
14/07/2025
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোরবেলা অনেকটা ঘুমঘুম শহরের মতো—নিরব, ধূসর, পাখিদের আলস্যে ভরা ডাক। জগন্নাথ হল তখনো ঘুমে আচ্ছন্ন, কিন্তু রবীন্দ্র ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে একজন ঘুমাতে পারছিল না। তার চোখে ছিল দীর্ঘ নিঃশ্বাস, কণ্ঠে না বলা শত শব্দ, আর মনের ভেতর এক টুকরো ঝড়ের বাড়ি।
তার নাম ছিল সঞ্জু বাড়ই। Anthropology বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ছাত্র। চারপাশের সবাই তাকে চেনে ‘শান্ত ছেলে’ হিসেবে। যেই ছেলেটা ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকত, গ্রুপ ওয়ার্কে কথা কম বলত, কিন্তু যেই না বলা কথাগুলোর ভেতর লুকিয়ে ছিল গভীর কষ্ট, হয়তো কেউ জানত না।
আজ ভোরে, সাড়ে পাঁচটা নাগাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাতাসে হালকা ঠান্ডা ছিল। রবীন্দ্র ভবনের নবনির্মিত ছাদে দাঁড়িয়ে সঞ্জু হয়তো নিচের গাছগুলোর দিকে তাকিয়েছিল। সে হয়তো একটা চিঠি লিখেছিল—হয়তো মনে মনে, হয়তো কাগজে, যেটা কেউ কোনোদিন খুঁজে পাবে না।
তাকে কেউ দেখে না। সে এক পা এগিয়ে যায়, তারপর আরেক পা। মনে পড়ে ছোটবেলার কোনো কথা, কোনো হাসিমুখ—মায়ের ডাক, ছোট ভাইয়ের হাত ধরা, কিংবা বন্ধুদের আড্ডা। মনে পড়ে ব্যর্থ স্বপ্নগুলো, হয়তো কারো অবহেলা, সমাজের চাপ, অথবা নিঃসঙ্গতার ভীষণ বোঝা।
জগন্নাথ হলের আরেক শিক্ষার্থী, রাখাল রায়, তখনো ঘুম থেকে জেগে উঠেননি। কিন্তু একটু পরেই হলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক হৃদয়বিদারক সংবাদ—
“সঞ্জু ছাঁদ থেকে লাফ দিয়েছে।”
হলপ্রাঙ্গণে শুরু হয় কান্না, প্রশ্ন, স্তব্ধতা। প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল নিশ্চিত করেন খবরটা। কিন্তু কেউ নিশ্চিত করতে পারেন না কেন সঞ্জু এমন করল। কোনো সুইসাইড নোট ছিল না, কোনো চিৎকার ছিল না, শুধু ছিল নিঃশব্দ এক যাত্রা—যেটা হয়তো সে বহুদিন ধরে মনের ভেতর প্রস্তুত করেছিল।
কেউ কেউ বলবে, সে দুর্বল ছিল। কেউ বলবে, সমাজ তাকে বুঝতে পারেনি। কেউ হয়তো দোষ দেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপকে, কিংবা একাকীত্বকে। কিন্তু আসলে, সঞ্জু শুধু চেয়েছিল কেউ তাকে সত্যিকারভাবে দেখুক, বুঝুক, পাশে থাকুক।
আজ রবীন্দ্র ভবনের সেই ছাদ নিশ্চুপ। পাখিরা আবারও ডাকছে। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে কেউ যদি ভালোভাবে শোনে, এক চিলতে বাতাসে হয়তো ভেসে আসে এক অনুচ্চারিত প্রশ্ন—
“তুমি আমার কান্না শুনেছিলে?”
চলে গেলো সঞ্জু- কী ছিলো তার না বলা কথাগুলো-😉