24/07/2025
আমাদের সভ্যতার প্রথম বৈশিষ্ট্য হল, এ সভ্যতার ভিত্তি তাওহিদ ও বিশ্বাসের ওপর স্থাপিত। এ সভ্যতাই সর্বপ্রথম মানবজাতিকে এক আল্লাহর প্রতি আহ্বান জানায়। শাসনবিধানে কেউ তাঁর অংশীদার নেই। কেবল তাঁরই ইবাদত করতে হবে এবং তাঁকেই লক্ষ্য ও আশ্রয় বলে স্বীকার করে নিতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
{إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ}
“আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং কেবল তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি”। [সুরা আল-ফাতিহা, আয়াত : ৫]
তিনিই সম্মান দান করেন, তিনিই লাঞ্ছিত করেন। দান ও অনুগ্রহ কেবল তাঁরই হাতে। আসমান ও জমিনে এমন কোনো বস্তু নেই, যা তাঁর অসীম ক্ষমতা এবং অধিকারের বাহিরে।
তাওহিদের তাৎপর্যকে মানুষের অন্তরে গেঁথে নেবার ফলেই মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে; শাসকশ্রেণির স্বৈরাচারতন্ত্র, পোপতন্ত্র বা ধর্মীয় পুরোহিততন্ত্রের কবল থেকে সাধারণ মানুষকে দিয়েছে মুক্তি। শাসক-শাসিতের সম্পর্ক স্থাপন করেছে, এক ইলাহের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করেছে—যিনি সারা বিশ্বের স্রষ্টা, সমগ্র জগতের রব। ইসলামি সভ্যতায় বিশ্বাসের এত বিরাট প্রভাব পড়ে, যা পূর্বাপর সকল সভ্যতা থেকে ইসলামি সভ্যতাকে এক ভিন্ন ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্টমণ্ডিত করে।
আকিদা-বিশ্বাস, নীতি-শৃঙ্খলা এবং শিল্প-সাহিত্যের সকল অঙ্গনে মূর্তিপূজার ধ্যান-ধারণা এবং চিত্রকল্প থেকে ইসলাম নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করে। একারণেই মুসলমানরা ইলিয়ডের মতো (Iliad) শিরকমিশ্রিত গ্রীক সাহিত্যের অনুবাদ থেকে বিরত ছিল।
চিত্রকল্প, শিল্পকলা এবং স্থাপত্যশিল্পে মুসলিমরা সুনিপুণ দক্ষতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে ইসলাম প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মূর্তিপূজার সকল বাহ্যিক কারণ—যেমন প্রিয় নেতা, সাধু ব্যক্তি, নবী-রাসুল ও দিগ্বিজয়ী মনীষীদের ভাষ্কর মূর্তি তৈরির অনুমতি ইসলাম দেয়নি। অথচ এ ধরনের ভাষ্কর প্রাচীন এবং আধুনিক সভ্যতার প্রতিফলন বলে গণ্য করা হয়। ইসলাম এ ব্যাপারে অনুমতি দেয়নি। কারণ, সভ্যতার কোনো উপাদানই ইসলামের দৃষ্টিতে ‘তাওহিদ ও বিশ্বাস’-এর সমপর্যায়ে ও সহাবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম নয়।
এ ‘তাওহিদ ও বিশ্বাস’ ইসলামি সভ্যতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে পূর্বাপর সকল সভ্যতার উপর বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। এজন্যই ইসলামের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, আইন প্রণয়ন, জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী, সমাজের সামগ্রিক দৃশ্যপট, জীবিকার উপায়-উপকরণ এবং চিন্তাধারায় ঐক্য দেখা যায়। এমনকি মুসলিম শিল্পকলা গবেষকরা মুসলমানদের বিভিন্ন শিল্পের মধ্যেও প্রকরণ ও রুচিগত ঐক্যবোধ দেখতে পেয়েছ। স্পেনের হাতির দাঁতের খণ্ডাংশ, মিশরে প্রস্তুতকৃত কাপড়, শামে তৈরি মৃৎপাত্র এবং ইরানের খনিজজাত দ্রব্যে ঢালাই করা অলংকার—আকার-আঙ্গিকের ভিন্নতা সত্ত্বেও এসবের ওপর একই ধরনের ছাপ আছে বলে প্রতীয়মান হয়।