
27/03/2025
পাকিস্তানে অনলাইনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড।
পাকিস্তানের একটি আদালত অনলাইনে ধর্ম অবমাননামূলক কন্টেন্ট পোস্ট করার অভিযোগে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) রাওয়ালপিন্ডির একটি আদালতে এই রায় ঘোষণা করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন আফগান নাগরিক এবং চারজন পাকিস্তানি বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন আইনজীবী রাও আবদুর রহিম।
রহিম বলেন, "পবিত্র নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর বিষয়বস্তু ছড়ানোর অভিযোগে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কোরআন অবমাননার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে প্রত্যেককে আরও ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।"
ধর্ম অবমাননা মামলার সংখ্যা বাড়ছে
সম্প্রতি পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন শত শত তরুণের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, এই আইন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত বিরোধ ও প্রতিশোধ নিতে অপব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশটির সরকার পরিচালিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বর্তমানে ৭৬৭ জন ব্যক্তি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে কারাগারে আছেন এবং বেশিরভাগই তরুণ। বছরের পর বছর এসব মামলা চলতে থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিলে অনেক সময় মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবনে পরিণত করা হয়।
ইউটিউবারের বিরুদ্ধেও মামলা
এই রায়ের একদিন আগেই পাকিস্তানের জনপ্রিয় ইউটিউবার রাজাব বাটের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা করা হয়। তিনি ‘২৯৫’ নামে একটি পারফিউম বাজারে ছেড়েছিলেন, যা পাকিস্তানের ধর্ম অবমাননা আইনের ধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
বিশেষ আদালত গঠন
ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে একটি বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের ফলে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার হুমকির মুখে পড়ছে এবং ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে অনেক সময় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ধর্ম অবমাননার শাস্তি ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। এমনকি অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও জনরোষের শিকার হয়ে অনেকেই গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। অতীতেও অনলাইনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা আইন সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী হয়ে না দাঁড়ায় এবং আইনের অপব্যবহার রোধ করা যায়।