30/10/2025
#কালো_জামাই
১০
গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলটা আমার ভেজা, কাঁপা হাতে যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। রাতের নিয়ন আলো ঝাপসা কাঁচ ভেদ করে আমার চোখে তীক্ষ্ণ তীরের মতো বিঁধছে, কিন্তু আমি পথ থেকে একচুলও বিচ্যুত হচ্ছি না। আমার পুরো সত্তা জুড়ে এখন একটাই লক্ষ্য, একটাই গন্তব্য—আকাশের বাসা।...
আমার মস্তিষ্ক আর হৃদপিণ্ডের যুদ্ধ থেমে গেছে; দুটোই এখন একসুরে একটাই নাম জপ করছে—নিতু।
আকাশের অ্যাপার্টমেন্টের নিচে গাড়িটা প্রায় আছড়ে ফেলার মতো করে পার্ক করলাম। লিফটের বোতাম চাপার মতো মানসিক স্থিতি আমার ছিল না, সিঁড়ির ধাপগুলোকে দুই-তিনটা করে টপকে আমি পাগলের মতো ছুটলাম।
দরজায় পৌঁছানোর আগেই আকাশ দরজা খুলে দাঁড়িয়ে ছিল, আমার বিধ্বস্ত, পাগলাটে চেহারা দেখে সে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। তার চোখে উদ্বেগ আর করুণার এক অদ্ভুত মিশ্রণ।
"শুভ্র, তুই..."
আমি কোনো কথা বলার সুযোগ দিলাম না। হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, "কোথায়? নিতু কোথায়?"
আকাশ আমার কাঁধে একটা হাত রাখলো, তার স্পর্শে একটা অদ্ভুত শীতলতা ছিল। সে গলায় বলল, "আমার সাথে আয়।"
আমরা আবার নিচে নামলাম। আকাশ এবার তার নিজের গাড়ির দিকে এগোল। আমি প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে গেলাম। তার থমথমে মুখটা বলে দিচ্ছিল, পরিস্থিতি যতটা সহজ আমি ভাবছি, ততটা নয়।...
কোনো রকম বাক্য বিনিময় ছাড়াই আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়িটা রাতের নিস্তব্ধ রাস্তা চিরে ছুটতে লাগলো এক অজানা গন্তব্যের দিকে। আমার ভেতরের আশা আর আশঙ্কার দোলাচলটা তখন এক প্রলয়ংকরী ঝড়ের রূপ নিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর গাড়িটা শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে একটা পুরোনো, নির্জন এলাকার দিকে মোড় নিলো। আবছা আলোয় একটা প্রাচীন মন্দিরের চূড়া দেখতে পেলাম। গাড়িটা থামলো সেই কালি মন্দিরের সামনের রাস্তায়। আমার বুকের ভেতরটা অজানা ভয়ে হিম হয়ে গেল। এখানে কেন? নিতু এখানে কী করছে?
গাড়ি থেকে নামতেই একটা চাপা গুঞ্জন আমার কানে এলো। মন্দিরের পাশের বিশাল বটগাছটার নিচে, যেখানে ঘাটটা নদীর দিকে নেমে গেছে, সেখানে একটা ছোটখাটো জটলা। কিছু মানুষের অস্পষ্ট ফিসফাস, গুজুরগুজুর শব্দ রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও ভারী করে তুলেছে। আকাশ আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেল।
আমার হৃদপিণ্ডটা গলার কাছে এসে আটকে গেছে। প্রতিটি পদক্ষেপ আমার কাছে মনে হচ্ছিল অনন্তকালের যাত্রা। ভিড়টা ঠেলে আমরা যখন সামনে এগোলাম, আমার পৃথিবীটা যেন দ্বিতীয়বারের জন্য থেমে গেল।
ঘাটের ভেজা মাটির ওপর, খোলা আকাশের নিচে নিতু শুয়ে আছে। তার শাড়িটা জলে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে, খোলা চুলগুলো ভেজা মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অসংখ্য কৌতূহলী চোখ তাকে ঘিরে ধরেছে। তাদের চাপা কণ্ঠের আলোচনা আমার কানে বিষের মতো প্রবেশ করছিল। "কোন বাড়ির মেয়ে কে জানে...", "রাতে এই ঘাটে কী করছিল...", "আত্মহত্যার চেষ্টা নাকি অন্য কিছু..."
আমি আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না। চারপাশের মানুষ, তাদের মন্তব্য, পৃথিবীর সবকিছু আমার কাছে অর্থহীন হয়ে গেল। আমি ভিড় ঠেলে নিতুর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম। ওর মুখটা চাঁদের আলোয় ফ্যাকাসে, নির্জীব দেখাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো এক তীব্র আতঙ্কে। এই কি তবে সেই নিতু, যার হাসিতে আমার সকাল হতো? এই কি সেই মেয়ে, যে আমাকে 'কালো ভূত' বলে আমার অস্তিত্বকে চুরমার করে দিয়েছিল?
আমার সব রাগ, সব অপমান, সব যন্ত্রণা কর্পূরের মতো উবে গেল। আমি কাঁপা কাঁপা হাতটা ওর নাকের কাছে নিয়ে গেলাম। কয়েক মুহূর্তের জন্য আমার নিজের শ্বাসও বন্ধ হয়ে এলো। তারপর... হ্যাঁ, অতি ক্ষীণ, প্রায় অনুভূত না হওয়া একটা উষ্ণ বাতাস আমার আঙুল স্পর্শ করলো। ও বেঁচে আছে!
আমার মৃতপ্রায় শরীরে যেন কেউ সঞ্জীবনী সুধা ঢেলে দিল। আমি আকাশের দিকে চিৎকার করে উঠলাম, "আকাশ, ও বেঁচে আছে! গাড়ি নিয়ে এদিকে আয়, তাড়াতাড়ি!"
আকাশ ততক্ষণে গাড়ি নিয়ে হাজির। আমরা মানুষের ভিড় আর তাদের হাজারো প্রশ্নকে উপেক্ষা করে নিতুর নিথর দেহটা পাঁজাকোলা করে তুলে নিলাম।
গাড়িতে উঠিয়ে দ্রুত হাসপাতালের দিকে ছুটলাম। গাড়ির পেছনের সিটে নিতুর মাথাটা আমার কোলে রাখা, আমি ওর শীতল কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর বিড়বিড় করে কেবল একটাই কথা বলছি, "কিছু হবে না নিতু, আমি আছি। আমি তোমার পাশে আছি।"
জরুরী বিভাগে ওকে নিয়ে যাওয়ার পর সময়টা যেন আবার থমকে গেল। প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে এক একটা যুগের মতো মনে হচ্ছিল। একজন নার্স এসে ওকে পরীক্ষা করে গেলেন। আমার অস্থির অবস্থা দেখে তিনি শান্ত গলায় বললেন, "অক্সিজেন লেভেল কিছুটা কম, আর শরীর খুব দুর্বল। তবে ভয়ের কিছু নেই। জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে। আপনারা চিন্তা করবেন না।"
তার কথাগুলো আমার ঝোড়ো মনের সমুদ্রে যেন এক টুকরো শুকনো ডাঙার মতো কাজ করলো। আমি একটা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লাম। এতক্ষণের চেপে রাখা ক্লান্তি আর আবেগ যেন বাঁধভাঙা বন্যার মতো আমার শরীর আর মনকে গ্রাস করলো।
ঘড়ির কাঁটাটা টিক্ টিক্ করে এগিয়ে চলেছে। রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। কেবিনের কাঁচের ভেতর দিয়ে আমি নিতুর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। সেই মুখে এখন কোনো রাগ নেই, কোনো ঘৃণা নেই, আছে শুধু একরাশ ক্লান্তি আর অসহায়ত্ব। আমার মনে হলো, এই মেয়েটা হয়তো জগতের সবচেয়ে বড় বোঝাটা নিজের কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছিল।
রাত সাড়ে তিনটের দিকে ওর আঙুলগুলো একটু নড়ে উঠলো। আমি সচকিত হয়ে ওর বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ধীরে ধীরে, খুব ধীরে ধীরে নিতু চোখ খুলল। প্রথমে ঘোলাটে দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো, তারপর ওর দৃষ্টি আমার ওপর স্থির হলো। আমাকে দেখার সাথে সাথেই ওর চোখের তারা দুটো কেঁপে উঠলো। একরাশ লজ্জা, অপরাধবোধ আর ভয় এসে ওর দৃষ্টিকে আবৃত করে ফেলল। ও দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল।
আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আমি ওর মাথায় হাত রেখে শান্ত গলায়, ফিসফিস করে বললাম, "তুমি ঠিক আছো?"
নিতু কোনো কথা বলল না। শুধু খুব আস্তে করে মাথা নাড়ল, যার অর্থ 'হ্যাঁ'।
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। কেন এই অবস্থা, কী হয়েছিল, রাতুলের কী হলো—কোনো প্রশ্নই আমার মাথায় এলো না। আমার শুধু মনে হলো, এই মুহূর্তে মেয়েটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আশ্রয়, নিরাপত্তা। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হওয়ার জন্য তো সারা জীবন পড়ে আছে।
সকালের আলো ফোটার পর ডাক্তার ওকে ছেড়ে দিলেন। বাড়ি ফেরার পুরো পথটা ও আমার দিকে একবারও তাকায়নি, পাথরের মূর্তির মতো গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমিও নীরবতা ভাঙার চেষ্টা করিনি।
আমাদের ফ্ল্যাটে পা রাখার পর পরিবেশটা কেমন যেন অচেনা লাগছিল। তিন দিন আগে যেটাকে আমার কবরস্থান মনে হচ্ছিল, সেটা এখন এক অদ্ভুত নীরবতায় পরিপূর্ণ। আমি সোজা জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাইরের ভোরের আকাশটা দেখছি আর ভাবছি, জীবন কত বিচিত্র!
তিন দিন আগে এই আমিই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলাম, আর আজ আমার পাশে সেই ধ্বংসের কারণ দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আমার ভেতর কোনো ঘৃণা নেই।
কিছুক্ষণ পর একটা কাপ হাতে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো নিতু। চায়ের উষ্ণ গন্ধ আমার নাকে এসে লাগলো। ও আমার দিকে কাপটা এগিয়ে দিয়ে ভাঙা, প্রায় অশ্রুত স্বরে বলল, "এই নিন।...
আমি ওর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিলাম। আমাদের আঙুলগুলো এক মুহূর্তের জন্য স্পর্শ করলো, আর ও যেন বিদ্যুতের শক খাওয়ার মতো হাতটা সরিয়ে নিল। আমি চায়ে চুমুক দিতেই ও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ওর কণ্ঠ চিরে একটা চাপা কান্নার শব্দ বেরিয়ে এলো।
"আমাকে মাফ করে দিয়েন শুভ্র সাহেব। আমি... আমি অনেক বড় ভুল করেছি। আমি বুঝতে পারিনি। আমি চাকচিক্যের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে দেখিনি, খাঁটি সোনা তো আমার ঘরেই ছিল।"
ওর 'শুভ্র সাহেব' সম্বোধনটা আমার বুকে ছুরির মতো বিঁধল। আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে। আমি কিছু বলার আগেই নিতু আবার বলা শুরু করলো, ওর কণ্ঠস্বর অনুশোচনায় কাঁপছে।
"আমি রাতুলকে ভালোবেসেছিলাম, শুভ্র। বলতে গেলে, ওর রূপের মোহে, ওর মিষ্টি কথায় আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, ওর মতো করে আমাকে এই পৃথিবীতে আর কেউ ভালোবাসতে পারবে না। ওর জন্য আমি আমার পরিবার, আমার মা, এমনকি আপনার দেওয়া সম্মান—সবকিছুকে পায়ে ঠেলে চলে গিয়েছিলাম। আমি ওর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছি, একটা রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছি।"
ও থেমে দম নিলো। চোখের জল মুছল শাড়ির আঁচল দিয়ে।
"কিন্তু যখন আমি ওর দেওয়া ঠিকানায় ওর বাসায় গেলাম, আমার স্বপ্নটা এক মুহূর্তে কাঁচের মতো ভেঙে গেল। আমি দেখলাম, একটা মহিলা দরজা খুলল, তার কোলে একটা বাচ্চা। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ভেতর থেকে আরও একটা ছোট বাচ্চা দৌড়ে এসে রাতুলকে 'বাবা' বলে জড়িয়ে ধরল। আমি জানলাম, ওই মহিলা ওর তিন নম্বর বউ, আর বাচ্চা দুটো আগের দুই সংসারের। আমার পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল সেদিন। যে মানুষটাকে আমি আমার সব ভেবেছিলাম, সে আসলে একটা প্রতারক, একটা চরিত্রহীন লোক।"
ওর প্রতিটি শব্দ আমার ভেতরটাকে তোলপাড় করে দিচ্ছিল। আমি শুধু চুপ করে শুনছিলাম।
"আমার তখন আপনার কাছে ফিরে আসার কোনো মুখ ছিল না। যে মানুষটাকে আমি এত বড় অপমান করে, এত কষ্ট দিয়ে চলে এসেছি, তার সামনে আমি কোন মুখে দাঁড়াব? আমার মনে হচ্ছিল, মরে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই।...
তাই আমি ওই কালি মন্দিরের ঘাটে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, সব শেষ করে দেবো। আমি জলে ঝাঁপ দিয়েছিলাম, কিন্তু... কিন্তু সাঁতার জানা মানুষ কি আর ডুবে মরে? আমি ডুবতে পারিনি। বাঁচার তীব্র আকুতি নয়, বরং মরতে না পারার ব্যর্থতায় আমি একসময় ক্লান্ত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর কী হয়েছে, আমার আর কিছু মনে নেই।"
কথাগুলো শেষ করে নিতু কান্নায় ভেঙে পড়ল। ও আমার পায়ের কাছে বসে পড়তে যাচ্ছিল, আমি ওকে ধরে ফেললাম। ও আমার বুকে মুখ লুকিয়ে শিশুর মতো কাঁদতে লাগলো। ওর কান্নার প্রতিটি ফোঁটা আমার শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছিল, আর ধুয়ে দিচ্ছিল আমার মনের সব ক্ষত, সব অভিযোগ।
আমি ওকে আরও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমাকে বলল, "আমাকে আপনি মাফ করে দেন।"
ওর কথা শুনে আমি ওকে আমার থেকে একটু ছাড়িয়ে, ওর মুখটা তুলে ধরলাম। ওর ভেজা গাল দুটো আলতো করে মুছে দিয়ে বললাম, "দূর পাগলি! তুমি তো আমার মিষ্টি বউ, আমার পরী বউ। আমার কাছে আবার কিসের মাফ চাওয়া?"
আমার কথা শুনে ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখে অবিশ্বাস।
আমি মৃদু হেসে বললাম, "জীবনে ভুল তো মানুষই করে, তাই না? কিন্তু সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসার মতো সাহস ক'জনের থাকে?....
অন্যের জন্য, একটা প্রতারকের জন্য নিজেকে কেন শেষ করে দেবে? তোমার জীবনটা কি এতই সস্তা?"
আমার কথায় ও যেন আশ্রয় খুঁজে পেল। ও আমাকে আবার জাপটে ধরে বলল, "আমি আর কোনোদিনও এমন ভুল করবো না।"
আমি ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললাম, "কখনো এমন পাগলামি করবে না। কথা দাও।" ও মাথা নাড়ল।
কিছুক্ষণ পর পরিবেশটা একটু শান্ত হলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা, মা কোথায় গেছেন?"
আমার প্রশ্নে নিতু চমকে উঠলো। ও আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বলল, "আমি... আমিই মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ আমি জানতাম, মা থাকলে আমি বাড়ি থেকে বের হতে পারতাম না।...
এই মায়ের সাথেই আমার দূরত্বটা তৈরি হয়েছিল রাতুলের জন্য। মা আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিলেন আর বাবাকে বলে দিয়েছিলেন। বাবা কোনো কিছু না ভেবেই আপনার সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দেন, ভেবেছিলেন আমি হয়তো শুধরে যাবো।"
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সব জট আজ খুলতে শুরু করেছে। আমি নিতুর হাতটা ধরে বললাম, "যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর পেছনের কথা ভেবে লাভ নেই। আজ বিকালেই আমরা মাকে ফিরিয়ে আনতে যাব। একটা নতুন জীবন শুরু করা যাক, কেমন?"
নিতু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখে জল, কিন্তু এবার সেটা অনুশোচনার নয়, ভালোবাসার। ও আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো।
আজ এতদিন পর আমার এই ফ্ল্যাটটাকে আবার একটা বাসা মনে হচ্ছে। যে ঘরে আমি তিন দিন ধরে জীবন্ত লাশ হয়ে পড়েছিলাম, সেই ঘরে এখন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। আমার 'কালো' চেহারাটা হয়তো বদলায়নি, কিন্তু আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমার নিজেকে আর 'ভূত' বলে মনে হচ্ছে না।...
আমার মনে হচ্ছে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কারণ আমার পরী বউটা তার ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমাদের ভালোবাসার গল্পটা হয়তো একটু অন্যরকমভাবে শুরু হয়েছিল, কিন্তু শেষটা আমরা দুজনে মিলেই সুন্দর করে লিখবো।
#কালো_জামাই
#শেষপর্ব
্পর্শ
ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করবেন।
নতুন কোনো গল্পে আবার দেখা হবে।