Niamot Al Hasan

Niamot Al Hasan আমি কি আর আমার নাকী!
আমি তো শুধু তোর,
দূরে ঠেললে রাত্রি হবো
কাছে ডাকলেই ভোর!..
(1)

 #তাজমহল #পর্ব_৪ #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরীছাদে মোটামুটি সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে। ফটোগ্রাফি সুন্দর হওয়ার জন্য তৌসিফ, তাসনুভা, ...
17/07/2025

#তাজমহল
#পর্ব_৪
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

ছাদে মোটামুটি সুন্দর আয়োজন করা হয়েছে। ফটোগ্রাফি সুন্দর হওয়ার জন্য তৌসিফ, তাসনুভা, তিতলি সব রকমের আয়োজন করেছে। ওদের ছবি তোলার ভীষণ শখ। পারেনা সারাক্ষণ ক্যামেরা নিয়ে বসে থাকতে।

শাইনার শখ নেই এমন না। সে শাওনকে প্রায় সময়ই জ্বালাতো ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আজ তার সব বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে সব ছেড়েছুঁড়ে চলে যেতে। কিন্তু যাওয়া যাবে না। দশ দশটা কথা রটে যাবে।

শারমিলা আর শাবরিন এসেছে তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে। ভাবিও এসেছে। শাইনা তার তিন ভাইকেও দেখলো। মোটামুটি সবাই হাজির।

বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা নিচে আতশবাজি ফোটাচ্ছে দেখে বাবা চাচারা গর্জন তর্জন শুরু করে দিয়েছে। এই ছেলেগুলোর আর শান্তি নেই। কিছু হতে না হতেই ঠাস ঠাস করে বাজি ফোটানো শুরু করবে।

দিনের বেলায় যতটা না উচ্ছ্বসিত ছিল সবাই রাতের অনুষ্ঠানে তারচেয়ে বেশি কোলাহল, হৈচৈ বেড়েছে। শাইনার এখনো স্পষ্ট মনে আছে যখন তাদের বাড়িতে কোনো বিয়ে হতো অনুষ্ঠান শেষ হওয়া অব্দি সে বসে থাকতো বিয়েবাড়িতে। আম্মু ডাকলেও যেত না ঘরে।

"রাত বাড়ছে। ওদের আংটি বদলটা হয়ে যাক। তোর আব্বারা ঘুমিয়ে পড়বে। সারাদিন অনেক দখল গিয়েছে।"

রওশনআরা এসে তাসনুভাকে কথাটা বললো। তাসনুভা তিতলিকে বলল,

"ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।"

তাজদার সিদ্দিকী ছাদের এককোণায় তার ভাই বন্ধু আর দুলাভাইদের সাথে দাঁড়িয়ে কথাবার্তায় মগ্ন। তিতলি গিয়ে ডেকে আনলো। তাজদার সিদ্দিকী আসামাত্রই রওশনআরা আংটির বক্স খুলে দিল। বলল "এটা পরিয়ে দাও।"

তাসনুভা হাত নেড়ে বলল,"ক্যামেরা এইদিকে এইদিকে...

ফটোগ্রাফাররা ছুটে এল। শাইনাকে ক্যামেরার দিকে তাকাতে বললে সে তাকাতে পারলো না। লেন্সদুটো তাকে বিপদে ফেলবে সে বুঝতে পারছে।

তাসনুভা বলল,"এভাবে মুখ নামিয়ে রাখলে ছবি ভালো উঠবে না। আশ্চর্য!"

সে বিরক্তিতে তেতে উঠলো। রওশনআরা চোখের ইশারায় ধমকালো। তারপর তাজদার সিদ্দিকীর দিকে আংটিটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,"পরিয়ে দাও। শাইনা আঙুল দাও মা।"

শাইনা কোনোদিকে না তাকিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিল। তাজদার সিদ্দিকী হাতটা ধরতেই শাইনা আরও গুটিয়ে গেল। তৌসিফ ক্যামেরা ধরে বলল,

"শাইনা হাতের দিকে তাকাও।"

শাইনা তাকালো না। শাওন ডেকে বলল,"এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? হাতের দিকে তাকা।"

শাইনা তারপরও সহজ হতে পারলো না। তৌসিফ এসে শিখিয়ে দিল কিভাবে তাকাতে হবে, হাতটা কিভাবে রাখতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

শাইনা তার হাতটার দিকে তাকালো। তাজদার সিদ্দিকী আংটি পরিয়ে দিতেই শাইনা হাতটা ছাড়িয়ে নিল দ্রুত। শাওন বলল,"একটু হাস।"

শাইনা অল্প হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু চেহারার মলিন ছাপ দূর হলো না তবুও। আনিস এগিয়ে এসে শাইনার হাতে একটা আংটি দিল। তৌসিফ বলল,"ব্রো হাত বাড়িয়ে দাও।"

তাজদার সিদ্দিকী হাত বাড়িয়ে দিল। শাইনা ডান হাত দিয়ে শুধু আংটিটা পরিয়ে দিল দায়সারাভাবে। তৌসিফ চ বর্গীয় শব্দ করে বলল,

"হয়নি।"

সে এগিয়ে এসে শিখিয়ে দিল কিভাবে এক হাতে হাত ধরে অন্য হাতে ধীরেধীরে আংটি পরিয়ে দেবে। আংটিটা আবারও খুলে নিল তৌসিফ। তাজদার সিদ্দিকী খুলতে চাইলো না। তৌসিফ জোরপূর্বক নিয়ে নিল। শাইনা আবারও আংটিটা পরিয়ে দিল সবার মনমতো করে।

তৌসিফ বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বলল,"পার্ফেক্ট।"

সবার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। রওশনআরা শাহিদা বেগম আর আফসার সাহেবকে ডেকে আনলেন। তাজউদ্দীন সিদ্দিকীও এলেন। তৌসিফ মজা করে শাহিদা বেগমকে বলল,

"চাচীমা আজ মেয়ের হাত তুলে দিলে কিন্তু আমাদের বাড়িতে রেখে দেব।"

তৌসিফের মা জোহরা বেগম তাকে ধমকালো। তৌসিফ তা দেখে আরও ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। রওশনআরা হেসে বলল,

"কথাটা কিন্তু ভুল বলিসনি। তুলে দিলে রেখে দেব আজকের জন্য।"

শাইনা চট করে বলে উঠলো,"আমি থাকব না।"

সবার মনোযোগ কেড়ে নিল তার কথাটা। তাজদার সিদ্দিকীও তাকালো কথাটা শুনে। শাইনা গম্ভীর মুখে কথাটা বলেছে।

রওশনআরা হেসে ফেললেন,

"ওই দেখো কি বলে মেয়েটা। আচ্ছা বেশ থাকিস না। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর তো এমনিই আসবি।"

________

বড় মামা, খালু, ফুপা সবাই উপস্থিত হওয়ার পর বরের হাতের উপর কনের হাতটা তুলে দেয়া হলো। তাজউদ্দীন সিদ্দিকী কনপক্ষকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,

"বাড়ির মেয়ে আরেক বাড়িতে এসেছে। এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কথাবার্তা তো আমাদের মধ্যে হয়েছে। ভালো রাখার দায়িত্ব শুধু যার হাতে তুলে দিচ্ছেন তার নয়। আমাদেরও। মেয়ে ভালো থাকবে। চিন্তার কিছু নেই। আশরাফের মা, আশরাফের বাপ মেয়েকে নিয়ে একদম চিন্তা করবে না। আমরা বাড়ির মেয়ে এনেছি ভালোর জন্যই।"

শাইনার বড় মামা বললেন,

"আপনি একাই সব বলে দিলেন। আমাদের আর কিছু বলার রইলো না। ছেলেমেয়েরা ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকি।"

শাইনা চোখ নীচে নামিয়ে রেখেছে। নিজের হাতটা ওই হাতের উপর!

ওইরকম একটা মানুষ কাউকে ভালো রাখতে পারে? যাকে দেখলেই রাগে, ঘৃণায় তার আপাদমস্তক জ্বলতে থাকে সে রাখবে তাকে ভালো? এই বোকার দলগুলো কি জানে এই লোকটা কত ছোটলোক? পয়সা, প্রতিপত্তি দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করে? তারা যদি আজও দরিদ্র থেকে যেত তাহলে এরা তাদের দিকে ফিরেও তাকাতো না। খান্দানি পরিবারের, সুন্দরী, শিক্ষিত মেয়েকে বউ করে আনতো ঢোল পিটিয়ে। এদের সে হাড়ে হাড়ে চেনে। তার পরিবার এদের সাথে ভালো মানুষি দেখাতে পারে। কিন্তু সে পারবে না। তার মন থেকে ঘৃণা না সরলে সে কোনোদিন এদের মন থেকে মেনে নিতে পারবেনা। তাজদার সিদ্দিকীকে সে কখনো মাফ করবে এটার কথা ভাবতেও পারেনা।

হাতটা অনেক্ক্ষণ ওই হাতটার উপর ছিল। নামিয়ে নিতেই মনে হলো শাইনা বেঁচে গেল। সারাজীবন কি করে সে এই লোকটার সাথে থাকবে? শুধু হাতে হাত রেখেছে এতেই তার দমবন্ধ লাগছে।

মুরব্বিরা সবাই চলে যেতেই তাজদার সিদ্দিকী জোর দিয়ে তিতলিকে বলল,"তোকে বলেছিলাম না লেন্সটা খুলে নিতে?"

তিতলি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এসে শাইনাকে বলল,"তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম অসুবিধা হচ্ছে কিনা।"

তাজদার সিদ্দিকী আবারও গর্জে উঠলো,

"আমি কি বলেছি শুনিসনি?"

তিতলি শাইনাকে চেয়ারে বসিয়ে লেন্স দুটো আস্তে করে খুলে নিল। শাইনার গাল ভিজে গেল চোখের জলে। অসম্ভব পরিমাণে জ্বলছে। তিতলি তার দিকে ফ্যানটা ঘুরিয়ে দিল। তারপর টিস্যু দিয়ে আলতো করে গাল মুছে দিতে লাগলো।

তাসনুভা অসম্ভব বিরক্ত হয়ে বলল,

"লেন্স পড়লেও নাকি কারো চোখ জ্বলে। অদ্ভুত!"

শাইনাকে কথা শুনিয়ে সরে গেল সে। শাইনা একটু পানি খেয়ে জিরিয়ে নিল। তৌসিফ বলল,

"শাইনা আজ কিন্তু ঘুমাতে পারবে না। অনেক ফটোশুট হবে।"

শাইনা চুপ করে বসে রইলো। তৌসিফ ভাইয়ের সাথে সে এখন মোটামুটি টুকটাক কথা বলে। আগে বলতো না। তৌসিফ ভাইও বলতেন না। ওই লোকটা তাদের সাথে কাউকে কথা বলতে দিত না।

______

সবার জন্য ঝাল মিষ্টি জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। জুসের বোতলও আনা হয়েছে। এসব দেখে আশরাফ আপত্তি জানাতেই তাসমীনের স্বামী জাহিদ বলল,

"আমার সম্মন্ধির একটামাত্র বউ। থাক, টাকা খরচ করতে দেন।"

সবাই হেসে উঠলো সেকথা শুনে। তাজদার সিদ্দিকী কিছু বললো না। শাইনার বোনের জামাইরা কত কি বললো। তাজদার সিদ্দিকী জবাবে কিছুই বলেনি। চুপচাপ সবার হাসিঠাট্টা শুনে যাচ্ছে।

বড় বড় বাক্স আনা হচ্ছে। শাইনা একপাশে চুপ করে বসে রইলো। শাওন বাক্স রেখে এসে বলল,"ওই কিছু খাবি?"

শাইনা বলল,"বাড়ি যাব।"

"এটাই তো তোর বাড়ি।"

এরচেয়ে বড় মিথ্যে কথা আর হয় না। এই বাড়িকে তার একটুও আপন লাগছেনা। শাওনের কথার জবাবে সে কিছু বললো না। শুধু বলল,"একটু ঠান্ডা পানি খাব ভাইয়া।"

"ঠিক আছে দাঁড়া।"

তাজদার সিদ্দিকী তৌসিফকে জিজ্ঞেস করছিল প্যাকেজিংগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা। সম্ভবত সেখানে বড়সড় চিকেন বার্গার, পেস্ট্রি, জিলাপি, সেভেনআপ আর জুসের বোতল আনা হয়েছে সবার জন্য। আরও কয়েক রকমের খাবার এসেছে। ফুরিয়ে এলে ওই বাক্সগুলো খোলা হবে। শাওন এতসব দেখলো না। তৌসিফকে বলল,

"শাইনার জন্য একটা জুসের বোতল দাও তো।"

তাজদার সিদ্দিকী বার্গার, পেস্ট্রিবক্সসহ বাড়িয়ে দিল। শাওনা শাইনাকে সেখান থেকে ডেকে বলল,

"মণি বার্গার খাবি?"

শাইনা মনে মনে তাকে বকা দিল। একঝাঁক মানুষের সামনে জিজ্ঞেস করছে বার্গার খাবে কিনা। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। শাইনা কিছু বললো না। শাওনা তারজন্য একগাদা খাবার নিয়ে এল। শাইনা শুধু জুসের বোতলটা নিল। আর কিচ্ছু নিল না।

জুসটা পুরোটা খেল সে। ঠান্ডা হওয়ায় খেতে ভালো লাগছিল। তার গলা শুকিয়ে আসছে বারবার। আজ এত তেষ্টা পাচ্ছে তার।

জুসটা খাওয়া শেষে মনে হলো লিপস্টিক সরে গেছে। ফোনের সেলফি ক্যামেরা অন করে ঠোঁট দেখতে যাবে তখুনি ক্যামেরায় তাজদার সিদ্দিকীকে দেখা গেল। তার কিছুটা পেছনে চেয়ারে বসে ফোন দেখছে। ফোনের ব্রাইটনেস হাই। আঙুল নেড়ে নেড়ে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করছে সম্ভবত।

সে ক্যামেরা অন করেছে মনে হতেই চোখ তুলে তাকালো এদিকে। শাইনা চট করে ক্যামেরা নামিয়ে নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তারপর গম্ভীরমুখে সরে পড়লো সেখান থেকে।

বড় আপা বলল,"তুই চলে এলি কেন? উনি বোধহয় তোর সাথে কথাটথা বলার জন্য ওদিকে গিয়ে বসেছে। তুই ইশারা টিশারাও বুঝিস না?"

শাইনা আকাশ থেকে পড়লো। অবাক হয়ে বলল,

"আমি কথা বলব?"

মেঝ আপা দ্বিগুণ অবাক হয়ে বলল,"আজব! তুই কথা বলবি না তো কে বলবে? তোর জামাই না?"

"জামাই হয়ছে তো কি হয়ছে? কোলে নিয়ে নাচব?"

বড় আপা আর মেঝ আপা জমে গেল। একে অপরের দিকে তাকালো অবাক চোখে। শাইনা এককোণায় গিয়ে বসলো যাতে তাজদার সিদ্দিকী তাকে না দেখে আর সেও তাজদার সিদ্দিকীকে না দেখে।

খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হতেই আবারও ফটোশুট শুরু হলো। তৌসিফ আবারও দুজনকে এক জায়গায় নিয়ে এল। ছাদে মিড ভলিউমে গান চলছে। এতক্ষণ হিন্দি গান চলছিল। এবার হাবীব ওয়াহিদের কন্ঠে গাওয়া সেই গানটা চলছে.

গোধূলির আকাশ লাজুক লাজুক..
সন্ধ্যা এখনো জেগে।
তোমার..জন্য শুধু তোমার জন্য।

শাইনার পছন্দের গান। তৌসিফ এসে একটা কাপল ছবি দেখালো। যেখানে বরটা কনের হাত ধরে হাতের উপর ঝুঁকেছে। শাইনার আপাদমস্তক শিউরে উঠলো। সে বেঁকে বসলো। সে এই ধরণের ছবি তুলবে না। তৌসিফ বলল,

"আরেহ ভাবিমণি এইসব কাপল পোজ। এখন প্র্যাক্টিস করে নাও। বিয়ে আর গায়ে হলুদের সময় লাগবে। তখন আর শিখিয়ে দিতে পারব না।"

শাইনা রাজী হলো না। এই মুহূর্তে তাকে রাজী করানো সাধ্যও নেই। সে বেঁকে বসতেই তাজদার সিদ্দিকীও বেঁকে বসলো। তৌসিফ আর শাওন একে অপরের দিকে হতাশ চোখে তাকালো। তৌসিফ শেষমেশ কিছু সাদামাটা পোজ দেখালো যেখানে হালকা দূরত্বে আছে। তাজদার সিদ্দিকী চুপচাপ দেখলো কপাল কুঁচকে। তৌসিফ সেগুলো শাইনাকেও দেখালো। বলল,

"এভাবে দাঁড়াতে নিশ্চয়ই সমস্যা হবেনা?"

শাইনা নীরবে সম্মতি দিল শাওনের চোখ রাঙানি দেখে। প্রথম দিন থেকে ত্যাড়ামি শুরু করে দিয়েছে।

ফটোশুট শুরু হলো আবারও। তাজদার সিদ্দিকীর ঘড়ির সাথে শাইনার ঘোমটা একটা কোণা আটকে দেয়া হলো। শাইনা অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে। তৌসিফ বলল,

"ওড়নাটা ভাইয়ের হাতে আটকানো থাকবে। তুমি ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে থাকবে ভাইয়ের দিকে। আর একটুখানি হাসবে।"

শাইনা সাথে সাথে ঘোমটা টান দিয়ে বলল,"এটাও হবে না।"

তৌসিফ, শাওন সবাই হতাশ। শাইনার বড় দুলাভাই জামিল বলল,

"মনে হয় আমাদের লজ্জা পাচ্ছে। আমরা তাহলে নিচে যাই। তাজদার সাহেব আমরা নিচে আছি।"

তাজদার সিদ্দিকী মাথা নাড়লো অল্প করে। তারপর তৌসিফকে বলল,

"আমাকে ছাড়বি কখন?"

"আরেকটু দাঁড়াও।"

সে শাইনার কাছে এগিয়ে এসে বলল,"শাইনা কথাটা শোনো। ভাইকে অনেকদিন ধরে রাজী করিয়েছি। তুমি এভাবে বেঁকে বসলে কিভাবে হবে?"

শাইনা বলল,"আমি ওভাবে তাকিয়ে ছবি তুলব না।"

একদম কাঠকাঠ ভাষায় কথাটা বলে দিল সে। তৌসিফের আর কি বলার থাকে? তারা সবাই হতাশ।

শেষমেশ দুজনকে দু'দিকে মুখ করে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলে তৌসিফ বলল,

"এবার মনে হচ্ছে বিরোধী দলের নেতা নেত্রী। পার্ফেক্ট!"

বলেই হতাশ হয়ে সে ক্যামেরা রেখে দিল। চেয়ারে বসে জুসের বোতলে খুলে গলা ভিজালো। শাইনা বাকি ক্যামেরা ম্যানকে বলল,

"আর ছবি তুলব না। এটা নামান।"

তিতলি বলল,"মিমি আর ঝুমুরা নাচবে। এখন বাড়ি যেতে পারবে না তুমি।"

শাইনা না করলো না। তাজদার সিদ্দিকীও কিছুক্ষণের জন্য সরে গেছে।

ছাদে মোটামুটি কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণীরা আছে। যারা নাচবে তারা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। শাইনার একটু ভালো লাগলো এবার। মন খারাপটা ক্ষণিকের জন্য দূর হয়ে গেল।

কিন্তু নাচ শুরু হওয়ার পর ছাদে আবারও ভীড় জমতে লাগলো। বড় আপা আর মেঝ আপার ছেলেমেয়েরাও নাচছে। সবাই মিলে আনন্দ করছে। সাত আট বছরের কাজিনরা সবাই মিলে শাইনাকে মাঝখানে টেনে নিয়ে এল। বড় আপার মেয়ে নাচছে কোমর দুলিয়ে। মেঝ আপার ছেলে নাচতে নাচতে পড়ে গেল।

শাইনা তাকে তুলে নিয়ে গালে আদর দিয়ে বলল,"হয়েছে কাঁদেনা।"

"কালামুনিল বিয়ে।"

শাইনা বলল,"আমার মাথা। ব্যাথা পেয়েছ?"

"না না।"

শাইনা মেঝ আপাকে বলল,"ওকে এখানে ছেড়ে দিয়েছ কেন?"

মেঝ আপা বলল,"থাক নাচুক।"

শাইনাকে ঘিরে সবাই নাচছে। বাকিরা ছবি ভিডিও তুলছে। গানের তালে যারা নাচতে লজ্জা পায় তারাও নাচছে। বড় দুলাভাইকে টেনে নিয়ে এসেছে শাওন। দুলাভাই বলল,

"আমাকে ছাড়, ছাড়। আমি নাচতে জানিনা।"

শাওন বলল,"আমার বোন তোমাকে এতদিনেও নাচটা শেখাতে পারলো না? আফসোস।"

সবাই একসাথে হো হো করে হাসলো। শাইনাও সবার তালে হেসে ফেলেছিল। বিয়ে, তাজদার সিদ্দিকী এইসব সে ভুলে গিয়েছিল একদম। মনে হচ্ছিল এটা তাদেরই বাড়ির কোনো অনুষ্ঠান। সবাই যখন তাকে ঘিরে নাচছিল, তখন শাইনাও অল্প অল্প করে হাততালি দিচ্ছিল ঠিক সেসময় বড় ভাইয়া, মেঝ ভাইয়াদের সাথে তাজদার সিদ্দিকীকে দেখা গেল। চোখাচোখি হতেই শাইনা ধীরেধীরে ঘুরে দাঁড়ালো। পিঠ করে দাঁড়ালো। নাচনেওয়ালীদের ভীড়ের মধ্যে সরে সরে থাকলো যাতে তাজদার সিদ্দিকীকে চোখে না পড়ে। তার হাসিমাখা চেহারা মলিন হয়ে এসেছে আবারও।

নাচগান শেষ হতে হতে প্রায় রাত আড়াইটা পার হয়ে গিয়েছে। বাচ্চাদের নিয়ে বাচ্চার মায়েরা চলে গেল। ধীরেধীরে ছাদ হালকা হতে লাগলো। শাইনা এককোণায় বসেছিল ভাইবোনের সাথে। ছাদে তখন শুধু বড় বউয়ের ভাইবোন, ভাবি আর দুলাভাইরা। তারা সবাই বসে আগাম পরিকল্পনা করছে গায়ে হলুদে সবাই কি রঙের গ্রুপ ড্রেস কিনবে, আর কি কি করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। শাইনা চুপচাপ। তাজদার সিদ্দিকী মাঝেমধ্যে কথা বলছে ভাইদের সাথে। তখন সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠছে।

সবাই শলাপরামর্শ করে বেরিয়ে যেতে লাগলো একে একে। শাইনাকে রেখে সবাই চলে যাচ্ছিল। শাইনা শাড়ির কুঁচি ধরে লম্বা লম্বা পায়ে হেঁটে দরজা অব্দি যেতেই বড় আপা চোখ রাঙিয়ে বলল,

"কথা বল। বসে আছে ওখানে। ঠাস ঠাস করে চড় মারব সব শিখিয়ে দিতে হলে।"

শাইনার নিঃশ্বাস ফেঁপে উঠছে। হাতের তালু, পায়ের তালু ঘামছে। ছাদের দরজা টেনে বন্ধ করে দিল বড় আপা। তাজদার সিদ্দিকী দূরে একটা চেয়ারে বসেছে পিঠ কুঁজো করে হাঁটুতে কনুইয়ের ভর রেখে। চোখদুটো শাইনার দিকেই।

শাইনা একবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তাজদার সিদ্দিকীকে তার দিকে তাকাতে দেখে, এই প্রকান্ড ছাদে সে এই লোকটার সাথে একা এইসব ভাবতেই সে আগপাছ কিছু না ভেবে অনবরত দরজায় ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।

অনেকগুলো পায়ের শব্দ একসাথে শোনা গেল। ছাদের দরজা খুলে দিতেই শাইনা সশব্দে কেঁদে উঠে বড় আপার উপর মেজাজ দেখিয়ে নেমে যেতে লাগলো বকতে বকতে।

"গোটা গুষ্ঠি মিলে নাটক শুরু করেছে আমার সাথে। সরো সামনে থেকে। আরেকটা কথা বললে কেয়ামত ঘটবে এখানে।"
শারমিলা আর শাবরিন একে অপরের দিকে তাকালো। বলল,

"উনি কি মনে করবেন বল তো?"

শাইনা ঘরে এসে আবারও চেঁচামেচি জুড়ে দিল। সবাই জড়ো হয়েছে তার ঘরে। বড় আপা বলল,
"আশ্চর্য, তোদের কথাবার্তা হয়নি তাই কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিলাম।"

শাইনা বলল,"কীসের কথাবার্তা? দরজা বন্ধ করে দিয়েছ কোন সাহসে?"

দাদীমা বললেন,"ওমা! ও ভুল কি করলো? একছাদে দাঁড়াতে না পারলে একঘরে থাকবি কেমনে?"

কথাটা শুনে মা চাচীরা সরে যাওয়ার পর আপা আর ভাবিরা সবাই হাসতে লাগলো। শাইনা দাদীর উপর খেপে বলল,

"সবাই যাও তো এখন। বের হও আমার ঘর থেকে। ফালতু প্যাঁচাল করতে আসে কানের কাছে।"

সবাইকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সে।

তারপর শাড়ি সাজ খুলে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে ঘুম থেকে দেরী করে উঠলো সে। দাদীমা ঠেস মেরে বলল,

"নতুন বউ দেরী করে ঘুম থেকে উঠছে। সবাই সরে দাঁড়াও।"

হাসাহাসি করতে লাগলো তারা। শাইনা দাঁতে ব্রাশ চালাতে চালাতে বাইরে বেরিয়ে এল। পুরোনো অভ্যাস। পুকুরে মুখ ধোয়ার টানটা এখনো যায়নি। ঘাটে বসে ব্রাশ করতে লাগলো সে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ওড়নাটা কোনোমতে বুকের সামনে ভাঁজ করে পড়েছে। চোখে রোদ পড়ায় চোখদুটো কুঁচকে আছে।

ব্রাশ শেষে পুকুরঘাটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তার চোখে পড়ল তাজউদ্দীন ভিলার ছাদে একটা লম্বা ছায়া। কানে ফোন চেপে ধরা। পাশে থুতু ফেললো এদিকে তাকাতে তাকাতে।

শায়না কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছায়াটার দিকে তাকিয়ে থাকল ব্রাশ হাতে স্থির হয়ে। থুতু ফেলতে দেখে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে আরেক পা বাড়াতেই পা পড়ল শ্যাওলা ভেজা ঘাটে। হঠাৎই পায়ের নিচের জমিন সরে গেল। সে ছিটকে গিয়ে পুকুরে পড়ে গেল জল ছিটিয়ে।

চলমান.....❤️

 #ভালো স্বামী ছোটো_গল্পবর্ণকে আমার আর ভালো লাগেনা। আমাদের সম্পর্ক কিছুটা নির্লিপ্ত ধরনের। ব্যপারটা আমার শ্বশুর বাড়ির সবা...
17/07/2025

#ভালো স্বামী
ছোটো_গল্প

বর্ণকে আমার আর ভালো লাগেনা। আমাদের সম্পর্ক কিছুটা নির্লিপ্ত ধরনের। ব্যপারটা আমার শ্বশুর বাড়ির সবার চোখে পড়ে। আমার শ্বাশুড়ি সব সময়ই কোনো না কোনো ছুতায় আমার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে, পুরুষ মানুষকে সংসারী করায় স্ত্রীর ভুমিকার মহাকাব্য শোনায়।.....
মাঝে মাঝে ভাবি আমি চিৎকার করে বলি সবাইকে, আমার এভাবে থাকতে ভালো লাগছে না। বর্ণকে আমার আর ভালো লাগছেনা।
একবার আমার মাকে বলেছিলাম। মা চোখ পাকিয়ে বলেছিলেন, এমন ভালো স্বামী নাকি লাখে মেলেনা।

আর যেনো কখনো এমন অনাসৃষ্টি কথা না শুনি। মা'র কথা শুনে ভাবিও বলেছিলো এসব আদিখ্যেতা মার্কা চিন্তা ভাবনায় আ গু ন দিয়ে সংসারে মনোযোগী হতে।
চার বছরের বিবাহিত স্বামীকে ভালো না লাগাটা একটা সমস্যা বটে। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে জটিল এবং নোংরা ধরনের সমস্যা; বিশেষত স্বামীর যদি চরিত্রহীনতা, বৌ পেটানো বা মদ গাজা খাওয়া স্বভাব না থাকে। না, বর্নের কোনো দোষ নেই তেমন। সে দেখতে গড়পড়তা বাংগালী পুরুষদের মতো। লম্বায়ও গড়পড়তা বাংগালী পুরুষদের মতো। স্বভাবও গড়পড়তা বাংগালী পুরুষদের মতো। খুব ভালো না, খারাপও না। ন'টা পাচটা অফিস করে। ফেরার সময় সংসারের টুকিটাকি জিনিস নিয়ে আসে। সেই লিসটে থাকে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির ওষুধের পাতা, হরলিক্সের বোতল, মৌসুমী ফল, আমার ভাসুর দেবরের বাচ্চাদের জন্য কিটক্যাট বা কিনডার জয়, আবার কখোনো গরম গরম সবার পছন্দের কোনো রেসটুরেনটের খাবার। বাসায় ফিরে শ্বশুরবাড়ির যৌথ পরিবারের সবার সাথে গল্প করে সে। রাতের খাবার একসাথে খায়। আমার সাথে টুকটাক গৃহস্থালি কথাবার্তা বলে ঘুমানোর আগে। এরপর বেশিরভাগ দিন পাশ ফিরে ঘুমায়, কোনো কোনোদিন সে আমাকে কাছে টানে। আমার দাম্পত্যও নির্লিপ্ত ধরনের স্বাভাবিক। যদিও বাচ্চা কেনো হচ্ছেনা এ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বিস্তর গালমন্দ শুনতে হয়। আমি শুনি, জবাব দেই না। বাচ্চা হচ্ছেনা না, বাচ্চা নিচ্ছিনা। বর্ন নিজেও বাচ্চা নিতে চায় না এখনি। আমার জন্য সেটা শাপে বর, আমিও বর্নর বাচ্চার মা হতে চাই না। লোকটা নিরামিষ ধরনের ভালো মানুষ। তার কোনো দোষ খুজে পাওয়া যায় না মানুষ হিসেবে, কিন্তু স্বামী হিসেবে তাকে পছন্দ করার গুনও খুজে পাই না আমি।
অথচ প্রথম দেখায় বর্নকে কিন্তু আমার ভালোই লেগেছিলো বেশ। কালো ফর্মাল প্যানট আর সাদা শার্ট পরা সাধারন একটা ছেলে, মাথাভর্তি এলোমেলো চুল, চৌকো ধরনের মুখ, চোখে রিমলেস গ্লাস আর বুদ্ধিদীপ্ত একজোড়া চোখ৷ ওর সাথে ওর পুরো পরিবার এসেছিলো আমাকে দেখতে। দুই পরিবারের মধ্যে সব কিছু ঠিক থাকায় আমাদের বিয়েটা খুব তারাতারি হয়ে যায়।
বিয়ের আগে একবার কফি শপে দেখা করেছি আমরা মুরব্বিদের কথামতো, বর্ন পারফেক্ট জেনটলম্যানের মতো ঠিক সময়মতো এসে আমাকে নিয়ে গেছে, রেস্টুরেনটে গিয়ে আমার চেয়ার টেনে দিয়েছে, আমার পছন্দ জেনে খাবার অরডার করেছে। এতো দারুন মান্যার্সের একজন মানুষের সাথে আমার জীবন কাটবে ভেবে আমার ভালো লেগেছে। বিয়ের রাতে বর্ন সারারাত গল্প করলো আমার সাথে, খুটিয়ে খুটিয়ে শুনলো আমার স্কুল কলেজ ভার্সিটির গল্প, আমার ক্যারিয়ার প্লান। আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে বললাম এমবিএ শেষ করে আমার কর্পোরেট জব করার ইচ্ছের কথা। সে আমার শখের কথা জানতে চাইলো, বললাম আমি ফটোগ্রাফি ভালোবাসি আর নাচ। সে রাতে দুজন গল্প করে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি ঘুমাতে ঘুমাতে স্বপ্ন দেখলাম আমরা পাহাড়, সমুদ্রের কোল ঘেষা একটা অজানা দেশে ঘুরতে গিয়েছি। শুরুটা আমাদের কিন্তু ভালোই ছিলো।........
বিয়ের প্রথম কয়েকদিন ভালোলাগার ঘোরেই কাটলো আমার। কিন্তু ক'দিন যেতেই কোথায় যেন তালকেটে গেলো যখন বর্নর নির্লিপ্ত স্বভাব খেয়াল করলাম আমি। সে হানিমুনে যাবার ছুটি ম্যানেজ করতে পারলো না, তবে খুব আগ্রহের সাথে আমাকে এমবিএ ভর্তি কোচিংএ ভর্তি করে দিলো, ভালো একটা ডানস একাডেমিতে নিয়ে গেলো যেখানে আমি নাচ প্রাকটিস করতে পারবো, আর একটা ফটোগ্রাফি কোর্সেও ভর্তি করে দিলো। বাসররাতে নাকি স্বামীরা স্ত্রীদের উপহার দেয়, বর্ন আমার জন্য স্পেশাল কিছু কেনেনি, রহস্যময় হেসে বলেছিল সেটা আমার পাওনা রইলো।

এক বিকেলে আমাকে নিয়ে ক্যামেরার শপে গিয়ে খুব ভালো মানের এক্সপেন্সিভ একটা ক্যামেরা কিনে দিলো ফটোগ্রাফির জন্য, বললো এটা আমার সেই গিফট। আমি আনন্দে আটখানা হয়ে গেলাম এমন কেয়ারিং সাপোর্টিভ স্বামী পেয়ে। কিন্তু বর্নের আমার জন্য কেয়ার এই পর্যন্তই ছিলো। এরপর সে ব্যস্ত হয়ে গেলো, সকালে যায়, রাত বারোটায় ফেরে। কিছু বললেই বলে অফিসে কাজের চাপ। অথচ ওর অফিস ন'টা পাচটা, কোনোভাবেই ফিরতে এগারোটা বারোটা বাজার কথা না। আবার ছুটির দিনেও তার মিটিং থাকে। প্রতি তিনচার মাসে অফিস ট্যুর থাকে সসপ্তাহখানেকের জন। প্রথমে আমার খুব অভিমান হতো, মাঝে মাঝে ঝগড়া করতাম ওর কাছে সময় চেয়ে। কিন্তু বর্ন নির্লিপ্ত স্বরে সেই একই কথা বলতো, অফিসে কাজের চাপ। মাঝে মাঝে বলতো, "তোমার খুব বোর লাগলে কোনো সেলফ ডেভেলপমেন্ট কোর্সে ভর্তি হও, কতোকিছু করার আছে। আমাদের ঘোরাঘুরির সময় তো চলে যাচ্ছেনা। এখন ক্যারিয়ার স্ট্রং করার সময়।" আমি আর কী বলবো, স্বামীর কথামতো কখোনো ডিবেট, কখোনো ইংলিশ, কখোনো আইটির বিভিন্ন কোর্স করতাম। দেখতে দেখতে এমবিএ শেষ হলো। বেশ ভালো বেতনে চাকরি করছি তাও দু'বছর হবে। গাদা গাদা কোর্স করে আমি অফিসে ইফিসিয়েনট আর পপিউলার এমপ্লয়ীদের একজন। ফটোগ্রাফির একটা স্টুডিও আছে, বেশ নাম হয়েছে সেটার। একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে আমার, মন খারাপ লাগলে নাচি আমি, সেই ভিডিও আপলোড করি ওটাতে। হু হু করে জনপ্রিয়তা বাড়ছে সেই চ্যানেলের। সবই হচ্ছে, কেবল আমার সংসারটাই ফাঁকি। আগে বর্নের সাথে ঝগড়া করতাম এসব নিয়ে, একদিন হঠাত খেয়াল করলাম আমি নিজেও আর ওর সাথে সময় কাটানোর জন্য এতো উতলা নই। অনেকদিন হলো এগুলো নিয়ে কথা হয় না, আমরা থাকি যে যার মতো। কেমন যেন যন্ত্রের মতো নিয়মে বাধা সংসার। এভাবে একদিন আবিষ্কার করলাম বর্নকে আমার আর ভালোও লাগে না।
এই ভালো না লাগার মধ্যেই মাতাল হাওয়া হয়ে এলো সামির। সামির বর্নের বন্ধু। আমেরিকায় সেটলড হয়েছে কয়েকবছর হয়, নানা ঝামেলায় বিয়েটা হয়ে ওঠেনি। এখন সে দেশে এসেছে বিয়ে করে বৌ নিয়ে যাবার জন্য। পুরুষ হিসেবে সামির অত্যন্ত সুদর্শন, বর্নর চেয়ে ইঞ্চি তিনেক লম্বা, উজ্জ্বল শ্যামলা রঙ, ঝড়ঝড়ে স্বাস্থ্য।
ক্লাসিক টল, ডার্ক, হ্যানডসাম। দারুন সেন্স অভ হিউমার। তাছাড়া সাফল্য পুরুষ মানুষকে এক ধরনের আলাদা আআত্মবিশ্বাস দেয় যেটা সামিরের পুরোপুরিই আছে। সামির পেশাগত ভাবে সফল। সামিরের পুরো পরিবারই আমেরিকা প্রবাসী। আর প্রবাসজীবনে সবাই ব্যস্ত। কনে দেখার মত কাজে পুরো পরিবার আসা সম্ভব না, তাই ও একাই এসেছে। বর্নের অনুরোধে পাত্রী দেখাদেখির কাজে আমাকে যেতে হলো সামিরের সাথে। সামিরের একটা গুন হচ্ছে প্রথম দেখাতেই সে যে কোনো মানুষকে একটা কমফোর্ট যোনে নিয়ে যায়, এতটাই যে মানুষটির মনে হবে কতকাল ধরে যেনো তাদের চেনা জানা। তাই সামিরের সাথে পাত্রী দেখতে যেতে আমার খারাপ লাগতোনা একদম। সামিরের অবশ্য কোনো পাত্রীই পছন্দ হলো না।
আমাদের রুটিন হয়ে দাড়ালো মেয়ে দেখা পর্ব শেষ করে কোনো কফি শপে ঢুকে পাত্রীর প্রস এনড কন আলোচনা করা। সামির পাত্রীদের খুঁত খুঁজে বের করতো একটা একটা, আর আমি পাত্রীর গুনগান করে ওকে কনভিন্স করার চেষ্টা করতাম। সত্যি বলতে পাত্রী আমার সবাইকেই ভালো লেগেছে, কিন্তু পাত্র তো আর আমি না। সামিরের কেউকেই মনে ধরে নি। একদিন তাই বিরক্ত হয়ে বলেই বসলাম, আপনার উদ্দেশ্যটা কি? সত্যি বিয়ে করতে চান, না বাড়ির লোকের কথা রাখতেই পাত্রী দেখে বেড়াচ্ছেন?
সামির নিজের চুলে হাত চালাতে চালাতে সিরিয়াস ভংগীতে বললো, বিয়ে করতে চাই তো।
: তো এতো পাত্রীর কেউকে পছন্দ হচ্ছে না?
সামির আমার চোখে চোখ রেখে বললো, আপনাকে পছন্দ হয়েছে, তাই পাত্রী পছন্দ হচ্ছে না।
এবার আমার খাবি খাওয়ার পালা। সত্যি বলতে আমি এভাবে ভাবিনি। যদিও আমার ফিকে জীবনে গতো তিন সপ্তাহ সামিরের সঙ্গ একটা খোলা জানালার মতো, যেমন অনেক দিন পর বদ্ধ কোনো ঘরে ছোট্ট একটা জানালা খুলে দিলে রোদ হাওয়া উকি দেয়, তেমন। এই তিন সপ্তাহ সামির রোজ সকালে সিম্পল কোনো টেক্সট পাঠাতো, আমার ভালো লাগতো।....❤️
রাতে ঘুমোবার আগে গুড নাইট। সারাদিন টুকটাক টেক্সট চালাচালি চলতো আমাদের, পাত্রী দেখা নিয়ে। এই যে বাইরে এলে আমার পছন্দের কফি বা আইস্ক্রীমের কোন কোন ফ্লেভার আমার পছন্দ সেটা মনে রেখে অরডার করা, বা ফেরার সময় গাড়িতে আমার পছন্দের গান দেয়া এসব আমার ভালো লেগেছে। সামিরের মতো সুূদর্শন, ইন্টারেস্টিং পুরুষের সঙ্গও আমার ভালো লেগেছে। এসব সত্যি। আবার এটাও সত্যি যে আমি এভাবে ভাবিনি।
আমি চুপ করে ছিলাম।
একটু পরে সামির বললো, আপনি জানেন বর্নর একটা গার্লফ্রেনড আছে যার সাথে ও গতো সাত বছর ধরে লিভ ইন করে? আমরা বন্ধুরা কিন্তু সবাই জানি। আই গেস, ওর মা বাবাও জানে।
আমার হয়তো অবাক হওয়া উচিত, দু:খ পাওয়া উচিত। কিন্তু আমি অবাক হচ্ছিলাম না, কেন যেনো দু:খও হয়নি। ভোতা গলায় বললাম, তো তাকে বিয়ে করলো না কেনো?
: তাপসী বর্নর চেয়ে পাচ বছরের বড়, তাছাড়া হিন্দু। দু'জনের কারো বাসায়ই মেনে নেবে না। বর্নর মা বাবা ভেবেছিলো সুন্দরী বৌ এনে দিলে ছেলের মন ঘুরবে।
আমার মাথা ভার ভার লাগছিলো। আমি বললাম আমি বাসায় যাবো। সামির আমাকে বাসায় পৌছে দিলো।

গাড়ি থেকে নামার আগে বললো, আমি তোমাকে ভালোবাসি সিমি। তুমি চাইলে বর্নর সাথে কথা বলবো। আমি সব সামলে নেবো তুমি যদি চাও।
আমি সামিরের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম আমি আসলে কী চাই।
কি মনে করে ওকে বলে দিলাম বর্নর সাথে কথা বলতে। সেটা কতটুকু সামিরের প্রতি আকর্ষন থেকে আর কতটুকু আমার ভালো মানুষ স্বামীর প্রেমিকার খবর শোনার প্রতিক্রিয়া ছিলো আমি তখনও জানতাম না, এখনও জানি না।
এরপরের ঘটনা দ্রুত ঘটে গেলো। সামির বর্নকে কি বলেছে জানিনা, বর্ন পরেরদিনই সামির সহ আমাকে কোর্টে নিয়ে গেলো, গোটা কয়েক সাইন করে আমাদের মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে গেলো। পরের তিন মাস আমি বর্নর বাসায়ই ছিলাম। বর্ন ছিলো না। বাসায় অফিস টুরের কথা বলে তাপসীকে নিয়ে থাইল্যানড, দুবাই আরও কই কই যেনো ঘুরে বেড়িয়েছে। আমি আর সামির জানতাম। ওহ, আমার ভালো মানুষ স্বামী ওইদিনই আইনত তাপসীকে বিয়ে করেছে। আমি বর্নকে কিছু জিগেস করিনি। এ বিষয়ে কোনো কথাও বলিনি। তিন মাস কেটে গেলে বর্ন বাসায় ফিরে ডিভোর্সের কথা খোলাসা করেছে, তাপসীর সাথে বিয়ের কথাও।

আমার শ্বাশুড়ি আমাকে বিস্তর গালমন্দ করলেন নিজের স্বামীকে সুপথে রাখতে না পারার দোষে। সামিরের ভাই ভাবি আর মা এসেছিলো ততোদিনে। সামির যেমন বর্নকে রাজি করিয়েছে, তেমন নিজের পরিবারকেও ম্যানেজ করে নিয়েছিলো।তাদের কোনো আপত্তি ছিলো না আমাকে নিয়ে। বর্ন ফেরার পরদিনই সামির আর আমার বিয়ে হলো সামিরদের বাড়িতে ঘরোয়া ভাবে। যদিও ডিভোর্সি মেয়ের স্বামীর বন্ধুর সাথে বিয়ে কেউ খুব ভালভাবে নেয়নি। এমনকি আমার নিজের পরিবারের কাছ থেকেই অনেক কুতসিত কথা আমাকে শুনতে হয়েছে, কিন্তু আমেরিকা ফেরার আগ পর্যন্ত সামির পুরোটা সময় আমাকে আগলে রেখেছে।
আমি সুখী হয়েছি। সামির আসলেই ভালো স্বামী, বর্নর মতো টেকনিকালি সহীহ ভালো স্বামী না।......
সে রোজ সকালে আমার চুলে হাত বুলিয়ে ঘুম থেকে ওঠায়, আমরা একসাথে মুভি দেখি, ঘুরতে যাই। প্রতি বছর একবার লম্বা টুরে যাই আমরা, সামির বলে ইয়ারলি হানিমুন। সে সময়গুলো আমার হানিমুনের মতোই কাটে। চার বছরের প্রতারনা আর অপমান ভুলে গেছি আমি। কিন্তু এতোসব সুখের মাঝেও মাঝে মাঝে আমার চোখ জ্বালা করে যখন বর্নর প্রোফাইলে বর্ন আর তাপসীর নানা রঙের টুকরো টুকরো সুখী জীবন দেখি। শুনেছি বর্ন এখন আলাদা থাকে তাপসীকে নিয়ে। এখন সে নাকি অফিস শেষ করে পাচটায়ই বাসায় ঢোকে। সে নাকি তাপসীকে সারপ্রাইয দেয়ার জন্য নানারকম প্লানও করে। সামিরের কাছেই শুনি এসব, বর্নর সাথে ওর সাথে এখনও দারুন বন্ধুত্ব।
সামির যখন এসব গল্প বলে তখন মাঝে মাঝে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে বর্ন কী একমুহূর্তের জন্যও ভালোবেসেছিলো? আমি তো খুব চেয়েছিলাম তাকে নিয়ে ভালো থাকতে।
যদিও আমি জানি এসব আমার অযাচিত দু:খ বিলাস ছাড়া কিছুই না। তবু কেন জানি ঘর ভরা ছড়ানো ছিটানো এতো সুখের মাঝেও আমার মন খারাপ হয় আমার ফেলে আসা সেই চার বছরের জন্য। আরো বেশি মন খারাপ হয় যখন চেনা পরিচিত সবার মুখেই শুনি বর্ন কতো ভালো স্বামী!

SonyaIslam

 #সংসার_১২ #মৃধা_মৌনিকোর্টের প্রথম দিন সালমা বেগমের জামিন হয়ে গেল। কিন্তু কুলসুম বেগম আঁটকে রইলেন। তাকে কাশিমপুর কেন্দ্র...
17/07/2025

#সংসার_১২
#মৃধা_মৌনি

কোর্টের প্রথম দিন সালমা বেগমের জামিন হয়ে গেল। কিন্তু কুলসুম বেগম আঁটকে রইলেন। তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো। সেখানে গিগে কুলসুম বেগম জীবনের শেষ ধাক্কাটা খেলেন। মাস্টার বেডে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানো কুলসুম বেগমের জায়গা হলো জনা বিশেক মহিলার মাঝখানে। একদিকে কাত হলে অন্যদিকে ঘোরা দায়। এক পাশ হয়েই রাতভর কা'টিয়ে দিতে হয়। সকালে উঠলে মনে হয়, শরীরের একাংশ অবশ হয়ে গেছে। সেই সাথে আ'গুন লাগা গরম। এত বড় ঘরে মাত্র দুটো ফ্যান তাও মাথার অনেক উঁচু তে। এক ঘরে বসবাস করে ২০-২৫ জন সদস্য। একেকজনের শরীরের একেক রকম গন্ধে কুলসুম বেগমের মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। আজীবন এসি ঘরে ঘুমিয়ে আসা মানুষ টা হঠাৎ করেই গলিত লাভায় পড়েছে যেন। জ্বলছে পুড়ছে ভীষণ অথচ একটুখানি শীতল হওয়ার অবকাশ নেই। দিনের সময়টা একটু ভালো কা'টে তার। প্রায় সকলেই তখন ঘর ছেড়ে বাইরে ঘুরেফিরে সময় কা'টায়। আর কুলসুম বেগম তখন হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। রাত টা কে'টে যায় জেগে জেগে, দুশ্চিন্তায়। কখনো কখনো ফুঁপিয়ে ওঠেন। এই বিপদে কারো কথা মনে পড়ে না তার। শুধু আনিস সাহেবের করা কিছু যত্নের স্মৃতি মানস্পটে ভেসে ওঠে।

জেলখানার চতুর্থ দিন। কুলসুম বেগম সদ্য ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন। বাহিরে বেলা ফুরোচ্ছে। তিনি একটু একটু ক্ষিদে টের পাচ্ছেন। ভোরে উঠে একটু কলা রুটি পেটে চালান করার পর সেই যে শুয়েছেন, আর ওঠা হয়নি। এই চারদিনেই শরীর পুরোপুরি নেতিয়ে গেছে। দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কেউ দেখলে ভাববে দীর্ঘদিনের শয্যাশায়ী সে। তিনি আস্তে আস্তে উঠে বসলেন। মাথার ভেতরে এক ধরনের ভোঁতা যন্ত্রণা টের পাওয়া যাচ্ছে। ধোঁয়া ওঠা ভাতের উপর এক চামচ ঘি ছড়িয়ে দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্ত এই ইচ্ছে এখানে স্বপ্নের মতোই! অবশ্য টাকা থাকলে অনেক কিছুই কিনে খাওয়া যায়।

- আপনের কি শরীর খারাপ বইন?

কুলসুম বেগম চমকে গেলেন এবং লক্ষ্য করলেন তার থেকে তিন চার হাত দূরে একজন মহিলা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে। এনাকে উনি চিনেন না। এই চারদিনে একবারের জন্যেও দেখেননি। নতুন এসেছে নাকি! কুলসুম বেগম একা মনেই কি যেন বিড়বিড় করলেন।

মহিলা একটু এগিয়ে এলো এবার।

- আমি চাঁপা। আজকে আসছি এখানে। আপনি?

কুলসুম বেগম মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে প্রায় ফিসফিস করে উচ্চারণ করেন,

- কুলসুম।

- আপনার কি শরীর খারাপ খুব? কেমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে!

- জানি না। কেমন যেন লাগে আজকাইল।

চাঁপা কুলসুম বেগমের কপালে নিজের ঠান্ডা হাতখানা চেপে ধরে জ্বর মাপলেন।

- জ্বর আছে কিন্তু। এখানে ওষুধের ব্যবস্থা আছে যতদূর জানি। ঠিকঠাক মতো খাওয়াদাওয়া করেন। এখানে আপনার খেয়াল আপনাকেই রাখতে হবে বোন।

কুলসুম বেগম কটাক্ষের স্বরে নিজে নিজে আওড়ালেন,

- আর খেয়াল!

চাঁপা একটু কৌতুহল বোধ করে। চোখমুখ দেখে বোঝা যায় না কী কারণে এখানে এসেছেন উনি। অবশ্য কারো চেহারা দেখেই বোঝার উপায় নেই, কে কি পাপ করে! এই যেমন, সে যে একটা খু'ন করেছে, তা তার সরল চোখ জোড়া দেখে কেউ পড়তে পারবে? পারলে তার এখানে থাকার নয়, এতক্ষণে ফাঁসির দড়ি গলায় ঝুলতো। অবশ্য সেটাই ভালো হতো। তার একমাত্র উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যই তো এই নিষ্ঠুর জীবন থেকে মুক্তি নেওয়া!
চাঁপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে কুলসুম বেগমের সাথে গল্পে আগ্রহী হলেন।

- আপা, আপনার ছেলে মেয়ে নাই?

কুলসুম বেগম নিস্তরঙ্গ গলায় জবাব দিলেন,

- আছে।

- কয়জন?

- একটা ছেলে।

- একটাই?

- হুম!

- সে কোথায়? আপনাকে দেখে না?

- দেখে।

- আপনি তাহলে এখানে.. আপা রাগ করবেন না। আসলে বিনা অপরাধে কেউ তো এখানে আসে না। এই যেমন দেখেন না, আমিও একটা অপরাধের কারণে এখানে এসেছি। তা আপনার অপরাধ টা কি?

কুলসুম বেগম চাঁপার দিকে স্পষ্ট দৃষ্টিতে তাকালেন। গম্ভীর স্বরে বললেন,

- জানি না।

চাঁপা বেশ অবাক হলেন। বিস্ময়ের সাথে উচ্চারণ করলেন,

- জানেন না?!

- না জানি না। আমি তো আমার মতে কোনো অপরাধ করি নাই কিন্তু আমার পোলার বউয়ে নির্যাতনের মামলা করছে। আমি নাকি তারে অত্যাচার করছি। তারে মা'রছি। ধরছি। কা'টছি। আর সেই জন্য এই যে শাস্তি পাইতাছি।

কুলসুম বেগম জোরে একটি নিঃশ্বাস ছাড়লেন। চাঁপা আরও কৌতুহলী হয়ে পড়ল এরপর। একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগল তাই। ছেলের নাম কি, কি করে, তার বিবাহিত জীবন কত বছরের, বাচ্চা আছে কীনা, তার সঙ্গে কবে থেকে বিরোধ, কি নিয়ে সমস্যা, সবকিছু! কুলসুম বেগম প্রথমে তেমন কিছু বলতে না চাইলেও আস্তে আস্তে চাঁপার সঙ্গে সহজ হয়ে এলেন। চাঁপাকে সব কিছু গোড়া থেকে একের পর এক বলতে লাগলেন৷ কী করে দুইদিনের একটা মেয়ে এসেই উনার পরিবারের সবাইকে নিজের হাতের কব্জায় নিয়ে নিয়েছে সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে তার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। চাঁপা হো হো করে হেসে উঠলেন।

- তুমি হাসতাছো!

কুলসুম বেগমের ইচ্ছে করল ঠাস করে একটা চ'ড় বসিয়ে দিতে চাঁপার গালে। তিনি খুব কষ্টে নিজেকে সামলে মুখ ঘুরালেন। মাথার ভোঁতা ব্যথা টা বাড়ছে। শরীর নিস্তেজ লাগছে। বাইরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। একটু পরেই ঘন্টা বাজবে। আর ঘন্টা বাজলে কেউই বাইরে থাকতে পারবে না। সবাইকে যার যার সেলে ফিরে আসতে হবে। এটাই নিয়ম। কুলসুম বেগম আবার শুয়ে পড়লেন। চোখ দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। তিনি বিড়বিড়িয়ে কি যেন পড়লেন, চাঁপা বুঝতে পারল না। হেসে ওঠার কারণে কুলসুম বেগমের তার উপর রাগ হয়েছে বুঝতে পেরে তিনি হাসি থামিয়ে মুখটাকে গম্ভীর করার চেষ্টা করলেন। কুলসুম বেগমের চুলের ফাঁকে আঙুল গুঁজে দিয়ে আলতো ভাবে সিঁথি কাটতে লাগলেন। এই সেবাটুকু কুলসুম বেগমের খুব ভালো লাগল। তিনি কিছু বললেন না। চুপচাপ শুয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে রাখলেন।

প্রায় কিছুক্ষণ দু'জনের কেউ কোনো কথা বলল না। তারপর একসময় নীরবতার বুক চিঁড়ে চাঁপার কণ্ঠস্বর বাজতে লাগল। চাঁপা চাপা আওয়াজে বললেন,

- আমি একটা খু'ন করেছি আপা!

কুলসুম বেগম বজ্রাহত হলেন কথাটা শোনামাত্র। উঠে বসবেন না শুয়েই থাকবেন, বুঝতে পারলেন না কিন্তু চোখ জোড়া সঙ্গে সঙ্গে মেলে তাকালেন। চাঁপা উনার উল্টোপাশে, তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু সে যে মিথ্যে বলছে না তা তার কণ্ঠের জোরে স্পষ্ট। কুলসুম বেগম জবাব দেওয়ার জন্য যুতসই কিছু খুঁজে পেলেন না। ওদিকে চাঁপা তার গল্পের পাতা খুলে পড়তে শুরু করেছে।

- আমি একটা প্রাইভেট কলেজের শিক্ষিকা ছিলাম। আমার হাজবেন্ড প্যারালাইজড হন যখন আমার ছেলের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। একটা এক্সিডেন্ট থেকে তিনি কোমায় চলে যান। অনেক চেষ্টা করে কোমা থেকে ফিরে আনতে পারলেও উনার শরীরের শক্তি আর ফিরিয়ে আনতে পারেনি ডাক্তারেরা। এরপর থেকে মানুষ টা সম্পূর্ণ আমার উপর নির্ভর হয়ে পড়ল। কত লোকে আমায় কত কি বলতো জানেন আপা! এমনকি আমার পরিবার ও চাইতো আমি যেন তাকে ছেড়ে দিয়ে নতুন কাউকে বিয়ে করে জীবন গুছিয়ে নেই। কিন্তু আমি মানুষ টাকে তার রূপ, যৌবন, সম্পদ কোনোকিছুর লোভে পড়ে বিয়ে করিনি। উনার চোখের মায়ায় পড়ে বিয়ে করেছিলাম। সেই চোখ জোড়ার মায়া সরিয়ে অন্য কাউকে নিজের জীবনসঙ্গী করা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। আমি পারিনি। তাই একমাত্র ছেলে এবং স্বামীকে বেঁচে থাকার উছিলা বানিয়ে আমি জীবন পথে হাঁটতে লাগলাম। ছেলে বড় হলো। স্বামী আগের চেয়েও বেশি পঙ্গু হয়ে উঠল। দিন দিন তার অবস্থার অবনতিই হচ্ছিল। প্রথম প্রথম একটু কথাবার্তা বলতে পারলেও শেষে এসে তাও বন্ধ করে দিলো। সারাক্ষণ শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত আমার দিকে, ছেলের দিকে। ছেলের পঁচিশ হতেই ও জানালো, একটা মেয়েকে ওর পছন্দ আছে। বিয়ে করতে চায়। আমি আপত্তি করিনি। ছেলের সুখ দিয়েই সুখ। ছেলে বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে আনলো। বিশ্বাস করেন আপা আমি তাকে ছেলের বউ হিসেবে না, আমার মেয়ের মতোন করে ভাবতে লাগলাম। আমার তো মেয়ে নেই। তাই মেয়ের আদর, ভালোবাসা, স্নেহ গুলো তাকেই দিতে লাগলাম। কিন্তু যত দিন যায়, আমার বউ আমাকে সহ্য করতে পারে না। আমার কথা তার কাছে বিষের মতো লাগে। সে সবসময় আমাকে এবং আমার স্বামীকে নিয়ে স্বপ্নের সাথে ঝগড়া করত। ও, বলতে ভুলে গেছি, আমার ছেলের নাম স্বপ্ন। স্বপ্নের মতো করেই ও আমাদের জীবনে এসেছিল। যাইহোক, আমরা বুঝতে পারছিলাম না সমস্যা কোথায়। রোজ সংসারে অশান্তি, চিৎকার, চেচামেচি, আমার ছেলে দিন দিন কেমন অন্যমনস্ক এবং অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিল। তারপর একদিন...
দীপা আর স্বপ্নের ভেতর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগল যেন। আমার হাজবেন্ড প্যারালাইজড, সে নিজে থেকে ওয়াশরুম যেতে পারে না। তার সবকিছু আমার উপর নির্ভরশীল। বিছানায়ই সবকিছু। দীপা এসব সহ্য করতে পারে না। তার বমি আসে। খাওয়াদাওয়া অফ হয়ে যায়। ঘরে গুমোট পরিবেশ হয়ে থাকে। কটু গন্ধ করে। তার অতিষ্ঠ লাগে এসবে। তাই সে নিস্তার চায়। আমার হাজবেন্ডকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসতে বলে। সাথে আমাকেও। স্বপ্ন রাজি হয় না। এই নিয়ে বিবাদ চলে। শেষে স্বপ্ন রাজি হয়। আমার স্বামী এবং আমাকে আলাদা আলাদা বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করে। আমি মেনে নিতে পারি না। স্বপ্নের বাবা কিছু বলতে পারেন না ঠিকই কিন্তু সব বুঝতেন। তিনি কেঁদে ভাসাতেন রাত ভর। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। শেষে একদিন.. সিদ্ধান্ত নিলাম, যাকে আমি যৌবন থাকতে ছেড়ে দেইনি, আজ তাকে ছেড়ে কি করে থাকব! একসাথে এতদিন বেঁচেছি, দরকার হলে একসাথে মা'রা যাবো।তবু বিচ্ছেদ বা দূরত্ব আমাদের ভেতর আসবে না। সেই রাতেই আমি আমার স্বামীকে নিজের হাতে খু'ন করি এবং আমি ফাঁসি নিতে যাই। তার আগেই আমার ছেলের বউ আমাকে দেখে ফেলে এবং আজ আমি এখানে...আমার আফসোস নেই আমার স্বামীর মৃ'ত্যু তে। তবে আফসোস আমি কেন তার সাথে সাথে ম'রতে পারলাম না! অবশ্য আর মাত্র কিছুদিন আপা। কোর্ট থেকে রায় জানানো হবে শীঘ্রই। তারপর আমি ও আমার স্বামীর কাছে চলে যাবো। যদি আপনার ছেলের বউয়ের মতো আমার বউটা হতো, আমি তাকে মাথায় করে রাখতাম আপা। আপনি খাটি সোনা চিনলেন না! কি আফসোস!

কুলসুম বেগম উঠে বসলেন। নিজের হৃদয়ে দাফন কৃত জ্বলন্ত আ'গুন চাঁপার শেষ কথায় দাউদাউ করে জ্বলে উঠল আবারও। তিনি হিসহিসিয়ে বলে উঠলেন,

- আপনে ও আমারে দোষ দেন!

- এছাড়া কাকে দেবো? আপনার মাথার স্ক্রু কি ঢিল নাকি আপনার ভেতরে বিন্দুমাত্র শিক্ষার আলো নেই, বুঝতে পারছি না। আপনি বিয়ে করে একটা বাড়িতে গেলেন আর সেখানে আপনার শ্বাশুড়ি আপনার সাথে এই এই কান্ড গুলো করলে আপনি কি করতেন?

কুলসুম বেগম মুখ ভার করে বললেন,

- আমার শ্বাশুড়ি এর চাইতেও বেশি করছে। আমি কিছুই করি নাই সেই তুলনায়। সে আছিলো বিশ্ব জল্লাদ। আমার জীবন টা ভাজাভাজা কইরা খাইছে।

- আর তাই আপনি আরেকজনের জীবন ভাজা ভাজা করছেন? আপনি আসলেই বোকা! আপনার সেই জল্লাদ শ্বাশুড়ি আর আপনার ভেতর পার্থক্য কি রইলো?

কুলসুম বেগম জবাব দিতে পারলেন না। ফ্যালফ্যাল চোখে চাঁপার দিকে চেয়ে রইলেন।

- শুনেন বোন, কেউ কারো জায়গা নিতে পারে না। সে যত চেষ্টাই করুক। আপনার ছেলের বউ আপনার জায়গা কেড়ে নিতে নয় বরং নিজের জন্য আলাদা জায়গা তৈরি করতেই আপনার ঘরে এসেছিল। আর সেই জায়গা তৈরিতে আপনার ভূমিকা হওয়া উচিত ছিল সবচেয়ে মূখ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আপনি নায়িকা হতে গিয়ে খলনায়িকা হয়ে গেলেন।.....❤️ এরচেয়ে যদি আপনার ছেলের বউয়ের সাথে একটু মিলমিশ করে, একটু আপোষ করে চলতেন, তাহলে আজ এই দিন আসতোই না। বরং আপনার হুকুম থাকত সর্বশেষ কথা। আপনি বুঝলেন না। আপনি নিজের দোষে আপনার স্বামী, সন্তান সবার মন থেকে নিজের জায়গাটা নষ্ট করে ফেললেন। আমি দু'দিন পর এই পৃথিবী থেকে চলে যাবো। আপনি তো যাবেন না। আপনার ভবিষ্যত কি এরপর? এইখানে আজীবন থাকা? আপনার মনে হয় এরপরে ও আপনার পরিবার আর আপনার ভেতরের সম্পর্ক ঠিকঠাক থাকবে কিছু? একটু মাথাটা কাজে খাটান। এখানে অফুরন্ত সময় পাচ্ছেন। ভেবে দেখুন, আপনি কি হারিয়েছেন আর কি হারাবেন। এখনো সময় আছে। ভালোমন্দ বুঝতে চেষ্টা করুন।

দলে দলে সবাই এসে সেলে প্রবেশ করছে। দূরে ঢং ঢং আওয়াজে ঘন্টা বাজছে। ঘোরাঘুরির সময় শেষ। মুহূর্তে শূন্য ঘরটা কোলাহল ময় হয়ে উঠল। চাঁপা উঠে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে। কুলসুম বেগম শুয়ে পড়লেন। তার পেট গুলিয়ে বমি পাচ্ছে। মাথার যন্ত্রণারা খুবলে খেতে শুরু করেছে।

সেদিন খুব কথা কা'টাকা'টি হয়েছিল তমাল এবং সায়মার মাঝে। এরপর থেকে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন বললেই চলে। তমাল কয়েকবার কল করেছিল, মেসেজে ক্ষমাও চেয়েছিল, সায়মাই রেসপন্স করেনি। ওর কেমন যেন উদাসীন লাগছে সবকিছু। বিশেষ করে ওদের সম্পর্ক টা। দু'দিন পর পর ঝামেলা হবে, এরপর একটা সরি বলে দিলেই আবার সব ভুলে যেতে হবে! কেন? মানুষের হৃদয়ের আবেগ কি এতই ঠুনকো? তমালের প্রতি মায়া অনুভব হয়। ইচ্ছে করে ওর বুকে লুটিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদে। কিন্তু যে নীরব অভিমান জমেছে সায়মার হৃদয় গহীনে, তা যে পাহাড়ের মতো অটল। এত সহজে গলবার নয়। সায়মা সিদ্ধান্ত নিলো, আগে এই কেসের একটা গতি হোক, এরপর সে তমাল কে তার সাফ সাফ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।

রবিবারের উত্তপ্ত রোদ মাখা দুপুর। মাথার উপর সূর্য মামার প্রখর তাপ সবকিছু ঝলসে দিচ্ছে অবিরত। সায়মা ওড়নার আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম ফোঁটা গুলি মুছে নেয়। নীলা এক বোতল পানি হাতে এসে বেঞ্চে বসল। ধীর স্বরে বলল,

- আপু, জিজু কে দেখলাম।

- ভালো!

দায়সারা জবাবে এড়িয়ে যায় সায়মা। ওরা কোর্টে এসেছে। আজ সায়মার কেস টা উঠবে। বাদী পক্ষকে ডাকা হবে বিস্তারিত ঘটনা জানার জন্য। সায়মা কিছু কথা গুছিয়ে রেখেছে। কিন্তু সেসব আরও একবার মনে করতে গিয়ে দেখল, ওর কিচ্ছু মনে নেই। সব এলোমেলো, অগোছালো হয়ে গেছে। সায়মা মনে মনে নিজের প্রতিই বিরক্তবোধ করল। একটু নার্ভাস লাগছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে! তমাল তার আশেপাশে আছে তাই? এতকিছুর পরও তমালের প্রতি আলাদা এফেকশন কাজ করছে। হৃদয়ের রঙ বোঝা সত্যিই কঠিন!

- তোমার ডিসিশন কি ডিভোর্স?

নীলার প্রশ্নে ধ্যান ভাঙে সায়মার। একটু অপ্রস্তুত হয় ছোট বোনের মুখে এই শব্দটা শুনে। ইতস্তত করে বলে,

- জানি না।

- জিজুর সাথে কথাও বলো না ঠিক করে। মানছি উনি তোমার হয়ে স্ট্যান্ড করেনি। উনার উচিত ছিল তোমার জন্য অনেক কিছু করা। চাইলে পারত। বাট উনার দিক টা একবার ভেবে দেখো। ছোট বেলা থেকে মায়ের প্রতি ট্রমাটাইজড রইলেও তার বিরুদ্ধে কখনো যায়নি যে সে হুট করে এসে কীভাবে এত সাহস দেখাতে পারবে? তুমি যদি তাকে সাহস দেখানোর সাহসটুকু জোগাতে সাহায্য করতে তবে অবশ্যই সে তোমার জন্য দুনিয়া তোলপাড় করে দিতো। তার চোখে আমি তোমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছি!

সায়মা বিরক্ত হলো।

- হঠাৎ ওর হয়ে এত সাফাই গাওয়া কেন?

- আমি কারো হয়ে সাফাই গাচ্ছি না। আমার ব্যক্তিত্ব কেমন,ইউ নো দ্যাট না? আমি জাস্ট যেটা ঠিক মনে হচ্ছে সেটাই বলছি। আই গেস উনাকে একটা শেষ চান্স দেওয়া উচিত। এটলিস্ট তোমার জায়গায় আমি হলে আমি এইটাই করতাম। বিয়ে এত মূল্যহীন ব্যাপার না যে এই গড়লো, এই ভেঙে গেল!

- এক্সাক্টলি। বিয়েটা অনেক মূল্যবান ব্যাপার লাইফে দ্যাটস হোয়াই আমি সঠিক টা বেছে নিতে চাচ্ছি। এক ভুলের মাশুল কা'টিয়ে গোটা জীবন টা নষ্ট করতে চাই না।

- ভুল মানুষ কেও শুধরে ফেলা যায় আপু! তুমি তো জানো, এভ্রিওয়ান ডিজার্ভ আ সেকেন্ড চান্স, রাইট?

সায়মা জবাবে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।

- ট্রাস্ট মি অর নট, আমি উনার ভেতর তোমার জন্য স্পৃহা দেখেছি। তোমার উচিত শুধু সেটুকু বাইরে বের করে আনতে সাহায্য করা, দ্যাটস ইট! এন্ড আই থিংক, ইউ লাভ হিম ঠু!
সামটাইমস, হৃদয়ের কথা শোনা উচিত!

এজলাসে জজ বসেছেন। মামলা কোর্টে উঠেছে। একপাশের কাঠগড়ায় সায়মা দাঁড়িয়ে আছে, আরেক পাশের কাঠগড়ায় কুলসুম বেগম।..........
কয়েক দিনের তফাতে তার বয়স যেন বেড়ে গিয়েছে। মুখের চামড়া ঝুলে পড়েছে। চোখেমুখে অসহায়ত্ব। যে তেজপূর্ণ দৃষ্টি তার মাঝে বিদ্যমান ছিল, তা আর নেই। দিশেহারা ভঙ্গিতে কাঠগড়ার এক পাশে শরীর লাগিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে। দৃষ্টি সায়মার দিকে তোলা। সায়মা সেই দৃষ্টি পড়তে পারল। চোখ সরিয়ে নিয়ে জজের দিকে তাকাল।

বাদী পক্ষের বিবৃতি শোনার জন্য জজ সহ উপস্থিত কক্ষের প্রতিটি সদস্যগণ। সায়মা সময় নিয়ে ধীরস্থির কণ্ঠে বলল, 'আমার কেস টা আমার শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে না...'

তমাল সহ বাকি সকলেই চমকে ওঠে।
*কুলসুম বেগমের সুবুদ্ধি হয়েছে অবশেষে?
*সায়মা কি বলতে চাইলো তাহলে! এই কেস টা কার বিরুদ্ধে তবে?

*সায়মা এবং তমালের ডিভোর্সের পক্ষে কারা কারা?

*পরবর্তী পর্বই হবে এই গল্পের শেষ পর্ব। আসবে রবিবার। পুরো গল্পের শেষ টুক টানতে গেলে একটু তো সময় দরকারই তাই না? আমি এক টানা অফিস করছি এর ভেতর। এমনকি ফ্রাইডেও! সো টেকিং মাই টাইম এন্ড সো মাচ লাভ ফর ইউ অল!

(চলবে)
*সবাই বেশি বেশি করে লাইক-কমেন্ট করুন। আজকেও ১০০০ সাড়া চাই 😘

Address

Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Niamot Al Hasan posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Niamot Al Hasan:

Share