02/11/2025
মানসিক চাপ কমানোর ১২টি উপায়।
বাদল সৈয়দ
ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি, চারপাশে হাজারটা কারণ বিদ্যমান যা আমাদের শান্তিতে থাকতে দেয় না। শুধু ট্রাফিক জ্যামের কথা ভেবেই তো আমাদের শান্তি অর্ধেক উবে যায়! এরসাথে যুক্ত হয় আরো অনেক নিত্যসমস্যা। ছোটোবেলা থেকেই এরকম দেখে আসছি। তাই একশভাগ মানসিক চাপমুক্ত থাকা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এ চাপ কমিয়ে আনা যায়। এব্যাপারে নিজের ভাবনাগুলো শেয়ার করলাম।
১। নেগেটিভ নিউজ বা পোস্ট না দেখা।
টেলিভিশন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নেগেটিভ নিউজ বা পোস্ট না দেখাই ভালো। এগুলো তীব্র মানসিক চাপ তৈরি করে। এগুলো দেখে আমি যদি সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলতে পারতাম, তাহলে দেখতাম। যেহেতু কিছুই করতে পারব না, তাই শুধু শুধু এসব দেখে নিজের মন ও শরীর খারাপ করার কোনো মানে নেই।
২। আনন্দ মুহূর্ত তৈরি করা।
মানসিক চাপ এড়ানোর অন্যতম সেরা উপায় হলো, নিজের আনন্দ নিজেই তৈরি করা। যে যেটাতে আনন্দ পান, সেটাই করুন। যেমন, বইপড়া, গান শোনা, বাগান করা, এরকম কিছু। নিজের আনন্দ খুবই দামি, এবং তা আপনাকেই সৃষ্টি করতে হবে। ভেবে দেখুন, শেষ বিকেলে আপনি বারান্দায় এককাপ চা নিয়ে বসেছেন। আকাশ লালচে। পাখিরা ডানা মেলে নীড়ে ফিরছে।এরকম একটি আনন্দ মুহূর্ত তৈরি করা কি খুব কঠিন? চাইলে তুচ্ছ ব্যাপারেও খুশি হওয়া যায়, আবার তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে রাজ্যের বিরক্তও হওয়া যায়। দয়া করে প্রথমটি বেছে নিন।
৩। তর্ক করবেন না।
বাস্তব জীবনে সবাই আপনার সাথে একমত হবেন তা সম্ভব নয়। যিনি ভিন্নমত পোষণ করে তার সাথে অযথা তর্ক করবেন না। আসলে তর্ক করে খুব কম ক্ষেত্রেই কাউকে নিজের মতামতের দিকে টানা যায়। বরং এটা দূরত্ব ও শত্রুতা তৈরি করে। যার শেষ পরিণতি হচ্ছে অশান্তি।
৪। কথা কম বলুন।
কথায় আছে, বোবা অজাতশত্রু। আমি আপনাকে বোবা হতে বলব না। তবে অযথা বেশি কথা বলতে নিষেধ করব। আপনি যতবেশি কথা বলবেন, ততবেশি তার অপব্যাখ্যা তৈরি করে আপনাকে মানসিক অস্বস্তিতে ফেলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। মনে রাখবেন, নীরবতা অনেক সময় হিরন্ময়।
৫। সোশাল মিডিয়ায় অযথা বিতর্কে জড়াবেন না।
সোশাল মিডিয়ায় অযথা কমেন্ট করে আমরা বিতর্ক সৃষ্টি করে নিজের অশান্তি ডেকে আনি। আকাশ বেয়ে আপনার মনিটরে ভেসে উঠা একজন মানুষ, যাকে আপনি হয়ত দেখেননি, চিনেনও না, তাঁর পোস্টে গিয়ে কমেন্ট করে তর্কাতর্কি করে নিজের এনার্জি ক্ষয় করার কোনো মানে নেই। তাকে তার বিশ্বাস নিয়ে থাকতে থাকতে দিন, আপনি আপনার বিশ্বাস নিয়ে থাকুন।
৬। অপ্রয়োজনীয় দুঃসংবাদ শোনার দরকার কী?
আমাদের চারপাশে অসংখ্য দুঃসংবাদ ঘুরে বেড়ায়।সব খবর আমার জানার দরকার নেই, তাই না? যেকোনো খারাপ খবর মস্তিষ্কে স্ট্রেস হরমোন তৈরি করে। ফলাফল হচ্ছে রাগ ও হতাশার সৃষ্টি। দিনশেষে তা শরীরেও প্রভাব ফেলে। তাই যে দুঃসংবাদ আপনার জানা দরকার সেটি শুনবেন, বিপদগ্রস্থের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু যেটা না শুনলে আপনার কিছু আসবে যাবে না, সেটা শুনবেন না।
৭। সারাক্ষণ বেজার লোককে এড়িয়ে চলুন।
আশেপাশেই এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কোনোভাবেই খুশি করা যায় না। দুনিয়ার সবকিছুতে তারা অসন্তুষ্ট। এমনকি ডিমপোচ সামান্য বাঁকা হয়েছে কেন, এটা নিয়ে তারা তুলকালাম কাণ্ড ঘটায়। পারতপক্ষে এদের ধারেকাছে যাবেন না। এদের সঙ্গ আপনাকেও বেজার বানিয়ে ফেলবে। ফলে শান্তির বারটা বাজবে।
৮। পজিটিভ মানুষদের ফলো করুন।
ফেইসবুক, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামে বেশ কিছু মানুষ আছেন যারা বিভিন্ন চমৎকার বিষয়ে পোস্ট করেন। তাঁদের ফলো করুন। টক্সিক লোকদের কনটেন্ট দেখা বা লেখা পড়া বন্ধ করুন। জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। দয়া করে নিজের শান্তি নষ্ট করে এসব লোকের পয়সা রোজগারের হাতিয়ার হবেন না।
৯। প্রার্থনা বা মেডিটেশন।
মানসিক শান্তির জন্য প্রার্থনা খুব বড় আশ্রয়। যার যার ধর্মমতে প্রার্থনার মাধ্যমে উপরওয়ালার কাছে আত্মসমর্পণ যে শান্তিভাব আনে তা অতুলনীয়। এক্ষেত্রে মেডিটেশনও খুব কাজ দেয়।
১০। নির্মল আড্ডা।
মানসিক চাপ কাটানোর জন্য আমার খুব পছন্দ হচ্ছে ভাইবোন অথবা ঘনিষ্ট বন্ধুদের আড্ডা। মন ভালো করার জন্য নির্মল আড্ডার চাইতে ভালো ওষুধ খুব কম আছে। ভাইবোন বা বন্ধুসঙ্গ বিশেষ নিয়ামত। এ নিয়ামত অস্বীকার করবেন না। দেখবেন, ভালো লাগবে।
১১। ঝগড়া না করা ও মিটিয়ে ফেলা।
পারতপক্ষে ঝগড়ার ঝামেলায় না যাওয়াটা খুব স্মার্ট মুভ। ঝগড়া সমস্যা কমায় না, বাড়ায়। আবার কারো সাথে ঝগড়া বা মন কালাকালি থাকলে তা মিটিয়ে ফেললে মানসিক চাপের একটি বড় কারণ থেকে মুক্তি পাবেন।
১২। পার্টনারের সাথে একান্ত সময় কাটানো।
সংসারের শত ঝামেলা এড়িয়ে জীবনঙ্গীর সাথে মাঝে মাঝে একা হয়ে যান। দেখবেন খুব ভালো লাগছে। এটার জন্য অনেক পয়সা লাগে না। দুজনে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি, রিকশায় বেড়ানো, দুপ্লেট চটপটিই যথেষ্ট। প্রিয় মানুষটির হাসি বসরাই গোলাপের চাইতেও সুন্দর। আমরা খেয়াল করি না বলে বুঝি না।
আমি জানি শতভাগ চাপ আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন না। কিন্তু কিছু এ চাপ কমানো সম্ভব। একটি গল্প বলে শেষ করি। মিষ্টির দোকানে এক ভদ্রলোক রসমালাই কিনতে এসেছেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘রসমালাইয়ের কেজি কত?’
দোকানদার উত্তর দিলেন, ‘তিনশ টাকা।‘
ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘এককেজি রসমালাইয়ে গোল্লা কয়টা থাকবে? রস কতটুকু থাকবে?!'.
আচ্ছা, বলুন তো, যে লোক এককেজি রসমালাইয়ে গোল্লা আর রসের পরিমাণ নিয়ে চিন্তিত তিনি কি কখনো শান্তিতে থাকবেন?
©️ Badal Syed