04/11/2025
বিশ্বমানচিত্রে হাস্যকর রকমের ক্ষুদ্র একটা দেশ। দরিদ্র, অখ্যাত, অনুন্নত। অথচ দূর থেকে দেশটার কথা মনে হলে প্রথমেই যে ছবিটা ভেসে ওঠে সেটা হলো, ওইটুকু জায়গার ভেতর কিলবিল করা মানুষগুলো সারাক্ষণ শুধু নিজেরা নিজেরা মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বাকবিতণ্ডা করছে। ছোটখাটো গড়নের অপুষ্টিতে ভোগা মানুষগুলো রাজনৈতিক যুক্তিতর্কে ২৪/৭ ব্যাপক উত্তেজিত। ফেসফুকের পাতা ভেসে যায় জ্ঞানী জ্ঞানী আলোচনায় - কথার আক্রমন, পাল্টা আক্রমনে। পচ্চুর রাজনীতি বোঝে লোকগুলো।
অথচ এরা ভাবে না যে, আজকে এদের যে সন্তানেরা বইখাতার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে স্কুলে যাচ্ছে, তাদের জন্য কি ভয়ংকর এক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে সামনে। অথবা এরা বোঝে, কিন্তু কেয়ার করে না। দেশে সম্পদ বলতে তেমন কিছুই নেই। যেটুকু ছিলো, বিদেশে পাচার হয়ে গেছে অনেক আগেই। অর্থনীতি ফাঁপা। শিক্ষার মান লজ্জাজনক রকমের খারাপ। বাতাস-পানি ভয়াবহ রকমের দূষিত। খাবারে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সরকারি অফিসের প্রতিটা টেবিলে দুর্নীতি। রাস্তাঘাট মৃত্যুফাঁদ। মানুষ অসহিষ্ণু। মনে ক্ষোভের উদ্রেক হলেই রাস্তায় গিয়ে এটা সেটা ভাঙ্গে। এটাই এখানকার ঐতিহ্য। এটাই কালচার। নিজেরা যে বাসে চড়ে অফিসে যায়, সেই বাস ভাঙ্গে। নিজেরা যে ট্রেনে চড়ে, সেই ট্রেনে নিজেরাই আগুন দেয়।
পেটে খাবার নেই, যেটুকু খাবার আছে তাও আবার ভেজাল। অথচ মানুষগুলো বছরের পর বছর ধরে ‘রাজনীতি’ করেই যাচ্ছে ক্লান্তিহীন। যে বিধ্বংসী রাজনীতি দেশটাকে নিয়ে গেছে তলানিতে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন ৫০ বছর পরের পরিকল্পনা এখনই করছে, তখন এই রূপকথার দেশের রাজা-প্রজারা এখনও পড়ে আছে ৫০ বছর আগের ইতিহাস নিয়ে। কে তাদেরকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিল, কে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, কে রাজাকার, কে দেশপ্রেমিক, কে ‘র’-এর এজেন্ট, জাতীয় সংগীতে কি দেশের নাম আছে নাকি নাই, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লাখ নাকি ৩ লাখ - এই সব ‘মহা গুরুত্বপূর্ণ’ ইস্যু নিয়ে রাজা-প্রজারা এখনও তুমুল বাগবিতণ্ডায় ব্যস্ত। মারামারি রক্তারক্তি চলছেই, কিন্তু কোনও সমাধান এরা আজ অব্দি বের করতে পারলো না! সবচেয়ে দুঃখজনক যেটা তা হলো, মানুষ এত দিনেও বুঝলো না যে, এই সব ইস্যুর সমাধান কোনওদিনই হবে না বা হতে দেয়া হবে না। রাজনীতিবিদরা এগুলো বেচেই খায়। এগুলোই তাদের রুটি-রুজি।
এই মানুষগুলোর এই উপলব্ধি কি কোনও দিন হবে যে, সবাইকে সবসময়, সবকিছু মানায় না। এত বিভাজন, নিজেদের ভেতর এত তীব্র মতবিরোধ- এইসব অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা। এগুলো এখন না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষ রাজনীতি নিয়ে এতবেশী মাথা ঘামায় না। ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর মানুষেরাও এত রাজনীতি করে না, আমাজনের জংলী মানুষেরাও রাজনীতি করে না। বিশ্বের কোনও সভ্য দেশে ছাত্র রাজনীতি নেই, পেশাভিত্তিক রাজনীতি নেই। রাস্তায় মিছিল, জনসভা, পোস্টার চোখেই পড়ে না বলতে গেলে। দেশের সম্পদ নষ্টের তো প্রশ্নই আসে না। রাজনীতি করে শুধু এই রূপকথার দেশের আধা-সভ্য, আধা-জংলীরা।
এরা দলাদলি কোন্দল বাদ দিয়ে কবে জাতি হিসাবে এরা একাট্টা হতে পারবে? আদৌ কি কোনদিন পারবে? অতীত বাদ দিয়ে কি এরা সামনে তাকাতে শিখবে? পেশাদার রাজনীতিবিদরা যে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বরং গত অর্ধ শতাব্দী ধরে দেশটার সর্বনাশ করেছে, এবং সুযোগ পেলে সামনেও করবে, এই সত্যিটা কি দেশটার হতভাগ্য মানুষগুলো কোনোদিন উপলব্ধি করতে পারবে? নিজেদের সমস্ত কোন্দল ভুলে গিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য একটা দেশ তৈরি করার তাড়না জন্মাবে বর্তমানের প্রাপ্তবয়স্ক সবার ভেতর - এটা কি আদৌ আর সম্ভব হবে?
দেশটার তো আর নাই কিছু! কি নিয়ে আর এত হাতাহাতি? দাঁত খোঁচানো বাদ দিয়ে পাছার লুঙ্গি (যেটা অলরেডি খুলে পড়ে গেছে) ঠিক করার হুঁশ কবে হবে এই দেশের মানুষগুলোর?
লিখেছেন- Sayedur Rahman