06/08/2025
ডিভোর্সের ১০ বছর পর আবার নিজের প্রাক্তন স্বামীর বাড়িতে প্রবেশ করলাম। এতো বছর পর নিজের ফেলে যাওয়া,সংসারে আবার আসতে হবে কিংবা আসতে পারবো তা কল্পনা বা স্বপ্ন কোন ভাবেই কখনো মাথাতে আসেনি। তার,নতুন সংসার নতুন বউ এমনকি একটা ফুটফুটে মেয়ে ছিল। তার এ সুখের সংসারে আমার জায়গা না হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল।
তবে সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনার কাছে সকল কিছু হার মেনে আবারও আমাকে আসতে হলো রিদের বাড়িতে। সমাজ কি ভাবে নিবে? মানুষ কি বলবে,?, সব কিছুর পরোয়া পিছনে ফেলে কোন এক অদৃশ্য মায়ার অবাধ্য পিছুটান আর প্রিয় সেই মানুষ প্রিয় সে সংসার কাছ থেকে দেখার লোভ আমাকে এনে দার করিয়েছে রিদের দরজায়। নিজেকে আর আটকাতে পারিনি এ সুযোগ থেকে।
,,,,
কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিল রিধিকা,
আসসালামু আলাইকুম তুমি কি পুতুলাম্মু ?
বুঝলাম তিশাই হয়তো বলে রেখেছে আমি আসবো আর আমাকে পুতুলাম্মু বলতে শিখিয়েছে ।
হ্যা আমি পুতুলাম্মু।
আসো আসো মা ভিতরে আছে। আমি তোমার জন্য কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি তুমি আসতে এতো দেরি করলে কেন বলোতো।
--- বাড়িতে কাজ ছিল তো তাই। কিন্তু আমিতো তোমার জন্য চকলেট আনতে ভুলে গেছি মামনি। বিকেলে এনে দিব কেমন?
সমস্যা নেই। বেশি চকলেট খেলে দাঁতে পোকা ধরবে। তাই আমি কম কম চকলেট খাই। মা বলেছে বেশি চকলেট খেলে মায়ের মতো অসুস্থ হয়ে যাবো আমিও।
রিধির সাথে কথা বলতে বলতে তিশার রুমে চলে আসলাম।
রুমটা ঠিক তিশার বললে চলে না, রুম টা রিদের। যে রুমে ১০ বছর আগে আমি আর রিদ থাকতাম। নতুন বউ সাজে এ রুমে এনে বসানো হয়েছিল আমায়। আজ বহু বছর পর আবার বসলাম সেই ঘরটাতে।
আমাকে দেখে তিশা সুয়া থেকে উঠে বসলো।
রিধি বলছে,
মা দেখো পুতুলাম্মু এসে পরেছে।
আপনি এসেছোন আপু। আমার যে কি ভালো লাগছে। বলে বুঝাতে পারবো না।
তা,আন্টি ওরা কেমন আছে।
-- আছে ভালোই, এ বয়সে আর কেমন থাকবে। আসতে দেরি হলো নতুন বাসা সব কিছু ঘোজগাছ করে রান্না করে এসেছি। আবার সন্ধ্যা চলে যাব,।
হঠাৎ কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ কানে আসতেই তিশা সহ আমি ছোটলাম কি হয়েছে দেখতে।
রান্না ঘরে আসতেই দেখলাম আমার শাশুড়ীর হাত থেকে ভাতের হাড়ি পরে গেছে। আমার শাশুড়ী বলা চলে না এখন। যেহেতু আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। কি বলে সম্মোধন করবো বুঝছি না। তিশা ধরে ধরে উঠালেন উনাকে। রিদের মা হয়তো জানতো আমার আসার কথা। তবে আমার সাথে কথা বলতে ইস্ততবোধ করছেন। তিশা অসুস্থ থাকার কারনে হয়তো উনাকে এই বয়সে রান্না ঘরে বসতে হয়েছে। ভাগ্যের কি নির্মন পরিহাস দশ বছর আগে আমি রান্না করে অফিস যেতাম আবার অফিস থেকে এসে রাতের রান্না করতাম। খাবারটা গরম করেও খেতেন না আমার শাশুড়ী । আর সে মানুষটা আজকে এ বয়সে রান্না করতে হচ্ছে।
তিশা তুমি উনাকে নিয়ে রুমে যাও বাকি রান্না আমি শেষ করছি।
আপা আপনি রান্না করবেন।
তিশার উত্তরে ছোট
, জবাব সমস্যা নেই অভ্যাস আছে।
, রিদের মা আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। তার চোখে মুখে অপরাধবোধের ছাপ স্পষ্ট।
কথা বড়ালাম না, তিশাও চলে গেল শাশুড়ী কে নিয়ে।
রান্না করতে করতে মনে পরলো পাঙ্গাশ মাছ রিদের অনেক পছন্দপর ছিল ।
পৃথিবীতে এতো এতো মাছ থাকা সত্ত্বেও তার প্রিয় মাছের তালিকায় একদম উপরের নামটা ছিল পাঙ্গাশ।
যে কয় মাস এ বাড়িতে ছিলাম সপ্তাহে ৫ দিন কম করে পাঙ্গাশ মাছ রান্না করতে হতো আমাকে। পাঙ্গাশ মাছ ভাজা, পাঙ্গাশ মাছের দোপেজা বোনা, পাঙ্গাশ মাছের রসা। আরও কতো ভাবে যে করতাম।
আর রিদ খেয়ে বলতো তোমার হাতের পাঙ্গাশ মাছ ঠিক তোমার মতোই স্বাদ।
মনে করে ঠোঁটের কোনে নিজের অজান্তেই হাসি এসে পড়লো।
রান্নাঘরের ফ্রিজ খুলে পাঙ্গাশ মাছ খুজতে পেয়েও গেলাম।
মুরগির মাংসের মতো সকল মসলা দিয়ে কষিয়ে রান্না করলাম। সচারাচর এ ভাবে মাছ রান্না করা কমই হয়।।
রান্না শেষ করে রিধিকে গোসল করিয়ে বিকালে বাড়ি এসে পরলাম। শতো জোর করেও তিশা খাওয়াতে পারেনি। বলে এসেছি কাল খাবো। এখন থেকে তো প্রতিদিনই আসতে হবে।
রিদের মা আর আমার সামনে আসেনি। রিদের বাবা বিছানায় পড়া, সুয়া থেকে উঠতে পারে না একা কারো সাহায্য ছাড়া।
ঐ বাড়িতে হাস পাস লাগছিল অনেক এতো বছর পর নিজের হাড়ানো সংসার কেমম এক অনুভূতি বলে বুঝানো সম্ভব না।
___________________________________________
১০ মিনিটের দূরত্বের বাসা,ঐ বাড়ি থেকে আমি যে নতুন বাসায় উঠেছি তার। হেটে এসে ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে বসে পরতেই সামনে এক গ্লাস পানি ধরলো। জানি এটা আর কেউ না ঝিমের হাত।
সব সময় বাইরে থেকে আসলে ঝিম পানি এগিয়ে দেয়। সকল কাজে হাত লাগায় আমার,সাথে। আমি মানা করলেও করবেই। তার মতে আমার কষ্ট হয় সব একা করতে তাই সে সাহায্য করলে আমার কষ্ট কম হবে। ঝিমের বয়স এবার ১২ চলছে। আর ক মাস পর ১৩ তে পা রাখবে। বাড়ন্ত বয়সে উচ্চতা প্রায় আমার সমান হয়ে এসেছে। লক্ষী একটা মেয়ে। অন্যধায় রিম এর বয়স ১০। বয়সে ঝিমের থেকে ছোট্ট হলেও বেশ চঞ্চল। সারা দিন এটা সেটা খুটি নাটি করবেই। তবে এক টা দিক দিয়ে দুই জনের অনেক মিল। দুজনই আমাকে ছাড়া,ঘুমাতে পারে না। আমাকে ছাড়া খাবার খাবে না। এ অভ্যাস গুলোতে তারা এক মত।
মা কখন এলে। আর ঐ আন্টি টার শরীর কেমন, সারা দিন কি কি করেছ।
রিমের এতো প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে ঝিম বললো আহ রিম শুরু হয়ে গেছে তোর বকবকানি?
মা মাত্র এসেছে ফ্রেস হবে খাবে তার পর তো সব শুনতে পারবি নাকি?
-- না বাবা আমার তোর মতো এতো ধর্য নেই।
রিম, তুমি আবার আপুকে তুই করে বলেছ? আমার,চোখ পাকানিতে হালকা চুপসে গেল রিম। সব শিখাতে পারলেও এ জিনিস টা কিছুতেই রিমকে আয়ত্ত করাতে পারিনি। সে ঝিমকে তুই করেই বলে বার বার।এতে অবশ্য ঝিম কোন আপত্তি করে না তবে আমি বকা দেই।
--- থাক মা আমারই তো বোন।তুই বললে কিছু হবে না।
হয়েছে এতোখন তো দুই জন ঝগড়া করছিলে যেই আমি বকা দিলাম এখন বোনের পক্ষ ধরা হচ্ছে তাই না?.
________________________________
খাবারের টেবিলে পাঙ্গাশ মাছ এ ভাবে রান্না হতে দেখে বেশ চমকালো রিদ, তবে কিছু জিগ্যেস করলো না কাউকে,
রিধিতা ও খাবারটা বেশ মজা করে খেয়েছে। তিশা খেয়াল করতে আনমনে কিছু একটা ভেবে হাসলো। পরক্ষণেই মুখে এক অনিষ্ঠত ছাপ পরলো। চোখের কর্নিশা বেয়ে দুই ফোটা জল গরিয়ে পরলো।মুহুর্তে তা হাত দিয়ে মুছেও নিল। যা,সকলের আড়ালেই থাকলে।
#প্রিয়_তার_সংসার সিজন টু
সূচনা পর্ব
#নুসরাত_পুতুল