07/10/2025
পড়তে পারেন আপনিও। আমার ভালো লেগেছে।
কি সেই ডিজিটাল পতিতালয়ের নতুন খদ্দের ?
রাতের অন্ধকারে, সবার থেকে লুকিয়ে যখন ফোনের স্ক্রিনে আঙুল বোলান, আপনার বুকে কি একবারও কাঁপুনি ধরে না? একবার নিজের অন্তরাত্মাকে প্রশ্ন করুন তো, আপনি ঠিক কী খুঁজছেন? জ্ঞান, বিনোদন, নাকি কোনো অচেনা বৌদির ভেজা তোয়ালের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া নিষিদ্ধ শরীরের ইঙ্গিত?
আপনার কপালে হয়তো চিন্তার ভাঁজ, "ছি ছি, আমি এমন নই!" কিন্তু আপনার ফোনের সার্চ হিস্ট্রি যে অন্য কথা বলছে! আপনি যখন রবীন্দ্রনাথের কবিতা পাশ কাটিয়ে এক মাঝবয়সী মহিলার "বুকের খাঁজ" দেখানো কবিতায় গিয়ে থামেন, তখন কি একবারও মনে হয় না, আপনি আসলে কবিতা নয়, তাঁর শরীরটাকেই ভোগ করছেন? কবিতা এখন কানে শোনার জিনিস নয়, চোখে দেখার বস্তু হয়ে গেছে; আর বক্ষ-বিভাজিকাই যেন তার আসল ছন্দ, আসল অলংকার!
ভাবুন তো সেই দৃশ্যটার কথা। এক মহিলা প্রায় অর্ধ-নগ্ন হয়ে ক্যামেরার সামনে প্রশ্ন করছেন, "দেখুন তো আমি কী পরে আছি?" আর লক্ষ লক্ষ পুরুষের দল হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সেই ভিডিওতে। আপনার একটা লাইক, আপনার একটা ভিউ ওদের কাছে এক-একটি কয়েনের মতো। আপনার এই সস্তা কৌতূহল দিয়েই সে হয়তো মাসের সংসারের টাকাটা তুলে নিচ্ছে। আপনি ভাবছেন, আপনি শুধু দর্শক। কিন্তু আসলে আপনি সেই খদ্দের, যে নিজের অজান্তেই এক ডিজিটাল পতিতালয়কে দিনের পর দিন আরও বড় করে তুলছে।
"দেওরকে আজ যা দিলাম না!"—এই একটা লাইনের টোপেই আপনি বোকার মতো ক্লিক করছেন। কী দেবে, কেন দেবে, সেই আদিম কৌতূহল আপনার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। আপনার মগজ জানে, ভেতরে কিছুই নেই, কিন্তু আপনার শরীরী প্রবৃত্তি আপনাকে সেই নোংরামির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আপনি ভুলে যাচ্ছেন, যে সময়টা আপনি জ্ঞানের জন্য খরচ করতে পারতেন, সেই সময়টা আপনি এক নারীর সস্তা নাটকের দর্শক হয়ে কাটাচ্ছেন।
সমাজের বড় বড় কথা বলা লোকগুলোও রাতের গভীরে এই "নাইটি-বিলাসে" মত্ত। আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে একদল বিকৃত মস্তিষ্কের কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তারা জানে, শিক্ষামূলক ভিডিওতে নয়, ভিউ লুকিয়ে আছে শাড়ির আঁচলের গভীরতায়। তারা জানে, আপনার পৌরুষকে জাগিয়ে তুলতে বাপ, দেওর, বা শ্বশুরকে নিয়ে যৌন উস্কানিমূলক গল্প বানাতে হবে। আর আপনি, শিক্ষিত, সভ্য সমাজের একজন হয়েও সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
আপনি কি নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, কেন এমন হচ্ছে? কারণ, আপনিও সেই শিকারি, যে সহজ শিকার ভালোবাসে। বইয়ের পাতার কঠিন জ্ঞান আপনার কাছে বিরক্তিকর, কিন্তু তোয়ালে পরা তরুণীর শরীরের বাঁক আপনার চোখে অমৃত সমান। আপনি সেই সহজলভ্য উত্তেজনার দাস হয়ে গেছেন, যা আপনার মনুষ্যত্বকে একটু একটু করে খেয়ে ফেলছে। আপনার এই রুচির দুর্ভিক্ষই আজ সমাজকে এই পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে।
ঐশ্বর্য বা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তৈরি কন্টেন্ট আপনার চোখে পড়ে না, কারণ সেখানে কোনো শরীরী ইঙ্গিত নেই, কোনো নিষিদ্ধতার গন্ধ নেই। আপনি সেই গন্ধটাই খুঁজছেন। আর আপনার এই খোঁজের কারণেই আজ আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের শিক্ষা, আমাদের রুচিবোধ এক ভয়ংকর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে।
নিজেকে এই নোংরামি থেকে বের করে আনবেন কীভাবে?
যখনই কোনো উত্তেজক থাম্বনেইল বা ক্যাপশন দেখবেন, নিজেকে প্রশ্ন করুন, "এটা দেখে আমার কী লাভ হবে? আমি কি আমার মূল্যবান সময় এই আবর্জনার পেছনে নষ্ট করব?" আপনার আত্মসম্মানবোধকে জাগিয়ে তুলুন।
যখন কোনো শিক্ষামূলক বা ভালো রুচির ভিডিও দেখবেন, তখন সেটাতে লাইক দিন, শেয়ার করুন। আপনার সমর্থনই ভালো কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের উৎসাহিত করবে। মনে রাখবেন, দর্শক যা চায়, বাজার সেটাই সরবরাহ করে। আপনার চাহিদা বদলান, বাজার বদলাতে বাধ্য হবে।
আজ আপনি যা দেখছেন, কাল আপনার সন্তান সেটাই শিখবে। আপনি কি চান, আপনার সন্তান পড়াশোনা ছেড়ে "কীভাবে শরীর দেখিয়ে টাকা কামানো যায়" সেটা শিখুক? আপনি কি চান, সে সম্মান আর ভালোবাসার বদলে সস্তা যৌনতাকে জীবনের মূলমন্ত্র বানাক? যদি উত্তর 'না' হয়, তাহলে আজই নিজেকে বদলান। কারণ, আপনার রুচিই আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ তৈরি করবে।
ফেসবুকের এই সস্তা বিনোদনের বাইরেও একটা সুন্দর জগত আছে। বই পড়ুন, প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান, নিজের শখকে গুরুত্ব দিন। দেখবেন, আপনার ভেতরের শূন্যতাটা ভরে উঠছে এবং এই সব নোংরামি আপনার কাছে অর্থহীন মনে হবে।
শেষ প্রশ্নটা আপনার কাছেই। আপনি কি এই ডিজিটাল নর্দমার একজন কীট হয়েই জীবন কাটিয়ে দেবেন, নাকি নিজের রুচির দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়ে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হিসেবে বাঁচবেন?
আমার এই লেখাটা পড়ে হয়তো আপনার অস্বস্তি হচ্ছে, রাগ হচ্ছে। হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কদর্য রূপটা দেখার সাহস সকলের থাকে না। সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি কি দর্শক থাকবেন, নাকি পরিবর্তনের কারিগর হবেন?
সংগৃহীত।