17/07/2024
"আগামীকাল ভর্তি হতে ঢাকা যাবো আম্মা। তোমার না খুব ইচ্ছে ছিল আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো।"
"তুই এতো দূরে যাবি?আমি থাকবো কি করে?এর চেয়ে এখানেই কোথাও ভর্তি হয়ে পড়াশোনা কর।"
"আম্মা ঢাবির ইংরেজি বিষয় কম কথা না।তুমি চিন্তা করিও না।আমি টিউশনি করিয়েই নিজের খরচ চালাতে পারবো। তোমাদের ও কষ্ট হবে না।"
"তুই গেলে দোকানটার কি হবে?"
"ওটা রিন্তি খুব ভালো করেই চালিয়ে নিতে পারবে। শহর থেকে যারা মালপত্র নিতে আসবে তারা আব্বার সাথে কথা বলবে আর হিসাব রিন্তি দেখে নিবে।"
রুবেলের মা আর দ্বিমত করে না।সে শুনেছে স্বপ্নের শহরের নাম ঢাকা। যে শহরে তার ছেলের একটা চাকরির ব্যবস্থা হবে। তাদের সুদিন ফিরবে।রুবেল ঢাবিতে ভর্তি হলো। বড় ভাইদের চাকরির লড়াই দেখে সে ভয় পায় মনে মনে।সকল ক্ষেত্রেই যে
মেধা তালিকায় টিকেছে খুব কম।যার দিকে তাকায় কেবল কোটা আর কোটা। কখনো সামরিক কোটা আবার কখনো মুক্তিযোদ্ধা। হতাশ হয় সে। ফিরবে কি করে তবে সুদিন?
একদিন বিকেলে আড্ডায় শুনতে পেল কোটা বিরোধী আন্দোলন হবে।শুরু হলো দামাল ছেলেদের অধিকার আদায়ের দাবী।রাজপথে মিছিল নামলো।গা ভাসালো রুবেল নিজেও। মিছিলে পা রেখে গা শিউরে উঠে তার।তবুও ভয়ে পিছপা হয় না সে। এ যেন বইয়ের পাতায় লেখা সেই বায়ান্ন আন্দোলন।সেদিন ছিল রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই আর আজ কোটা মুক্ত করার দাবী।সেদিনের মিছিলে গু'লি চালিয়েছিল পাক বাহিনী আর আজ স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকদের সন্তানের উপর হামলা চালায় এদেশের গর্বিত এক দল। আহত, রক্তা'ক্ত দামাল সন্তানদের আজ উপাধি কেবল রাজাকার। রুবেলরা থামে না।রক্তে ঘামে ভিজে যায় তাদের শার্ট।ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে তারা এক দাবীতে অটল।হুট করে কেউ একজন আঘাত করে তার মাথায়।জ্ঞান হারিয়ে বেহুশ হয়ে তপ্ত পিচঢালায় পড়ে থাকে রুবেল।
রুবেলের দাদা যখন খবর পেল রুবেল আন্দোলনে আহত হয়েছে তখন বুক থাপড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।এই কারণে দেশ স্বাধীন করেছিল? তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই কারণ সনদ বানাতে চায় লাখ পাঁচেক টাকা।অথচ দশ গ্রামের মানুষ জানে যুদ্ধে গিয়ে ডান হাত অচল হলো তার।বড় ভাইটা ম'রলো।আজ তার নাতীকে রা'জাকার বলছে?অথচ ভূয়া সনদ নিয়ে ওই পাড়ার মতিন মিয়া আজ সমাজের শ্রেষ্ঠ সন্তান।তার নাতীরা কত বড় বড় চাকরি করে। রুবেলের দাদার হাহাকারে চারিপাশ ভারী হয়ে উঠে। বৃদ্ধ কেবল বলতে থাকে,
"ত্রিশ লাখ শহীদের দেশ নয় এ দেশ, এদেশ কেবল সনদধারী মুক্তিযোদ্ধাদের।"
---সুবাসিনী
Collected..