27/12/2024
বেঁচে থাকা' আর 'বাঁচিয়ে রাখা'—এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য খুব সূক্ষ্ম হলেও গভীর। একটি হলো জীবনকে উপভোগ করা, আরেকটি হলো কেবল দিন গোনা। আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না, জীবনকে আসলে বাঁচছি, নাকি কেবল বাঁচিয়ে রাখছি।
ধরো, তুমি চাও কেউ তোমাকে তোমার মতো করে ভালোবাসুক। সেই ইচ্ছার আশায় দিন পার করছো, হয়তো অপেক্ষা করছো, কোনোদিন তা পূর্ণ হবে। কিন্তু এতে তুমি জীবন উপভোগ করছো না, বরং নিজেকে টিকিয়ে রাখছো। আর ধরো, তুমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছো, নিজের সময়টাকে আনন্দে ভরিয়ে তুলছো। সেটাই আসল বেঁচে থাকা।
যারা কেবল নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে, তাদের জীবন কেটে যায় ভবিষ্যতের কোনো একদিন সুখের অপেক্ষায়। সময় চলে যায়, বার্ধক্য এসে ধরা দেয়। তখন তারা আফসোস করে, কিন্তু আর কোনো সুযোগ থাকে না। অথচ জীবন তো এমন হওয়া উচিত নয়। বাঁচিয়ে রাখা আসলে জীবনের ঘানি টানা, আর বেঁচে থাকা হলো জীবনকে সত্যিকার অর্থে উপভোগ করা।
জীবন আসলে একটি ম্যাজিক। এই ম্যাজিকটা আমাদের চোখে ধরা দেয় তখন, যখন আমরা ইতিবাচক থাকতে শিখি। যেমন গ্লাসের অর্ধেকটা যদি ভরা দেখি আর ভাবি, "এতেই তো আমার প্রয়োজন মিটবে," তখনই জীবন সুন্দর হয়ে ওঠে। কিন্তু যদি অর্ধেক খালি দেখে ভাবি, "বাকি অংশ কেন নেই?"—তখনই তৃপ্তি হারিয়ে যায়।
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই একটা সুযোগ। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে, যারা চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনকে বেঁছে নিয়েছে। কেউ পা হারিয়েও পর্বত জয় করেছে, কেউ অসম্ভব কষ্টের মধ্যেও নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলেছে। এরা কেবল বাঁচিয়ে রাখেনি নিজেকে, বরং বাঁচতে শিখেছে।
তুমি কি নিজেকে ভালোবাসো? এই প্রশ্নটা নিজেকে করো। কারণ, অন্য কেউ তোমাকে ভালোবাসার আগে তোমার নিজেরই সেটা করতে হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ঐশ্বরিয়া রায় কিংবা সবচেয়ে সুদর্শন ছেলে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও—তারাও বহুবার হৃদয়ভঙ্গের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তারা থেমে থাকেনি। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে, ব্যর্থতাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছে। এটাই আসল জীবন।
এই জীবনে সময় খুব অল্প। কালই যেন স্কুলে গিয়েছিলে, আজ হঠাৎ দেখবে বয়স কত বেড়ে গেছে। মাত্র ১০০ বছর পর এই পৃথিবীতে আমাদের কেউ থাকবে না। তাহলে কেন এই সময়টা শুধু বাঁচিয়ে রাখার পেছনে শেষ করছো?
আক্ষেপ করার বদলে রিস্ক নাও। যা করতে চাও, করো। ভুল করো, ব্যর্থ হও—তবুও বাঁচো। কারণ জীবনের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে বেঁচে থাকার মাঝেই, বাঁচিয়ে রাখার মধ্যে নয়।