26/08/2025
একটি ছেলে বা মেয়ে যখন বাবা-মা হয়, জীবনটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমূল বদলে যায়। বাইরে থেকে সেরকম পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় না হলেও তার জীবনের ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’ নতুন করে লেখা হয়। আর সেই লিস্টের একদম ওপরে থাকে তার সন্তান, তারপর কয়েক মাইলের মধ্যে আর কেউ নেই, কিছু নেই।
সন্তান জন্মানোর পর অনেক ক্ষেত্রেই মায়েরা চাকরি ছাড়েন বাচ্চাকে ভাল করে বড় করবেন বলে। বাবা বা মা চাকরি ক্ষেত্রে বা অন্য অনেক ক্ষেত্রে ‘কম্প্রোমাইজ’ করেন, কারণ তাঁর পিছুটান আছে। একজন মা হিসেবে সত্যি বলছি, প্রোমোশন বা কোনো পুরস্কারের থেকে অনেক বেশি আনন্দ হয় পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীতে সন্তানের আধো আধো গলায় বলা, ‘মা গো, আমায় ছুটি দিতে বল…’
ওইটুকু বলানোর পিছনে যে কতটা পরিশ্রম আছে, সেটা একজন মা বা বাবাই বোঝেন।
সন্তান যখন বড় হয়, যথাযথ মানুষ হয়, অদ্ভুত এক অবসন্নতা গ্রাস করে বাবা-মাকে। সে অবসন্নতা তৃপ্তির। মনে হয়, যাক! আমাদের এতদিনের পরিশ্রম তবে সার্থক হল। সন্তানের সাফল্যে বাবা-মায়ের যে শান্তি, তার তুলনা আর কিছুতেই নেই।
আমাদের মত মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের কাছে ছোট থেকে বড় হওয়ার সময় ‘বড় হয়ে কী হ’তে চাও’ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় নব্বইভাগ ছেলেমেয়ে বলে ডাক্তার। কেন? কারণ ডাক্তারি এমন একটা পেশা, যে পেশার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষদের প্রতি আমাদের এক আলাদা সম্ভ্রম কাজ করে। তাঁরা ঈশ্বরের আরেক রূপ। আমার ছেলে বা মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে – এমন একটা স্বপ্ন বহু অভিভাবকই হয়ত মনের গোপনে সযত্নে লালন করেন। আর যাদের ক্ষেত্রে তা সত্যি হয়, তাঁদের খুশির সীমা থাকে না। ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা বা মেধা সকলের থাকে না।
কিন্তু কোলকাতার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এক নামী হাসপাতালে যখন একজন সুস্থ-সবল ডাক্তারি ছাত্রী নাইট ডিউটিতে দু’ঘন্টার জন্য বিশ্রাম নিতে গিয়ে হঠাৎ ‘নেই’ হয়ে যায়, যখন ফুটফুটে মেয়েটার শরীরটা ছিঁড়েখুঁড়ে খায় কোনো পশু, আর তারপর গোটা দু'টো দিন কেটে গেলেও অপরাধীর বিচার হয় না, শুধু মেয়েটার ‘লাশ’টা ময়নাতদন্তের পর পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়, তখন মনের ওপর দিয়ে ঠিক কেমন ঝড় যায় সেই বাবা-মায়ের? আমরা বুঝব না! ঈশ্বর যেন এমন দিন কারো জীবনে আর না দেন। শুধু একজন মা হিসেবে এটুকু বলব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর বিচার হোক! অপরাধীরা চরমতম শাস্তি পাক! সিসিটিভি নষ্ট করা হলেও আশেপাশের ফুটেজ দেখে বা যেভাবে হোক, চিহ্নিত হোক অপরাধীরা। কিভাবে সেটা হবে আমি জানিনা, কিন্তু প্লিজ জান লড়িয়ে দিয়ে তাকে খুঁজে আনা হোক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব! আর শাস্তিটা যেন এতটাই দৃষ্টান্তমূলক হয়, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন লালসা মনে ঠাই দেওয়ার আগেও শিউরে ওঠে।
প্লিজ! একজন মা হিসেবে ওপেন ফোরামে আমি অনুরোধ করছি, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা হোক! নয়ত আমরা কোন পৃথিবীতে পাঠাব ওদের? সকলের চোখের ওপর থাকা জায়গার সুরক্ষা যদি এই হয়, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?
আর জি করের ডাক্তারটিকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় যুক্ত সমস্ত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই। সামাজিক মাধ্যম তো অনেক কিছুই পারে। হারানো বন্ধু খুঁজে দিতে পারে, আর আমাদের মত অসহায় বাবা-মায়েদের এই আর্জিটুকু যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে না?