21/08/2025
জীবনে চলার পথে কিছু ছোট ছোট অভ্যাস আমাদের ব্যক্তিত্বকে অসাধারণ করে তোলে। এই অভ্যাসগুলো কেবল অন্যের চোখে আমাদের সম্মানিত করে না, বরং নিজের প্রতিও শ্রদ্ধা বাড়ায়।
১. ফোন কলের সদ্ব্যবহার: কাউকে তিনবারের বেশি ফোন করা থেকে বিরত থাকুন। তিনি ব্যস্ত থাকতে পারেন। কিছুটা সময় দিয়ে আবার চেষ্টা করুন।
২. কথার মাঝে নয়, শেষে বলুন: মন দিয়ে অন্যের কথা শুনুন। তার কথা শেষ হলে তবেই নিজের মতামত দিন। এতে মনোযোগ ও সম্মান দুটোই প্রকাশ পায়।
৩. চোখে চোখ রেখে কথা বলুন: কারো সাথে কথা বলার সময় ফোন সরিয়ে রাখুন। পূর্ণ মনোযোগ দেওয়াটা আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় সম্মান।
৪. শোনার শক্তিকে জানুন: সবসময় বলার চেয়ে শোনা বেশি জরুরি। একজন ভালো শ্রোতা সবার কাছে প্রিয় হয়।
৫. উপদেশ দিন, যখন চাওয়া হয়: নিজে থেকে কাউকে উপদেশ দিতে যাবেন না। মানুষ তার সমাধান নিজেই খুঁজে নিতে পছন্দ করে। আর যে আপনার কথা শোনে না, তার পেছনে সময় নষ্ট করা বৃথা।
৬. তর্ক নয়, সমাধান খুঁজুন: মতের অমিল হলে তর্কে জড়াবেন না। বিশেষ করে, যে বিষয়ে কম জানেন, সে বিষয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।
৭. সম্মান হোক সার্বজনীন: আপনার পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পর্যন্ত—সবার সাথে সমান সম্মান ও নম্রতার সাথে কথা বলুন।
৮. ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি নয়: "বিয়ে করছো না কেন?", "বাচ্চা নিচ্ছো না কেন?"—এই ধরনের প্রশ্ন কাউকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। অন্যের ব্যক্তিগত সীমানাকে সম্মান করুন।
৯. আর্থিক বিষয়ে সংযম: কারো বেতন, আয় বা ব্যক্তিগত সম্পদ নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করা অভদ্রতা।
১০. গ্যালারির গোপনীয়তা: কেউ ফোনে ছবি দেখালে শুধু সেটুকুই দেখুন। ডানে-বামে স্ক্রল করে তার ব্যক্তিগত গ্যালারিতে প্রবেশ করবেন না।
১১. বিশ্বাসের মর্যাদা দিন: কেউ আপনার সামনে পাসওয়ার্ড টাইপ করলে অন্যদিকে তাকান। এই ছোট কাজটি আপনার প্রতি বিশ্বাস বাড়াবে।
১২. অনুমতিই প্রথম কথা: অন্যের কোনো জিনিস, তা যত ছোটই হোক, অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করবেন না।
১৩. ভুল শুধরে দিন গোপনে: সবার সামনে কাউকে লজ্জা না দিয়ে, তার ভুলটি একান্তে বলুন। এতে সে শিখবে, অপমানিত হবে না।
১৪. বৈচিত্র্যকে সম্মান করুন: ধর্ম, বর্ণ বা জাতি নিয়ে কখনো কাউকে ছোট করবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা প্রকাশ করে।
১৫. ঋণের দায় ও সততা: ধার বা ঋণ নিলে অবশ্যই সময়মতো ফেরত দিন। যদি ঋণদাতা ভুলেও যান, আপনার দায়িত্ব তাকে মনে করিয়ে দেওয়া। সততা সম্পর্ককে মজবুত করে।
১৬. ভাগাভাগির সৌন্দর্য: বন্ধুদের সাথে কোথাও গেলে বা রাইড শেয়ার করলে খরচ ভাগ করে নিন। আজ একজন দিলে, কাল আপনি দিন। এতে সম্পর্ক সহজ থাকে।
১৭. রসিকতা হোক নির্মল: মজা করুন, কিন্তু খেয়াল রাখুন অন্যজনও তা উপভোগ করছে কি না। যদি তার অস্বস্তি হয়, সঙ্গে সঙ্গে থেমে যান।
১৮. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন: ছোট বা বড়—যেকোনো উপকারের জন্য মন থেকে ধন্যবাদ জানান। কৃতজ্ঞতা একটি শক্তিশালী মানবিক গুণ।
১৯. পেছনে কথা বলা নয়: কারো দোষ গোপন রাখুন এবং বন্ধুর সাথে মনোমালিন্য হলে তার পেছনে বদনাম করবেন না। আপনার বিশ্বস্ততা আপনার পরিচয়।
২০. পুরনো ভুলের খোঁচা নয়: অতীতের ভুল বা দুর্বলতা নিয়ে কাউকে খোঁটা দেবেন না। এটি সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।
২১. চাওয়ার চেয়ে দেওয়া শ্রেয়: সম্পর্কের মধ্যে সবসময় পাওয়ার আশা না করে, দেওয়ার মানসিকতা রাখুন।
২২. নিজের চরকায় তেল দিন: যে বিষয় আপনার সাথে সরাসরি জড়িত নয়, সেখানে নাক গলাবেন না। নিজের কাজে মনোযোগ দিন।
২৩. হিংসা নয়, অনুপ্রেরণা: অন্যের সাফল্যে হিংসা না করে অনুপ্রাণিত হন। তার থেকে শিখে নিজেকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করুন।
২৪. বিনামূল্যের মানসিকতা ত্যাগ করুন: সবকিছু বিনামূল্যে পাওয়ার আশা করবেন না। নিজের যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ওপর আস্থা রাখুন।
২৫. কথার দাম দিন: প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করুন। আপনার কথার মূল্য আপনার ব্যক্তিত্বের পরিমাপক।
২৬. সহানুভূতি ও ক্ষমার অনুশীলন: মানুষ হিসেবে আমরা ভুল করি। অন্যের ভুলের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন এবং ক্ষমা করতে শিখুন। একদিন আপনারও এই সহানুভূতির প্রয়োজন হতে পারে।
এই অভ্যাসগুলো চর্চা করলে আপনি কেবল একজন ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত হবেন না, বরং আত্মসম্মান ও মানসিক শান্তিতে পরিপূর্ণ একটি জীবনযাপন করতে পারবেন।