13/06/2025
পেলেগ্রা হয় প্রধানত ভিটামিন B3 (নিয়াসিন) বা ট্রিপটোফ্যান এর ঘাটতির কারণে।
প্রধান কারণগুলো:
1. অপুষ্টি:
খাদ্যে নিয়মিত নিয়াসিন বা প্রোটিন না থাকলে।
চাল বা ভাত নির্ভর একঘেয়ে খাবার (যেমন শুধু চাল ও লবণ খাওয়া)।
2. মদ্যপান (Chronic Alcoholism):
নিয়াসিনের শোষণ ও বিপাক বাধাগ্রস্ত হয়।
3. মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ও অনাহার:
দীর্ঘ সময় ভালো খাবার না পাওয়া, বিশেষ করে মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে।
4. পেটের রোগ বা অপশোষণ (Malabsorption syndromes):
যেমন কোলনের রোগ, সেলিয়াক ডিজিজ ইত্যাদি।
5. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
যেমন Isoniazid, 5-fluorouracil, Hydantoin জাতীয় ওষুধ।
6. জেনেটিক কারণে (অনিয়ন্ত্রিত):
যেমন Hartnup disease (ট্রিপটোফ্যান শোষণের অক্ষমতা)
Carcinoid syndrome (ট্রিপটোফ্যান বেশি মাত্রায় সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়)
লক্ষণ (Symptoms):
পেলেগ্রার লক্ষণকে বলা হয় “4 D’s of Pellagra”:
D অর্থ বিস্তারিত লক্ষণ
1. Dermatitis চর্মরোগ সূর্যরশ্মিতে আক্রান্ত ত্বকে ফুসকুড়ি, লালচে চামড়া, জ্বালা, খোসপাঁচড়া, হাত ও গলায় কালচে দাগ (Casal's necklace)
2. Diarrhea পাতলা পায়খানা পানির মত বারবার মলত্যাগ, অম্বল, বদহজম, জিহ্বা ফাটে
3. Dementia মানসিক বিভ্রান্তি স্মৃতিভ্রংশ, ঘোর লেগে থাকা, বিরক্তি, ডিপ্রেশন, বিভ্রান্তি
4. Death মৃত্যু চিকিৎসা না হলে ধীরে ধীরে মৃত্যু হতে পারে
অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ:
দুর্বলতা ও ক্লান্তিভাব
খিদে না পাওয়া
ত্বকে চুলকানি
জ্বরে ঝিম ধরা ভাব
মুখ ও জিহ্বার প্রদাহ (Glossitis, stomatitis)
পুষ্টিহীনতা, দীর্ঘ রোগে ভোগা বা শুধু ভাত-নুনে দিন কাটানো মানুষদের মাঝে এই রোগ বেশি দেখা যায়।
অবশ্যই! নিচে শুধু ন্যাচারাল (প্রাকৃতিক) চিকিৎসা দেওয়া হলো — কোনো আয়ুর্বেদিক ঔষধ ছাড়া, শুধুই খাদ্য, ভেষজ ও জীবনধারাভিত্তিক উপায়ে পেলেগ্রা (Pellagra) রোগের ব্যবস্থাপনা:
পেলেগ্রার জন্য ন্যাচারাল (প্রাকৃতিক) চিকিৎসা
১. খাদ্যচিকিৎসা (Nutrition Therapy):
নিয়াসিন ও ট্রিপটোফ্যানসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি:
প্রতিদিন যা খাওয়া উচিত:
বাদাম (চিনাবাদাম, কাঠবাদাম) – প্রচুর নিয়াসিন
তিল (কালো/সাদা) – ট্রিপটোফ্যান ও মিনারেলস সমৃদ্ধ
ডিম (যদি গ্রহণযোগ্য হয়) – প্রোটিন ও নিয়াসিন
মুগ ডাল, ছোলা, মটর
পাকা কলা, আঙ্গুর, খেজুর, আম, পেঁপে
দুধ ও টকদই – সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর
ঘি – অন্ত্র ও ত্বক পুষ্ট করে
গমের রুটি/সিধা ভাত – ভালো শর্করা উৎস
এড়িয়ে চলা উচিত:
শুধু চাল-ভাত খাওয়া
ফাস্টফুড, কোল্ডড্রিংক
অতিরিক্ত ঝাল, টক
চা/কফির অপব্যবহার
২. ত্বকের জন্য বাহ্যিক চিকিৎসা (Skin Care) প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
1. অ্যালোভেরা জেল
কাটা পাতা থেকে সরাসরি জেল নিয়ে আক্রান্ত স্থানে দিনে ২ বার
2. নারকেল তেল + নিম পাতার রস
মিশিয়ে হালকা গরম করে ত্বকে লাগাতে হবে
চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমায়
3. শসা ও কাঁচা আলুর রস
মিশিয়ে ফেসপ্যাকের মতো ব্যবহার করো – শুষ্ক ত্বকের জন্য ভালো
4. তুলসী ও মধু মিশিয়ে মুখে লাগানো
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং চর্মরোগে সহায়ক
৩. সূর্যস্নান ও বিশ্রাম (Lifestyle Care):
প্রতিদিন সকালে ১০–১৫ মিনিট সূর্যস্নান – ত্বকের স্বাস্থ্য ও ভিটামিন D এর জন্য
পর্যাপ্ত ঘুম (রাতে ৭–৮ ঘণ্টা)
মানসিক প্রশান্তির জন্য বই পড়া, গান শোনা
অল্প হাঁটা – অন্ত্রে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়
৪. যোগব্যায়াম ও প্রণায়াম:
চন্দ্রভেদী প্রণায়াম – ঠান্ডা ও প্রশান্তি আনে
ভ্রমর প্রণায়াম – মানসিক শান্তি ও ঘুম ভালো করে
শবাসন – সম্পূর্ণ দেহ ও মস্তিষ্ক শিথিল করে