07/02/2025
وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالْأَنْفَ بِالْأَنْفِ وَالْأُذُنَ بِالْأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ ۚ فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ ۚ وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
📖 আল-কুরআন | সূরা আল-মায়েদা: ৪৫
❝ আর আমরা তাদের (তাওরাতের মধ্যে) লিখে দিয়েছিলাম যে, জীবন বিনিময়ে জীবন, চক্ষুর বদলে চক্ষু, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং ক্ষতেরও বদলা রয়েছে। তবে যদি কেউ তা ক্ষমা করে দেয়, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা। আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফয়সালা না করে, তারাই জালিম।
এই আয়াতের তাফসীর👇
এই আয়াতে আল্লাহ ﷻ তাওরাতে দেওয়া শরিয়তের একটি বিধান বর্ণনা করেছেন, যা ইসলামী শরিয়তেও ন্যায়বিচারের মূলনীতি হিসেবে বহাল রয়েছে। আয়াতটির গভীর অর্থ বোঝার জন্য তাফসিরে কাবিরসহ বিভিন্ন প্রসিদ্ধ তাফসির থেকে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো:
---
🔹 তাফসিরে কাবির (তাফসির আর-রাজি) থেকে ব্যাখ্যা:
🔸 ইমাম ফখরুদ্দীন আর-রাজি (রহ.) বলেন, এই আয়াতে "কিসাস" বা সমান প্রতিদান প্রদানের বিধানকে তুলে ধরা হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ রূপ, যা সমাজে অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
🔸 তিনি বলেন, এখানে "النَّفْسَ بِالنَّفْسِ" দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, হত্যার বদলে হত্যার বিধান রয়েছে। তবে শরিয়তে নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে, যেমন— ইচ্ছাকৃত হত্যা হলে কিসাস প্রযোজ্য, কিন্তু যদি হত্যাকারী ভুলক্রমে হত্যা করে, তবে দিয়া (রক্তপণ) নেওয়ার বিধান রয়েছে।
🔸 তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, "العَيْنَ بِالعَيْنِ" (চোখের বদলে চোখ) ইত্যাদি বলে বোঝানো হয়েছে যে, প্রতিটি অপরাধের শাস্তি অপরাধের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। তবে ইসলাম ক্ষমা এবং দয়ার উপর জোর দেয়, তাই ক্ষমা করলে তা পাপের কাফ্ফারা হয়ে যায়।
---
🔹 তাফসির ইবন কাসির থেকে ব্যাখ্যা:
🔹 ইবন কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, তাওরাতে পূর্ববর্তী জাতিদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হয়েছিল, তবে তারা এতে অন্যায় পরিবর্তন এনেছিল। ইসলাম এসে এই ন্যায়বিচারের বিধানকে বহাল রাখে, তবে ক্ষমাকে উৎসাহিত করে।
🔹 তিনি বলেন, "فَمَنْ تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ" দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, যে ব্যক্তি প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে অপরাধীকে ক্ষমা করবে, আল্লাহ তার জন্য এর বিনিময়ে গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং বড় পুরস্কার দান করবেন।
🔹 তিনি আরও বলেন, ইসলামে কিসাসের বিধান থাকা সত্ত্বেও সর্বোত্তম হলো ক্ষমা করা, যদি তা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে।
---
🔹 তাফসির আত-তাবারি থেকে ব্যাখ্যা:
🔸 ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, এই আয়াতে আল্লাহ ﷻ কিসাসের বিধান দিয়ে ন্যায়বিচারের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা করাকে সর্বোত্তম গুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
🔸 তিনি বলেন, "وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ" অংশটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার করে না, তারা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে, ন্যায়বিচার থেকে সরে যাওয়া সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
---
🔹 সারসংক্ষেপ ও শিক্ষণীয় বিষয়:
✅ ইসলামে ন্যায়বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং কিসাসের বিধান অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর।
✅ ইসলামে প্রতিশোধের সুযোগ থাকলেও ক্ষমাকে সর্বোত্তম বলে গণ্য করা হয়েছে।
✅ আল্লাহর বিধান অনুযায়ী না চললে তা সমাজে জুলুম সৃষ্টি করবে।
✅ কিসাসের বিধান সমাজে অপরাধ কমানোর জন্য এসেছে, তবে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা করলে তা প্রশংসনীয়।
📌 উপসংহার:
এই আয়াতের মূল শিক্ষা হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, তবে ইসলাম সর্বদা দয়া ও ক্ষমাকে উৎসাহিত করে। একজন ব্যক্তি চাইলে প্রতিশোধ নিতে পারে, তবে ক্ষমা করলে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং বড় পুরস্কার দেবেন।
✍️