21/07/2025
আমি রাজা। সৌদি আরবে এসেছি আজ চার মাস হতে চলল। আশা ছিলো একটা ভালো কোম্পানিতে গিয়ে নিজের আর পরিবারের ভাগ্য বদলাবো। কিন্তু ভাগ্য হয়তো আমার সাথে তখনই প্রথম ঠাট্টা করে বসে, যখন পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে কম্পানির ভিসায় এসে দেখি – এ যেন একটা ফাঁদ! ভিসা ছিলো এক নাম, আর কাজের জায়গা হলো “সাফলাই কোম্পানি” – যেটার নামও আমি শুনিনি আগে।
প্রথম এক মাসই বুঝে গেলাম, এখানে মানুষ না, যেন মেশিন হিসেবে দেখা হয়। সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা – কোনো নির্ধারিত ছুটি নেই। এমনকি শুক্রবারেও কাজ করায়, যেন প্রবাসীর কোনো অনুভূতি নাই, কোনো ধর্ম নাই, শরীর নাই। মাসে বেতন দেয় মাত্র ১২০০ রিয়াল। তাও তিন মাস পর গিয়ে শুধু এক মাসের বেতন দিয়ে বলে, “আকামা করে দিবো, ধৈর্য ধরো।” অথচ প্রতিদিনই পুলিশের ভয়, কাগজ না থাকলে রাস্তায় বের হওয়াও মুশকিল। বলেছিলো আকামা দিবে সাথে সাথেই, এখন চার মাসেও দেয় নাই।
ঘরের কথা আর কি বলবো – বেড একটাই, তাও শেয়ারে চার জন। ঘুম আসে না শরীরের ব্যথায়, মন পোড়ে কষ্টে। দেশে ফোন দিলে মায়ের কান্না শুনি, কিন্তু বলি না কিছু – "ভালো আছি মা, চিন্তা কইরো না।"
অনেকেই বলে সৌদি মানেই সোনা-দানা। কেউ বলে বিদেশ মানেই টাকা ছাপানোর মেশিন! কিন্তু যারা সাফলাই কোম্পানির মতো জায়গায় পড়ে, তাদের বাস্তবতা একেবারে উল্টো। কেউ জানে না এই কষ্ট, এই অপমান, এই ঠকে যাওয়া।
উপসংহারঃ
প্রবাস জীবনের স্বপ্ন অনেক বড়, কিন্তু সেটা যেন সত্যি করতে গিয়ে কেউ যেন ঠকে না যায়। সঠিক তথ্য যাচাই করে, নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছাড়া বিদেশে যাওয়া উচিত না। সাফলাই কোম্পানির মতো জায়গাগুলোতে কাজ মানেই – কষ্ট, বঞ্চনা আর অন্যায়ের শিকার হওয়া। তাই যারা সৌদি আসার কথা ভাবছেন, তাদের বলি – চোখ কান খোলা রাখুন, শুধু "ভিসা আছে" শুনে পা বাড়াবেন না। নয়তো আমির মত আরেকজন “রাজা” হয়ে হয়তো শুধু কান্না নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।