18/07/2025
জুলাই গণ অভ্যুত্থান নিয়ে
পোস্টটি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি
সেই সময়ের সবচেয়ে বেশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এই ১৮ ই জুলাই।তখন ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে ডিউটি তে ছিলাম,ফ্লোর ডিউটি ।ফ্লোরের রোগীদের সেবা দেওয়াই আমার কাজ ছিলো,নিচের ফ্লোরে ছিলেন আমার কলিগ জয় ভাই।
সকাল বেলা চারপাশ শান্ত থাকলেও দুপুরের পর থেকে উত্তপ্ত হতে শুরু করল। পাশেই মোহাম্মদপুর থানা,পুলিশ তাদের মরণাস্ত্র নিয়ে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এর দিকে অবস্থান নিয়েছে । আর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের দিকে অবস্থান নিয়েছে ছাত্র জনতা। মুহুর্মুহু টিয়ার সেল আর গুলির শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠছে। পুলিশের টিয়ার গ্যাসের ধোয়ায় হাসপাতাল ভরে গেল ।রোগীরা আতঙ্কে চেচামেচি শুরু করলেন আর টিয়ার গ্যাসের ঝাঝালো গন্ধে আমাদেরও অবস্থা খারাপ। কি কষ্টকর ব্যাপার সেটা যে কখনও ফেস করেনাই সে বুঝবেও না।
ডাক্তার দের রুম থেকে সরাসরি মেইন রোড দেখা যায়,আমি আর জয় ভাই মিলে নিজেদের কাজ সেড়ে নিচের পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছি। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছে ।
এমন সময় জানা গেল নিচের অবস্থা ভয়াবহ। ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। আমরা সপ্রণোদিত হয়ে নিচে গেলাম। গিয়ে দেখলাম একজনের পর একজন রোগী আসছে,কারো পায়ে গুলি,কারো পিঠে গুলি,করো পিঠ স্প্লিন্টার দিয়ে ঝাঝড়া হওয়া,কারো চোখের ভিতর স্প্লিন্টার।
এমন সময় শুনতে পেলাম বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন ICU তে ভর্তি। সেখানে গিয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। জয় ভাই আর আমার হৃদয় টা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল।
বিছানায় শুয়ে আছে এক যুবক। তরতাজা যুবক। আমার ছোটভাইয়ের বয়সী।অদম্য সাহসের প্রতীক হয়ে শুয়ে আছে,পালস নাই,প্রেসার নাই,স্যাচুরেশন নাই,ইসিজি তে লাইনের কোন উঠানামা নাই।সারা গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নাই ,শুধু বুকের মাঝ বরাবর একটি গুলি। ফুটফুটে চেহারার সেই ছোটভাই এর হৃদপিণ্ড এই একটি গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।এটাই সেই ফারহান ফাইয়াজ। দেশের জন্য বুকের তাজা প্রাণ ঢেলে দিয়েছে ফাইয়াজ। অদম্য সাহসের সাথে মৃত্যুকে চোখ রাঙাতে রাঙাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে সে।
‘২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ধানমন্ডির পুরাতন ২৭ নম্বর রোডে রাপা প্লাজা এবং জেনেটিক প্লাজার মাঝামাঝি স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফাইয়াজ) বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।’
২৪ এর আন্দোলনে যারা নিজেদের তাজা প্রাণ দিয়েছেন,সকলের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা । আর ফারহান ফাইয়াজ এর মৃত্যু এত কাছ থেকে দেখেছি,সেটা আমৃত্যু মনে থাকবে। শুধু আমার না,জয় ভাইয়েরও মনে থাকবে।
তারপর মনের মধ্যে অশান্তি আর চাপা কান্না নিয়ে ডিউটি করতে লাগলাম আমি আর জয় ভাই। দুই ফ্লোরের রোগীরা আমাদের দায়িত্বে। ডাক্তারদের কাছে আবেগের চেয়ে রোগীর অগ্রাধিকার বেশি।
ওপারে ভালো থেক ফাইয়াজ ।
যে দেশের জন্য প্রাণ দিলে,ভালো থাকুক সেই দেশ,আমাদের বাংলাদেশ 🇧🇩