদকা করি এবং (তিনি আদেশ করেছেন) এসব থেকে কোনো কিছু যেন কসাইকে না দেই। তিনি বলেছেন, তাকে (কসাইকে) তো আমরা নিজেদের থেকেই পারিশ্রমিক দিব।Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩১৭
সুতরাং কেউ যদি না জেনে এভাবে গোশতের মাধ্যমে পারিশ্রমিক আদায় করে দেয় তাহলে যে পরিমাণ গোশত পারিশ্রমিক হিসাবে দিয়েছে তার মূল্য গরীবদের মাঝে সদকা করা ওয়াজিব হবে।
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮

*****

২৯৪৩ . প্রশ্ন:
আমাদের এলাকায় কুরবানীর সময় পশুর চামড়া ছিলা, গোশত কাটা ও অন্যান্য কাজ এলাকার গরীব লোকেরা করে থাকে। বিনিময় হিসেবে তাদেরকে কিছু গোশত দেওয়া হয়। টাকা দিলে তারা টাকা নিতে চায় না। বরং কিছু গোশত পাওয়ার জন্যই তারা এ কাজ করে থাকে। প্রশ্ন হল, এভাবে তাদেরকে কাজের বিনিময়ে গোশত দেওয়া জায়েয হবে কি?
উল্লেখ্য, ঐ সময় পেশাদার কসাইও পাওয়া যায় না, যারা টাকার বিনিময়ে এ কাজ করবে।

উত্তর:
কুরবানীর গোশত, চামড়া বা অন্য কিছু বিনিময় হিসেবে দেওয়া জায়েয নয়। কেননা হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধ করা হয়েছে। আলী রা. বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন কুরবানীর উটের কাছে থেকে তার গোশত ও চামড়া সদকা করতে এবং কসাইকে তা থেকে কিছু না দিতে। তিনি আরও বলেছেন, আমরা কসাইকে নিজেদের পক্ষ থেকে পারিশ্রমিক দিতাম। (সহীহ বুখারী ১/২৩২)
তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাদের কাজের বিনিময়ে টাকা বা অন্য কিছু দিতে হবে। কোনো অবস্থায় কুরবানীর গোশত বিনিময় হিসেবে দেওয়া যাবে না। তবে টাকা বা অন্য কিছু দ্বারা পরিপূর্ণ পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়ার পর হাদিয়া হিসেবে কুরবানীর গোশত দিতে পারবে এবং দেওয়া উচিত।
-সহীহ মুসলিম ১/৪২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪২
[ মাসিক আলকাউসারের বিভিন্ন সংখ্যা থেকে সংগৃহীত ]
#কুরবানী #মাসিকআলকাউসার

27/07/2024

আপনি যা জানতে চেয়েছেন »
উত্তর প্রদানে : ফতোয়া বিভাগ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
মুহাররম ১৪৪৬ || জুলাই ২০২৪
আমানুল্লাহ - সিলেট
৬৪৯৫. প্রশ্ন
আমাদের মহল্লার মসজিদে নির্ধারিত ইমাম আছেন। তবে নির্ধারিত মুআযযিন নেই। তাই মহল্লার এক মুরব্বি লোক সাধারণত আযান দিয়ে থাকেন। ইমাম সাহেব না থাকলে কখনো কখনো তিনি ইমামতিও করেন। কিন্তু এই মুরব্বি আটরশির পীরের মুরিদ। এলাকার দ্বীনদার মুসল্লীগণ তাকে এই রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন; কিন্তু সে এই বিষয়ে কিছু শুনতেই রাজি নয়। এ বিষয়ে এলাকার লোকদের সাথে তার মাঝে মাঝেই ঝামেলা হয়। মসজিদ কমিটি বিষয়টির চূড়ান্ত মিমাংসা করার জন্য একবার তাকে নিয়ে বসে। তখন আটরশির পীরের বিষয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলে একপর্যায়ে সে বলে— ‘আপনারা সবাই জানেন, আমি আটরশির পীরের মুরিদ। আমি মসজিদ ছাড়তে পারি, আমি আমার পরিবার ছাড়তে পারি, কিন্তু আমি আমার পীরকে ছাড়তে পারব না। এতে যদি আমাকে জাহান্নামেও যেতে হয়, তাতেও আলহামদু লিল্লাহ।’ (নাউযু বিল্লাহ)।

তার এই বক্তব্যের পর এলাকায় তাকে নিয়ে আরো বেশি সমস্যা তৈরি হয়। এলাকার লোকদের সন্দেহ হচ্ছে যে, এই পীরের মুরীদের পেছনে নামায পড়া যাবে কি না? যদি তার পেছনে নামায পড়া হয়, তাহলে নামায সহীহ হবে কি না? এবং তাকে আযানের দায়িত্বে বহাল রাখা যাবে কি না?

মুফতী সাহেবের কাছে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টির সমাধান জানতে চাচ্ছি।

উত্তর
আটরশির পীর ও তার মুরিদদের ঈমান-বিধ্বংসী সুস্পষ্ট শিরকী ও কুফরী আকীদাসহ বহু ভ্রান্ত ও গোমরাহীপূর্ণ মতবাদ রয়েছে। যা তাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও লেখায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। যেগুলো বিশ্বাস করলে কোনো ব্যক্তি কিছুতেই সঠিক মুসলমান থাকতে পারে না। যার কিছু নমুনা সামনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রশ্নে আটরশির এমন-ই এক মুরিদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে, প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী যে নিজেই তার সম্পর্কে পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে, ‘আপনারা সবাই জানেন, আমি আটরশি পীরের মুরিদ। আমি মসজিদ ছাড়তে পারি, আমি আমার পরিবার ছাড়তে পারি, কিন্তু আমি আমার পীরকে ছাড়তে পারব না। এতে যদি আমাকে জাহান্নামেও যেতে হয়, তাতেও আলহামদু লিল্লাহ।’

তার এ কথা থেকেই স্পষ্ট, সে আটরশির শিরকী ও কুফরী আকীদা-বিশ্বাসের পরিপূর্ণ অনুসারী। তাছাড়া স্বয়ং তার এ কথাটিই আরেক ভয়ংকর ঈমান-বিধ্বংসী কুফরী কথা। অতএব এই ব্যক্তিকে কিছুতেই নামাযের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া যাবে না এবং তার পেছনে নামায পড়লে নামায আদায় হবে না। তাই মসজিদ কমিটির ওপর জরুরি হল, এই ব্যক্তিকে আযান-ইমামতি কোনো কিছুর সুযোগ না দেওয়া। এটি তাদের ঈমানী দায়িত্ব। এতে তারা অবহেলা করলে মসজিদে বাতিলপন্থী লোকের আযান-ইমামতির সুযোগ দেওয়া এবং মুসল্লীদের নামায সহীহ না হওয়ার দায়ভার তাদের ওপরও বর্তাবে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেফাযত করুন এবং দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।

আটরশির পীরের কুফরী ও শিরকী আকীদা-বিশ্বাস

আটরশির পীর ও তার মুরিদদের যে ভয়ংকর কুফরী ও শিরকী আকীদা-বিশ্বাসগুলো রয়েছে, তার থেকে নমুনাস্বরূপ কিছু বিষয় তুলে ধরা হল—

১. তাদের আকীদা হল, কালেমা পড়ার পর কেউ শিরকী ও কুফরী কথা ও কাজে ডুবে থাকলেও পরকালে তার মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিয়ে জান্নাত দিয়ে দিতে পারেন। এ ব্যাপারে আটরশির পীরের সুস্পষ্ট বক্তব্য এই—

‘যে ব্যক্তি এই কলেমা শরীফকে বিশ্বাস করে এবং মুখে উচ্চারণ করে এবং তাহার সহিত সে যদি শিরকী ও কুফরীর ভিতর ডুবিয়াও থাকে, তাহা হইলেও আশা আছে যে, এই কলেমা শরীফের দ্বারা সে একদিন মুক্তি পাইবে।’ (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ৩২২)

কুফর ও শিরক সম্পর্কে এ হচ্ছে তাদের আকীদা-বিশ্বাস। অথচ যে ব্যক্তি কুফরীতে ডুবে থাকবে সে নিশ্চিত কাফের। আর কাফের চিরস্থায়ী জাহান্নামী। পরকালে কখনোই মুক্তি পাবে না। এটি সরাসরি কুরআন কারীমের আয়াত দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ مَاتُوْا وَ هُمْ كُفَّارٌ اُولٰٓىِٕكَ عَلَیْهِمْ لَعْنَةُ اللهِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ النَّاسِ اَجْمَعِیْنَ،خٰلِدِیْنَ فِیْهَا لَا یُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَ لَا هُمْ یُنْظَرُوْنَ.

যারা কাফের এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করেছে ওদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও মানুষ সকলের লানত। যাতে ওরা চিরকাল থাকবে। ওদের থেকে শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং ওদের অবকাশও দেওয়া হবে না।(সূরা বাকারা (২) : ১৬১-১৬২)

আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন—

اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ ظَلَمُوْا لَمْ یَكُنِ اللهُ لِیَغْفِرَ لَهُمْ وَ لَا لِیَهْدِیَهُمْ طَرِیْقًا، اِلَّا طَرِیْقَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیْنَ فِیْهَاۤ اَبَدًا وَ كَانَ ذٰلِكَ عَلَی اللهِ یَسِیْرًا.

যারা কুফরী করেছে এবং (অন্যকে আল্লাহর পথে বাধা দিয়ে তাদের ওপর) জুলুম করেছে আল্লাহ কখনোই ওদের ক্ষমা করবেন না এবং ওদেরকে কোনো পথ দেখাবেন না, জাহান্নামের পথ ছাড়া, যেখানে ওরা চিরকাল থাকবে। আর এ আল্লাহর পক্ষে সহজ। —সূরা নিসা (৪) : ১৬৮-১৬৯

পক্ষান্তরে শিরকও এমন মহা পাপ যে, আল্লাহ পরকালে অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করলেও শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না। এটিও কুরআন কারীমে পরিষ্কারভাবে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا.

নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে শিরক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে এছাড়া অন্যান্য (গুনাহ) যার জন্য ইচ্ছা, ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শিরক করেছে সে সুদূর গোমরাহীতে পতিত হল। (—সূরা নিসা (৪) : ১১৬)

২. আটরশির পীরের আরেকটি ঈমান বিধ্বংসী দাবি এবং তার মুরিদদের ভয়াবহ শিরকী আকীদা হল, মুরিদ পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, সে কোনো বিপদে পড়লে পীর তা জানতে পারে এবং তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। এমনকি পীর দুনিয়া থেকে কবরে চলে যাওয়ার পরও তার এমন ক্ষমতা থাকে। মুরিদদের ভালো-মন্দ সবকিছু পীরের হাতে। মুরিদ বিপদে পড়ে পীরকে স্মরণ করে সাহায্য চাইলে পীর তাকে রক্ষা করতে পারে।

এ ব্যাপারে আটরশির পীরের বক্তব্য হল—

‘মুরিদ বিপদে পতিত হইয়া পৃথিবীর অপর প্রান্ত হইতেও আপন পীরকে স্মরণ করিলে, এই প্রান্ত হইতেও মুরিদের ডাকে সাড়া দিয়া পীরে কামেল আত্মিকভাবে তাওয়াজ্জুহর হাত বাড়াইয়া বিপদগ্রস্ত মুরিদকে বিপদ হইতে রক্ষা করিতে পারেন। এই ক্ষমতা যাহার নাই, তিনি কামেল মোকাম্মেল পীর নহেন।’ (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ৯০৫)

এ ব্যাপারে তার আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে—

‘আমার পীরের মতন ক্ষমতাধর ওলী পৃথিবীতে খুব কমই আসিয়াছেন। তিনি নূরময় জগতে চলিয়া গিয়াছেন ঠিকই, কিন্তু সেখান থেকেও যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিতেছেন। ইন্তেকালের পূর্বে আমাকে বলিয়াছেন— বাবা, তোমার কোনো চিন্তা নাই, তোমার যাবতীয় কাজ আমি আমার হাতে রাখিলাম।’ (নসিহত, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল প্রেস, আটরশি, দ্বিতীয় মুদ্রণ, পৃ. ১০৯৩)

এ হচ্ছে তাদের আরেক ভয়ংকর শিরকী আকীদা। ইসলামের আকীদা হল, কাউকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা কেবল আল্লাহ তাআলার হাতে। তেমনি সবার ভালো-মন্দের ক্ষমতাও কেবল আল্লাহ তাআলারই হাতে। সাধারণ কোনো মানুষ তো দূরের কথা, কোনো নবী-রাসূলের হাতেও আল্লাহ তাআলা এই ক্ষমতা দেননি। এমনকি কোনো নবী-রাসূল অন্যের ভালো-মন্দ তো নয়ই; স্বয়ং নিজের ভালো-মন্দের জন্যও আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল।

আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘোষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেন—

قُلْ لَّاۤ اَمْلِكُ لِنَفْسِیْ نَفْعًا وَّ لَا ضَرًّا اِلَّا مَا شَآءَ اللهُ وَ لَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَیْبَ لَا سْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَیْرِ وَ مَا مَسَّنِیَ السُّوْٓءُ اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِیْرٌ وَّ بَشِیْرٌ لِّقَوْمٍ یُّؤْمِنُوْنَ.

আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের ভালো-মন্দেরও মালিক নই। কিন্তু আল্লাহ যা চান (তাই হয়)। আর যদি আমি অদৃশ্যের কথা জানতাম, তবে নিশ্চয় বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতাম এবং আমাকে অকল্যাণ স্পর্শ করত না। আমি তো শুধু সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা— ঈমানদার লোকদের জন্য। (—সূরা আ’রাফ (৭) : ১৮৮)

অতএব আল্লাহ ছাড়া কাউকে লাভ-ক্ষতির মালিক মনে করা এবং বিপদ-আপদে অন্য কাউকে ডাকা ও গাইরুল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা— পরিষ্কার শিরক।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

وَ لَا تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُكَ وَ لَا یَضُرُّكَ فَاِنْ فَعَلْتَ فَاِنَّكَ اِذًا مِّنَ الظّٰلِمِیْنَ،وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَهُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.

আর আপনি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবেন না, যে আপনার উপকারও করতে পারে না এবং আপনার ক্ষতিও করতে পারে না। আপনি যদি (এরূপ) করেন, তবে তখন আপনিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যদি আল্লাহ আপনার ওপর কোনো কষ্ট আপতিত করেন, তবে এর অপসারণকারী তিনি ছাড়া আর কেউই নেই। আর যদি তিনি আপনাকে কোনো কল্যাণ পৌঁছাতে চান, তবে তার অনুগ্রহ রদকারী কেউ নেই। তিনি আপন বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন। আর তিনি অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। —সূরা ইউনুস (১০) : ১০৬-১০৭

সূরা ফাতেহায় ইরশাদ হয়েছে—

اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ.

আমরা আপনারই ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। (—সূরা ফাতেহা (১) : ৪)

সাহায্য প্রার্থনা সম্পর্কে এ হচ্ছে মুমিনের আকীদা। মুমিন কেবলই আল্লাহ তাআলার দরবারে সাহায্য প্রার্থনা করে। কোনো গাইরুল্লাহর কাছে কিছুতেই নয়।

৩. তাদের আরেকটি ভয়াবহ কুফরী আকীদা হল, ‘তাওহীদে আদইয়ান’। যার সারকথা হল, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত দ্বীন ইসলাম ছাড়াও যে কোনো ধর্মের অনুসরণ করে মানুষ মুক্তি পেতে পারে।

এ ব্যাপারে আটরশির পীরের বক্তব্য হল—

‘হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানগণ নিজ নিজ ধর্মের আলোকেই সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং তাহলেই কেবল বিশে^ শান্তি আসবে।’ (আটরশির কাফেলা, পৃ. ৮৯, ২য় সংস্করণ, ১৯৮৪)

কালেমা পাঠকারী মুসলমান মাত্রই জানে, এরূপ আকীদা-বিশ্বাস পোষণকারী ব্যক্তির ঈমান থাকে না। তার এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেব-দেবী ও অজস্র প্রতিমা পূজা করে জঘন্য প্রকৃতির কাফের মুশরিক হয়েও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারবে। তদ্রূপ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সুস্পষ্ট কাফের-মুশরিক হয়ে এবং আল্লাহর দুশমন হয়েও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারবে। জানা কথা যে, এমন জঘন্য আকীদা লালনকারী কিছুতেই মুসলমান হতে পারে না। জঘন্য প্রকৃতির কাফের মুলহিদ ও যিন্দিক ব্যতীত এমন আকীদা পোষণ করতে পারে না। যারা কাফের ও মুশরিক, কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, তারা আল্লাহর দুশমন। চির জাহান্নামী।

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে—

اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ.

যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। —সূরা মায়েদা (৫) : ৭২

শরীয়তে মুহাম্মাদী আবির্ভাবের পর আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন ও শরীয়ত গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন—

اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللهِ الْاِسْلَامُ .

নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৯)

আরো ইরশাদ করেন—

وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.

যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ৮৫)

কোনো মানব রচিত ধর্ম তো দূরের কথা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের পর ইসলাম গ্রহণ না করে বরং কেউ যদি পূর্ববর্তী কোনো শরীয়তেরও অনুসরণ করে, তাহলেও সে পরকালে মুক্তি পাবে না।

আল্লাহ তাআলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন—

وَ قُلْ لِّلَّذِیْنَ اُوْتُوا الْكِتٰبَ وَالْاُمِّیّٖنَ ءَاَسْلَمْتُمْ فَاِنْ اَسْلَمُوْا فَقَدِ اهْتَدَوْا وَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّمَا عَلَیْكَ الْبَلٰغُ وَاللهُ بَصِیْرٌۢ بِالْعِبَادِ.

এবং আহলে কিতাব ও নিরক্ষরদেরকে (আরবের মুশরিকদেরকে) বলে দিন, তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে হেদায়েত পেয়ে গেল। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে (আপনার চিন্তার কারণ নেই। কেননা) আপনার দায়িত্ব তো হল শুধু পৌঁছে দেওয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ২০)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন—

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَا نَصْرَانِيٌّ، ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِه إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ.

ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, এ উম্মতের ইহুদী বা নাসারা যে-ই আমার দাওয়াত পাবে আর আমার আনীত দ্বীনের ওপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, সে হবে জাহান্নামী। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৩)

শুধু এ কয়টিই নয়; বরং ঐ পীর ও তার অনুসারীদের আরো বহু ঈমান-বিধ্বংসী আকীদা-বিশ্বাস ও বক্তব্য রয়েছে। আর তাদের দ্বীন-ধর্ম পালনের পদ্ধতি যে সাধারণ মুসলমানদের থেকে ভিন্ন এ কথাও সবার জানা। সুতরাং এমন আকীদার লোকদেরকে মসজিদের কোনো দায়িত্ব প্রদান থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

শেয়ার লিংক
মুহাম্মাদ নোমান - কক্সবাজার
৬৪৯৬. প্রশ্ন
একবার আমরা কয়েক বন্ধু মিলে জুমার দিন সকালে সফরে বের হই। গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রায় তিনটা বেজে যায়। তখন সব জায়গায় জুমার নামায শেষ। যেহেতু আমরা সবাই মুসাফির, তাই সকলেই জামাতের সাথে দুই রাকাত যোহরের নামায আদায় করি। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি। আমাদের উক্ত নামায জামাতের সাথে পড়া সহীহ হয়েছে কি?

উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যোহর নামায জামাতের সাথে পড়া আপনাদের জন্য মাকরূহে তাহরীমী হয়েছে। কেননা যে এলাকায় জুমার জামাত হয় সেখানে যারা জুমায় শরীক হতে পারবে না, তাদের জন্য নিয়ম হল, যোহরের নামায একাকী আদায় করা। একাকী আদায় না করে জামাতে পড়া মাকরূহে তাহরীমী।

—আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৫৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৭

শেয়ার লিংক
সফওয়ান - নেত্রকোনা
৬৪৯৭. প্রশ্ন
আমি ঢাকায় পড়াশুনা করি। আমার বাড়ী নেত্রকোনা জেলা বারহাট্টা থানায়। একবার ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় নেত্রকোনা সদরে পৌঁছে যোহর নামায আদায় করি। মুসাফির হওয়ার কারণে কসর করি। বাড়িতে পৌঁছে দেখি, তখনো যোহর নামাযের ওয়াক্ত বাকি আছে। আমি জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে মুকীম হওয়ার পর কি যোহর নামায পুনরায় চার রাকাত পড়তে হবে।

উত্তর
না, উক্ত যোহর নামায মুকীম হওয়ার পর পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা মুসাফির অবস্থায় কোনো নামায কসর আদায় করার পর ওই ওয়াক্তের মধ্যেই মুকীম হয়ে গেলেও তা পুনরায় পড়ার বিধান নেই।

—কিতাবুল আছল ১/২৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৪০৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা, ৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪১

শেয়ার লিংক
মুহাম্মাদ ইহতেশাম - ফরিদপুর
৬৪৯৮. প্রশ্ন
ব্যস্ততার কারণে গতকাল আমার মাগরিব নামায পড়তে বিলম্ব হয়ে যায়। নামাযে দাঁড়ানোর সময় সন্দেহ হয়ে যে, মাগরিবের ওয়াক্ত বাকি আছে, না এশার ওয়াক্ত শুরু হয়ে গেছে। তখন উক্ত সন্দেহ নিয়ে এ নিয়তে নামায পড়লাম যে, ‘আজকের মাগরিবের নামাযটি আদায় করছি।’ নামায শেষে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, নামাযে দাঁড়ানোর আগেই মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেছে।

হযরতের নিকট প্রশ্ন হল, উক্ত সন্দেহ নিয়ে এভাবে আদায়কৃত নামাযটি কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামায আদায়ের সময় ওয়াক্ত থাকা না থাকার ব্যাপারে সন্দেহ থাকলেও যেহেতু ঐ দিনের মাগরিবের নিয়তেই তা পড়েছেন তাই আপনার উক্ত নামায সহীহ হয়েছে। তবে তা যেহেতু ওয়াক্তের পর পড়েছেন, তাই তা কাযা হিসেবে আদায় হয়েছে।

—আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/৪১৬; আযাযাখীরাতুল বুরহানিয়া ১/৫৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৬২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৬

শেয়ার লিংক
তাহনিয়া - ঢাকা
৬৪৯৯. প্রশ্ন
আমার ব্যবহারের কিছু অলংকার আছে। সেগুলোর কোনো কোনোটাতে দামী ডায়মন্ড বসানো আছে। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত অলংকারের যাকাত আদায়ের সময় কি এই ডায়মন্ডগুলোরও যাকাত দিতে হবে?

উত্তর
না, উক্ত ডায়মন্ডগুলোর যাকাত দিতে হবে না। কেননা স্বর্ণ রূপা ছাড়া অন্যান্য ধাতব ব্যবসার পণ্য না হলে, সেগুলোর যাকাত দেওয়া ফরয নয়। তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন—

لَيْسَ فِي الْجَوْهَرِ وَاللُّؤْلُؤِ زَكَاةٌ إِذَا لَمْ يَكُنْ لِلتِّجَارَةِ.

মনি মুক্তা ব্যবসার উদ্দেশ্যে না হলে, তাতে যাকাত নেই। (কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ২৯৯)

—কিতাবুল আছল ২/৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৭; আলগায়া, সারুজী ৬/১৩১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮০; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৭৩

শেয়ার লিংক
কমল চৌধুরী - মহিপাল, ফেনী
৬৫০০. প্রশ্ন
যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ায় গত সপ্তাহে সমুদয় সম্পত্তির হিসাব করে দেখি যে, আমার সর্বমোট বিশ লক্ষ টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদের ৫০,০০০ টাকা যাকাত আসে। তাই যাকাত দেওয়ার নিয়তে ৫০,০০০ টাকা আলাদা করে একটি ব্যাগে রেখে দিই। কিন্তু দুর্ঘটনাক্রমে টাকাসহ ঐ ব্যাগটি চুরি হয়ে যায়। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, এমতাবস্থায় কি আমার যাকাত মাফ হয়ে গেছে, নাকি পুনরায় ঐ পরিমাণ টাকা যাকাত হিসাবে দিতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর
যাকাত প্রদানের জন্য আলাদা করে রাখা টাকাগুলো চুরি হয়ে যাওয়ার দ্বারা উক্ত যাকাত আদায় হয়ে যায়নি। আপনাকে উক্ত যাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে।

তবে এখন আপনি চুরি হয়ে যাওয়া উক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা বাদ দিয়ে আপনার অবশিষ্ট ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার যাকাত (৪৮ হাজার ৭৫০ টাকা) আদায় করবেন।

—আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৩৩; শরহুয যিয়াদাত, কাযীখান ১/২৫১; খিযানাতুল আকমাল ১/২৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২১১; রদ্দুল মুহতার ২/২৭০

শেয়ার লিংক
আবদুর রহমান - গাজীপুর, ঢাকা
৬৫০১. প্রশ্ন
২০১৫ সালে আমার বাবা আমাকে হজ্বে নিয়ে যান। তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। এবং সে সময় আমার সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। এখন আলহামদু লিল্লাহ হজ্ব ফরয হওয়ার মতো ক্যাশ আমার নিকট জমা হয়েছে। হযরতের নিকট প্রশ্ন হল, পূর্বের আদায়কৃত হজ্বটি কি ফরয হিসেবে আদায় হয়েছে, না এখন নতুন করে ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে?

উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আদায়কৃত পূর্বের হজ্বটি দ্বারাই ফরয হজ্ব আদায় হয়ে গেছে। এখন হজ্ব করার মতো সম্পদের মালিক হলেও পুনরায় হজ্ব আদায় করা আপনার ওপর ফরয হবে না।

—আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ১৪৫; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ১/৪৯১; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৪

শেয়ার লিংক
মুহাম্মাদ উবাইদুল্লাহ করীম - সাভার, ঢাকা
৬৫০২. প্রশ্ন
ছোট একটি চাকরির সুবাদে ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকাতে একটি ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন বসবাস করছি। আমার নিজস্ব সম্পদ বলতে গ্রামে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া একটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। চাকরি শেষে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বর্তমানে আমরা সেখানে বসবাস করি না। ঐ বাড়িটা বিক্রি করলে ৯/১০ লাখ টাকার মতো হবে। মুহতারামের নিকট প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় আমার ওপর কি হজ্ব পালন করা ফরয?

উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওপর হজ্ব আদায় করা ফরয নয়। কেননা বর্তমানে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও গ্রামের ঐ বাড়িটিই যেহেতু আপনার মালিকানাধীন একমাত্র বাড়ি, তাই এটি বিক্রি করে হজ্ব করা আপনার ওপর ফরয হবে না।

—আলবাহরুর রায়েক ২/৩১৩; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২১; মানাসিকে মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬২

শেয়ার লিংক
শরিফুল ইসলাম - রংপুর
৬৫০৩. প্রশ্ন
আমি রাস্তায় বিভিন্ন সময় ফলমূল ও লেবুর শরবত বিক্রি করি। কখনো এমন হয়, শরবত পান করার সময় কাস্টমারের হাত থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে গ্লাস পড়ে ভেঙে যায়।

মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, এক্ষেত্রে তার থেকে উক্ত গ্লাসের জরিমানা নিতে পারব কি? জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর
কাস্টমারের হাত থেকে গ্লাসটি পড়ে যাওয়ার পেছনে যদি গ্লাসটি তার ভালোভাবে হাত দিয়ে না ধরা বা তার অন্য কোনো অবহেলা না থাকে, তাহলে এক্ষেত্রে তার থেকে উক্ত গ্লাসের জরিমানা দাবি করা বৈধ হবে না।

অবশ্য গ্লাসটি তার হাতে যাওয়ার পর সেটিকে যদি সে ভালোভাবে না ধরে বা তার অন্য কোনো অবহেলার কারণে যদি সেটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়, তাহলে তার থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন।

তবে এখানে উল্লেখ্য যে, কোন্টিকে কাস্টমারের ত্রুটি ও অবহেলা গণ্য করা হবে আর কোন্টিকে গণ্য করা হবে না— তা নির্ণয় করা সূক্ষ্ম বিষয় এবং মাসআলার হুকুম এর ওপরই নির্ভরশীল। অতএব বাস্তবে কখনো এমন ঘটলে কোনো মুফতী সাহেবের নিকট ঘটনার পুরো বিবরণ দিয়ে মাসআলা জেনে নিতে হবে।

—ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৮৬; আলমুহীতুর রাযাবী ৫/১৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৩৬৮

শেয়ার লিংক
নজীর আহমাদ - কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ
৬৫০৪. প্রশ্ন
গত ধানের মৌসুমে আমি ৯০০ টাকা দরে ৪০ মন ধান কিনে রেখেছি। আমার ইচ্ছা হল কয়েক মাস পরে যখন ধানের দাম বেড়ে যাবে তখন আমি ধানগুলো বিক্রি করে দেব। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ধানের দাম বেড়ে যায়। তখন আমি ধানগুলো বিক্রি করার ইচ্ছা করেছি।

আমি শুনেছি, শরীয়তে ‘ইহতিকার’ তথা পণ্য মজুদ করে রাখা নিষেধ। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার এ কাজ কী শরীয়ত-নিষিদ্ধ ‘ইহতিকার’-এর আওতায় পড়বে, নাকি এভাবে ব্যবসা করা আমার জন্য বৈধ হবে? বিষয়টির সমাধান জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যে পরিমাণ ধান কিনে রেখেছেন এর পরিমাণ যেহেতু সামান্য, যার কারণে বাজার প্রভাবিত হয় না এবং এলাকায় ধানের সংকট সৃষ্টি হয় না, তাই তা শরীয়ত-নিষিদ্ধ ‘ইহতিকার’ তথা মজুদকরণের আওতায় পড়বে না। কিন্তু যদি একই এলাকায় বহু মানুষ এ পরিমাণ ধান (বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্য) কিনে মজুদ করে রাখে যার দ্বারা এলাকায় ধানের সংকট দেখা দেয় এবং বাজারে ধানের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে তখন তা অন্যায় ও গুনাহের কাজ হবে। হাদীস শরীফে এসেছে—

مَنِ احْتَكَرَ فَهُوَ خَاطِئٌ.

যে ব্যক্তি পণ্য মজুদ করে রাখবে সে গুনাহগার হবে। (সহীহ মুসিলম, হাদীস ১৬০৫)

—শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৮/৫৪৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৮/৬০; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৮

শেয়ার লিংক
মুহাম্মাদ আহসান হাবীব - ঢাকা
৬৫০৫. প্রশ্ন
আমি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। ছাত্রদের মেধা বিকাশের লক্ষ্যে আমরা বছরের বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। প্রতিযোগিতার বিষয়গুলো হল, প্রবন্ধ রচনা, সাধারণ জ্ঞান, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, বক্তৃতা ইত্যাদি। এসব প্রতিযোগিতায় যারা ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান লাভ করে, তাদেরকে বিভিন্ন দ্বীনী কিতাবাদি পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নিয়ম হল, ২০০ টাকা করে জমা দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ না করলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় না। এই টাকা দিয়েই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কারের আয়োজন করা হয়।

মুহতারামের নিকট আমাদের জানার বিষয় হল, উক্ত পদ্ধতিতে প্রতিযোগীদের থেকে টাকা উঠিয়ে বিজয়ীদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা কি জায়েয আছে? যদি জায়েয না হয়, তাহলে এর শরীয়তসম্মত পদ্ধতি কী হবে?

উত্তর
প্রতিযোগীদের থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া নাজায়েয। এটি ‘কিমার’ তথা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

এক্ষেত্রে সঠিক পন্থায় পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে চাইলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ব্যতীত অন্য মাধ্যমে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

—মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৮৫৯; শরহুস সিয়ারিল কাবীর, সারাখসী ১/৬৩; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৭/৩৬৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০২; ফিকহুন নাওয়াযেল ৩/২১৭

শেয়ার লিংক
মুহাম্মাদ রবিউল হক - ফেনী
৬৫০৬. প্রশ্ন
গ্রাম-গঞ্জে বিভিন্ন সাপুড়েদেরকে দেখা যায় তারা সাপের খেলা দেখানোর জন্য সাপ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে থাকে। আর গ্রামের কিছু মানুষ ঘণ্টা প্রতি নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সাপুড়ের সাথে সাপ খেলা দেখানোর চুক্তি করে এবং খেলা দেখানো শেষ হলে দর্শকদের থেকে টাকা উঠিয়ে তার পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দেয়।

জানতে চাই, শরীয়তের দৃষ্টিতে সাপ খেলা দেখানো এবং এর বিনিময় নেওয়া কি জায়েয আছে?

উত্তর
সাপ খেলা দেখানো এবং একে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর বিনিময় নেওয়া জায়েয নয়। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি বিনিময়যোগ্য কাজই নয়। এ ধরনের খেলা দেখা ও দেখানো সম্পূর্ণ বেহুদা ও অনর্থক কাজ। এই খেলায় দ্বীনী ও দুনিয়াবী কোনো ফায়েদা বা উপকার নেই। বরং এধরনের অনর্থক ও বাজে কাজে সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করা— এ নিআমতগুলোর অপব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া এজাতীয় পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের অনেকেরই সাপের কামড়েই মৃত্যু ঘটে। এই কাজ নাজায়েয হওয়ার এটিও একটি কারণ। সুতরাং এ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

—জামে তিরমিযী, হাদীস ১৬৩৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৮/৫৪৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১৬/৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৯৪

শেয়ার লিংক
মামুন মুনশী - মোমেনশাহী
৬৫০৭. প্রশ্ন
আমি ও আমার ফুফাতো ভাই মিলে একটি কাপড় ইস্ত্রির দোকান দিয়েছি। আমাদের মাঝে এভাবে চুক্তি হয়, ইস্ত্রির অর্ডার গ্রহণ করা, কাপড় ইস্ত্রি করা— সব কাজ আমরা দুজনে মিলেই করব। যা আয় হবে তা আমরা উভয়ে মাস শেষে সমানভাবে ভাগ করে নেব। কিন্তু কিছুদিন পর আমার ফুফাত ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সে দোকানে আসতে পারেনি। সে দিনগুলোতে অর্ডারের সব কাপড় আমি একাই ইস্ত্রি করেছি।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, যে দিনগুলোতে দোকানের সব কাজ আমি একা করেছি, সে দিনগুলোর উপার্জিত টাকাও কি দুজনের মাঝে ভাগ করতে হবে, নাকি সে টাকা আমি একাই নিতে পারব?

উত্তর
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার শরীকের অসুস্থতার দিনগুলোতে কাপড় ইস্ত্রির সব কাজ আপনি একা করলেও তা থেকে উপার্জিত টাকা পূর্বশর্ত অনুযায়ী দুজনের মাঝেই ভাগ করতে হবে। তা আপনি একা নিতে পারবেন না। এধরনের চুক্তিতে কোনো শরীক কোনো কারণে কাজ করতে না পারলেও উপার্জিত অর্থ শর্ত অনুযায়ী দুজনের মাঝেই বণ্টিত হবে। যদিও বাস্তবসম্মত ওজর ছাড়া অবহেলাবশত এমনটি করা ঠিক নয়।

—কিতাবুল আছল ৪/৫১; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৫৭; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৩/২৫২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১০৩; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ৩/৪১৫

শেয়ার লিংক
মুহাম্মাদ বেলাল হোসেন - মুরাদনগর, কুমিল্লা
৬৫০৮. প্রশ্ন
আমি আলহামদু লিল্লাহ প্রতি বছর একটি গরু কুরবানী করি। তার গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগের কিছু অংশ এলাকার গরিব-মিসকীনকে দেই আর কিছু অংশ আমার গরিব আত্মীয়-স্বজনদেরকে দেই। এখন জানার বিষয় হল, কুরবানীর পশুর গোশত কি সমান তিন ভাগে ভাগ করা আবশ্যক, নাকি কেউ চাইলে পুরো গোশত নিজেই রেখে দিতে পারবে? আর আমি কি আমার গরিব আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে গেলে আমার দেওয়া উক্ত গোশত খেতে পারব?

উত্তর
কুরবানীর পশুর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের ও নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখা, আরেকভাগ আত্মীয়-স্বজনদেরকে দেওয়া এবং আরেকভাগ গরিব-মিসকীনদেরকে দেওয়া মুস্তাহাব।

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কুরবানীর গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ পরিবার-পরিজনকে দিতেন। আরেকভাগ গরিব আত্মীয়-স্বজনদেরকে দিতেন। আরেকভাগ দানপ্রার্থীদেরকে দান করে দিতেন। (আলমুগনী, ইবনে কুদামা ১৩/৩৭৯)

কুরবানীর গোশত এভাবে তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব; জরুরি নয়। সুতরাং পরিবারের প্রয়োজনে কেউ চাইলে উক্ত বণ্টনের ভেতর কমবেশ করতে পারবে। এতে কুরবানীর কোনো সমস্যা হবে না।

আর আপনার কোনো গরিব আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় গেলে, তারা যদি আপনাকে আপনার দেওয়া কুরবানীর গোশত দ্বারা মেহমানদারি করে, তা খেতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

—সহীহ মুসলিম, বর্ণনা ১৯৭২; তুহফাতুল ফুকাহা ৩/৮৭; ফাতাওয়া সিরাজিয়্যা, পৃ. ৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৪৮৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮

শেয়ার লিংক
নাবিলা - ফুলগাজী, ফেনী
৬৫০৯. প্রশ্ন
গত কুরবানীর ঈদের পরের দিন আমার বিবাহ হয়। বিয়ের আগে আমার মালিকানাধীন কোনো সম্পদ ছিল না। বিবাহের সময় উপহার ও মোহর বাবত তিন ভরি স্বর্ণ ও নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আমার মালিকানায় আসে। কয়েকদিন আগে আমার শ্বশুরবাড়ির এক মহিলা আমাকে বললেন, তুমি যেহেতু কুরবানীর সময়ের ভেতরেই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছ, তাই এই বছর তোমার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল। জানতে চাই, ঐ মহিলার কথাটি কি ঠিক? বাস্তবেই কি এ বছর আমার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল?

উত্তর
হাঁ, উক্ত মহিলা ঠিকই বলেছেন। কুরবানীর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ দশ যিলহজ্ব ফজর থেকে বার যিলহজ্ব সূর্যাস্তের ভেতর নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেই কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু কুরবানীর সময়ের মধ্যেই নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন, তাই এ বছর আপনার ওপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল। কিন্তু আপনি যেহেতু কুরবানী করেননি, তাই এখন আপনার করণীয় হল, কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করে দেওয়া।

—বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২০৩; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২১

শেয়ার লিংক
জাকের হুসাইন - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী
৬৫১০. প্রশ্ন
আমি একজন দরিদ্র লোক। আমার মালিকানায় চারটি গাভী আছে। এগুলোর দুধ বিক্রি করার মাধ্যমেই আমার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয়। আগামী কুরবানীতে এগুলোর একটিকে কুরবানী করার নিয়ত করেছিলাম; কিন্তু বর্তমানে আমি আর্থিক সংকটে আছি, তাই কুরবানীর নিয়তকৃত গাভীটি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছি।

এখন আমার জানার বিষয় হল, কুরবানীর নিয়ত করার কারণে গাভীটি কুরবানী করা কি আমার ওপর আবশ্যক হয়ে গেছে? শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য গাভীটি বিক্রি করার কোনো সুযোগ আছে কি?

উত্তর
প্রশ্নোক্ত গাভীটি কুরবানী না করে বিক্রি করে দেওয়া আপনার জন্য জায়েয হবে। কেননা এটি যেহেতু আপনার পালিত পশু; কুরবানী করার নিয়তে ক্রয় করেছেন এমন নয়, তাই এটি আপনি কুরবানী করার নিয়ত করে থাকলেও তা কুরবানী করা আপনার ওপর আবশ্যক হয়ে যায়নি।

—আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ৮/৩১৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ৩/৭৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১

শেয়ার লিংক
আবু রায়হান - নোয়াখালী
৬৫১১. প্রশ্ন
এবছর কুরবানী করার জন্য আমি একটি গরু ক্রয় করি। গরুটি রাস্তার পাশে বাঁধার পর গাড়ি চাপা পড়ে এর লেজের এক তৃতীয়াংশের বেশি থেতলে যায়। অবশিষ্ট লেজে পচন ধরার ভয়ে থেতলে যাওয়া অংশটি কেটে ফেলে দিতে হয়। এখন লেজের অধিকাংশ বাকি আছে। কিন্তু এর দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে কি না— এব্যাপারে বিপরীতমুখী দুই ধরনের কথাই শুনছি। কেউ বলেছেন, কুরবানী সহীহ হবে না। আবার কেউ বলেছেন, এখনো লেজের অধিকাংশ বাকি থাকায় কুরবানী সহীহ হবে। তাই হুযুরের কাছে অনুরোধ, এক্ষেত্রে শরীয়তের সঠিক সমাধান জানিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন?

উত্তর
উক্ত গরুটির লেজ যেহেতু অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট আছে, তাই তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। কেননা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য পশুর লেজ অন্তত অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট থাকা শর্ত। অর্ধেক পরিমাণ বা এর চেয়ে কম থাকলে তা দ্বারা কুরবানী সহীহ নয়।

—আলজামিউস সগীর, পৃ. ৪৭৩; শরহু মুখতাসা

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মাসিক আল কাউসার posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share