18/02/2025
ব্যস্ততার মাঝেও বরকতময় রমাদান:
ধৈর্য, পরিকল্পনা ও ইতমিনানের গল্প
জীবনের একেক সময় একেক রকম, তাই না? আমাদের কারো কারো জন্য একটা সময় ছিল যখন ফ্রী টাইম অফুরন্ত, ইবাদত ছিল নিরবচ্ছিন্ন, কিন্তু এখন? সংসারের দায়িত্ব, সন্তান লালন-পালন, রান্নাবান্না, কাজ—সব মিলিয়ে সময় যেন উড়ে যায়! অথচ রমাদান এসে মনে করিয়ে দেয়, “আপনাকে আল্লাহর জন্য জেগে উঠতে হবে, এই মাস নষ্ট করা চলবে না!”
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত ব্যস্ততার মাঝে কীভাবে রমাদানকে ফলপ্রসূ করা যায়? উত্তর একটাই: ইবাদতকে জীবনের অংশ বানান, আল্লাহর কাছে সময়ের বরকত চান।
◼ ১. নিয়ত ঠিক করুন, হতাশা দূর করুন
সবার রমাদান একরকম হয় না। অবিবাহিতদের ইবাদত আর একজন গৃহিণী বা কর্মজীবীদের ইবাদত এক হতে পারে না। তাই নিজের পরিস্থিতি মেনে নিয়ে আল্লাহর কাছে বরকত চান।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"নিশ্চয়ই আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।" (বুখারী ১)
আপনার রান্না, সন্তানের যত্ন, স্বামীর খেদমত—সব যদি আল্লাহর জন্য হয়, তাহলে এটাই হবে ইবাদত। হতাশ হবেন না, বরং আল্লাহর রহমতের আশা করুন।
◼ ২. পরিকল্পনা করুন, তবে নমনীয় থাকুন
সকালে উঠে ভাবুন, “আজ আমি কীভাবে ইবাদতকে অন্তর্ভুক্ত করব?”
খাবার বানানোর সময় কুরআন তিলাওয়াত শোনুন।
সন্তানকে কুরআনের গল্প শোনান।
বাড়ির কাজের মাঝে ধীরস্থিরভাবে দুআ পড়ুন।
তারাবির সময় পুরো রাকাত না পড়তে পারলে যতটুকু সম্ভব করুন।
বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেলে ১০ মিনিট হলেও তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা করুন।
এভাবে ইবাদতকে দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে মিশিয়ে নিন।
◼ ৩. অল্প করুন, কিন্তু একাগ্রতায় করুন
অনেক কাজের চাপে যদি দীর্ঘ সময় ইবাদত করতে না পারেন, হতাশ হবেন না। অল্প করুন, কিন্তু হৃদয় দিয়ে করুন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
"আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো যে আমল নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।" (মুসলিম)
১০ মিনিট কুরআন, ৫ মিনিট দুআ, অল্প অল্প করে ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
◼ ৪. রমাদানে রাগ বা হতাশা নয়, ধৈর্যের চর্চা করুন
সন্তানদের বিশৃঙ্খলা, সংসারের চাপ, স্বামীর ব্যস্ততা—এসব দেখে হতাশ হবেন না। নিজেকে বলুন, “এই কষ্টও আমার জন্য জান্নাতের পথে সওয়াব বাড়াবে।”
আল্লাহ বলেন,
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (
সূরা বাকারা ১৫৩)
ধৈর্য রমাদানের অন্যতম গুণ, তাই বিরক্ত না হয়ে আল্লাহর কাছে শক্তি চান।
◼ ৫. স্বামী-সন্তানকে ইবাদতে যুক্ত করুন
স্বামীর সঙ্গে একসঙ্গে দুয়া করার, কুরআন পড়ার পরিকল্পনা করুন।
সন্তানদের রমাদানের ছোট গল্প শোনান, ছোট ছোট আমলের প্রতিযোগিতা করান।
পরিবারের জন্য ইফতার বানানোর সময় মনে করুন, “এটা আমার ইবাদত, আমি আমার পরিবারের জন্য জান্নাতের পথ তৈরি করছি।”
◼ ৬. ঘুম ও বিশ্রামের প্রতি যত্নবান হোন
রমাদানে নিজেকে পুরোপুরি ক্লান্ত করে ফেললে ইবাদত টেকসই হবে না। তাই যত ব্যস্ত থাকুন না কেন, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের দিকে খেয়াল রাখুন, যেন দেহ-মন দুটোই সচল থাকে।
◼৭. আল্লাহর কাছে বরকত চান
সময় কম, কিন্তু বরকত চাইলে আল্লাহই আপনার জন্য সময় সহজ করে দেবেন। প্রতিদিন বলুন,
اللهم بارك لي في وقتي وفي حياتي
"হে আল্লাহ! আমার সময় ও জীবনে বরকত দাও।"
শেষ কথা
রমাদান মানে শুধু দীর্ঘ নামাজ বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কুরআন পড়া নয়। বরং রমাদান মানে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া, যা-ই করুন, তাঁর জন্য করুন।
যদি আপনি সংসারের দায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন, চাকরির ব্যস্ততা সামলেও একটুখানি সময় ইবাদতের জন্য বের করতে পারেন, তবে জানুন, আল্লাহ আপনার আন্তরিকতাকে দেখেন, আপনার প্রচেষ্টাকে কবুল করেন।
তাই ক্লান্ত হওয়ার বদলে মনে প্রশান্তি আনুন, নিজের রমাদানকে সেরা রমাদানে পরিণত করুন, ইনশাআল্লাহ!
#রাইটিং_থেরাপি
©️ শারিন
ব্যস্ত বিবাহিতদের প্রোডাক্টিভ রামাদান
Nazmun Nahar