
24/06/2025
গল্পের নাম: ছায়া যখন প্রেম
গল্পকার: আব্রাহাম ফারুক
পর্ব ১: ছায়ার দেখা
রাত সাড়ে দশটা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে। অয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র, আজ একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছে লাইব্রেরিতে। তার হাতে গুটিকয়েক বই, চোখে ভারী চশমা, আর মুখে এক ধরনের গম্ভীর ভাব।
চোখে-মুখে গভীরতা থাকলেও, ওকে কেউ কখনো "সোশ্যাল" বলতে পারবে না। খুব কাছের কয়েকজন বন্ধু ছাড়া কারও সঙ্গে তেমন কথা বলে না। প্রেম? সে জগতে সে এখনো পা রাখেনি।
তবে আজকের রাতটা ছিল অন্যরকম।
লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশ দিয়ে হাঁটছিল। চারপাশে ছায়া ছায়া আলো। রাস্তার বাতিগুলো কুয়াশার মতো একটানা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। হঠাৎই অয়ন থেমে গেল।
তার ছায়া মাটিতে পড়েছে—স্বাভাবিকভাবে, সেটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু পাশে আরেকটা ছায়া!
সে চমকে উঠে পাশ ফিরে তাকাল।
কেউ নেই।
আবার তাকালো—দুটো ছায়া স্পষ্ট। একটা তার নিজের, আরেকটা যেন... একটা মেয়ের ছায়া! মাথায় খোঁপা, পাতলা শাড়ি, চুলে বাতাস লেগে যেন দুলছে।
কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই!
ছায়াটা একসময় এগিয়ে যেতে লাগল—সোজা গিয়ে হারিয়ে গেল রেললাইনের গলির ভেতর।
অয়ন নিঃশ্বাস ফেলল।
"বোধহয় বেশি রাত করে ফেলেছি... বা হয়তো চোখের ভুল..."
ঘরে ফিরে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে অয়ন ভাবল, "আচ্ছা, ছায়া কি ভুলও হতে পারে?"
---
পরদিন সকাল
ক্লাসে ঢুকেই তার বুকটা ধক করে উঠল।
সামনের বেঞ্চে বসে আছে এক অচেনা মেয়ে—একদম সেই ছায়ার মতো।
পাতলা সাদা-ছাই শাড়ি, কানের পাশে ঝুলে থাকা কাঁচের দুল, চোখে এক ধরনের অদ্ভুত নির্লিপ্ততা, কিন্তু মায়াময়তা ভরপুর।
মেয়েটি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো অয়নের দিকে। দু’জনের চোখাচোখি হলো।
মেয়েটি হালকা হাসল।
অয়নের বুকের মধ্যে কিছু একটা কেঁপে উঠল।
সে আস্তে করে নিজের বন্ধুকে প্রশ্ন করল,
—“নতুন ছাত্রী?”
—“হ্যাঁরে, নাম মায়া। ট্রান্সফার স্টুডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে এসেছে।”
অয়ন তখনও জানত না, এই মায়া তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেম হবে...
আর এই প্রেমই তার জীবনকে এক ভয়ংকর, অন্ধকার গলির দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
একটা প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরতে লাগল:
"এই মেয়েই কি… আমার ছায়ার সঙ্গী ছিল গতরাতে?"
পরবর্তী পর্বে আসছে….