26/04/2025
ফ্যামিলি কালচারের সবচে বড় লজ্জার জায়গা কী জানেন?বিপদে পড়লে ফ্যামিলি আমাদের কম্ফোর্ট দিতে পারে না। উল্টো আমাদের জন্য আরো বড় বিপদ হয়ে উঠে। ফ্যামিলি কালচার নিয়ে আমাদের গর্ব আছে, ভালোলাগা আছে, আবেগও আছে।
কিন্ত ফ্যামিলি কালচারের সবচে বড় লজ্জার জায়গা হলো, কোন বিপদে পড়লে আমরা কখনোই ফ্যামিলির কাছে যাইয়া সমস্যাটা বলতে পারি না, বুঝাইতে পারি না। উল্টো ফ্যামিলির সম্মান রক্ষার জন্য অনেক বড় বড় বিপদ আমরা চেপে যাই, সহ্য করি এবং প্রয়োজনে মরে যাই, তবুও আমরা ফ্যামিলির কাছে যেয়ে বলতে পারি না যে আমাদের হেল্প করো, আমাদের বাঁচাও।
যতই আমাদের জন্য জীবন দিয়ে দিক বা আমাদের জন্য অনেককিছু করুক, আমাদের ফ্যামিলিকে, ফ্যামিলির বড় মানুষদের এই লজ্জার দায়টা নিতেই হবে। তাদের স্বীকার করতে হবে, তারা যদি একটু বোঝার চেষ্টা করতো, সমাজ বা মিথ্যা সম্মানের চেয়ে সন্তানদের জীবনটারে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতো, তাহলে তাদের জীবনটা সহজ হতো অনেখানি।
আজ এক গ্রুপে একটা মেয়ের কাহিনী পড়ে মনে হলো, বিপদের সময় যদি পরিবার আশ্রয়ই না হতে পারবে, উল্টো পরিবারের কথা ভেবে যদি আমারে গভীর থেকে গভীরতর খাদেই পড়ে যেতে হবে, তবে ঐ পরিবার নিয়ে আমি করবোটা কী?
এই মেয়েটারে বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ব্ল্যাকমেইল করসে, ছবি এডিট করসে,জোর করে সম্পর্ক রাখতে বাধ্য করতেসে। বাট মেয়েটা পরিবার এমনকি থানায় যাইতে পারতেসে না সম্মানের ভয়ে। লিটারালি পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য মেয়েটা মৃত্যুর যন্ত্রনা বরণ করে নিয়েছে। অথচ সে একটাবারের জন্য কথাগুলো শেয়ার করতে পারতেসে না। বাবার সাথে না, মায়ের সাথে না, ভাইয়ের সাথেও না।
যৌতুক কেস বলেন, স্বামীর মার খেয়ে মরে যাওয়া বলেন আর পরীক্ষায় ফেইল করে ঝুলে পড়া বলেন, প্রতিটা ক্ষয়েই একটা জিনিস আপনি কমন পাবেন। সেটা হলো, পরিবারের সম্মান মানুষের জীবনের চেয়েও বড় ছিলো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ নিজের ব্যর্থতার জন্য মরে যায় না,নিজের ভুলের জন্য মরে যায় না। মানুষ মরে যায় ব্যর্থতার পর প্রিয়জনদের কাছে পাবে না জেনে।
অথচ চাইলেই আমাদের পরিবার আমাদের জীবনটারে সহজ করে দিতে পারে অনেকখানি।
বলতে পারতো, যত বড় ভুলই হোক, ফিরে আসার পথ বন্ধ না।তোমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে? তুমি বাসায় ফিরে আসো। তোমার বৌ বা স্বামী তোমারে ভালোবাসে নাই? আমরা তো আছি, আমরা তোমারে ভালোবাসবো। ঠিক ভুলের হিসাব পরে হবে, আপাতত ঘরে এসে দুইটা খাও, দুইদিন ঘুমাও। তারপর যা হয় দেখা যাবে।
এই কথাটুক বললেই দেখতেন এই দেশের ৯০% আত্মহত্যা বন্ধ হয়ে যাইতো। দেখতেন, ঐ মেয়েটার মতো লাখ লাখ ছেলে মেয়েকে জীবন্ত জাহান্নাম বুকে বয়ে বেড়াতে হতো না,দেখতেন, অনেক অপরাধের বিচার হতো। ভিক্টিম না, অপরাধীর পরিবার তটস্থ থাকতো সম্মানের ভয়ে।
কিন্তু না। আমরা আমাদের সন্তানরে, আমাদের ভাইরে আমাদের বোনরে কুরবানি দিবো, তাও ব্ল্যাকমেইলের কথা কাউকে জানাবো না, পাছে পরিবারের সম্মান চলে যায়?
অদ্ভুত আমাদের এই সম্মানের ইগো। অদ্ভুত আমাদের পরিবারের খানদানি ইমেজ। খোদা মানুষরে বললো, বান্দারে, তুই উহুদ পরিমাণ পাপ করে আমার কাছে ফেরত আয়, আমি তোরে ক্ষমা করে দেবো। কতই বা আর পাপ করছিস? তোর পাপ তো আর আমার ক্ষমার চে বেশি না? তুই ফিরে আয় বলে খোদা আমাদের জন্য তার দরজা খুলে দিলেন।
আর আমাদের পরিবার সম্মান, সমাজ আর ইমেজের কথা বলে আমাদের ফেরার পথ বন্ধ করে দিলো। অপরাধ তো দূরের কথা, এমনকি অপরাধের স্বীকার হলেও আমাদের জন্য ঘরে ফেরা কঠিন, কাউকে বলাও কঠিন। খোদার আদালত আমাদের মুক্তি দিলেও পরিবারের আদালত আমাদের কথা শোনার আগেই যাবজ্জীবন রায় দিয়ে রাখলো।
বিপদে পড়লে তাই বহু মানুষ চাইলেও পরিবারের কাছে ফিরতে পারে না। কোন ভুল করলে তাই আমরা খোদার কাছে চলে যাওয়াটারেই বেশি প্রেফার করি, পরিবারের বন্ধ দরজা আমাদের আর ঘরে ফিরতে দেয় না।