23/06/2025
বউকে প্রচন্ড জোরে ধমক দেয়ার পর তার হাসিমাখা মুখ টা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো।আমার থেকে একটু দূরে বসে মোবাইল টিপছে।কিছুই বলেনি একদম চুপ হয়ে গেছে।আমি বুঝতে পারছিলাম তার চোখ বেয়ে পানি পরছে কিন্তু কোনো শব্দ করছে না।আমি একবার জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, বউ কিছু বলেনি।
ইদানীং খুব বেশি চাহিদা বেড়ে গেছে তার।জানে আমার হাতে টাকা নেই তবুও অনলাইনের একটা ড্রেস দেখে আমাকে খুশি মনে জিজ্ঞেস করতে এসেছিল, ড্রেস টা অর্ডার করবে কিনা।রাগ টা আর কন্ট্রোল করতে পারিনি।দিন দিন যা দেখে তা-ই নিতে মন চায়।
রাতে খেতে বসে আমি অভিমানের স্বরে বলতেছিলাম,
-টাকা না থাকলে,আবদার রাখতে না পারলে, মা বউ সন্তান সবারই মুখ কালো হয়ে থাকে। পুরুষের কষ্ট তারা বুঝতে চায় না।
বউ শান্ত ভাবে বলে উঠলো,
-আমি যা অনলাইনে পছন্দ করি সবসময়ই কি সবটা কিনে দাও! প্রায় সময়ই তুমি নিষেধ করলে আমি আর নেই না।কখনো প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে বলেছি,টাকার জন্য আনতে পারোনি,সেজন্যও তো চেচামেচি বা কথা শুনাইনি!খুব সহজেই বলে দিলে টাকার কথা।অথচ তুমি বুঝতেই পারলে না,আমি আসলে কেন কষ্ট পেয়েছি!আমাকে ধমক দিয়ে না বলে,সবসময়ের মত সুন্দর ভাবে আস্তে বললেও পারতে।তুমি তো জানো ধমক দিলে আমি কতটা কষ্ট পাই।কতভাবে সেক্রিফাইস করি,তোমার অসুবিধা বুঝতে চেষ্টা করি তবুও তুমি এভাবে একটা মন্তব্য করে ফেললে বাহ!
আসলে জানো কি,মেয়েদের মন খারাপের আসল কারণ বুঝতে পারার চেয়ে, তাদের ভুল বুঝা বেশি সহজ।যেমন করে আজকে তুমি আমাকে ভুল বুঝলে।
একনাগাড়ে কথা গুলো বলে সে আবার চুপ হয়ে গেলো।আমিও চুপ করে আছি।কি বলবো,ওর বলা প্রত্যেক টা কথাই সত্যি।কিন্তু আমিই তাকে বুঝতে ভুল করে ফেলেছি।মেয়েদের উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে কখনো বুঝানো যায় না, এভাবে বরং কষ্ট দেয়া যায়।তাদেরকে বুঝাতে হয় নরম গলায় ভালোবেসে।আমি সবসময়ই এই বিষয় গুলো খেয়াল করলেও আজকে কিভাবে যেন হঠাৎ মাথা গরম হয়ে গেছিলো।আসলে পুরুষের যত রাগ, বউকেই দেখানো যায়।যা মোটেও ঠিক নয়।
যেই মেয়ে টা সংসার টা গুছিয়ে রাখে,রান্না থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়া সবকিছুই করে। এমনকি অসুস্থ হলে স্বামীর সেবাও করে, তাকেই রাগ টাও বেশি দেখানো হয়।
সত্যি বলতে তার মুখ মলিন হয়ে থাকলে আমারও খুব কষ্ট হয়।তাই বউয়ের মন ভালো করতে, সদ্য গাছে ফোঁটা গোলাপ ফুল টা বউয়ের সামনে রেখে কানে ধরে বসে রইলাম। বউ আমার মিটিমিটি হাসছে।তার হাসি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।এই হাসির জন্য আমি সব করতে পারি।
#অভিমানী_নারী
লেখা: সাদিয়া আফরিন মার্জান