25/07/2025
হার্ট এটাকের পর খাবারের পথ্য
কি খাবেন ✅
কি খাবেনা না❌
হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শুধু ওষুধ বা চিকিৎসাই একমাত্র বিষয় নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি সুষম ও হার্ট বান্ধব খাদ্য তালিকা হৃদযন্ত্রকে পুনরায় শক্তি জোগাতে, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ভবিষ্যতে দ্বিতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
✅ কী খাওয়া উচিত:
ফলমূল ও শাকসবজি:
হৃদরোগীদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত। বিশেষ করে পাতাযুক্ত সবুজ শাক (যেমন—পালং, কলমি), গাজর, বিট রুট, বেবি কর্ন, আপেল ইত্যাদি খাবার ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই উপাদানগুলো কোষকে রক্ষা করে, প্রদাহ কমায় এবং রক্তনালীর কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
আঁশযুক্ত শস্যদানা:
ওটস, লাল চাল, লাল আটা, গম ইত্যাদি শস্যে থাকা দ্রবণীয় আঁশ শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এগুলো দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এবং হজমে সহায়তা করে, যা হার্ট সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
চর্বিহীন প্রোটিন:
হৃদরোগীদের জন্য চর্বিমুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চামড়াহীন মুরগি,মাছ ও উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন (যেমন—ডাল, ছোলা) দেহের কোষ পুনর্গঠন ও শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তৈলাক্ত মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমিয়ে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি:
সব চর্বি ক্ষতিকর নয়। অলিভ অয়েল, বাদাম, বাদামের তেল, অ্যাভোকাডো ইত্যাদিতে থাকা মনো-আনস্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। এগুলো খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
লো-ফ্যাট ডেইরি:
লো-ফ্যাট দুধ, দই এবং পনির ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। তবে অবশ্যই ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে যাতে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে না যায়। উচ্চ ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার হার্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
লবণ ও চিনি সীমিত করা:
উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ অতিরিক্ত লবণ ও চিনি। তাই রান্নায় অপ্রয়োজনীয় লবণ ব্যবহার কমাতে হবে, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়াতে হবে এবং মিষ্টি জাতীয় পানীয় বা খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি খাবার (যেমন—ফলমূল) বেছে নেওয়া ভালো।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পানীয়:
গরম ভেষজ চা, গ্রিন টি বা মিশ্র ভেষজ পানীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে যা রক্তনালী রক্ষা ও প্রদাহ হ্রাসে সহায়তা করে। তবে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম খাওয়া উত্তম।
পর্যাপ্ত পানি পান:
হৃদরোগীদের জন্য দিনে পর্যাপ্ত পানি পান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলীয় ঘাটতি রক্ত ঘনত্ব বাড়িয়ে হৃৎপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প।
কিছু নির্দিষ্ট ডায়েট পরিকল্পনা:
ভূমধ্যসাগরীয় ডায়েট:
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের এই ডায়েট বিশ্বব্যাপী হৃদয়বান্ধব খাদ্য পরিকল্পনা হিসেবে পরিচিত। এতে ফলমূল, শাকসবজি, মটর ও শিমজাতীয় খাবার, দানাদার শস্য এবং ওলিভ অয়েলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি অন্তর্ভুক্ত থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ডায়েট হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
উদ্ভিদভিত্তিক ডায়েট:
এই খাদ্যাভ্যাসে প্রাণিজ উৎস থেকে আসা খাবার (বিশেষ করে মাংস ও চর্বি) খুব কম খাওয়া হয় বা একেবারেই বাদ দেওয়া হয়। ফল, শাকসবজি, বাদাম, দানাদার শস্য ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মাধ্যমে এই ডায়েট গঠিত। এটি শুধু হৃদরোগ নয়, বরং ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ঝুঁকিও কমায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে নতুন উপাদান যুক্ত করার আগে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
- চর্বিযুক্ত লাল মাংস পরিহার করুন।
- খাবার নির্বাচনে মনোযোগী হোন এবং খাদ্য প্রস্তুত করার সময় তেল ও লবণের পরিমাণ কম রাখুন।
- প্রক্রিয়াজাত বা জাঙ্ক ফুড পুরোপুরি পরিহার করুন।
- সপ্তাহে অন্তত ৩–৪ দিন মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
হার্ট অ্যাটাকের পর জীবন বদলে যায়—তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে আপনি আবারও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। প্রতিটি খাবার যেন হৃদয়ের পক্ষে নিরাপদ হয়, সেটাই হওয়া উচিত আমাদের প্রতিদিনের লক্ষ্য। খাবারই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় ওষুধ।