09/04/2023
#বউ
#পর্ব_০২
#শেষ_পর্ব
- ছিঃ ঝিনুক ছিঃ। এতটা নিচে নামতে পারলে তুমি?
জাহিদের কথা শুনে অনবরত কান্না করে চলছে ঝিনুক । কি উত্তরদিবে সেটা ভেবে পাচ্ছিলো না ও। ঝিনুক জানে যে ও অনেক বড় পাপ করে ফেলেছে।
- আমাকে ক্ষমা করে দাও জাহিদ। এ ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা।
- কিসের উপায়?
- অফিসের বস আমাকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করতো যদিনা আমি তার সাথে...
- ব্যাছ, অনেক হয়েছে। এইবার থামো। তোর চেহারা দেখতে আমার ঘৃনা করছে। একটা নষ্টা মেয়ে ছিঃ। তুই এই মুহুর্তে চলে যাবি আমার বাড়ি।
- জাহিদ আমাকে ভুল বুজোনা প্লিজ। বিশ্বাস করো, চাকরিটা বাচাতে হলে এ ছাড়া কোনো পথই ছিলোনা আমার কাছে।
- কেনো ? তুই বিষয়টা আমার সাথে শেয়ার করলি না কেনো? আরে মান সম্মান, ইজ্জতের চেয়ে কি চাকরি বড়?
ঝিনুক দৌড়ে এসে জাহিদের পায়ে পড়ে যায়। অনেক কান্নাকাটি করে। অনেক ক্ষমা চায়। কিন্তু কোনোরকমেই জাহিদের মন গলেনা। গলারও কথা নয়। এইটা যেইসেই ভুল নয়। নিজের আত্মসম্মান নিয়ে খেলা করা। জাহিদ ঝিনুক কে একটা লাথি মারে।
- এর পর কোনোদিন যেনো তুই আমার সামনে আসিস না। আমি তোকে তালাক দিলাম।
তালাকের কথা শুনে ঝিনুকের মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো। উচিত একটা কাজ করেছে জাহিদ। এ ছাড়া কোনো উপায় জাহিদের ও ছিলোনা। তাই ও ঝিনুক কে তালাক দিয়ে দেয়। তালাকের কথা বলে ধপাস করে বসে পড়ে জাহিদ । ভাবতে থাকে সেদিনের কথা, যেদিন জাহিদের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। আসুন জেনে নেই সেই কাহিনি।
বিয়ের ৫ দিন পর সকাল বেলা ..
- ঝিনুক, এই ঝিনুক । কোথায় গেলে। আমি তো অফিসে যাবো।এইদিকে একটু আসোনা প্লিজ।
- আসছি...একটু দাড়াও।
- আমার অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে তো। তাড়াতাড়ি করো।
- কি হয়েছে ? এত চেচামেচি কি জন্য?
- আমার শার্টের বোতাম লাগাবে কে? টাই বেধে দিবে কে?
ঝিনুক জাহিদের শার্টের বোতাম একটা একটা করে লাগিয়ে দিলো। জাহিদ এক পলকে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে রইলো। বোতাম লাগানো শেষে জাহিদ ঝিনুকের কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে অফিসের পথে রওনা হলো। দুপুর বেলা হাসপাতাল থেকে ফোন আসলো জাহিদ এক্সিডেন্ট করেছে এবং উনার একটা পা ভেঙ্গে গেছে। ঝিনুক আর জাহিদের মা সেখানে দ্রুত পৌছায়।
- কি করে এমন হলো?(ঝিনুক)
- এ কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে। গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা মাইক্রো এসে আমাকে ধাক্কা মারে। ধাক্কাটা পায়ে লাগে। (জাহিদ)
- দেখে চলতে পারলি না? আজকে যদি তোর কিছু একটা হয়ে যেতো?(জাহিদের মা)
- মা, তুমি এত ভেঙ্গে পড়ছো কেনো? আমি কি ইচ্ছে করে এমনটা করেছি? সব ঠিক হয়ে যাবে ।
একসপ্তাহ পরে জাহিদকে হাসপাতাল থেকে বাসাতে আনা হয়।পরদিন সকাল বেলা জাহিদের নামে একটা নোটিশ আসে যে তার চাকরিটা চলে যাবে যদিনা সে কালকের মধ্যে অফিসে জয়েন করে। জাহিদ অনেক চেষ্টা করে ,স্যারদের সাথে যোগাযোগ ও করে, কিন্তু কোনোকিছুতেই রক্ষা করতে পারেনা চাকরিটা । এদিকে সংসার যখন অনেকটা অভাব অনটনের মধ্যে পড়ে যায়, তখন ঝিনুক সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করতে হবে।
- জাহিদ , আমি একটা চাকরিতে জয়েন করতে চাই। মাসে ১৫ হাজার টাকা মাইনে।
- ঝিনুক তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? তোমাকে কেনো চাকরি করতে হবে? আমি আগে সুস্থ হয়ে নিই। একটা চাকরি চলে গেছে তো কি? আরো চেষ্টা করবো।
- কিন্তু সে পর্যন্ত কেমনে সংসার চলবে?তুমি আমাকে মানা করোনা প্লিজ।
জাহিদ আর কিছু বলতে পারলোনা। মনে মনে ভাবলো এখন পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব বিপর্যয়। এই মুহুর্তে যদি ঝিনুক সংসারের হাল ধরে এতে ক্ষতি কি? যেহেতু জাহিদের চাকরিটাও চলে গেছে। তাই সবকিছু ভেবে চিন্তে জাহিদ ঝিনুক কে অনুমতি দেয়।
- কি ব্যাপার? তুই এখনো এই বাড়ি থেকে যাসনি? নাকি তোকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো?
ঝিনুক নিস্তদ্ধ হয়ে গেলো। চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নাই ওর হাতে। ঝিনুক চলে আসতে লাগলো। জাহিদ ভাবতে লাগলো তাদের বিয়ের ১৫ দিন আগের কথা..
- ঝিনুক , ধরো কখনো যদি আমার চাকরিটা চলে যায়, আমার পরিবার নিয়ে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়ে তখন কি করবে তুমি?
- তুমি যা খাবে আমিও তাই খেয়ে বেচে থাকবো। একটা কাপড়ে বছর পাড়ি দিয়ে দিবো। তবুও আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবোনা।
সেদিনের এই কথায় অনেকটা বেশিই বিশ্বাস করে ফেলেছিলো ঝিনুককে।
জাহিদ সেগুলো ভাবতে ভাবতে কাদঁতে লাগলো। নিয়তি হয়তো তাকে আজকে এই পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
৭ মাস পর....
জাহিদ নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে ২ মাস হলো। ছুটির দিন। বাসায় বসে বই পড়ছিলো তখনই একটা চিঠি আসলো । চিঠিটা খুলে জাহিদ দেখলো ঝিনুকের দেয়া চিঠি। প্রথমত অনেক রাগ হওয়া সত্বেও জাহিদ চিঠিটি খুলে পড়ে। লেখাগুলো এই রকম ছিলো..
"এই চিঠিটা তুমি যখন হাতে নিবে হয়তো তখন আমি এই পৃথিবীতে থাকবোনা। আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। একটু পরে আমাকে সিজর করানো হবে। বিশ্বাস করো জাহিদ, আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। হ্যা আমি দোষ করেছি। সেটা আমাদের পরিবারের জন্যই করেছি। কিন্তু আমি পরে আমার ভুল বুজতে পারি। আমি জানি তুমি আমাকে মেনে নিবেনা। ডাক্তার বলেছে যে কোনো একজন কে বাচাতে পারবে। আমাকে নয়তো আমার পেটের সন্তানকে। বিশ্বাস করো এই সন্তান তোমারি সন্তান। না হলে তুমি ডিএনএ টেস্ট করাতে পারো। আমি অসতী। কিন্তু আমার পেটের সন্তান যেটার জন্মদাতা পিতা তুমি। তুমি ওকে খুব আদরে রাখবে। কোনোদিনও মায়ের অভাব বুজতে দিবেনা।
প্লিজ..তোমার কাছে হাতজোড় করে বলছি বাচ্চাটাকে তুমি নিয়ে যেও।
ইতি...
তোমার অসতী বউ
ঝিনুক"
লেখাগুলো পড়ে জাহিদ পাগলের মতো হয়ে গেলো। যখন ও হাসপাতালে পৌছাল তখন ঝিনুকের লাশ মর্গে পাঠানো হচ্ছে। বেডে একটা শিশু কান্না করছে। শিশুটার কাছে কেউ নেই। ঝিনুকের বাবা মা তাদের মেয়ের লাশ নিয়ে ব্যাস্ত। জাহিদ মেয়েটাকে সেখান নিয়ে চলে আসে।
তার ৫ বছর পর...
- বাবা.. ও বাবা.. আম্মু কোথায় গো? সবার তো আম্মু আছে..আমার কি আম্মু নেই? (জেমি)
- না মামনি, তোমার আম্মু অনেক আগেই চলে গেছে।
- কোথায় চলে গেছে?
- না ফেরার দেশে..
- কেনো চলে গেছে?
জাহিদের মুখ আটকে গেলো। এইটুকু বাচ্চা মেয়ের মুখে এইরকম প্রশ্নের উত্তর জাহিদ কেমনে দিবে? পারবে কি সত্যিটা বলতে?
**********************সমাপ্ত************************